Loading AI tools
নেপালের স্বাস্থ্যব্যাবস্তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যবিবরনী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
নেপালে স্বাস্থ্যসেবা সরকারি ও বেসরকারি দুইভাবেই দেয়া হয়। তবে তা আন্তর্জাতিক মান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র নেপালেই বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি লক্ষ করা গেছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে।[1][2] এছাড়াও দেশটির ভৌগোলিক ও সামাজিক বৈচিত্রতা এবং বিভিন্ন মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, দাবানল, ভূমিধস, ভূমিকম্প ইত্যাদির কারণে এইসব রোগব্যধি দ্রুত বিস্তার লাভ করে থাকে।[2] দেশটির জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণ, মৃত্যুঝুঁকি, পুষ্টিহীনতা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতার মধ্যে আছে।[2] তবে, এখন স্বাস্থ্যসেবায় কিছুটা উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে বলতে গেলে মাতৃস্বাস্থের উন্নতি বেশ দারুণভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। এই উন্নতিগুলোর মধ্যে রয়েছে:[3]
২০০২ সালে সরকার কর্তৃক স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রতিজন মানুষের জন্য প্রায় ২.৩০ ইউএস ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর প্রায় ৭০% এসেছিল ব্যক্তিগত তহবিল থেকে। ২০০৯ সালে সরকার স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাজেট নির্ধারণ করেছিল প্রায় ৫.৮% মাত্র। ২০১২ সালে সরকার দেশটির ৫ টি জেলায় সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন।[17]
এরপর ২০১৪ সালে নেপালে প্রতিজনে স্বাস্থ্যখাতে খরচের পরিমাণ ছিল ১৩৭ ইউএস ডলার।[18]
নেপালের স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যবিধি, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেশ নিম্নমানের এবং তা দেশের বড় একটা জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যর্থ।[19] গরীব লোকেরা উচ্চ খরচ, সেবার অপর্যাপ্ততা, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও বিরাজমান ভ্রান্ত কিছু বিশ্বাসের কারণে তারা মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।[20] পুনঃউৎপাদনমুখী স্বাস্থ্যব্যবস্থার সুযোগ কম যে কারণে এটা মেয়েদের বিভিন্ন অসুবিধার সৃষ্টি করে। ২০০৯ সালের জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনে নেপালের চলমান সামাজিক সচেতনতা, জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত ভিন্ন অবস্থান ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সরকারি সেবার প্রতি অনীহা বিষয়ক ব্যাপারগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়।[21][22][23]
এই সমস্যাগুলোর কারণে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রোগ্রামের মাধ্যমে জনগণকে পরিবার পরিকল্পনা, গর্ভনিরোধক পদ্ধতি, গর্ভবতী স্ত্রীদের একে অন্যের প্রতি যোগাযোগ, নিরাপদ মাতৃত্ব চর্চা যেমন- বাচ্চা জন্মের সময় দক্ষ পরিচর্যাকারী ভূমিকা ও জন্মের পরপরই মায়ের বুকের দুধ পান করানো সহ বিভিন্ন বিষয়ে উৎসাহিত করছে।[24]
নেপালে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, অর্ধেকের বেশি গর্ভবতী মহিলা এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং সেইসাথে ৩৫% পুনঃসন্তান জন্মদানে সক্ষম নারীরা রক্তশূণ্যতায় ভুগে থাকেন। মাত্র ২৪% শিশুরা আয়রনসমৃদ্ধ খাবার পায়, ২৪% শিশু নূন্যতম গ্রহণযোগ্য খাবার খেতে পারে এবং অর্ধেকের বেশি গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থায় সম্পুরক আয়রণ গ্রহণ করতে হয়। নেপালে পুষ্টিহীনতার কারণ হিসেবে যে কারণগুলো কাজ করে সেগুলো হলো ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হবার সংখ্যা, যথাযথ স্বাস্থ্য সচেতনতার অভা্ব এবং এবং খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করা (৪৪%)।[25]
মন্থর গতির অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে সৃষ্ট খাদ্য ঘাটতি এবং পুষ্টিহীনতার কারণে নেপালের মধ্য অঞ্চল ও পেছনের পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ী ও পার্বত্য অঞ্চলের মহিলা ও শিশুরা এর দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়েছে। যদিও খর্বতা এবং কমওজন-এর সংখ্যা কমেছে, তবে একইসাথে গত সাত বছরে স্বতন্ত্রভাবে বুকের দুধ পান করানো মায়ের সংখ্যা বেড়েছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪১% শিশুদের মাঝে খর্বতা লক্ষ করা গেছে, পশ্চিম দিকের পার্বত্য এলাকায় তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৬০%-তে। ২০১৬ সালে ডিএইচএস-এর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে নেপালে ৩৬% শিশুদের মধ্যে খর্বতা দেখা যায় (পরিমিত ব্যবধান -২ এর নিচে), ১২% শিশু গুরুতরভাবে খর্ব (পরিমিত ব্যবধান -৩ এর নিচে), পাঁচ বছরের কমবয়সী ২৭% শিশুর কম ওজন এবং ৫% গুরুতরভাবে কম ওজন। আবার, শহর ও গ্রামে পাঁচ বছরের কম বয়সী খর্ব শিশুদের সংখ্যার মধ্যেও বৈচিত্রতা লক্ষ করা যায়। সেখানে দেখা যায় শহরের (৩২% খর্ব এবং ২৩% কমওজন) তুলনায় গ্রামের (৪০% খর্ব এবং ৩১% কমওজন) শিশুদের মধ্যে খর্বতা বেশি। আরেকদিকে দৈনিক খাবার গ্রহণের সাথে খর্বতা, কমওজন এবং কৃশকায়তার একটি ইতিবাচক সম্পর্ক লক্ষ করা গেছে। শিশুদের মধ্যে যাদের নিরাপদ খাদ্যের যোগান আছে তাদের মধ্যে খর্বতা তুলনামুলকভাবে কম (৩৩%), অন্যদিকে যাদের নিরাপদ খাদ্যের যোগান কম তাদের মধ্যে খর্বতা তুলনামুলকভাবে বেশি (৪৯%)।[27] একইভাবে, পারিবারিক শিক্ষার সাথে শিশুদের খর্বতার বিপরীত ধরনের সম্পর্ক লক্ষ করা গেছে। সেইসাথে কমওজন এবং খর্বতার সাথে ব্যক্তিগত সম্পত্তির সম্পর্কও লক্ষ করা গেছে। যাদের সম্পদের পরিমাণ বেশি তাদের খর্বতা (১৭%) ও কমওজনের (১২%) তুলনায় যাদের সম্পদের পরিমাণ কম তাদের সন্তানদের মধ্যে খর্বতা (৪৯%) ও কমওজনের (৩৩%) সংখ্যা বেশি লক্ষ করা গেছে।[28]
গত দুই দশকে নেপাল শিশুদের পুষ্টির ব্যাপারে বেশ ভাল উন্নতি করেছে। ২০০১ সালের পর থেকে খর্বতা ও কমওজনবিশিষ্ট শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে নেপালে খর্বতায় আক্রান্ত শিশুর পরিমাণ ছিল মাত্র ১৪%, ২০০৬ থেকে ২০১১ সালে ছিল ১৬% এবং ২০১১ থেকে ২০১৬ সালে ছিল মাত্র ১২%। কমওজনবিশিষ্ট শিশুদের ক্ষেত্রের একই ধরনের ফলাফল লক্ষ করা গেছে। এই ফলাফল থেকে লক্ষ করা যায় যে নেপাল টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের দিকে বেশ ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। যদিও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে নেপালকে। ২০১৭ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রায় খর্বতা ৩১% ও কমওজনবিশিষ্ট শিশুর সংখ্যা ২৫%-তে আনার লক্ষ্য ছিল (ন্যাশনাল প্লানিং কমিশন ২০১৫)।
নেপালে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, অর্ধেকের বেশি গর্ভবতী মহিলা এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং সেইসাথে ৩৫% পুনঃসন্তান জন্মদানে সক্ষম নারীরা রক্তশূণ্যতায় ভুগে থাকেন। মাত্র ২৪% শিশুরা আয়রনসমৃদ্ধ খাবার পায়, ২৪% শিশু নূন্যতম গ্রহণযোগ্য খাবার খেতে পারে এবং অর্ধেকের বেশি গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভাবস্থায় সম্পুরক আয়রণ গ্রহণ করতে হয়। নেপালে পুষ্টিহীনতার কারণ হিসেবে যে কারণগুলো কাজ করে সেগুলো হলো ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হবার সংখ্যা, যথাযথ স্বাস্থ্য সচেতনতার অভা্ব এবং এবং খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করা (৪৪%)।[25]
শহর এলাকা | গ্রাম এলাকা | সার্বিক | |
খর্বতা | ২৭% | ৪২% | ৪১% |
কৃশকায়তা | ৮% | ১১% | ১১% |
ওজনকম | ১৭% | ৩০% | ২৯% |
নেপালের বেশিরভাগ গ্রাম এলাকা পার্বত্য অঞ্চলের অন্তর্গত। নেপালের অসমতল অঞ্চলগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বেশ অভাব যে কারণে গ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে প্রায় বঞ্চিত।[29] অনেক গ্রাম আছে যেখানে এখনও পায়ে হেঁটে যেতে হয়। এ কারণে চিকিৎসাব্যবস্থা বিলম্বিত হয় যা একজন রোগীর তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় চিকিৎসাকে বাঁধাগ্রস্ত করে।[30] তাই, নেপালে বেশিরভাগ স্বাস্থ্যসেবাগুলো শহরাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। তাই গ্রামে স্বাস্থ্যসেবা অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে বাঁধাগ্রস্ত হয়।[31]
২০০৩ সালে নেপালে মাত্র ১০ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল, ৮৩ টি হাসপাতাল, ৭০০ টি স্বাস্থ্যপদ এবং ৩,১৫৮ টি উপ-স্বাস্থ্যপদ ছিল যা গ্রাম্যসেবা দিত। সেইসাথে ১,২৫৯ জন ডাক্তার ছিলেন, গড়ে ১৮,৪০০ জন রোগীর জন্য মাত্র ১ জন ডাক্তার ছিলেন। ২০০০ সালে, স্বাস্থ্যখাতে সরকারি তহবিলের পরিমাণ ছিল প্রতি জনে প্রায় ২.৩০ ইউএস ডলার এবং প্রায় ৭০% খরচ সংগ্রহ করা হতো ব্যক্তিগত তহবিল থেকে। ২০০৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫.১% এবং বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ছিল মোট বরাদ্দের ৩০%।
নেপালের স্বাস্থ্যসেবার একটি বড় অংশ নির্ভর করে রাজনৈতিক ক্ষমতা ও রাজধানী কাঠমান্ডুকেন্দ্রিক সম্পদ ব্যবহারের উপর যে কারণে নেপালের অন্যান্য অংশ আলাদা হয়ে পড়েছে।
১৯৯০ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৯ সালে স্থানীয় আত্ম-তদারকি আইন প্রণয়ন করা হয় যাতে করে জনগণ মৌলিক সেবাগুলো যেমন- স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি এবং গ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন লাভ করে। কি্ন্তু এই প্রোগ্রাম স্বাস্থ্য বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি দেখাতে পারেনি। রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার কারণে[32] নেপাল কেন্দ্রবিমুখ উন্নতি অর্জন করতে পারে নি।[33] যে কারণে দেশটি তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও গাঠনিক কার্যকারিতার দিক থেকে বেশ পিছিয়ে।[21]
২০১০ সালে, নেপালের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৫.৮ বছর। ২০১২ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা'র উপাত্ত অনুযায়ী নেপালের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৬৮ বছর। ২০১০ ও ২০১২ সালে জন্মের সময় ছেলে-মেয়ে উভয় সন্তানের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত আয়ু বেড়েছে ৬ বছর। ২০১২ সালে, প্রত্যাশিত সুস্বাস্থ্য ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে ছিল ৯ বছর যা কিনা জন্মের সময় সামগ্রিক প্রত্যাশিত আয়ুর চেয়ে কম। প্রত্যাশিত সুস্বাস্থ্যের এই হ্রাস পূর্ণ ৯ বছরের সমতুল্য রোগব্যধিতে আত্রান্ত হওয়া ও শারীরিক অক্ষমতার সমান।[10]
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নেপালে অসুস্থতা ও মৃত্যুহারের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে নয়টি বিষয়কে চিহ্নিত করা যায়:
মূল অনুচ্ছেদ: নেপালে এইচআইভি/এইডস (ইংরেজি)
২০১৩ সালে নেপালের মোট জনসংখ্যার ৮.১% প্রায় ৪০,৭২৩ জনের মধ্যে ১৪ বছর বা এর কমবয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৩,২৮২ জন এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছিল। ৫০ বছর বা এর উপরের বয়সী ৩,৩৮৫ জনের মাঝে এইচআইভি সংক্রমিত হয় (মোট জনসংখ্যার ৮.৩%)। সংক্রমিত লোকদের মধ্যে পুরুষ দুই-তৃতীয়াংশ (৬৬%) আর বাকী এক-তৃতীয়াংশ (২৪%) হলো মহিলা যাদের মধ্যকার ৯২.২% হলো ১৫-৪৯ বছর বয়সী সন্তান জন্মদানে সক্ষম। স্ত্রী ও পুরুষের সংক্রমিত হবার অনুপাত ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ২.১৫ থেকে ১.৯৫-তে নেমে এসেছে যা ২০২০ সালের মধ্যে ১.৮৬-তে নেমে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।[34] নেপালে এটি ছড়ায় মূলত নেশাগ্রহণকারী, অভিবাসী, যৌনকর্মী ও তাদের খদ্দের এবং মানুষের সাথে যৌনকাজ সম্পন্ন করার কারণে। ২০০৭ সালে ইনটেগ্রেটেড বায়ো-বিহেভিয়ারাল সার্ভেলিয়েন্স স্টাডি (আইবিবিএস)-এর এক ফলাফল থেকে দেখা যায় যে শহরে অঞ্চলের নেশাগ্রহণকারীদের মধ্যে কাঠমান্ডু, পোখারা এবং পূর্ব ও পশ্চিম তেরাই-তে সংখ্যায় তারা সবচেয়ে বেশি যাদের ৬.৮% থেকে ৩৪.৭%-ই এইচআইভি পজিটিভ। সংখ্যার বিচারে, নেপালের ১.৫ মিলিয়ন থেকে ২ মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এইআইভি পজিটিভ জনসংখ্যা বিদ্যমান। প্রতিটা উপগ্রপ থেকে ২.৮% অভিবাসীরা মুম্বাই থেকে ফিরে আসছে আর এইচআইভি-তে আক্রান্ত হচ্ছে।
২০০৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, নারী যৌনকর্মী ও তাদের খদ্দেরদের মাঝে এইচআইভি বিদ্যমান ছিল যথাক্রমে ২% এবং ১%-এরও কম এবং শহর এলাকায় তা ৩.৩%। এইচআইভি সংক্রমণে নারীদের চেয়ে পুরুষের ভূমিকাই বেশি। সেইসাথে শহর এলাকা ও পশ্চিমাংশের জায়গাগুলোতেও বেশি যেখানে অভিবাসী শ্রমিকরা কাজ করে। অভিবাসী শ্রমিকেরা ৪১% এইচআইভি সংক্রমণে ভুমিকা রাখে। এরপরেই রয়েছে যৌনকর্মীরা (১৫.৫%) এবং নেশাগ্রহণকারীরা (১০.২%)
নেপাল মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্যের দিকে বেশ ভাল উন্নতি করেছে এবং সেই ২০১৩ সালে থেকে তারা মানব উন্নয়ন সূচক #৪ (শিশু মৃত্যুহার কমানো) এবং #৫ক (মাতৃমৃত্যুর হার কমানো) অর্জনের পথে আছে। এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিষয়গুলো নেপালের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য একটা বিশেষ সুযোগ ছিল কীভাবে বিভিন্ন কার্যকরী প্রোগ্রাম ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিষয়গুলোর উন্নতি করা যায়।
নেপালে মাতৃস্বাস্থ্যের ব্যাপারেও দারুণ উন্নতি করেছে। মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৯০ সালে প্রতি ১০০,০০০-তে ৭৪৮ থেকে ২০১৪ সালে তা কমে হয়েছে প্রতি ১০০,০০০-তে মাত্র ১৯০ জন।[35] নেপাল মোট উর্বরতার হার হ্রাসেও দারুণ উন্নতি করেছে, ১৯৯১ সালের ৫.৩[36] থেকে ২০১৪ সালে তা কমে এসেছে ২.৩-তে।[37]
মাতৃস্বাস্থ্যের অন্যান্য দিকগুলো ঠিক থাকলেও জন্মবিরতিকরণ প্র্রক্রিয়াগ্রহণের সূচক নিম্নমুখী ২০০৬ (৪৪.২%) এবং ২০১১ (৪৩.২%)[38] এবং সেইসাথে অন্য দেশে জীবিকা নির্বাহ করতে যাবার তাগিদে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেশ বেড়েছে (গ্রামাঞ্চলে তিন-চতুর্থাংশ)। ১৯৯৬ সালের পর থেকে মাতৃ স্বাস্থ্যসেবার মান বেশ বেড়েছে। সেইসাথে ২০১৪ সালে মাতৃস্বাস্থ্যের পরিব্যাপ্তী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত পরিদর্শনের হারও বেড়েছে (৬০% কমপক্ষে ৪ বার পরিদর্শনে)।[37] এছাড়াও জন্ম সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও জন্মে সহায়তাকারী দক্ষ দাই-এর হার বেড়েছে।[37]
নেপাল মানব উন্নয়ন সূচক ৪ অর্জনের পথে আছে। সেইসাথে জাতীয় উপাত্ত থেকে দেখা যায় শিশুমৃত্যু ৩৫.৮ হারে ২০১৫ সালে পাঁচ বছরের কমবয়সী প্রতি হাজারে ৫ জন[39] শিশুমৃত্যু তে নেমে এসেছে যা ১৯৯১ সালে ছিল ১৬২ জন।[36] বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই হার ৬৫% কমে প্রতি হাজারে ১২৮ থেকে ৪৮-তে এসেছে।[40]
কার্যকরী প্রোগ্রামের উন্নতির মাধ্যমে নেপাল শিশুমৃত্যুর গুরুত্বপূর্ণ কারণসমূহ মোকাবেলা ও বিভিন্ন দলভিত্তিক ও জাতীয় ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্বি-বার্ষিক ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো এবং কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর ক্যাম্পেইন। শিশুদের টিকাপ্রদানের হার দারুণভাবে বেড়েছে এবং ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের মাতৃদুগ্ধপানে উৎসাহিত করার ব্যাপারটিও মুটামুটিভাবে সাড়া ফেলেছে। যদিও গত কয়েক বছরে এনএমআর দৃঢ়ভাবে এটা নিয়ে কাজ করে গেছে। এতে করে ২০১৫ সালে প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যুহার ছিল ২২.২ এর কাছাকাছি। এর সাথে তুলনা করা যায় ভারতের শিশুমৃত্যুহার ২৭.৭ (২০১৫) এবং পাকিস্তানের ৪৫.৫ (২০১৫)।[39]
এনএমআর নেপালের একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান, ২০১৫ সালে যাদের কারণে নেপালের শিশু মৃত্যুহার ৭৬% এবং ৫ বছরের কমবয়সী ৫৮% শিশু মৃত্যুহার কমেছে এবং এর উদ্দেশ্যে আরো সামনে এগিয়ে যাওয়া।[39] কিছু বিরুপ কারণ স্বাস্থ্যসূচককে প্রভাবিত করে। তবে, নেপালে বেশিরভাগ স্বাস্থ্যসূচকগুলোতেই উন্নতি করেছে অনেক বাঁধা-বিপত্তি স্বত্ত্বেও। এটা অর্জনের প্রচেষ্টার কারণে অনেক ব্যাখাই দাঁড় করানো যায় যার মধ্যে অন্যতম ব্যাপার হলো কোনো প্রকার জটিলতাই স্বাস্থ্যসেবার মানকে প্রভাবিত করতে পারে নি। সকল অবস্থাতেই স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে ক্লিনিকগুলোতে পাঠানো হতো জটিলতায় আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে। মূলত দেশের এই জটিলতাই এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছিল যাতে করে এই ব্যবস্থাটা আরো উন্নতি লাভ করেছে। নেপালের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সেবা প্রদান, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে চিকিৎসা প্রদান, সমাজ ও দলভিত্তিক মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ বিশেষ করে মহিলাদের দলভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, মহিলাদের দল এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনায় (এইচএফওএমসি) দারুণভাবে ভূমিকা রেখেছে।[41]
নেপালের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয় (এমওএইচপি)-এর শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উন্নতির জন্য বেশকিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্প্রসারিত টিকা প্রদান কর্মসূচী (ইপিআই), সমাজভিত্তিক শিশুদের রোগব্যধির সমন্বিত ব্যবস্থাপনা (সিবিআইএমসিআই), সমাজভিত্তিক নবজাতক সুরক্ষা কার্যক্রম (সিবি-এনসিপি), শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পান বিষয়ক কার্যক্রম, সম্পুরক পুষ্টি উপাদান কার্যক্রম, ভিটামিন এ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক কার্যক্রম এবং সমাজভিত্তিক অপুষ্টির কুফল বিষয়ক কার্যক্রম।[37]
জাতীয় টিকা কার্যক্রম হলো নেপালের প্রথমে গুরুত্ব পাওয়া কার্যক্রম। সেই শুরুর সময় থেকে এখনও পর্যন্ত এটি একটি প্রতিষ্ঠিত ও সফলভাবে পরিচালিত একটি কার্যক্রম। টিকা কার্যক্রম সেবা যেকোন ক্লিনিক বা হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চলমান ও বিস্তৃত ক্লিনিক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ক্লিনিকে সম্পূর্ণ বিনামূলে সরবরাহ করা হয়। সরকার বিভিন্ন হাসপাতাল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও নার্সিং হোমগুলোতে একদম বিনামূল্যে বিভিন্ন ভ্যাকসিন ও টিকা সরবরাহ করে থাকে। মোট জনসংখ্যার সকল বয়সের ৯৭% মানুষের কাছে সমানভাবে, বিনামূল্যে এটি পৌঁছে দিয়ে নেপাল স্বাস্থ্যখাতে সফলভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এছাড়াও গত ১৫ বছরের উন্নতির ধারা থেকে এই কার্যক্রমগুলোর ইতিবাচক সম্ভাবনা খুব সহজেই প্রত্যক্ষ করা যায়।[42] ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আরো দুইটি ভ্যাকসিন যথাক্রমে পোলিও (আইপিভি) ও নিউমোনিয়া (পিসিভি) নেপালে প্রদান করা হয়। নেপালের ৬টি বিভাগের প্রায় ৯৯.৯% অংশ এর আওতায় আছে। এর ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ নেপালকে পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গর্ভবতী মায়েদের টিটেনাস সেই ২০০৫ সালেই দূর হয়েছে এবং জাপানি এনসেফালাইটিস নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে আছে। নেপালে ২০১৯ সালের মধ্যে হাম প্রতিরোধের লক্ষ্য হাতে নিয়েছে।[37] শুধুমাত্র নেপালের ১% শিশুরা কোনো প্রকার ভ্যাকসিন কার্যক্রমের আওতার বাইরে আছে।
এটি এমন এক ধরনের স্বাস্থ্য কার্যক্রম যা বিভিন্ন রোগব্যধি সনাক্তকরণ যেমন নিউমোনিয়া, উদরাময়, ম্যালেরিয়া ও হাম সেইসাথে ২ মাস থেকে ৫ বছরবয়সী শিশুদের অপুষ্টি ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করে সেগুলোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এছাড়াও এটি বিভিন্ন সংক্রমণ, জন্ডিস, হাইহারথার্মিয়া এবং ২ মাসের শিশুদের মাতৃদুগ্ধপানের গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করে। এটি নেপালের প্রায় সকল জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং শিশুদের রোগব্যধি নিয়ন্ত্রণে এটি এক ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। গত দশকে নেপাল এই প্রোগ্রামের আওতায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার কমাতে বেশ সফলতা দেখিয়েছে। প্রথমদিকে এটি ১৯৮২ সালে শুরু হয় ডায়রিয়াজনিত সমস্যাগুলো (সিডিডি) মোকাবেলার জন্য এবং এরপর ১৯৮৭ সালে এটি শ্বসনতন্ত্রের সমস্যা (এআরআই) মোকাবেলার জন্য শুরু করা হয়। ১৯৯৮ সালে এই দুই প্রোগ্রাম সংযুক্ত হয়ে সিবি-আইএমসিআই হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।[38]
১৯৯৬ সালের নেপালের পরিবার স্বাস্থ্য জরিপ, নেপাল ডেমোগ্রাফিক এ্যান্ড হেল্থ সার্ভে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নেপালে জন্মকালীন শিশুমৃত্যুহার শুধু শিশু মৃত্যুহারের চেয়ে কম গতিতে কমছে। ২০১১ সালে নেপাল ডেমোগ্রাফিক এ্যান্ড হেল্থ সার্ভের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে গড়ে প্রতি ১,০০০ জনে জন্মকালীন শিশু মৃত্যু ঘটে ৩৩ জনের যা ৫ বছরের কমবয়সী শিশুমৃত্যুর ৬১%। নেপালে জন্মকালীন মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো সংক্রমণ, জন্মকালীন শ্বাসরুদ্ধতা, অকাল জন্ম এবং হাইপোথার্মিয়া। নেপালের স্বাস্থ্যসেবার ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট যে জন্মকালীন শিশুমৃত্যুর হার কমানোর জন্য ৭২% সন্তান বাড়িতে জন্ম নেবার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে (এনডিএইচএস ২০১১)।[38]
এ কারণে, জন্মকালীন শিশুমৃত্যুহার কমাতে নেপালের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০০৪ সালের জাতীয় জন্মকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কৌশলের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন প্রোগ্রাম চালু করেছে যার নাম 'সমাজভিত্তিক নবজাতক সুরক্ষা কার্যক্রম' (সিবি-এনসিপি)।[38]
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে জাতীয় পুষ্টি প্রোগ্রাম এর মূল লক্ষ্য হলো "নেপালের সকল জনগণের পর্যাপ্ত পুষ্টি, খাদ্যসুরক্ষা এবং পর্যাপ্ত শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক অগ্রগতি ও ন্যায্য মানব সম্পদ উন্নয়ন ও জীবিকার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা"। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সামগ্রিক পুষ্টি কার্যক্রম, গর্ভধারণকারী মায়ের বয়স, গর্ভবতী মহিলা এবং সকল বয়সের মানুষের অপুষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ এবং পুষ্টি উপাদানের অভাবজনিত জটিলতা ইত্যাদির উন্নতিতে দলগত ও সমষ্টিগত সহযোগিতা, সমন্বয় এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাঝে অংশীদারত্ব এবং সাধারণে জনগণের মাঝে উচ্চমানের সচেতনতা ও সহযোগিতার মনোভাব তৈরির জন্য কাজ করা হচ্ছে।[43]
নেপালে অপুষ্টি একটি শিশুর বেঁচে থাকা, বৃদ্ধ ও উন্নতির জন্য একটি বড় বাঁধা। সবচেয়ে সাধারণ অপুষ্টিজনিত সমস্যা হলো আমিষজনিত অপুষ্টি (পিইএম)। অন্যান্য অপুষ্টির মধ্যে রয়েছে আয়োডিন, লৌহ এবং ভিটামিন এ-র অভাব। এই অভাবগুলো অনেকসময় একসাথেই লক্ষ্য করা যায়। মুটামুটিভাবে প্রবল অপুষ্ট এবং মারাত্মকভাবে অপুষ্ট শিশুদের বেশিরভাগই পর্যাপ্তভাবে অপুষ্ট শিশুদের চেয়ে বেশি মারা যায় শৈশবের সাধারণ রোগব্যধিগুলো থেকে। সেইসাথে, অপুষ্টি একটি শিশুর জন্য বাজেভাবে হুমকীস্বরুপ এবং তা এক-তৃতীয়াংশ শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী। নেপালে অপুষ্টি প্রধান কারণগুলো হলো দুর্বল মাতৃপুষ্টি, অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণ, নিয়মিত সংক্রমণ, বাড়ির খাদ্যস্বল্পতা, মাতৃদুগ্ধপানে অবহেলা এবং নিম্বমানের যত্ন যা পুরো প্রজন্মকে অপুষ্টির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।[44]
খর্বতায় আক্রান্ত শিশুদের উপর এক বিশ্লেষণে দেখা যায় প্রায় এদের প্রায় অর্ধেকের মতো শিশুর মায়েদের মাতৃকালীন দুর্বল পুষ্টির যোগান ছিল এবং বাকী অর্ধেক শিশুদের শৈশবে দুর্বল মানের পুষ্টির যোগা ছিল। নেপাল ডেমোগ্রাফিক এ্যান্ড হেল্থ সার্ভে'র মতে প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিশু জন্মগ্রহণ করে অনেক কম ওজন নিয়ে (এনডিএইচএস, ২০১১), ৫ বছরের কমবয়সী ৪১% শিশুরা খর্বতাবিশিষ্ট। এনডিএইচএস এবং এনএমআইসিএস-এর আরেকটি জরিপে আরো দেখা যায় জন্মগ্রহণ করা ৩০% শিশুরা কমওজনবিশিষ্ট এবং ৫ বছরের কমবয়সী ১১% শিশুরা কৃশকায়তাবিশিষ্ট।[37]
শিশুদের অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে নেপাল সরকার নিচের কার্যক্রমগুলো হাতে নিয়েছে:
হাসপাতাল ভিত্তিক পুষ্টি-ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন প্রোগ্রামের আওতায় বিভিন্ন অপুষ্টিজনিত জটিলতায় আক্রান্ত শিশুদেরকে আউট-পেশেন্ট থেরাপিউটিক প্রোগ্রাম (ওটিপি)-র মাধ্যমে সেবা দেয়া হয়। প্রয়োজন হলে এটি অন্যান্য বিভিন্ন পুষ্টি কার্যক্রম যেমন চাইল্ড নিউট্রিশন গ্রান্ট, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পাউডার (এমএনপি)-এর সাথে যুক্ত করে শিশুদের (৬ মাস থেকে ২৩ মাস বয়সী)[37] মাঝে বিতরণ করা হয় এবং সেইসাথে অরক্ষিত জায়গাগুলোতে খাদ্য বিতরণ করা হয়।
ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (২০০২) বলে যে শিশুকে জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত (অন্য কোনো তরল, খাদ্য বা পানি নয়)। ২০০৪ সালে জাতীয় পুষ্টি নীতিমালা ও কৌশল-এর অধীনে একটি পুষ্টি প্রোগ্রাম ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ এবং দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি নরম খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে প্রচার প্রচারণা চালায়। ৬ মাসের আগে বুকের দুধের বদলে অন্য কিছু খাওয়ালে দুধপানে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। বিকল্প খাদ্য যেমন বিভিন্ন ফর্মুলা পাউডার, দুধ বা গুঁড়াদুধ ইত্যাদিতে পানি মিশানো হয় এবং খুব সামান্য পরিমাণই ক্যালরি থাকে সেখানে। এছাড়াও সম্ভাব্য দুষণের কারণেও শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। নেপালের ১৯৯২ সালের দুগ্ধপান বিকল্প আইন (২০৪৯)-তে দুগ্ধপানে সুরক্ষা এবং অবৈধ ও অযাচিত দুগ্ধপান বিকল্প খাদ্য বিক্রয় ও বণ্টন নিয়ন্ত্রণকে প্রসার করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।[45]
৬ মাস পর একটি শিশুর বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সম্পুরক খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। উপযুক্ত সম্পুরক খাদ্য গ্রহণের অভাবে একটি শিশু অপুষ্টি ও ঘন ঘন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় যা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। তবে, সম্পুরক খাদ্যের পাশাপাশি দুই বছর বা তার অধিক বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ পান করা উচিত।[45]
সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বের ৮ নম্বর মৃত্যুর কারণ, স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক একটি বোঝা। প্রতি বছর সারাবিশ্বে প্রায় ১.২৫ মিলিয়ন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং তাদের জীবন থেমে যায়। ২০-৫০ মিলিয়ন মানুষ মুটামুটিভাবে আহত হয়, অনেকে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়।[46] নেপালে সড়ক দুর্ঘটনা হলো প্রতিবন্ধিতা অভিযোজিত জীবনকাল-এর তালিকায় ৮ নম্বরে এবং সেইসাথে সংক্রমক ও অসংক্রমক ব্যধির বাইরে অকাল মৃত্যুর কারণের তালিকাতেও ৮ নম্বরে।[47]
নেপালে সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে মূলত বাস দুর্ঘটনার কারণে। দেশটির ভূ-প্রকৃতির কারণে পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি বাস দুর্ঘটনা ঘটে থাকে এবং এই দুরপাল্লার রাস্তা প্রতি বছর ৩১% মৃত্যু ও মারাত্মকভাবে আহত হবার জন্য দায়ী।[48] রাজধানী কাঠমান্ডুতে অন্যান্য শহর ও নিম্নভূমির তুলনায় সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল, মাইক্রো-বাস, কার ইত্যাদির দুর্ঘটনা ঘটে। রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ সারা দেশের দুর্ঘটনার প্রায় ৫৩.৫±১৪.১।[49] ১৫ এবং ৪০ বছর বয়সী মানুষের দলই সবচেয়ে গুরুতরভাবে আক্রান্ত দল, এরপরই রয়েছে ৫০-এর উপরের বয়সী এবং তাদের বেশিরভাগই পুরুষ যা তাদের প্রতিবন্ধিতা অভিযোজিত জীবনকালের ৭৩%। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বাগমাটি এলাকায় সর্বমোট নিবন্ধন করা গাড়ির সংখ্যা ছিল ১২৯,৫৫৭ যা দেশের মোট গাড়ির ২৯.৬%।[49][50]
নিচের ছকে ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতি ১০,০০০ গাড়িতে মরণঘাতি দুর্ঘটনার সংখ্যা তুলে ধরা হলো
বছর | দুর্ঘটনার সংখ্যা | মৃত্যু | মোট গাড়ির সংখ্যা | প্রতি ১০,০০০ গাড়িতে মৃত্যু |
---|---|---|---|---|
২০০৫-৬ | ৩৮৯৪ | ৮২৫ | ৫৩৬৪৪৩ | ১৫.৩৮ |
২০০৬-৭ | ৪৫৪৬ | ৯৫৩ | ৬২৫১৭৯ | ১৫.২৪ |
২০০৭-৮ | ৬৮২১ | ১১৩১ | ৭১০৯১৭ | ১৫.৯১ |
২০০৮-৯ | ৮৩৫৩ | ১৩৫৬ | ৮১৩৪৮৭ | ১৬.৬৭ |
২০০৯-১০ | ১১৭৪৭ | ১৭৩৪ | ১০১৫২৭১ | ১৭.০৮ |
২০১০-১১ | ১৪০১৩১ | ১৬৮৯ | ১১৭৫৮২৪ | ১৪.৩৬ |
২০১১-১২ | ১৪২৯১ | ১৮৩৭ | ১৩৪২৯২৭ | ১৩.৬৮ |
২০১২-১৩ | ১৩৫৮২ | ১৮১৬ | ১৫৪৫৯৮৮ | ১১.৭৫ |
উৎস: সড়ক দুর্ঘটনা নথি, ট্রাফিক পরিচালকের দপ্তর, নেপাল পুলিশ [50]
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নেপালে প্রায় ১৮ টি বহির্বিভাগ মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র রয়েছে, ৩ টি দিবাগত চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র এবং ১৭ টি দলগতভাবে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। বেশিরভাগ মানসিক সেবাগুলো দেয়া হয় বহির্বিভাগে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোতে। এখানকার ৩৭% রোগীই মহিলা। মানসিক সমস্যায় আক্রান্তদের ভর্তি করানো হয় দুইটি গ্রুপে: সিজোফ্রেনিয়া, সিজোটাইপাল ও ডিল্যুশনাল ডিজঅর্ডার (৩৪%) এবং ম্যুড ডিজঅর্ডার (২১%)। গড়ে প্রতিজন রোগী মানসিক হাসপাতালে ১৮.৮৫ দিন ব্যয় করে। সকল রোগী বছরব্যাপী চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক বছরেরও কম সময় মানসিক হাসপাতালে ব্যয় করে।
মেডিকেলে ডাক্তারদের ট্রেইনিং-এর ২% দেয়া হয় মানসিক ডাক্তারদের আর একই হারে নার্সদেরও দেয়া হয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সার্বজনীন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে দেশের ৭৫ টি জেলার ৭ টি-তে। অন্যান্য জেলাগুলোতে সার্বজনীন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় না। কারণ, সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা প্রক্রিয়ার সাথে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রক্রিয়া এখনও যুক্ত করা হয় নি।
যদিও নেপালের মানসিক স্বাস্থ্য নীতিমালা ১৯৯৬ সালে গঠন করা হয়, তবুও এখনও পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো আইন প্রণয়ন হয় নি। খরচের দিক বিবেচনা করলে সরকার প্রায় এক শতাংশেরও কম (০.১৭%) পরিমাণ খরচ করছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার দিকে। তবে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার মান যাচাই ও রোগীর অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এখনও কোনো প্রকার আইন প্রণয়ন বা তদারকির জন্য কোনো ব্যক্তি বা রিভিউ বডি তৈরি হয়নি।[51]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.