শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

সবুজ বনমোরগ

পাখির প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

সবুজ বনমোরগ
Remove ads

সবুজ বনমোরগ (Gallus varius) (ইংরেজি: Green Junglefowl, Javan Junglefowl বা Forktail) ফ্যাজিয়ানিডি (Phasianidae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত গ্যালাস (Gallus) গণের এক প্রজাতির বনমোরগ।[] ইন্দোনেশিয়ার জাভায় এই প্রজাতিটি বেশি দেখা যায় আর সেখানকার এন্ডেমিক বা স্থানিক পাখি। এরা একপ্রজাতিক (Monotypic), অর্থাৎ এদের কোন উপপ্রজাতি নেই। শ্রীলঙ্কার বনমোরগের সাথে এরা সম্পর্কিত। আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা আশঙ্কাহীন বলে ঘোষণা করেছে।[]

Remove ads

বিস্তৃতি

ইন্দোনেশিয়ার জাভা, বালি, লম্বক, সুম্বাওয়া, কোমোডো, ফ্লোরেস, রিংকা আর জাভা ও ফ্লোরেসের সাথে সংযুক্ত ছোট ছোট দ্বীপ সবুজ বনমোরগের প্রধান আবাস। আশ্চর্যজনকভাবে জাভার পশ্চিম দিকে এরা অনুপস্থিত। এছাড়া কোকোস দ্বীপপুঞ্জে এদের অবমুক্ত করা হয়েছে। সমূদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত এদের বিচরণ। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আর্দ্র বনভূমি, নিম্নভূমি, গুল্ম বন ও শস্যক্ষেত্র এদের প্রধান বিচরণস্থল। এছাড়া বাঁশবন, বনসংলগ্ন ফাঁকা জায়গা আর মোহনা ও নদীর পাড়েও এরা ঘুরে বেড়ায়। পাহাড়ী এলাকা এদের প্রিয় বিচরণস্থল।[][]

Remove ads

বিবরণ

Thumb
পূর্ব জাভা দ্বীপের সবুজ বনমোরগ

সবুজ বনমোরগ সাধারণ বনমোরগের মতোই বড়সড়, সুন্দর ঝালরাবৃতএকটি পাখি। তবে সাধারণ বনমোরগের তুলনায় এর গলা ও ঘাড়ের পালকগুলো উজ্জ্বল ও গাঢ় সবুজ। পালকগুলো আঁশের মত বিন্যস্ত। সবুজ পালক পিঠ পর্যন্ত ছড়ানো। পিঠে সোনালি বর্ণের ঝালরের মত পালক থাকে। ডানা, বুক ও পেট কালো। ডানার উপরের পালকগুলো ঝালরের মতো ও উজ্জ্বল লালচে-কমলা রঙের। লেজের পালক সবুজাভ-কালো। লেজের কেন্দ্রীয় পালকগুলি লম্বা ও কাস্তের মত বাঁকানো।একটু লম্বাটে। মুখ ও মুখের আশপাশ পালকহীন এবং লাল রঙের। মাথায় লাল মাংসল ঝুঁটি থাকে। অন্যসব বনমোরগের ঝুঁটির মত কাটা কাটা নয়, বরং গোলাকার। এদের ঝুঁটি ও লতিকা টকটকে লাল নয়, বরং একটু ফ্যাকাসে। ঝুঁটির মধ্যে একটু নীলচে ছোপ থাকে। কর্ণপটহ কালো। চোখের আইরিস হলুদ, পা সাদাটে, ঠোঁট ময়লা হলুদ। দৈর্ঘ্য ৬০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার।[]

বনমুরগী তুলনায় ছোট ও এত বাহারি পালক নেই। পালক বাদামী ও মেটে-বাদামী। লেজ ছোট ও কালো রঙের। পিঠের দিক কালো অনিয়মিত দাগযুক্ত। লতিকা থাকে না, ঝুঁটি ছোট ও ফ্যাকাসে বর্ণের। পা সাদাটে, ঠোঁট সীসা বর্ণের, চোখের আইরিস কালচে। দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪২ সেন্টিমিটার।[]

Remove ads

আচরণ

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
সবুজ বনমুরগী

বনমোরগ-মুরগী একাকী, জোড়ায় বা সর্বোচ্চ সাত সদস্যের ছোট দলে ঘুরে বেড়ায়। দলে একাধিক মুরগী ও যুবক মোরগ একটি প্রধান মোরগের তত্ত্বাবধানে থাকে। মাটি থেকে কুড়িয়ে বিভিন্ন শস্যদানা, ঘাসের গোড়া, কচিপাতা, কেঁচো, গুহাবাসী কীটপতঙ্গ, ক্যাকটাস ফল, ছোট সরীসৃপ, ব্যাঙ এসব খায়।[] তবে জোয়ার চলে গেলে নদীর পাড়ে এদের বড় বড় দলে (বিশ সদস্যের বা তার বেশি) ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। এসময় এরা মূলত আটকে পড়া সামুদ্রিক ও জলজ জীব খেতে আসে। এসময় এরা জলজ পোকামাকড়, তারামাছ, লোনাপানির ও মিঠাপানির শামুক, জেলিফিশ, কাঁকড়া ইত্যাদি খায়। আবার খুব ভোরে ও সন্ধ্যার আগে আগে বনের পাশের খোলা জায়গায় খাবার খেতে আসে। শীতের সময় কুয়াশা থাকা অবস্থায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। বনের কোনো গাছতলায় পাকা ফল ঝরে পড়া শুরু করলে বনমোরগ-বনমুরগী প্রতিদিন সকাল-বিকাল সেই গাছতলায় আসে। আবার বনের বড় গাছে উঠেও এদের ফল খেতে দেখা গেছে। রাত কাটায় ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু গাছের ডালে বা বাঁশঝাড়ে।[] সামান্য শব্দে ভীত হয়ে উড়ে গিয়ে বসবে গাছের মগডালে। পালানোর সময় পোষা মুরগির মতোই কক্ কক্ করে ডাকে। সর্বোচ্চ সাত মিটার উুঁচু পর্যন্ত উড়তে পারে। এমনিতে একটানা অনেকদূর উড়ে যেতে পারে। গ্যালিফর্মিস বর্গের পাখিরা সাধারণত এতটা উড়তে পারে না। এমনও দেখা গেছে যে এরা সাগর পাড়ি দিয়ে এক দ্বীপ থেকে উড়ে আরেক দ্বীপে যাচ্ছে। কোমোডো, রিংকা আর ফ্লোরেন্স দ্বীপের মাঝে এমনটা প্রায়ই দেখা যায়। ভোরে আর সন্ধ্যাবেলায় বেশি ডাকে। মোরগ চেক্-ক্রে-কি করে নিয়মিত বিরতিতে একটানা ১০-১৫ বার ডাকে।[] অন্যসব বনমোরগের তুলনায় এদের সামাজিক আচরণ বেশ জটিল।

প্রজনন

মধ্য এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সবুজ বনমোরগের প্রজনন কাল। বনমুরগী ঘন ঝোপ ও ঘাসবনে মাটিতে বাসা করে। বাসা বানানো শেষে বনমুরগী ৫-১০ টি ডিম দেয়। ডিমের রঙ ফ্যাকাসে সাদা, যাতে ছোট ফোঁটা থাকে। সাধারণত একুশ থেকে চব্বিশ দিন পরে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ফোটার অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ছানাগুলো বাসা ছাড়ে ও মায়ের সঙ্গে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। এক বছর পর ছানারা বয়োঃপ্রাপ্ত হয়। তবে দুই বছর বয়সের আগে এরা প্রজনন করে না।[]

Remove ads

মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক

সবুজ বনমোরগ ব্যাপকভাবে গৃহে পালন করা হয়। এর ফলে এই প্রজাতিটির মাঝে জেনেটিক বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়া গৃহপালিত মোরগ-মুরগির সাথে এদের সংকরায়নের ফলে বেকিসার নামে একটি সংকর প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায় বেকিসার একটি জনপ্রিয় মুরগীর প্রজাতি হিসেবে পরিগণিত। সবুজ বনমোরগের ঝলমলে রঙ আর অনন্য ডাকের জন্য পোষা জীব হিসেবেও এদের বেশ কদর রয়েছে।[]

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Remove ads

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads