ধামইরহাট উপজেলা
নওগাঁ জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নওগাঁ জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ধামইরহাট বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।
ধামইরহাট | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে ধামইরহাট উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৮′৪৬″ উত্তর ৮৮°৫১′৫৪″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
জেলা | নওগাঁ জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৩০০.৮ বর্গকিমি (১১৬.১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ১,৮৪,৭৭৮ |
• জনঘনত্ব | ৬১০/বর্গকিমি (১,৬০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬২.৫% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ৬৪ ২৮ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
জেলার সর্ব উত্তরের একটি উপজেলা। এ উপজেলার উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে বদলগাছী উপজেলা ও পত্নীতলা উপজেলা, পূর্বে জয়পুরহাট সদর উপজেলা, পশ্চিমে পত্নীতলা উপজেলা।
১৯১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৭৩৬ জে নং সরকারী প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পত্নীতলা থানার উত্তর পূর্বাংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ধামইরহাট থনা। একই বছর অর্থাৎ ১৯১৯ সালের ২৫ নভেম্বর, গভার্মেন্ট ডিক্লারেশন নং ৮৮২৫ এল,এ মাধ্যমে ভুমি অধিগ্রহণ করে থানা ভবন নির্মানের কাজ শুরু করা হয়। ধামইরহাট থানার চকযদু মৌজায় এই থানা ভবন অবস্থিত।
থানার বর্তমান আয়তন ৩০১ বর্গকিলোমিটার।
পৌরসভা
উপজেলার ইউনিয়নগুলো হল-
পাল রাজ বংশের শেষ খ্যাতিমান রাজা রামপালের সভাকবি সন্ধ্যাকরনন্দি বরেন্দ্র ভূমিকে ‘বসুধার শীর্ষ স্থান’ বলে উল্লেখ করেছেন। বরেন্দ্র ভূমির কেন্দ্রস্থলেই আমাদের বসবাস। আবার প্রাচীন বাংলার দুই রাজধানী পুন্ড্র বর্ধণ (মহাস্থানগড়) ও গৌড় (মালদহ ও পার্শ্ববর্তী এলাকা) এর মধ্যস্থল এবং পরবর্তী কালের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ, লক্ষনাবর্তী, লহ্মৌতি, পান্ডুয়া ও মুর্শিদাবাদ সবগুলিই আবর্তিত হয়েছিল এই জনপদকে ঘিরেই। এখানকার পরগনা সন্তোষ জনপ্রিয় রাজা মহীপালের নামের প্রথম অংশের সাথে যুক্ত হয়ে মহীসন্তোষ বা মাহীসন্তোষ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। পঞ্চদশ শতকে সুলতান রুকুন উদ্দীন বারবাকশাহ এখানে বারবাকাবাদ নামের প্রাদেশিক রাজধানী স্থাপন করেন। স্থাপিত হয় টাকশাল, দুর্গ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। কিন্তু মুঘল আমলে বিরান ভূমিতে পরিণত হয় সুলতানী আমলের মাহীগঞ্জ। অবশিষ্ট ছিল কেবল রাজস্ব আদায়ের প্রশাসনিক কাঠামো ‘ সরকার বারবাকাবাদ’। মাহী সন্তোষের সুলতানি আমলের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু গবেষণা মুলক কাজ হয়েছে। সম্প্রতি মুসলিম বাংলার প্রথম মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হযরত তকিউদ্দীন আল আরাবির মাজার নির্মিত হয়েছে।
ভট্রগুরব মিশ্র সুকবি এবং নারায়ন পালের (৯ম শতক) মন্ত্রী ছিলেন। তিনি দর্ভপানী মিশ্র সহ এই পরিবারের সকল মন্ত্রী, কবি, সাহিত্যিক, বিদ্যান ও বিদুষী গণের গুন কীর্ত্তণ করেছেন স্তম্ভলিপিতে। তিনি শিবের উপাষক ছিলেন। তাই উপাস্য দেবতার বাহন গড়ুর পাখী স্তম্ভের শীর্ষে স্থাপন করে শিবের উদ্দেশ্যে উৎস্বর্গ করেছিলেন। পাল রাজত্বের অবসানের পর ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর রেশম ও নীলচাষ কার্যে নিয়োজিত বাদাল কুঠির অধ্যক্ষ গভীর জঙ্গলে স্তম্ভটি নতুনভাবে আবিষ্কার করেন। তখন বজ্রখাতে গড়–র পাখিটি বিদীর্ণ হয়ে কিছুটা কাৎ অবস্থায় স্তম্ভটি দেখতে পাওয়া যায়। ইতিহাস বিশ্রুত স্থানীয় ধর্মাশ্রয়ী লোকজন তখন একটি কিংবদন্তির অবতারনা করে। পৌরানিক কাহিনী অবলম্বনে মানুষের ধারণা জন্মে যে, দেবদূত ভীম মর্ত্যলোকের ভূমি কর্ষনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। গভীর রজনীতে চাষ কার্য্য শেষে মঙ্গলবাড়ী এসে ভোর হয়। তিনি দ্রুত লোক চক্ষুর অন্তরালে স্বর্গে গমনকালে তার হাতে থাকা পান্টিটি আপন ভারে মাতিতে পুঁতে যায়।
একাদশ শতকে পাল রাজত্বের অধঃপতনের যুগে দ্বিতীয় মহীপালের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এক গণ বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এর নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন স্থানীয় কৈবর্ত নায়ক দিব্যোক। তিনি দিবর দিঘীতে প্রতিষ্ঠিত দিব্যোক স্মৃতি স্তম্ভের (দিবরদীঘি) নিকটবর্তী স্থানে মহীপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে বাংলায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দিব্যোকের ভ্রাতুস্পুত্র ভীম জনপ্রিয় শাসক ছিলেন। তারই স্মৃতি দেবদূত ভীমের অলৌকিক শক্তিকে হয়তো আচ্ছন্ন করেছে। প্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চলের মানুষ হিন্দু ধর্মানুরাগী ছিলেন। এখানে হরগৌরির যুগল স্বর্ণমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এবং খ্রিস্ট পূর্ব দ্বিতীয় শতকের শিবলিঙ্গের অনুরূপ একটি বিগ্রহের আরধনা করত এখানকার মানুষ। সভ্যতার আলো থেকে বঞ্চিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ এই ধর্মীয় অনুভূতির কেন্দ্রে এক সময় আবিষ্কার করে মঙ্গলবারি (মঙ্গল জল)। এখানকার একটি জলাশয় থেকে সকল প্রকার রোগ শোকের মুক্তি লাভের আশায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষ মঙ্গলবার দিন ভিড় জমাতো। সেখান থেকেই মঙ্গল বারির মহিমায় মঙ্গলবাড়ী হাটে রূপান্তরিত হয়েছে। একাদশ শতকের শেষার্ধে ভীমকে পরাজীত করে রামপাল প্রিয় পিতৃভূমি বরেন্দ্র উদ্ধার করেন। তিনি প্রজা সাধারণের আকুন্ঠ ভালবাসা অর্জনের জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেনএবং জগদ্দল মহাবিহার (বিশ্ববিদ্যালয়) ও রামাবতি নামক রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এ সময় পাহাড়পুর মহাবিহার বিদ্রোহীরা ভস্মীভূত করায় এটি পরিত্যাক্ত হয়েছিল। রামাবতিকে জগদ্দল মহাবিহারের দক্ষিণে এবং মালদহের নিকটে বলে নিদের্শ করা হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান,ভবন-অট্রালিকার ধ্বংসাবশেষ ও নামের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকায় আড়ানগর, লক্ষনপাড়ার সন্নিকটে আমাইড় গ্রামটিই রামাবতি বলে অনুমিত হয়।
রাজশাহী জেলার ইতিহাস রচয়িতা প্রখ্যাত ঐতিহাসিক কাজী মোহাম্মদ মিছের মহোদয়ের বর্ণনা মতে- ‘ধামা’ শব্দ থেকে ধামইরহাট শব্দের উৎপত্তি। আর এর পিছনের ঐতিহাসিক সুত্র হলো, ১৮৫৫ সালের ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন-শোষনের বিরুদ্ধে সাঁওতাল বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে মাহালী উপজাতী গোষ্ঠীর মানুষেরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে রাজমহল ত্যাগ করে দুরবর্তী দুর্গম, পাহাড়, বন, জঙ্গলে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। এদেরই একটি শাখা বর্তমান ধামইরহাট উপজেলা পরিষদের দক্ষিণাংশে জঙ্গলে বসবাস শুরু করে। কালক্রমে প্রাণ ভয়মুক্ত হয়ে জীবন জীবিকার তাগিদে সহজ লভ্য বাঁশ ও বেঁত দিয়ে মানুষের দৈনন্দিন গৃহস্থালী কাজের অতি প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত কাজে মনোযোগ দেয়। এসব সামগ্রীর পসরা নিয়ে সপ্তাহের রবিবার দিন মাহালীরা বর্তমান হাট খোলায় বিক্রি করতে বসতো। পণ্য গুলোর মধ্যে ধামাই ছিল প্রধান। কেননা এ সময় পণ্য লেন-দেনের জন্য বাটখারা বা দাঁড়িপাল্লা ও ছালা বস্তার প্রচলন না থাকায় ধামার ব্যাপক চাহিদা ছিল। আর ধামার পাশাপাশি দোন, ডোল, ডালি, ডালা, চাঙ্গারী, ঝাঁটা, কুলা, খইচালা, মাথল প্রভৃতি পন্যগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এখানে ভিড় জমাতো। এভাবে ধামা বিক্রির হাট দিনে দিনে প্রসার লাভ করে। এখানে গড়ে উঠে বাজার, পুলিশ স্টেশন, থানা উন্নয়ন কেন্দ্র এবং বর্তমানের ধামইরহাট উপজেলা পরিষদ।
২০০১ সালের জরিপে পুরুষের সংখ্যা ৮৭ হাজার এবং মহিলা ৮২ হাজার।
ধামইরহাট সরকারি এম এম ডিগ্রি কলেজ
ধামইরহাটের অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। প্রচুর ধান চাষ হয়। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে শ্রেষ্ঠ উপজেলা। সামাজিক বনায়নে এই উপজেলা তিনবার প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পায়। ইদানীং কৃষি যন্ত্রপাতি নির্মানে বেশ অবদান রাখছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.