শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

সিরিয়া আরব রাজতন্ত্র

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

সিরিয়া আরব রাজতন্ত্র
Remove ads

সিরিয়া আরব রাজতন্ত্র (আরবি : المملكة العربية السورية, al-Mamlakah al-Sūriyya al-‘Arabīyah) হল প্রথম আধুনিক আরব রাষ্ট্র। তবে এটি মাত্র চার মাস স্থায়ী হয় (৮ মার্চ – ২৪ জুলাই ১৯২০)। এই স্বল্পকালে হুসাইন বিন আলীর পুত্র ফয়সাল বিন হুসাইন রাষ্ট্রটি শাসন করেন। যদিও কর্তৃপক্ষ বৃহত্তর সিরিয়ার উপর প্রভুত্ব দাবি করত বাস্তবিকপক্ষে ফয়সালের সরকার সীমিত অঞ্চলেই কার্যকর ছিল। একই সাথে তারা ব্রিটিশদের উপর নির্ভরশীল ছিল। ব্রিটিশ ও ফরাসিরা বৃহত্তর সিরিয়া গঠন ও ফয়সালকে এর বাদশাহ হিসেবে মানতে রাজি ছিল না।[] ১৯২০ সালের ২৪ জুলাই রাজতন্ত্র ফরাসিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

দ্রুত তথ্য الملكة العربية السورية আল-মামালাকাহ আল-'আরবিয়াহ আল-সুরিয়া, রাজধানী ...
Remove ads

ভিত্তি

সিরিয়ায় রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আরব বিদ্রোহম্যাকমোহন-হুসাইন চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ব্রিটিশদের সাহায্যার্থে উসমানীয়দের বিরুদ্ধে আরবদের বিদ্রোহের বিনিময়ে একটি আরব রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে এই চুক্তিতে অঙ্গীকার ছিল।[]:২০৯-২১৫ এদিকে ফরাসিদের সাথে ব্রিটিশরা সাইকস-পিকট চুক্তি স্বাক্ষর করে। সাইকস-পিকট চুক্তির ফলে সিরিয়ায় আরব রাজতন্ত্রের ধ্বংস অনিবার্য ছিল। আধুনিক আরব রাষ্ট্রগুলোতে আরব বিদ্রোহের গুরুত্ব থাকলেও ঐ সময় বেশ কিছু অবিশ্বাস কাজ করছিল। এমনকি এক বা একাধিক আরব রাজতন্ত্র ধারণার বিরোধী পক্ষও ছিল।

আধুনিক সংজ্ঞায় পুতুল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশ ও ফরাসিদের উদ্দেশ্য ছিল।[]:১৮৫-১৯১ সমালোচকরা দাবি করেন যে আরব জাতীয়তাবাদীদের বাদ দিয়ে রাজকীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের দিয়ে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে বিদেশী মদদপুষ্ট রাজ্য স্থাপনই হাশেমি রাজতন্ত্রগুলোর (হেজাজ রাজতন্ত্রইরাক রাজতন্ত্র) দ্রুত পতনের কারণ। তারা আরো বলেন যে উসমানীয় সুলতানদের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেয়ায় মক্কার শরীফের পরিবারের প্রতি অনেক আরবের বিদ্বেষও একটি কারণ। এই আরবরা শত শত বছর ধরে উসমানীয় সুলতানদের প্রতি অনুগত ছিল।[]:১৮৭

Remove ads

আরব সাংবিধানিক সরকার

সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এডমন্ড এলেনবির অধীন মিশরীয় সৈন্যবহর দামেস্ক দখল করে। এর কিছুদিন পর ৩ অক্টোবর ফয়সাল শহরে প্রবেশ করেন।[]:৩০ তবে এই জয়োল্লাস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ফয়সাল শীঘ্রই সাইকস-পিকট চুক্তির ব্যাপারে জানতে পারেন। স্বাধীন আরব রাজতন্ত্রের আশা ফয়সালের থাকলেও তাকে চুক্তি অনুযায়ী উক্ত অঞ্চলের বিভাজনের কথা ও সেসাথে সিরিয়া যে ফরাসি প্রটেক্টরেট শক্তির অধীন হয়েছে তা জানানো হয়। ফয়সাল এই বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নেননি। তাকে আশ্বাস দেয়া হয় যে যুদ্ধ শেষ হলে এই বিষয়ে মীমাংসা করা হবে। সিরিয়ার উপর ফরাসিদের দাবি থেকে ব্রিটিশরা নিজেদের সমর্থন উঠিয়ে নেবে – ফয়সাল এমন আশা করছিলেন বলে ধারণা করা হয়। জেনারেল এলেনবির অনুমতিক্রমে ফয়সাল স্বাধীন আরব সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন।[]:৩৪

ফয়সাল ঘোষণা করেন যে এটি হবে ধর্ম নির্বিশেষে সকল আরবের জন্য ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতে গঠিত আরব সরকার। ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জর্জ ক্লিমেনশ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ছাড়া শুধু ব্রিটিশ পৃষ্ঠপোষকতায় অর্ধ স্বাধীন আরব রাষ্ট্রের ব্যাপারে বিরূপ ছিলেন। এমনকি এখন পর্যন্ত নেয়া পদক্ষেপগুলো সাময়িক - এলেনবির এমন আশ্বাস সত্ত্বেও ব্রিটিশ, ফরাসি ও আরবদের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব দূর হয়নি। আরব বিদ্রোহে অংশ নেয়া আরব জাতীয়তাবাদী ও অনেক আরবের মতে এটি ছিল দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধের উপলব্ধি।

Remove ads

অবস্থান নির্ধারণ

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
প্যারিস শান্তি সম্মেলনে টমাস এডওয়ার্ড লরেন্সহেজাজের প্রতিনিধিদের সাথে ফয়সাল।
Thumb
ফয়সালকে সিরিয়ার বাদশাহ হিসেবে ঘোষণা, ১৯২০।

যুদ্ধের পর অনুষ্ঠিত প্যারিস শান্তি সম্মেলনে ফয়সাল আরবদের স্বাধীনতার জন্য চাপ দেন। যুদ্ধে পরাজিত অক্ষশক্তির জাতিগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত, বিশেষ করে বিজিত এলাকার নিয়ন্ত্রণ, যেমন উসমানীয় সাম্রাজ্যের মধ্যপ্রাচ্যের এলাকা, নিয়ে এই সম্মেলনে বিজয়ী মিত্রশক্তি সিদ্ধান্ত নেয়। মধ্যপ্রাচ্যের আরব এলাকাগুলো ব্রিটিশ ও ফরাসিদের মধ্যে আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। ১৯১৯ সালের মে মাসে ফরাসি ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীরা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের নিজেদের দাবিকৃত এলাকার অধিকার ও প্রভাব নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মিলিত হন। এতে সিদ্ধান্ত হয় যে সিরিয়াতে ফরাসি নিয়ন্ত্রণের উপর ব্রিটিশ নিশ্চয়তার বিনিময়ে ব্রিটিশরা মসুল ও ফিলিস্তিনের ম্যান্ডেট পাবে।

প্রায় একই সময়ে অধিবাসীদের ইচ্ছা নির্ধারণ করার জন্য কমিশন গঠন বিষয়ে আমেরিকার সমঝোতা চুক্তি সম্পন্ন হয়। প্রথমে সমর্থন করলেও পরবর্তীকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স কিং-ক্রেন কমিশন থেকে সরে আসে যা সম্পূর্ণরূপে আমেরিকান ছিল।[]:২৬৮ ১৯২২ সাল পর্যন্ত এই কমিশনের প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তগুলো প্রকাশ হয়নি। ম্যান্ডেটের ব্যাপারে লিগ অব নেশনসের ভোটের পর এগুলো প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায় যে স্বাধীন আরব রাষ্ট্রের ব্যাপারে আরবদের জোরালো সমর্থন সেই সাথে ফরাসিদের উপস্থিতির ব্যাপারে জনগণের অসন্তোষ ছিল।[]

প্রতিষ্ঠা

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
আমির ফয়সাল।
Thumb
সিরিয়ার রাজকীয় পতাকা।
রাষ্ট্রীয় মুদ্রা
Thumb
১৯১৯ সালে বৈরুতের ব্যাংক অব সিরিয়া কর্তৃক চালু করা ২৫ সিরিয়ান পিয়াস্ট্র। পরবর্তীতে এই ব্যাংকটিকে ব্যাংক অব সিরিয়া এন্ড গ্রেটার লেবানন নামে নামকরণ করা হয়। ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত এটি সিরিয়া ও লেবানন দুই দেশের জন্য মুদ্রা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে।

ইউরোপের এই ঘটনাগুলো আল-ফাতাতের মত সিরিয়ান জাতীয়তাবাদী সমিতিগুলোকে জাতীয় কংগ্রেস গঠনের দিকে ধাবিত করে। এই সমিতিগুলো ফয়সালের অধীনে একক স্বাধীন আরব রাজতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়। কিং-ক্রেন কমিশন একীভূতকরণে উৎসাহ দেয়। ফরাসি কর্মকর্তারা অনেক প্রতিনিধিকে আসতে বাধা দিলেও সমগ্র আরব ভূখণ্ড, এমনকি ফিলিস্তিন ও লেবাননের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্রুত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৯১৯ সালের ৩ জুন সিরিয়ান কংগ্রেসের প্রথম আনুষ্ঠানিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং আল-ফাতাত সদস্য হাশিম আল-আতাসসি এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।[]:১৭

১৯১৯ সালের ২৫ জুন কিং-ক্রেন কমিশন দামেস্কে পৌছালে “স্বাধীনতা নাহয় মৃত্যু” উল্লেখিত লিফলেট দেখতে পায়। ২ জুলাই সিরিয়ান কংগ্রেস ফয়সালকে বাদশাহ হিসেবে রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের পক্ষে একটি প্রস্তাব পাশ করে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থনা ও ফরাসিদের দাবি প্রত্যাখ্যান করার কথাও বলা হয়।[]:১৯ এই কংগ্রেসকে সিরিয়ার ইতিহাসের প্রথম সংসদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং আজকের দিনেও আরব বিশ্বে এর গুরুত্ব আছে।[কার মতে?][তথ্যসূত্র প্রয়োজন] একক স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি বিশেষ করে ফিলিস্তিনের আরব জাতীয়তাবাদীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

ফয়সাল ব্রিটিশ বা আমেরিকানদের কাছ থেকে সাহায্য আশা করেছিলেন। বিশেষ করে সিরিয়া থেকে ব্রিটিশ সৈন্য প্রত্যাহার ও সিরিয়ার ব্রিটিশ সামরিক সরকার তুলে নেয়ার ব্যাপারে ইঙ্গ-ফরাসি চুক্তির পর তা বিলীন হয়ে যায়।

১৯২০ এর জানুয়ারিতে ফয়সালকে ফ্রান্সের সাথে চুক্তিতে বাধ্য করা হয়। এতে শর্ত ছিল যে যতদিন শুধুমাত্র ফরাসি সরকার উপদেষ্টা, পরামর্শদাতা ও প্রযুক্তিগত সরবরাহ করার সুযোগ পাবে ততদিন ফ্রান্স সিরিয়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নেবে এবং এতে সৈন্য সমাবেশ করবে না।[]:১৬৭ এধরনের সমঝোতা ফয়সালের তীব্র ফরাসি বিরোধী ও স্বাধীনচেতা সমর্থকরা সমর্থন করেনি। তারা ফয়সালকে চুক্তি থেকে ফিরে আসতে চাপ প্রয়োগ করে। ফলে ফয়সাল চুক্তি অমান্য করেন। এরপর ফরাসি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ শুরু হয় এবং সিরিয়ান কংগ্রেস ১৯২০ সালের মার্চে অধিবেশন আহ্বান করে ফয়সালকে সিরিয়ার বাদশাহ, হাশিম আল-আতাসসিকে প্রধানমন্ত্রী এবং ইউসুফ আল-আজমাকে যুদ্ধমন্ত্রী ও চীফ অব স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত করে আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়া আরব রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করে।

এই একতরফা কর্মকাণ্ড ব্রিটিশ ও ফরাসিরা প্রত্যাখ্যান করে। ১৯২০ সালের এপ্রিল মাসে মিত্রশক্তি মধ্যপ্রাচ্যে লীগ অব নেশনসের ম্যান্ডেটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সান রেমো সম্মেলন আহ্বান করে। ফয়সাল ও তার সমর্থকরা এই সম্মেলনকে প্রত্যাখ্যান করেন। কয়েক মাসের অব্যবস্থা ও ফরাসিদের প্রতি অঙ্গীকার পূর্ণ না হওয়ায় ফরাসি কমান্ডার হেনরি গোরাড ১৪ জুলাই ফয়সালকে আত্মসমর্পণ নাহয় যুদ্ধের জন্য সময়সীমা বেধে দেন।[]:২১৫

Remove ads

অবলুপ্তি

Thumb
জেনারেল ইউসুফ আল-আজমা
Thumb
দামেস্ক জয়ের উপর একটি ফরাসি উদযাপন চিত্র।

ফ্রান্সের সাথে আসন্ন রক্তক্ষয়ী দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখে বাদশাহ ফয়সাল আত্মসমর্পণ করেন। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইউসুফ আল-আজমা বাদশাহর আদেশ অমান্য করেন এবং সিরিয়ায় অগ্রসরমান ফরাসিদেরকে বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্র সেনাদলের নেতৃত্ব নেন। এই বাহিনী মূলত ব্যক্তিগত অস্ত্রের উপর নির্ভরশীল ছিল। ফরাসিদের মত গোলন্দাজ বাহিনী তাদের ছিল না। মায়সালুনের যুদ্ধে সিরিয়ান বাহিনী ফরাসিদের কাছে দ্রুত পরাজিত হয়। জেনারেল আল-আজমা যুদ্ধে নিহত হন। ফরাসিরা ১৯২০ সালের ২৪ জুলাই দামেস্ক দখল করে নেয়। এরপর সিরিয়া ও লেবাননে ফরাসি ম্যান্ডেট কার্যকর হয়।

Remove ads

অবদান

ফরাসি সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের পর ফয়সালকে সিরিয়া থেকে বহিষ্কার করা হয়। আগস্টে তিনি বসবাসের জন্য যুক্তরাজ্য চলে যান। ১৯২১ সালের আগস্টে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে ইরাকের বাদশাহ হওয়ার জন্য তাকে প্রস্তাব দেয়া হয়।

দামেস্ক দখলের একদিন পর ১৯২০ সালের ২৫ জুলাই আলাউদ্দিন আল-দারুবির অধীনে ফ্রান্স সমর্থিত একটি সরকার স্থাপিত হয়।[]:৩৭ ১ সেপ্টেম্বর জেনাএল গোরাড সিরিয়াকে সহজে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত এলাকাগুলোকে কয়েকটি ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করেন।

এই রাজতন্ত্র স্বল্পকালীন ও বিক্ষোভপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী আরব স্বাধীনতা আন্দোলনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে। সিরিয়ার এই পতন ইউরোপীয় শক্তিগুলোর প্রতি গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি করে। তাদেরকে মিথ্যাবাদী ও শোষক হিসেবে দেখা হয়।

Remove ads

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads