Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নিকিয়ার প্রথম অধিবেশন (/naɪˈsiːə/ ; প্রাচীন গ্রিক: Νίκαια [ˈnikεa]) ছিলো ধর্মসংশোধনের উদ্দেশ্যে তৎকালীন খ্রিস্টান বিশপদের একটি সম্মেলনসভা, যা ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন কর্তৃক বিথিনিয়ান শহর নিকিয়াতে (বর্তমান ইজনিক, তুরস্ক) আহ্বান করা হয়েছিল।
এই বিশ্বজনীন পরিষদটি সমস্ত খ্রিস্টজগতের প্রতিনিধিত্বকারী একটি অধিবেশনের মাধ্যমে চার্চসমূহের ঐকমত্য অর্জনের প্রথম প্রচেষ্টা চালায়। কর্ডুবার হোসিয়াস হয়তো এর আলোচনায় সভাপতিত্ব করেছিলেন।[1][2]
এই সম্মেলনের প্রধান সাফল্য ছিল, পুত্র ঈশ্বরের স্বর্গীয় প্রকৃতি এবং পিতা ইশ্বরের সাথে তার সম্পর্কের খ্রিস্টতাত্ত্বিক বিরোধের নিষ্পত্তি, নিকিয় মতবাদের প্রথম অংশ বিনির্মাণ, ইস্টার তথা পুনরুত্থান পার্বণের অভিন্ন দিবস পালন বাধ্যতামূলক করা,[3] এবং প্রাথমিক যাজকীয় অনুশাসন জারি করা।[4]
নিকিয়ার প্রথম অধিবেশনটি ছিল চার্চসমূহের প্রথম প্রতিনিধিত্বমূলক পরিষদ। অত্যন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে, এর দ্বারা প্রথমবারের মতো অভিন্ন খ্রিস্টান মতবাদ তৈরি হয়, যাকে বলা হয় নিকিয় মতবাদ। মতবাদটির তৈরির সাথে সাথে, বিশপদের পরবর্তী স্থানীয় এবং আঞ্চলিক পরিষদের (সিনডস) জন্য একটি নজির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যাতে বিশ্বাসের বিবৃতি এবং মতবাদগত গোঁড়ামির ক্যানন তৈরি করা হয়—যার উদ্দেশ্য সমগ্র খ্রিস্টানজগতের জন্য বিশ্বাসের ঐক্যকে সংজ্ঞায়িত করা।[5]
প্রাচীন গ্রিক: οἰκουμένη oikouménē, ইকুমেনি "(অধ্যুষিত)" থেকে "ইকুমেনিকাল" শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ হলো "বিশ্বব্যাপী", কিন্তু সাধারণত ধারণা করা হয় যে, আবাদকৃত মানব অধ্যুষিত পৃথিবী অর্থেই এর প্রয়োগ সীমাবদ্ধ ছিল। ইতিহাসের সে সময়ে রোমান সাম্রাজ্যের সমার্থক ছিল শব্দটি। কাউন্সিল তথা পরিষদ অর্থে কোনো শব্দের প্রাচীনতম ব্যবহার ৩৩৮ সালের সময়কার ইউসেবিয়াসের লাইফ অফ কনস্টানটাইন ৩.৬[6] এ পাওয়া যায়, যেখানে বলা হয়েছে "তিনি একটি ইকুমেনিকাল কাউন্সিল তথা বিশ্বজনীন পরিষদ আহ্বান করেছিলেন" (σύνοδον οἰκουμενικὴν συνεκρότει , sýnodon oikoumenikḕn synekrótei)।[7] এবং কনস্টান্টিনোপলের প্রথম অধিবেশন থেকে পোপ প্রথম দামাসাস এবং ল্যাটিন বিশপদের কাছে ৩৮২ সালে চিঠি আসে।[8]
কাউন্সিলের একটি উদ্দেশ্য ছিল পিতার সাথে যীশুর সম্পর্কের বিষয়ে আলেকজান্দ্রিয়ার চার্চের অভ্যন্তর থেকে উদ্ভূত মতবিরোধের সমাধান করা: বিশেষ করে, পুত্র কি পিতার নিজ সত্তা থেকে 'জন্ম' হয়েছে এ বিষয়টি। কারণ এর ফলে দুটি অর্থ বেরোয়, তা হলো হয় ইশ্বরের কোনো সূচনা নেই, অথবা অবস্তু থেকে সৃষ্টি হওয়ায় ইশ্বরের একটি সূচনা দৃশ্যমান হয়।[9] আলেকজান্দ্রিয়ার পোপ আলেকজান্ডার এবং অ্যাথানাসিয়াস প্রথম মতটি গ্রহণ করেন; অপরদিকে প্রসিদ্ধ প্রেসবিটার আরিয়াস, যার থেকে আরিয়ানিজম শব্দটি এসেছে, তিনি দ্বিতীয় মত গ্রহণ করেন। পরিষদ অপ্রতিরোধ্যভাবে আরিয়ানদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয় (আনুমানিক ২৫০-৩১৮ এর মধ্যে কাউন্সিলে উপস্থিত বিশপদের, দু'জন ব্যতীত সকলেই এই মতবাদে স্বাক্ষর করতে সম্মত হয় এবং আরিয়াসসহ এই দুজনকে ইলিরিয়াতে নির্বাসিত করা হয়।[10]
অধিবেশনের আরেকটি ফলাফল ছিল ইস্টার কখন উদযাপন করা হবে সে বিষয়ে একটি চুক্তি সম্পন্ন করা, যা চার্চের ক্যালেন্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, আলেকজান্দ্রিয়ার চার্চের নিকট একটি চিঠিতে আদেশ করা হয়, সেখানে সোজাসুজি বলা হয়েছে:
আমরা, আপনাদের পবিত্র পৌষ সংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসার সুসংবাদও পাঠাচ্ছি, অর্থাৎ আপনাদের প্রার্থনা ফলস্বরূপ এই প্রশ্নের সমাধান হয়ে গিয়েছে। প্রাচ্যের সমস্ত ভাইয়েরা যারা এখনও ইহুদি রীতি অনুসরণ করেছে তারা এখন থেকে রোমানদের এবং আপনাদের নিজেদের এবং আমাদের সকলের প্রথা পালন করবে যারা প্রাচীনকাল থেকে আপনার সাথে ইস্টার পালন করে আসছে।[8]
সমস্ত খ্রিস্টানজগতের[11] প্রতিনিধিত্বকারী অধিবেশনের মাধ্যমে চার্চের ঐকমত্য অর্জনের প্রথম প্রচেষ্টা হিসাবে ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এই কাউন্সিলটি ছিল প্রথম কোন উপলক্ষ যেখানে খ্রিস্টতাত্ত্বিক যৌক্তিল দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়।[11] এর মাধ্যমে পরবর্তী সাধারণ পরিষদের জন্য মতবাদ ও নীতি গ্রহণের নজির স্থাপিত হয়। এই পরিষদকে সাধারণত খ্রিস্টধর্মের ইতিহাসে প্রথম সাতটি ইকুমেনিকাল কাউন্সিলের সময়কালের শুরু হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[12]
নিকিয়ার প্রথম কাউন্সিল, চার্চের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ পরিষদ। রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন দ্য গ্রেট কর্তৃক ৩২৫ সালের ইস্টারটাইডে কর্ডোবার বিশপ হোসিয়াসের নেতৃত্বে একটি সিনড (ধর্মসভা) এর সুপারিশের ভিত্তিতে আহবান করা হয়, কেউ বলেন খোদ হোসিয়াসই আহ্বান করেন কনস্টানটাইন তা সমর্থন করেন।[13] গ্রীক-ভাষী পূর্ব অঞ্চলে আরিয়ান বিতর্কের কারণে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল তার তদন্তের প্রেক্ষিতে এই সিনড তলব করা হয়েছিল।[1] বেশিরভাগ বিশপের মতে, আরিয়ুসের শিক্ষা ছিল ধর্মবিরোধী এবং আত্মার পরিত্রাণের জন্য বিপজ্জনক।[14] ৩২৫ সালের গ্রীষ্মে, সমস্ত প্রদেশের বিশপদের নিকিয়ায় ডেকে পাঠানো হয়, এটি এমন একটি জায়গা যেখানে বিশেষ করে এশিয়া মাইনর, জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, সিরিয়া, মিশর, গ্রীস এবং থ্রেসের বহু প্রতিনিধিদের জমায়েত হবার জন্য খুবই অভিগম্য ছিলো।
ওয়ারেন এইচ. ক্যারলের মতে, নিকিয়া পরিষদে, একটি ধর্মবিরোধী ফেরকা থেকে উত্থিত একটি চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় নাযিলকৃত মতবাদকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য চার্চ তার প্রথম মহান পদক্ষেপ নিয়েছিল।[1]
সম্রাট কনস্টানটিন রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত খ্রিস্টান চার্চে কর্মরত প্রায় ১,৮০০ জন বিশপকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তন্মধ্যে প্রায় ১,০০০ জন ছিলেন প্রাচ্যীয় এবং ৮০০ জন ছিলেন পশ্চিমা। কিন্তু পরিষদে সে তুলনায় অনেক কম সংখ্যক উপস্থিত হন যাদের সংখ্যা অনির্ণেয়। সিজারিয়ার ইউসেবিয়াসের গণনায় উপস্থিতির সংখ্যা ছিল মাত্র আড়াইশো জনের বেশি,[15] আলেকজান্দ্রিয়ার অ্যাথানাসিয়াসের গণনামতে ৩১৮ জন।[7] আর অ্যান্টিওকের ইউস্টাথিয়াস অনুমান করেন সংখ্যাটি "প্রায় ২৭০" হবে।[16] এদের তিনজনই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। পরে, সক্রেটিস স্কলাস্টিকাস তিনশোর বেশি উপস্থিতি লিপিবদ্ধ করেন।[16] ইভাগ্রিয়াস,[16] হিলারি অফ পোয়েটার্স,[17] জেরোম,[18] ডায়োনিসিয়াস এক্সিগুয়াস,[19] এবং রুফিনাস[20] ৩১৮ জনের কথা লিপিবদ্ধ করেন। এই ৩১৮ জনের সংখ্যাটি পূর্ব অর্থোডক্স চার্চ[21] এবং কিবতীয় অর্থোডক্স চার্চের লিটার্জিতে সংরক্ষিত আছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিটি অঞ্চল এবং সাসানীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান খ্রিস্টান চার্চ থেকে প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহন করেন।[22] অংশগ্রহণকারী বিশপদেরকে তাদের এপিসকোপাল শাসন থেকে কাউন্সিলে বিনামূল্যে ভ্রমণের পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এই বিশপগণ একা আসেন নি; প্রত্যেকের সাথে দুজন করে যাজক এবং তিনজন করে ডিকন (পরিচারক) আনার অনুমতি ছিল, তাই মোট উপস্থিতির সংখ্যা ১৮'শর বেশি হতে পারে। ইউসেবিয়াস, সহচর যাজক, ডিকন (পরিচারক) এবং অ্যাকোলাইটদের সংখ্যা প্রায় অগণিত ছিল, বলেছেন। একটি সিরিয় পাণ্ডুলিপিতে পূর্বাঞ্চলীয় বিশপদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে কোয়েলে-সিরিয়ার বাইশ জন, ফিলিস্তিনের উনিশ জন, ফিনিসিয়া থেকে দশজন, আরব থেকে ছয়জন। আর বাকিরা আসেন অ্যাসিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, পারস্য ও অন্যত্র থেকেয় থেকে। অবশ্য তখনো প্রেসবিটারদের থেকে বিশপদের শ্রেষ্ঠত্ব ছিলো না।[23][24]
অধিবেশনে উপস্থিতির দিক দিয়ে প্রাচ্যের বিশপগণ বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তন্মধ্যে, প্রথম পদমর্যাদা ছিল পাদ্রিদের, যেমন: আলেকজান্দ্রিয়ার আলেকজান্ডার এবং অ্যান্টিওকের ইউস্টাথিয়াস। সমবেত পাদ্রিদের মধ্যে অনেকে, উদাহরণস্বরূপ, থিবসের প্যাফনুটিয়াস হেরাক্লিয়ার পোটামন, এবং নিওসেসারিয়ার পল- মতবিশ্বাসের স্বীকারকারী হিসাবে মঞ্চে দাঁড়ান, এবং তাদের মুখে নিগ্রহের চিহ্ন নিয়েই পরিষদে আসেন। প্যাট্রিস্টিক পণ্ডিত টিমোথি বার্নস তার বই কনস্টানটাইন অ্যান্ড ইউসেবিয়াস এ এই মওকিফটি সমর্থন করেন।[25] ঐতিহাসিকভাবে, এ সমস্ত ধ্বংসাত্মক স্বীকারকারীদের প্রভাবকে বলিষ্ঠ হিসাবে দেখানো হলেও, সাম্প্রতিক পাণ্ডিত্যগুলিতে এটি প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।[20]
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপস্থিতিগণ: নিকোমিডিয়ার ইউসেবিয়াস; কথিত প্রথম চার্চের ইতিহাসবিদ সিজারিয়ার ইউসেবিয়াস। ধারণা করা হয় যে মাইরার সেন্ট নিকোলাসও উপস্থিত ছিলেন; তার জীবনই ছিল সান্তাক্লজ কিংবদন্তির মূলগোড়া)। আরও উপস্থিত ছিলেন জেরুজালেমের ম্যাকারিয়াস, যিনি পরে অ্যাথানাসিয়াসের একজন কট্টর রক্ষক ছিলেন, সেন্ট গ্রেগরি দ্য ছেলে আর্মেনিয়ার অ্যারিস্টাসেস, সিজারিয়ার লিওনটিয়াস, প্রাক্তন সন্ন্যাসীনিসিবিসের জ্যাকব, গ্যাংরার হাইপেটাস, সার্ডিকার প্রোটোজিন, সেবাস্টোপলিসের মেলিটিয়াস, অ্যাকিলিয়াস অফ ল্যারিসা, যিনি থেসালির অ্যাথানাসিয়াস হিসাবে বিবেচিত,[26] ট্রাইমিথাউসের স্পাইরিডিয়ন, যিনি একজন বিশপ থাকাকালীনও একজন মেষপালক হিসেবে জীবনযাপন করেছিলেন।[27] বিদেশ থেকে এসেছিলে পারস্য ও ভারতের বিশপ জন,[28] গথিক বিশপ থিওফিলাস এবং জর্জিয়ার পিটিউন্টের বিশপ স্ট্রাটোফিলাস।
ল্যাটিন ভাষাভাষী প্রদেশগুলি থেকে কমপক্ষে পাঁচজন প্রতিনিধি উপস্থিত হন: ইতালিয়া থেকে ক্যালাব্রিয়ার মার্কাস, আফ্রিকা থেকে কার্থেজের সিসিলিয়ান, আন্দালুস থেকে কর্ডোবার হোসিয়াস, গল থেকে ডাইয়ের নিকাসিয়াস, [26] এবং দানিউব প্রদেশ থেকে সিরমিয়ামের ডমনাস।
আলেকজান্দ্রিয়ার অ্যাথানাসিয়াস, একজন তরুণ ডেকন এবং আলেকজান্দ্রিয়ার বিশপ আলেকজান্ডারের সহচর, সহকারীদের মধ্যে ছিলেন। অ্যাথানাসিয়াস তার জীবনের বেশিরভাগ সময় আরিয়ানবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে কাটিয়েছেন। কনস্টান্টিনোপলের আলেকজান্ডার, যিনি সেসময় একজন প্রেসবিটার ছিলেন, তিনিও তাদের বয়স্ক বিশপের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত হন।[26]
আরিয়াসের সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন টলেমাইসের সেন্ডেকাস, মারমারিকার থিউনাস, জেফিরিয়াস বা জোপিরাস এবং ডেথেস, এদের সকলেই লিবিয়ার পেন্টাপোলিস থেকে আসেন। অন্যান্য সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন নিকোমিডিয়ার ইউসেবিয়াস, টাইরাসের পলিনাস, লিড্ডার অ্যাক্টিয়াস, ইফেসাসের মেনোফ্যান্টাস এবং নিকিয়ার থিওগনাস।[26][29]
"কনস্টানটাইন কাউন্সিলের উদ্বোধনের দিল একটি বেগুনি এবং সোনায় জ্বলজ্বল করা প্রবেশদ্বার তৈরি করেন, সম্ভবত জুনের শুরুতে, কিন্তু তিনি সম্মানের সাথে বিশপদেরকে নিজের সামনে বসান।"[1] ইউসেবিয়াস বর্ণনা করেন যে, কনস্টানটিন "স্বয়ং ঈশ্বরের স্বর্গীয় বার্তাবাহকের মতো সমাবেশের মধ্য দিয়ে আগমন করেন। তার পড়নে ছিল আলোক রশ্মির মতো চকচকে স্বর্ণ এবং মূল্যবান পাথরের উজ্জ্বল জাঁকজমক দ্বারা সজ্জিত একটি বেগুনি আলখাল্লা, যা থেকে উজ্জ্বল দীপ্তি প্রতিফলিত হতে থাকে।"[15] সম্রাট একজন তত্ত্বাবধায়ক এবং সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু কোনো পক্ষে ভোট দেননি। কনস্টানটিন রোমান সিনেটের মতো পরিষদের আয়োজন করেছিলেন। কর্ডোবার হোসিয়াস হয়তো এর আলোচনায় সভাপতিত্ব করেছিলেন; তিনি সম্ভবত পোপের উত্তরাধিকারীদের একজন ছিলেন।[1] নিকোমিডিয়ার ইউসেবিয়াস যথাসম্ভব স্বাগত বক্তব্য দিয়েছিলেন।[1][30]
সিনোডের এজেন্ডায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল:
২০ মে, নিকিয়ার ইম্পেরিয়াল প্রাসাদের কেন্দ্রীয় কাঠামোতে, আরিয়ান প্রশ্নের উপর প্রাথমিক আলোচনার মাধ্যমে অধিবেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। সম্রাট কনস্টানটিন প্রায় এক মাস পরে ১৪ জুন আসেন।[38] এই আলোচনায়, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন আরিয়াস, যার বেশ কিছু অনুগামীও ছিল। "নিকোমিডিয়ার ইউসেবিয়াসের নেতৃত্বে কাউন্সিলের প্রায় ২২ জন বিশপ আরিউসের সমর্থক হিসাবে আসেন। কিন্তু যখন তার মাকতুবাত থেকে আরও কিছু জঘন্য অনুচ্ছেদ পড়া হয়, তখন সেগুলিকে প্রায় সর্বজনীনভাবে অবমাননাকর হিসাবে দেখা হয়।"[1] নিকিয়ার বিশপ থিওগনিস ও চ্যালসেডনের বিশপ মারিস ছিলেন আরিউসের প্রাথমিক সমর্থকদের একজন।
সিজারিয়ার ইউসেবিয়াস ফিলিস্তিনের সিজারিয়াতে পুনর্মিলনের একটি রূপ হিসাবে তার নিজস্ব ডায়োসিসের বাপ্তিস্মমূলক মতবাদের কথা মনে করার আহ্বান জানান। বিশপদের সংখ্যাগরিষ্ঠ তার সাথে একমত হন। কিছু সময়ের জন্য, পণ্ডিতরা মনে করেছিলেন যে মূল নিকিয় মতবাদ ইউসেবিয়াসের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। বর্তমানে, বেশিরভাগ পণ্ডিত মনে করেন যে মতবাদটি জেরুজালেমের বাপ্তিস্মমূলক মতবাদ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যেমন হ্যান্স লিটজম্যানও একই কথা বলেছেন।
অর্থোডক্স বিশপগণ মতবাদ সম্পর্কিত তাদের প্রতিটি প্রস্তাবনা পেশ করার অনুমোদন লাভ করেছিল। পুরো এক মাস অধিবেশনে থাকার পর, ১৯ জুন পরিষদটি আসল নিকিয় মতবাদ ঘোষণা করে। বিশ্বাসের এই কাজটি সমস্ত বিশপের কাছে গৃহীত হয়েছিল "কিন্তু লিবিয়ার দু'জন ছাড়া, যারা শুরু থেকেই আরিয়াসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন"।[1] তাদের ভিন্নমতের কোনো সুস্পষ্ট ঐতিহাসিক নথি বাস্তবে বিদ্যমান নেই; এই বিশপদের স্বাক্ষর কেবল মতবাদ থেকে অনুপস্থিত। সেশনগুলি ২৫ আগস্ট পর্যন্ত ছোটখাটো বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করতে থাকে।[38]
আরিয়ান বিতর্কের উৎপত্তি আলেকজান্দ্রিয়ায় হয়েছিল, যখন সদ্য পুনর্বহালপ্রাপ্ত প্রেসবিটার আরিউস[39] তার চার্চের বিশপ আলেকজান্দ্রিয়ার পোপ আলেকজান্দারের মতবাদের বিপরীত মতবাদ প্রচার করতে শুরু করেন। বিতর্কিত বিষয়গুলি ঈশ্বর (পিতা) এবং ঈশ্বরের পুত্রের (যীশু) প্রকৃতি এবং সম্পর্ককে কেন্দ্র করে উত্থিত হয়। মতভেদগুলি ঈশ্বরত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা এবং যীশুর ঈশ্বরের পুত্র হওয়ার অর্থ কী তা থেকে উৎপন্ন হয়। আলেকজান্দারের মানতেন যে, পুত্র, পিতার মতই একই অর্থে ঐশ্বরিক এবং পিতার সাথেই চিরন্তন ছিলেন। অন্যথায় তিনি সত্যিকারের পুত্র হতে পারেন না।[9][37]
আরিউস, পিতা ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠত্ব এবং একত্ববাদের উপর জোর দান করেন, যার অর্থ একমাত্র পিতাই সর্বশক্তিমান এবং অসীম। এ কারণে পিতার ঐশ্বর্য অবশ্যই পুত্রের চেয়ে বেশি। আরিউসের শিক্ষামতে, পুত্রের সূচনা আছে এবং তিনি পিতার অনন্ততা তথা প্রকৃত ঈশ্বরত্বের অধিকারী নন, বরং শুধুমাত্র পিতার অনুমতি ও ক্ষমতাবলে তাকে "ঈশ্বর" বানানো হয়েছিল, এবং পুত্রই পিতা ইশ্বরের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।[9][37]
পরিষদে আরিউস মতবাদের আলোচনা ও বিতর্ক প্রায় ২০ মে থেকে প্রায় ১৯ জুন পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।[37] পৌরাণিক বিবরণ অনুসারে, বিতর্ক এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে এক পর্যায়ে, আরিউসকে সেন্ট নিকোলাস অফ মাইরা মুখে আঘাত করেছিলেন, যাকে পরে আইনভুক্ত করার কথা ছিল।[40] এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে অনেকেই বলেন, এটি নিশ্চিতভাবে অপ্রাসঙ্গিক। কারণ হলো আরিউস নিজেই পরিষদের অধিবেশনস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, কারণ তিনি তো বিশপ ছিলেন না।[41]
"জন্মলাভ" হওয়া, "সৃষ্ট" হওয়া এবং "জন্ম দানকৃত" হওয়া, এগুলোর মধ্যকার পার্থক্যের উপর নির্ভর করে বেশিরভাগ বিতর্ক সৃষ্টি হয়। আরিয়ানদের দৃষ্টিতে এগুলি অপরিহার্যরূপে মূলত একই; আলেকজান্ডারের অনুসারীগণ তেমনটা ভাবতেন না। নিকিয়ায় এ বিতর্কে ব্যবহৃত এজাতীয় অনেক শব্দের সঠিক অর্থ তখনও অন্যান্য ভাষাভাষীদের কাছে অস্পষ্ট ছিল। "সারনির্যাস" (ousia), "পদার্থ" (hypostasis), "প্রকৃতি" (physis), "ব্যক্তি" (prosopon), এগুলোর মতো প্রাক-খ্রিস্টীয় দার্শনিকদের কাছ থেকে নেওয়া গ্রীক শব্দগুলি বিভিন্ন অর্থ বহন করে, যার ফলে অর্থ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এই ভুল বোঝাবুঝি গড়াতে থাকে। homoousia শব্দটি, বিশেষ করে, প্রাথমিকভাবেই অনেক বিশপের কাছে অপছন্দ ছিল কারণ নস্টিক বিধর্মীদের সাথে শব্দটির সংশ্লিষ্টতা ছিল। নস্টিকগণ তাদের ধর্মতত্ত্বে শব্দটি ব্যবহার করত, তাছাড়া তাদের ধর্মবিরোধীদের ব্যাপারে ২৬৪-২৬৮ সালে অ্যান্টিওকের ধর্মসভায় নিন্দাজ্ঞা দেয়া হয়।
আজ অবধি অবশিষ্ট বিবরণ অনুসারে, প্রেসবিটার আরিয়াস পিতা ঈশ্বরের আধিপত্যের পক্ষে যুক্তি দেন, এবং তিনি মানতেন যে যীশু পিতা ইশ্বরের ইচ্ছার ফলস্বরূপ সৃজিত হন, এবং সেজন্য পুত্র যীশু একজন ঈশ্বরসৃষ্ট জীব, তিনি সরাসরি অনন্ত অসীম ঈশ্বরের জন্ম দানকৃত সন্তান। আরিয়াসের যুক্তি ছিল যে, সকল কালের পূর্বে ঈশ্বরের প্রথম সৃষ্টি ছিলেন যীশু। তার অবস্থান ছিল যে, পুত্রের একটি শুরু আছে, শুধুমাত্র পিতার কোন শুরু নেই। আরিয়াস যুক্তি দিয়ে দেখান যে, অন্য সব কিছু পুত্রের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে, আরিয়ানরা বলতেন, একমাত্র পুত্রই সরাসরি ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং তার জন্মলাভ করা সন্তান; তাই একটা সময় ছিল যখন তার কোন অস্তিত্ব ছিল না, শুধুই ইশ্বর একা ছিলেন। আরিউস বিশ্বাস করতেন যে, ঈশ্বরের পুত্র সঠিক ও ভুলের স্বাধীন ইচ্ছার অধিকারী ছিলেন এবং "তিনি যদি সত্যিকার অর্থের একজন পুত্র হন, তাহলে অবশ্যই তাকে পিতার পরে আসতে হবে, অর্থাৎ সত্যিকার অর্থে পুত্র হলে পিতার আগমন আগে ঘটবে এবং পুত্রের আগমন পরে ঘটবে। ফলে স্পষ্টতই প্রমাণিত যে, এমন একটা সময় ছিল যখন তিনি অস্তিত্বমান ছিলেন না, এবং তাই তিনি ছিলেন একটি সসীম সত্তা",[42] এবং তিনি পিতা ঈশ্বরের অধীন৷ অতএব, আরিউস "পিতার দেবত্ব পুত্রের চেয়ে বড়" এ ব্যাপারে জোর দেন। আরিয়ানগণ বাইবেলের বহু বিবৃতি উপস্থাপন করে ধর্মগ্রন্থের সনির্বন্ধ আবেদন করেন, যেমন "পিতা আমার চেয়ে বড়" (জন ১৪:২৮),[43] এবং এছাড়াও পুত্রই "সমস্ত সৃষ্টির প্রথমজাত" (কলোসিয়ানস ১:১৫) ইত্যাদি।[44]
বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গিটি যে ধারণা থেকে উদ্ভূত হয়েছিল সেটি ছিল এমন যে, পুত্র জন্মদান নিজেই পিতার স্বভাবগত, যা চিরন্তন। এভাবে, পিতা সর্বদা একজন পিতা ছিলেন এবং পিতা এবং পুত্র উভয়ই সর্বদা একসাথে, অনন্তকাল, সমভাবে এবং স্থিরভাবে বিদ্যমান ছিলেন।[37] আরিয়ানবিরোধী যুক্তিগুলো বলে যে, প্রতিকৃতিগুলি "অনন্তকালীনভাবে জন্মিত" হয়েছিল, তাই শুরুও নেই। আরিয়াসের বিরোধিতাকারীরা বিশ্বাস করতেন যে, আরিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করা মানে ঈশ্বরত্বের একতাকে ধ্বংস করা এবং পিতার সাথে পুত্রকে অসম করে তোলা। তারা যখন নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদগুলি ব্যাখ্যা করেন, তখন জোর দেন যে, এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি "আমি এবং পিতা এক" (জন ১০:৩০)[45] এবং "বাক্যই ঈশ্বর ছিল" (জন ১:১),[46] ইত্যাদি অনুচ্ছেদগুলির পরিপন্থী। তারা অ্যাথানাসিয়াসের মতই ঘোষণা করে যে,[47] পুত্রের কোন শুরু নেই, কিন্তু পিতার কাছ থেকে তার একটি "অনন্ত উদ্ভব" রয়েছে, তাই পুত্র পিতার সহ-অনন্ত এবং সমস্ত দিক দিয়েই ঈশ্বরসম।[48]
বিতর্ক শেষে পরিষদ ঘোষণা করে, পুত্রও সত্য ঈশ্বর, পিতার সাথে চিরন্তন এবং পিতার সমপদার্থ থেকে জন্মগ্রহণ করেন। যুক্তি হল, এই মতবাদ পুত্রের ব্যাপারে শাস্ত্রীয় সর্বোত্তম উপস্থাপনার পাশাপাশি প্রেরিতদের কাছ থেকে তার সম্পর্কে প্রচলিত খ্রিস্টান বিশ্বাসগুলোর সংহিতাবদ্ধ করে। এই বিশ্বাসটি নিকিয়ান মতবাদ হিসেবে বিশপদের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, যা তখন থেকে নিকিনো-কনস্টান্টিনোপলিটান মতবাদ নামে পরিচিত হওয়ার ভিত্তি তৈরি করে।[41]
পরিষদ কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি ছিল একটি মতবাদ, একটি প্রজ্ঞাপন এবং সমস্ত খ্রিস্টান বিশ্বাসের সারাংশ তৈরি করা। বেশ কিছু মতবাদের অস্তিত্ব আগে থেকেই ছিল; আরিউস সহ পরিষদের সদস্যদের কাছে এমন অনেক মতবাদই গ্রহণযোগ্য ছিল। আদিকাল থেকে, বিভিন্ন মতবাদ খ্রিস্টানদের সনাক্তকরণের মাধ্যম হিসেবে কাজ করত, অন্তর্ভুক্তি ও স্বীকৃতির উপায় হিসেবে, বিশেষ করে বাপ্তিস্মের সময়।
রোমে, উদাহরণস্বরূপ, প্রেরিতদের মতবাদ জনপ্রিয় ছিল, বিশেষ করে লেন্ট এবং ইস্টার মৌসুমে চলার জন্য। নিকিয়া পরিষদে, একটিমাত্র বিশেষ মতবাদকে চার্চের আকিদাসমূহ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়ণ, উহা স্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত এবং অস্বীকারকারীদের বাদ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।
মূল নিকিয়ান মতবাদের ভাষ্যটি নিম্নরূপ:
নিকিয়ান মতবাদের কিছু স্বতন্ত্র উপাদান, সম্ভবত কর্ডোবার হোসিয়াসের কাছ থেকে যোগ করা হয়েছিল, কিছুটা বিশেষভাবে, আরিয়ান দৃষ্টিভঙ্গির বৈপরীত্যের জন্য।[9][50]
মতবাদ রচনা শেষে অ্যানাথেমাসদের একটি তালিকা আসে, যা স্পষ্টভাবে আরিয়ানদের বিবৃত দাবিগুলিকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল।
এভাবেই, আরিয়ান এবং তাদের বিরোধীদের উভয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি বাপ্তিস্মমূলক মতবাদ দাঁড় করানোর পরিবর্তে, পর্ষদ এমন একটি মতবাদের জারি করে যা ছিল স্পষ্টতই আরিয়ানবাদের সম্পূর্ণ বিরোধী এবং তাদের বিশ্বাসের স্বতন্ত্রমৌলের সাথে বেমানান। আকিদার এই কাজের পাঠ্যকপিটি অ্যাথানাসিয়াস ও অন্যত্র জায়গায় ইউসেবিয়াসের আপন মণ্ডলীর কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে সংরক্ষিত আছে। অন্যদিকে আরিয়ান-বিরোধীদের সয়লাব থাকা সত্ত্বেও, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হোমুসিয়ান মতবাদটি কাউন্সিলে গৃহীত হয়। কোইন গ্রীক শব্দ থেকে হোমুসিয়ান শব্দটির উৎপত্তি, এর অর্থ অনুবাদ করা হয় "একই পদার্থের", যা ২৬৪-২৬৮ সালে অ্যান্টিওক ধর্মসভায় নিন্দাজ্ঞা করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কর্ডোবার বিশপ হোসিয়াস, গোঁড়া হোমোসিয়ানদের মধ্যে একজন ছিলেন। সম্ভবত তিনিই কাউন্সিলকে ঐকমত্যে আনতে সাহায্য করেন। অধিবেশনের সময়, তিনি চার্চের সমস্ত বিষয়ে সম্রাটের একজন আস্থাভাজন ছিলেন। তালিকায় হোসিয়াস শীর্ষ বিশপদের একজন ছিলেন, এবং অ্যাথানাসিয়াস তাকে নিকিয়ান মতবাদের প্রকৃত গঠনকারী হিসেবে বিবেচনা করেন। অ্যান্টিওকের ইউস্টাথিয়াস, আলেকজান্দ্রিয়ার আলেকজান্ডার, অ্যাথানাসিয়াস এবং অ্যানসাইরার মার্সেলাসের মতো ধর্মীয় নেতাগণ সকলেই হোমোসিয়ানদের মতবাদ মেনে চলতেন।
আরিউসের প্রতি তার সহানুভূতি সত্ত্বেও, সিজারিয়ার ইউসেবিয়াস পুরো নিকিয়ান মতবাদকে গ্রহন ক্রে পর্ষদের সিদ্ধান্ত মেনে চলেন। আরিউসকে সমর্থনকারী বিশপের প্রাথমিক সংখ্যা ছিল কম। এক মাস আলোচনার পর, ১৯ জুন, তার পক্ষে কেবল দুজন বাকি ছিল: লিবিয়ার মারমারিকার থিওনাস এবং টলেমাইসের সেকুন্ডাস। চ্যালসেডনের মারিস, যিনি প্রথমে আরিয়ানবাদকে সমর্থন করেছিলেন, পরে পুরো নিকিয়ান মতবাদের সাথে সম্মত হন। একইভাবে নিকোমিডিয়ার ইউসেবিয়াস এবং নিসের থিওগনিসও কিছু কিছু বিবৃতি ছাড়া বাকি সব বিষয়ে নিকিয়ান মতবাদের সাথে একমত হন।
সম্রাট পূর্বেই ঘোষনা দেন যে: যারা এই পরিষদের সমাধানকৃত মতবাদকে সমর্থন করতে অস্বীকার করবে তাদের নির্বাসিত করা হবে। আরিউস, থিওনাস এবং সেকেন্ডাস এই মতবাদকে মেনে চলতে অস্বীকার করেন, ফলে তাদের বহিষ্কৃত করার পাশাপাশি ইলিরিয়াতে নির্বাসন দেওয়া হয়। আরিউসের লেখ্যকর্মগুলিকে বাজেয়াপ্ত করে অগ্নিকুণ্ডে জ্বালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়, এবং তার সমর্থকদেরকে "খ্রিস্টান ধর্মের শত্রু" হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[51] তা সত্ত্বেও সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বিতর্ক চলমান ছিল।[52]
৩৮১ সালে কনস্টান্টিনোপলের প্রথম অধিবেশনে নিকিয়ার প্রথম অধিবেশনের মতবাদটির একটি নতুন সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করা হয়।
ইস্টারের উৎসবটি ইহুদিদের নিস্তারপর্ব এবং খামিরবিহীন রুটির উৎসবের সাথে সংযুক্ত, কারণ খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, যীশুর ক্রুশবিদ্ধকরণ এবং পুনরুত্থান এই সময়টাতেই ঘটেছিল।
পোপ সিক্সটাস প্রথমের আমলে, কিছু খ্রিস্টান চান্দ্রমাস নিসান এর কোন এক রবিবারকে ইস্টার ডে নির্ধারণ করে। কোন চন্দ্র মাসকে নিসান হিসাবে মনোনীত করা হবে তা নির্ধারণ করার জন্য, খ্রিস্টানরা ইহুদি সম্প্রদায়ের উপর নির্ভর করে। পরবর্তী ৩য় শতাব্দীর মধ্যে কিছু খ্রিস্টান ইহুদি বর্ষপঞ্জির উচ্ছৃঙ্খল অবস্থার কারনে তারা যা কিছু করেছিল তার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করে। তাদের যুক্তিমতে, সমসাময়িক ইহুদিরা ভুল চান্দ্রমাসকে নিসান মাস হিসাবে চিহ্নিত করছিলো, তারা এমন একটি মাস বেছে নিয়েছিল যার ১৪ তম দিন বসন্ত বিষুব এর আগে পড়ে।[53]
এই চিন্তাবিদরা যুক্তি দেখান, ইহুদি তথ্যদাতাদের উপর নির্ভর করার প্রথা ত্যাগ করা উচিত, তার পরিবর্তে কোন মাসটি নিসান মাস হবে তা নির্ধারণ করার জন্য নিজস্ব গণনাপদ্ধতি তৈরি করা উচিত, সেখানে তারা স্বাধীনভাবে গণনা করে খ্রিস্টীয় নিসান মাসে ইস্টার নির্ধারণ করবে, যাতে উৎসবটি সর্বদা বিষুবের পর আসে। কিন্তু ঐতিহ্য ভঙ্গের প্রশ্ন উঠলে এহেন কর্মের ন্যায্যতার প্রশ্নে তারা এ যুক্তিতে দেন যে, প্রকৃতপক্ষে সমসাময়িক ইহুদি ক্যালেন্ডার বিষুবকে উপেক্ষা করে ঐতিহ্য ভঙ্গ করে ফেলেছে, পূর্বে নিসানের ১৪ তারিখ কখনও বিষুব-এর আগে আসত না অথচ এখন সেটি বিষুবের আগে চলে আসছে।[54] কিন্তু অন্যান্য মান্যবরেরা মনে করতেন যে, ইহুদি ক্যালেন্ডারের উপর নির্ভর করার প্রথাগত অনুশীলন অব্যাহত রাখা উচিত, যদিও ইহুদি গণনাগুলি খ্রিস্টান দৃষ্টিকোণ থেকে ভুল।[55]
যারা স্বাধীন গণনার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন এবং যারা ইহুদি ক্যালেন্ডারের উপর অবিরত নির্ভরতার জন্য যুক্তি দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে বিবাদটি আনুষ্ঠানিকভাবে অধিবেশনে সমাধান করা হয়, যা রোম এবং আলেকজান্দ্রিয়াতে কিছু সময়ের জন্য ব্যবহৃত স্বাধীন গণনা পদ্ধতিকে সমর্থন করে। তখন থেকে খ্রিস্টান মানদণ্ড অনুসারে বেছে নেওয়া একটি চান্দ্র মাসের রবিবার ইস্টার হয় - কার্যত, সেটি খ্রিস্টান নিসান মাস - ইহুদিদের সংজ্ঞায়িত নিসান মাস নয়।[3] যারা ইহুদি ক্যালেন্ডারের উপর ক্রমাগত নির্ভরতার জন্য যুক্তি দিয়েছিলেন (ইতিহাসে তাদের "প্রোটোপাস্কাইট" বলা হয়) তাদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে অবস্থানে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিলো। তারা যে সাথে সাথেই সে অবস্থানে আসেন নি তা ৪র্থ শতাব্দীর পরবর্তী সময়ে প্রোটোপাসাইট প্রথার বিরুদ্ধে লিখিত ধর্মোপদেশ,[56] ক্যানন,[57] এবং ট্র্যাক্ট[58] এর প্রত্নতত্ত্বে প্রকাশ পায়।
স্বতন্ত্র নিয়ম এবং বিশ্বব্যাপী অভিন্ন নিয়ম, এদুটি গণনা রীতিই ছিল ইস্টারের একমাত্র গণনারীতি যা থেকে কাউন্সিলে একটি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু গণনার জন্য কোন বিস্তারিত বিবরণ নির্দিষ্ট করা হয়নি; বরং এগুলি অনুশীলনের মাধ্যমে বিস্তারিত হয়, যা বাস্তবায়নে অনেক শতাব্দী লাগে এবং অনেকগুলি বিতর্কের জন্ম দেয়। এছাড়াও ইস্টারের তারিখের গণনা এবং সংস্কার দেখুন। বিশেষ করে, কাউন্সিল রবিবারেই যে ইস্টার হবে সেমত আদেশ দিয়েছে বলে মনে হয় না।[59]
তাছাড়া পরিষদে এই ডিক্রি জারি করেনি যে, ইস্টার কখনই হিব্রু ক্যালেন্ডারে ১৪ই নিসানের সাথে মিলতে পারবে না; যেদিন খামিরবিহীন রুটির প্রথম দিন, বর্তমানে সাধারণত "পাসওভার" নামে পরিচিত। স্বাধীন গণনার পদক্ষেপকে সমর্থন করে, কাউন্সিল ইস্টার গণনাকে ইহুদি ক্যালেন্ডারে ইতিবাচক বা নেতিবাচক সমস্ত নির্ভরতা থেকে আলাদা করে দেয়। "জোনারস প্রভিসো", এই দাবিমতে ইস্টারকে যে সর্বদা হিব্রু ক্যালেন্ডারে ১৪ই নিসানে অনুসরণ করে পালন করতে হবে, কয়েক শতাব্দীর পরেও তা প্রণয়ন করা যায়নি। ততক্ষণে, জুলিয়ান সৌর এবং চন্দ্র ক্যালেন্ডারের ত্রুটির সংশোধন এটিকে কার্যত অবস্থায় পরিণত করে। দেখা যায় যে, জুলিয়ান পঞ্জিকামতে ইস্টার সর্বদা হিব্রু ১৪ই নিসানই অনুসরণ করে।[60]
মেলিটিয়ান বিভেদ প্রতিহত করা, যারা ছিল একটি প্রারম্ভিক বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়, তা নিকিয়া কাউন্সিলের সামনে আসা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, মেলিটিউস মিশরের তার নিজের শহর লাইকোপোলিসেই থাকবেন, কিন্তু নতুন পাদ্রী নিয়োগের ক্ষমতা বা বল প্রয়োগ করতে পারবেন না; তার শহরের আশেপাশে যেতে বা এর অনুসারী বানানোর উদ্দেশ্যে অন্য কোন ডায়োসিসে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ করা হয়। মেলিটিয়াস তার এপিস্কোপাল উপাধি বজায় রেখেছিলেন, কিন্তু তার নিযুক্ত ইক্লেসিয়াস্টিক হাত পাড়া খেতে হত। মেলিটিয়াসের দ্বারা সম্পাদিত আদেশগুলি তাই অবৈধ হিসাবে বিবেচিত হত। মেলিটিয়াস কর্তৃক নিযুক্ত পাদ্রিদেরকে আলেকজান্ডার কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা অর্পনের আদেশ দেওয়া হয় এবং তারা বিশপ আলেকজান্ডারের সম্মতি ছাড়া কিছুই করতে পারবে না।[61]
একজন নন-মেলিটিয়ান বিশপ বা ধর্মযাজকের মৃত্যু হলে, খালি শাসনের ভারটি একজন মেলিটিয়ানকে দেওয়া যেতে পারে, তবে যদি তিনি যোগ্য হন এবং তার বিশপ নির্বাচন আলেকজান্ডার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। মেলিটিয়াসের নিজেরই এপিস্কোপাল অধিকার এবং বিশেষাধিকার নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই মৃদু পদক্ষেপগুলি অবশ্য বৃথা ছিল; মেলিটিয়ানরা আরিয়ানদের সাথে যোগ দেয় এবং অ্যাথানাসিয়াসের সবচেয়ে খারাপ শত্রু হওয়ায় আগের চেয়ে আরও বেশি মতবিরোধ সৃষ্টি করে। মেলিশিয়ানরা শেষ পর্যন্ত পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয়ে যায়।
কাউন্সিলে বিশটি নতুন চার্চ আইন জারি করা হয়, যাকে বলা হয় ক্যানন ল (যাজকীয় অনুশাসন), (যদিও সঠিক সংখ্যাটি বিতর্কের বিষয়)। অর্থাৎ শৃঙ্খলার অপরিবর্তনীয় নিয়ম। নিকিয় এবং প্রাক-নিকিয় ফাদারের জন্য তালিকাভুক্ত বিশটি আইন নিম্নরূপ:[62]
স্বল্পমেয়াদে, কাউন্সিল যে সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য আহ্বান করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণরূপে সমাধান করতে পারেনি এবং কিছু সময়ের জন্য সংঘাত ও অস্থিরতা অব্যাহত ছিল। কনস্টানটিনের নিজের দুই উত্তরাধিকারী সম্রাট আরিউসপন্থী ছিলেন: তার পুত্র, দ্বিতীয় কনস্ট্যান্টিয়াস এবং ভ্যালেনস। ভ্যালেনস অসামান্য ধর্মীয় সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারেনি, এবং সেন্ট বেসিলের সাথে নিকিয়ান মতবাদ নিয়ে মুখোমুখি হলে ব্যার্থ হন।[63]
সাম্রাজ্যের মধ্যে পৌত্তলিক শক্তিগুলি সম্রাটের আসনে পৌত্তলিকতা বজায় রাখতে এবং মাঝে মাঝে পুনঃসংঘটিত হতে চেয়েছিল (দেখুন আরবোগাস্ট এবং জুলিয়ান দ্য অ্যাপোস্টেট )। আরিয়ান এবং মেলেটিয়ানরা শীঘ্রই তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রায় সমস্ত অধিকার পুনরুদ্ধার করে, এবং ফলস্বরূপ, চতুর্থ শতাব্দীর বাকি সময়ে আরিয়ানবাদ ছড়িয়ে পড়ে এবং চার্চের মধ্যে বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে। প্রায় কম সময়ের ভেতরই, নিকোমিডিয়ার ইউসেবিয়াস, যিনি ছিলেন একজন আরিয়ান বিশপ এবং কনস্টানটিনের চাচাতো ভাই, তিনি দরবারে তার প্রভাব খাটিয়ে প্রোটো-অর্থোডক্স নিকিয়ান বিশপদের উপর থেকে সম্রাটের ছায়া সরিয়ে আরিয়ান বিশপদের উপর নিয়ে আসেন।[37]
অ্যান্টিওকের ইউস্টাথিয়াসকে ৩৩০ সালে ক্ষমতাচ্যুত এবং নির্বাসিত করা হয়। অ্যাথানাসিয়াস, যিনি আলেকজান্দ্রিয়ার বিশপ হিসেবে আলেকজান্ডারের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন, ৩৩৫ সালে টায়ারের প্রথম সিনড এ পদচ্যুত হন এবং অ্যানসাইরার মার্সেলাস ৩৩৬ সালে তার স্থলাভিষিক্ত হন। আরিউস নিজেই কন্সটান্টিনোপলে ফিরে আসেন চার্চে পুনঃভর্তি হবার জন্য, কিন্তু তাকে গ্রহণ করার কিছুক্ষণ পূর্বেই মারা যান। পরের বছর অবশেষে নিকোমিডিয়ার আরিয়ান বিশপ ইউসেবিয়াসের কাছ থেকে বাপ্তিস্ম গ্রহণের পর কনস্টানটিন মারা যান, এবং "তার মারা যাওয়ার সাথে নিকিয়া কাউন্সিলের প্রথম রাউন্ডের যুদ্ধ শেষ হয়"।[37]
সাম্রাজ্যে খ্রিস্টধর্মকে মাত্র বৈধ করা হলো, এরই মধ্যেগ্যালারিয়াসের অধীনে ৩১১ সালে ডায়োক্লেটিয়ান নিপীড়ন শেষ হয়ে যায়। যদিও গ্যালারিয়াস নিপীড়ন বন্ধ করেছিলেন, কিন্তু খ্রিস্টধর্ম ৩১৩ সাল পর্যন্ত আইনগত সুরক্ষায় ছিল না। খ্রিস্টানদের আইনি সুরক্ষা এবং সহনশীলতার গ্যারান্টি দিয়ে, সম্রাট কনস্টানটিন এবং লিকিনিয়াস রাজি হন যে যা কিছু হল তা মিলানের আদেশ হিসাবে জানা হবে। যাইহোক, ৩৮০ সালে থেসালোনিকার আদেশ না আসা পর্যন্ত নিকিয় মতবাদী খ্রিস্টধর্ম রোমান সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম হয়ে ওঠেনি। এ সময়, পৌত্তলিকতা বৈধ এবং জনসাধারণের মাঝে বিদ্যমানও ছিল। কনস্টানটিনের মুদ্রা এবং অন্যান্য সরকারী প্রসঙ্গ, নিকিয়া অধিবেশন না আসা পর্যন্ত, তিনি সোল ইনভিক্টাসের পৌত্তলিক ধর্মের সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রথমে, কনস্টানটিন নতুন মন্দির নির্মাণে উৎসাহিত করেন[64] এবং ঐতিহ্যবাহী বলিদান সহ্য করেন।[65] পরবর্তীতে তার শাসনামলে, তিনি লুটপাট এবং রোমান মন্দির ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন।[66][67][68]
নিকিয়ার বেলায় কনস্টানটাইনের সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ নাগরিক নেতা এবং কর্তৃত্বধারীর ভূমিকা পালন করেন। সম্রাট হিসাবে, নাগরিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব ছিল তার, এবং তিনি চার্চকে এক মন ও শান্তি রাখতে চেয়েছিলেন। আরিয়ান বিরোধের কারণে আলেকজান্দ্রিয়ায় অস্থিরতা সম্পর্কে প্রথম অবহিত হলে, তিনি "অত্যন্ত বিচলিত" হয়ে পড়েন এবং আরিউস এবং বিশপ আলেকজান্ডার উভয়কেই এই বিশৃঙ্খলার উদ্ভব এবং তা প্রকাশ্যে আসতে দেওয়ার জন্য "তিরস্কার"ও করেছিলেন।[69] ইস্টার উদযাপনের বিষয়ে "মতের বৈচিত্র্য" সম্পর্কেও তিনি ছিলেন সচেতন এবং উভয় সমস্যা সমাধানের আশায়, তিনি কর্ডোভা (স্পেন) এর বিশপ হোসিয়াসকে একটি স্থানীয় চার্চ কাউন্সিল গঠন করতে এবং "যারা বিভক্ত ছিল তাদের পুনর্মিলিত" করতে পাঠান।[69] যখন সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তখন তিনি "প্রত্যেক দেশের গির্জার সবচেয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের" আমন্ত্রণ জানিয়ে নিকিয়ায় একটি সিনড বা ধর্মসভা ডেকেছিলেন।[69]
কনস্টানটাইন পারিষদদেরকে একত্রিত করতে বিশপদের এপিস্কোপালের শাসন থেকে আসা যাওয়ার ভ্রমণ খরচ এবং সেইসাথে নিকিয়াতে থাকা খাওয়ার খরচ সরকারী তহবিল থেকে কভার করে সহায়তা করেন।[16] তিনি আলোচনার জন্য একটি "প্রাসাদে... বিশাল হল" সজ্জিত করেছিলেন যাতে উপস্থিতিদের সাথে "মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা হয়"।[16] অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে, তিনি "বিশপদের সর্বসম্মতি ও সমঝোতার জন্য আহ্বান জানান" এবং তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন: "এবার, সমস্ত চলমান বিতর্ক বর্জন করা হোক; এবং আসুন আমরা ঐশ্বরিক অনুপ্রাণিত কালেমার কাছে সমস্যার সমাধান সন্ধান করি।"[16]
এর পরপরই, আরিউস এবং চার্চের মতবাদ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। "সম্রাট উভয় পক্ষের বক্তৃতার প্রতি ধৈর্যশীল মনোযোগ দিয়েছিলেন" এবং বিশপদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে "বিলম্ব" করেন।[69] বিশপগণ প্রথমে অ্যারিউসের শিক্ষাকে অ্যানাথেমা বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করেন, এবং তাদের মতবাদকে সঠিক মতবাদের বিবৃতি হিসাবে প্রণয়ন করেন। আরিউস এবং তার দুই অনুসারী সম্মত হতে অস্বীকার করলে, বিশপ চার্চ থেকে তাদের বহিষ্কার করে করণিক রায় ঘোষণা করেন। করণিক সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখে এবং অব্যাহত অস্থিরতার হুমকি দেখে, কনস্টানটাইন তাদের নির্বাসনে দিয়ে দেওয়ানি রায় ঘোষণা করেন। ইহাই ছিল খ্রিস্টধর্মের মতবাদিক গোঁড়ামি প্রতিষ্ঠার পেছনে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি ব্যবহার করার অনুশীলনের সূচনা। এই একটি উদাহরণ, যা পরবর্তীতে সমস্ত খ্রিস্টান সম্রাটরা অনুসরণ করেন, যা একটি খ্রিস্টান সহিংসতার বৃত্তের দিকে নিয়ে যায় এবং খ্রিস্টীয় প্রতিরোধ করার পরিপ্রেক্ষিতে প্রচুর শাহাদাত বরণ করতে হয়।[70]
অধিবেশনে বাইবেলীয় কানুন নিয়ে কোনো আলোচনা হবার রেকর্ড নেই।[71] বাইবেলীয় কানুনের বিকাশ প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল (অ্যান্টিলেগোমেনা নামক লিখিত পাঠ্যের ব্যতিক্রমতা সহই, যার সত্যতা বা মূল্য বিতর্কিত) মুরাটোরিয়ান ফলক লেখার সময়।[72]
৩৩১ সালে, কনস্টানটিন চার্চ অফ কনস্টান্টিনোপলের জন্য পঞ্চাশটি বাইবেল নিয়োগ করেন, আর কিছু জানা যায় না। আসলে, এটি নিশ্চিত নয় যে, তিনি কি সমগ্র ওল্ড এবং নিউ টেস্টামেন্টের পঞ্চাশটি কপি সংগ্রহ করেন, নাকি শুধুমাত্র নিউ টেস্টামেন্টের পঞ্চাশটি কপি, নাকি শুধুমাত্র গসপেলের পঞ্চাশটি কপি। কিছু পণ্ডিত বিশ্বাস করেন যে, এই অনুরোধটি কানুন তালিকার জন্য অনুপ্রেরণা প্রদান করে। Jerome 's Prologue to Judith-এ, লেখক দাবি করেন যে জুডিথের কিতাবটি "নিকিয়ান অধিবেশনে পবিত্র ধর্মগ্রন্থের সংখ্যার মধ্যে গণনা করা হয়"।[73]
কানুনটি নিকিয়া অধিবেশনে তৈরি করা হয়েছিল- এহেন ধারণার মূল উৎস ভলতেয়ারকে মনে করা হয়। তিনি একটি গল্পকে জনপ্রিয় করে তোলেন। গল্পে লিখেন যে, অধিবেশনের সময় একটি বেদিতে সমস্ত কিতাব স্থাপন করে যা মনমত হয়েছে তা দিয়ে বাইবেলীয় কানুন রচনা করা হয় আর যেগুলি হয়নি সেগুলি রেখে দেওয়া হয়। এই "কাল্পনিক উপাখ্যান" এর মূল উৎস হল সিনোডিকন ভেটাস,[74] ৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকের চার্চ কাউন্সিলগুলির একটি ছদ্ম-ঐতিহাসিক বিবরণ:[75]
কানুনীয় এবং অপ্রামাণিক (অ্যাপোক্রিফাল) পুস্তকগুলি, এগুলি নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে আলাদা করেছে: ঈশ্বরের ঘরে বইগুলি পবিত্র বেদীর নীচে রাখা হয়ে; তারপর পারিষদগণ প্রার্থনায় প্রভুর কাছে অনুরোধ করেন যেন অনুপ্রাণিত কাজগুলি উপরে এবং অনুপ্রেরণামূলক কাজগুলি নীচে পাওয়া যায়।[76]
প্রাথমিকভাবে নিকিয়া কাউন্সিল খ্রিস্টের ঈশ্বরত্বের সমস্যা নিয়ে কাজ করে। এক শতাব্দী পূর্বে "ট্রিনিটি" শব্দটি (গ্রীক ভাষায় Τριάς; ল্যাটিন ভাষায় trinitas) অরিজেন (১৮৫-২৫৪) ও টারটুলিয়ান (১২০-২২০) এর লেখায় ব্যবহৃত হয়, এবং সামান্য অর্থে "ডিভাইন থ্রি" এর একটি সাধারণ ধারণা পলিকার্প, ইগনাটিয়াস এবং জাস্টিন শহীদের দ্বিতীয় শতাব্দীর লেখাগুলিতে পাওয়া যায়। নিকিয়ায়, ৩৬২ সালের দিকে পিতা পুত্রের মধ্যে সম্পর্ক স্থির করার পূর্বে পবিত্র আত্মা সম্পর্কিত প্রশ্নগুলি একদমই ঠিকানাবিহীন ছিল।[77] ৩৬০ খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিনোপল অধিবেশনের আগ পর্যন্ত এই মতবাদটি পূর্ণাঙ্গ আকারে প্রণয়ন করা যায়নি।[78] আর এর চূড়ান্ত রূপটি প্রণীত হয় ৩৮১ খ্রিস্টাব্দে, প্রাথমিকভাবে গ্রেগরি অফ নাইসার তৈরি করেন।[79]
যদিও কনস্টানটাইন কাউন্সিলের পরে একটি ঐক্যবদ্ধ চার্চ চেয়েছিলেন, তবে তিনি পরিষদে খ্রিস্টের প্রকৃতির সমজাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি জোর করে চাপিয়ে দেননি।কনস্টানটাইনের ভূমিকা দেখুন।
কনস্টানটাইন নিজে কাউন্সিলে কোনো বাইবেল নিযুক্ত করেন নাই। তিনি ৩৩১ সালে কনস্টান্টিনোপলের চার্চগুলিতে ব্যবহারের জন্য পঞ্চাশটি বাইবেল নিযুক্ত করেছিলেন। তখন পর্যন্ত এটি একটি নতুন শহর ছিল। কমিশনকৃত বাইবেলে অন্তর্ভুক্তির জন্য বই বাছাই বা বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ তার সম্পৃক্ততা নির্দেশ করে না।
চার্চের প্রতি কনস্টানটাইনের সহানুভূতিশীল আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও, কাউন্সিল শেষে প্রায় ১১ বা ১২ বছর পর্যন্ত তিনি বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেননি, যতটা সম্ভব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাপ্তিস্ম বন্ধ রেখেছিলেন।[80]
প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মতাত্ত্বিক ফিলিপ শ্যাফের মতে, "নিকিয় ফাদারগণ এই নতুন কিছু হিসেবে কানুনটি পাস করেন নি, বরং কেবল চার্চ ঐতিহ্যের ভিত্তিতে একটি বিদ্যমান সম্পর্ক নিশ্চিত করার জন্য প্রবর্তন করেন; এবং এটি, আলেকজান্দ্রিয়ার বিশেষ উল্লেখ সহকারে, সেখানে বিদ্যমান সমস্যাগুলির সমাধানকল্পে প্রবর্তন করা হয়। রোমের নাম শুধুমাত্র শোভাবর্ধনের জন্য রোমের নামে তৈরি করা হয়; আর অ্যান্টিওক এবং অন্যান্য সমস্ত এপার্কি ও প্রদেশগুলি তাদের স্বীকৃত অধিকার সুরক্ষিত করেছিল। আলেকজান্দ্রিয়া, রোম এবং অ্যান্টিওকের ধর্মাধ্যক্ষত্বকে যথেষ্ট সমান স্তরে রাখা হয়।" এইভাবে, শ্যাফের মতে, আলেকজান্দ্রিয়ার বিশপের, মিশর, লিবিয়া এবং পেন্টাপোলিস প্রদেশগুলির উপর আইনি এখতিয়ার ছিল, ঠিক যেমন রোমের বিশপের তার নিজস্ব ডায়োসিসের উপর কর্তৃত্ব ছিল।"[10]
তবে, জেমস এফ. লাফলিনের মতে, একটি বিকল্প রোমান ক্যাথলিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তাতে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন যুক্তি রয়েছে, যেগুলো যথাক্রমে বাক্যের ব্যাকরণগত কাঠামো থেকে, ধারণার যৌক্তিক ক্রম থেকে, ক্যাথলিক উপমা থেকে, বাইজেন্টাইন পাদ্রিতন্ত্রের গঠনের প্রক্রিয়ার সাথে তুলনা থেকে, এবং সনাতনীদের কর্তৃত্ব থেকে কানুনের বিকল্প মাফহুমের পক্ষে আঁকা হয়েছে।[81] এই ব্যাখ্যা অনুসারে, কানুন রোমের বিশপের ভূমিকা প্রদর্শন করে যখন তিনি, তার কর্তৃত্ববলে, অন্যান্য পাদ্রিদের আইনি এখতিয়ার নিশ্চিত করেন—ইহা এমন ব্যাখ্যা যা পোপের রোমান ক্যাথলিক মাফহুমের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এর ফলে, আলেকজান্দ্রিয়ার বিশপ, মিশর লিবিয়া এবং পেন্টাপোলিসের উপর সভাপতিত্ব করেন, যেখানে অ্যান্টিওকের বিশপ "ওরিয়েন্সের মহান ডায়োসিস জুড়ে একই রকম কর্তৃত্ব উপভোগ করছিলেন" এবং সবাই রোমের বিশপের কর্তৃত্বাধীন ছিল। লাফলিনের কাছে, উহাই ছিল আলেকজান্দ্রিয়া এবং অ্যান্টিওকের দুই মেট্রোপলিটন বিশপের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়ে রোমান বিশপের প্রথাকে আহ্বান করার একমাত্র সম্ভাব্য কারণ যার জন্য।[81]
যদিও, প্রোটেস্ট্যান্ট এবং রোমান ক্যাথলিক ব্যাখ্যাগুলি ঐতিহাসিকভাবে অনুমান করে যে, কানুনে চিহ্নিত কতেক বা সমস্ত বিশপ পরিষদের সময় তাদের নিজ নিজ ডায়োসিসের সভাপতিত্ব করেন— ইতালির ডায়োসিসের উপর রোমের বিশপ; যেমনটা শ্যাফেরও মত, অরিয়েন্সের ডায়োসিসের উপর অ্যান্টিওকের বিশপ; যেমনটা লাফলিনের দাবী, এবং কার্ল জোসেফ ভন হেফেলের মতে, মিশরের ডায়োসিসের উপরে আলেকজান্দ্রিয়ার বিশপ সভাপতিত্ব করেন। হেফেলের মতে, পরিষদে আলেকজান্দ্রিয়াকে "মিশরের পুরো (বেসামরিক) ডায়োসিস" এর দায়ভার নিযুক্ত করে।[82] তবুও সেই অনুমানগুলি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কাউন্সিলের সময়ে, মিশরের ডায়োসিস বিদ্যমান ছিল কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়ার ডায়োসিস নামে পরিচিত ছিল ( যা ১ম শতাব্দীতে সেন্ট মার্ক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়), তাই কাউন্সিল এটি আলেকজান্দ্রিয়া হিসেবে অর্পণ করতে পারত। অ্যান্টিওক এবং আলেকজান্দ্রিয়া উভয়ই অরিয়েন্সের সিভিল ডায়োসিসের মধ্যে অবস্থিত ছিল, অ্যান্টিওক প্রধান মহানগর ছিল, কিন্তু কেউই পুরোটা পরিচালনা করেনি। একইভাবে, রোম এবং মিলান উভয়ই ইতালির সিভিল ডায়োসিসের মধ্যে অবস্থিত ছিল, তন্মধ্যে মিলান ছিল প্রধান মহানগর।[83][84]
কানুন ৬ এর সাথে সম্পর্কিত এই ভৌগোলিক সমস্যাটি প্রোটেস্ট্যান্ট লেখক টিমোথি এফ. কফম্যান কর্তৃক গুরুত্বারোপ করা হয়। ধারণাটির ফলে সৃষ্ট নৈরাজ্যবাদের সংশোধনকল্পে প্রত্যেক বিশপই পরিষদের সময় এক একটি পুরো ডায়োসিসের নেতৃত্ব করেন।[85] কফম্যানের মতে, যেহেতু মিলান এবং রোম উভয়ই ইতালির ডায়োসিসের মধ্যে অবস্থিত ছিল এবং অ্যান্টিওক এবং আলেকজান্দ্রিয়া উভয়ই ওরিয়েন্সের ডায়োসিসের মধ্যে অবস্থিত ছিল, তাই রোম এবং আলেকজান্দ্রিয়ার মধ্যে একটি প্রাসঙ্গিক এবং "গঠনগত একতা" সমবেত বিশপদের কাছে সহজেই সুস্পষ্ট ছিল: উভয়কেই একই ডায়োসিস ভাগ করার জন্য তৈরি করা হয়, যার মধ্যে কো প্রধান মেট্রোপলিই ছিল না। ২৯৩ সালে ডায়োক্লেটিয়ান সাম্রাজ্যের পুনর্বিন্যাস করার পর থেকে ইতালির মধ্যে রোমের এখতিয়ারে শহর সংলগ্ন কয়েকটি প্রদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যেমনটা কানুনের প্রাচীনতম ল্যাটিন সংস্করণ ইঙ্গিত করে।[86]
ইতালির মধ্যে রোমান এবং মিলানিজ এখতিয়ারের প্রাদেশিক ব্যবস্থা এ কারণে একটি প্রাসঙ্গিক নজির ছিল, এবং পরিষদের মুখোমুখি সমস্যাটির একটি প্রশাসনিক সমাধান প্রদান করে- যথা, ওরিয়েন্সের ডায়োসিসের মধ্যে আলেকজান্দ্রিয়ান এবং অ্যান্টিওকিয়ান এখতিয়ারকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। কানুন ৬-এ, কাউন্সিল অ্যান্টিওকের এখতিয়ারের অধীন বেশিরভাগ ডায়োসিস ছেড়ে দেয় এবং আলেকজান্দ্রিয়ায় ডায়োসিসের কয়েকটি প্রদেশকে বরাদ্দ করে, "যেহেতু রোমের বিশপের জন্যও এটি প্রথাগত।"[87]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.