Loading AI tools
কোনও বস্তু বা ঘটনার ধর্মকে কোনও পূর্বনির্ধারিত এককের সাপেক্ষে সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করার প্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রায় প্রতিটি কাজের সাথেই মাপ-জোখের ব্যাপারটি জড়িত। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণার ক্ষেত্রে সূক্ষ্ম মাপ-জোখের প্রয়োজন হয়। পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সকল পরীক্ষণেই পদার্থের পরিমাণ, বলের মান, অতিবাহিত সময়, শক্তির পরিমাণ ইত্যাদি জানতে হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এ মাপ-জোখের বিষয়টাকে বলা হয় পরিমাপ। সুতরাং, কোন কিছুর পরিমাণ নির্ণয় করাকে পরিমাপ বলা হয়।[1][2]
এই নিবন্ধটি কিংবা অনুচ্ছেদটি পরিমাপের একক এবং পরিমাপের ইতিহাস নিবন্ধে একত্র করা যেতে পারে। (আলোচনা করুন) প্রস্তাবের তারিখ: এপ্রিল ২০২৪। |
পদার্থবিদ্যার গাঠনিক উপাদান বা ব্লকসমূহকে ভৌত রাশি বলে যার মাধ্যমে পদার্থবিদ্যার সূত্রসমূহ প্রকাশ পায়। এই রাশি গুলোর মধ্যে রয়েছে বল, সময়, বেগ, ঘনত্ব, তাপমাত্রা, চৌম্বক সংবেদ্যতা,চাপ তাপ ইত্যাদি; এদের মধ্যে বল, তাপমাত্রা ইত্যাদি পদগুলো আমরা হরহামেশাই কথাবার্তার মধ্যে বললেও আমরা এদের বৈজ্ঞানিক অর্থকে না বুঝিয়ে ভিন্ন অর্থকে বোঝাই।
পদার্থবিদ্যার ভিত্তি রাশিগুলোকে নিখুঁতভাবে এবং সুনির্দিষ্ট ভাবে সংজ্ঞায়িত করা খুবই জরুরী। কোন ভৌত রাশির সংজ্ঞা দেওয়া থাকলে রাশিটির পরিমাপ পদ্ধতি অবশ্যই দেওয়া থাকবে। এরূপ পরিমাপ পদ্ধতির সাথে গাণিতিক ক্রিয়াকলাপও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ভৌতভাবে উপলব্ধিযোগ্য বা পরিমাপযোগ্য যেকোনো পরিবেশগত বিষয়বস্তুকেই রাশি বলে। ভৌত রাশিকে সচরাচর মৌলিক (fundamenta) রাশি এবং লব্ধ (derived) রাশিতে ভাগ করা হয়। রাশির এই বিভাজন স্বেচ্ছাধীন (arbitrary) কারণ যে কোন ধরনের ক্রিয়াকলাপে (operation) একটি রাশিকে মৌলিক বিবেচনা করলে অন্য কোন ক্রিয়াকলাপে তা লব্ধ রাশি বিবেচিত হতে পারে। লব্ধ রাশি হল সেগুলো যাদের সংজ্ঞার ভিত্তি হল অন্যান্য ভৌত রাশি। বেগ, ত্বরণ, আয়তন প্রভৃতি হলো লব্ধ রাশি। মৌলিক রাশিকে অন্যান্য ভৌত রাশির মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা হয় না। মৌলিক রাশি হিসেবে স্বীকৃতি রাশির সংখ্যাও খুব বেশি নয়। যেমন— দৈর্ঘ্য ও সময় সহ মোট মাত্র সাতটি মৌলিক রাশি রয়েছে। মৌলিক রাশির সংজ্ঞা নির্ধারণে দুটি ধাপ রয়েছে। প্রথমত, একটি আদর্শ পছন্দ করা এবং দ্বিতীয়ত, এই আদর্শের সাথে তুলনা করে অন্য রাশির পরিমাপ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা যেন একটি এককযুক্ত সংখ্যা দ্বারা রাশিটির পরিমাপ পাওয়া যায়।
একটা আদর্শিক (ideal) আদর্শের দুটি মুখ্য বৈশিষ্ট্য থাকে, যা অভিগম্য এবং অপরিবর্তিত। কিন্তু এই দুটি প্রয়োজনীয়তার মধ্যে কোন সঙ্গতি এবং তাই এদের মধ্যে একটা আপোস রফার প্রয়োজন। প্রথমে অভিগম্যতা উপর অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অপরিবর্তিতার উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, সুপরিচিত গজ, ফুট ও ইঞ্চি সরাসরি মানুষের বাহু (হাত), পা ও বৃদ্ধাঙ্গুল থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বর্তমানে দৈর্ঘ্যের এরূপ আনুমানিক পরিমাপ সন্তোষজনক নয় এবং এর বদলে সহজে পরিবর্তনীয় নয় এমন আদর্শ ব্যবহার করা হয়।
ধরা যাক, দৈর্ঘ্যের আদর্শ হিসেবে একটা দণ্ড নির্বাচন করা হলো যার দৈর্ঘ্যকে এক মিটার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এখন দ্বিতীয় একটি দণ্ডের দৈর্ঘ্যকে আদর্শ দণ্ডটির সাথে সরাসরি তুলনা করে দেখা গেল যে এটার দৈর্ঘ্য প্রথমটির তিনগুন। তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায় যে দ্বিতীয়টির দৈর্ঘ্য 3 মিটার। বাস্তবে অধিকাংশ রাশিকে প্রাথমিক আদর্শের সাথে সরাসরি তুলনা করে পরিমাপ করা যায় না। এরূপ ক্ষেত্রে পরোক্ষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কতিপয় স্বতঃসিদ্ধ তৈরি করে নেওয়া হয় যেগুলো প্রত্যক্ষ ক্রিয়াকলাপে পরোক্ষ পরিমাপের ফলাফলকে সম্পর্কযুক্ত করে।
উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, কোন নির্দিষ্ট সময়ে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে একটি রকেট লঞ্চিং স্টেশনের দূরত্ব জানা দরকার। এক্ষেত্রে দূরত্ব পরিমাপের জন্য পরোক্ষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পদ্ধতিটি এমন হতে পারে যে, (সচরাচর এমনটি হয়) স্টেশনে কোন প্রেরক যন্ত্র থেকে রাডার সংকেত প্রেরণ করা হলো যা চন্দ্রপৃষ্ঠ কর্তৃক প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে এবং প্রেরক স্টেশনে কোন গ্রাহক যন্ত্র কর্তৃক উদঘাটিত হয়। রাডার সংকেত প্রেরণ ও উদঘাটনের সময় ব্যবধানের অর্ধেকের সাথে সংকেতের দ্রুতি গুণ করলে রকেট স্টেশন হতে চন্দ্রপৃষ্ঠের দূরত্ব পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত স্বীকার্য হলঃ রাডার সংকেতের দ্রুতি ধ্রুবক এবং সংকেত সরল পথে গতি সম্পাদন করে। উপরন্তু এই সংকেতের দ্রুতি জানা থাকবে।
জ্যোতির্বিদ্যা সম্মত দূরত্ব, যেমন পৃথিবী থেকে কোন নক্ষত্রের দূরত্ব সরাসরি নির্ণয় করা যায় না। এরূপ বৃহৎ দূরত্ব পরিমাপের জন্য পরোক্ষ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। আবার অতিশয় ক্ষুদ্র দূরত্ব যেমন পরমাণু বা অণুর অভ্যন্তরীণ কণাসমূহের পারস্পরিক দূরত্ব পরিমাপের ক্ষেত্রেও পরোক্ষ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রোটনের কার্যকর ব্যাসার্ধ পরিমাপে কণা বিক্ষেপণ পরীক্ষা ব্যবহার করে 1.2× 10−15 মিটার পাওয়া যায়।[3]
পরিমাপের একক, মৌলিক রাশি, লব্ধ রাশি, রাশির মাত্রা, এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ইত্যাদি পরিমাপের বিভিন্ন আলোচ্য বিষয়সমূহের মধ্যে অন্যতম।
এ ভৌত জগতে যা কিছু পরিমাপ করা যায় তাকে আমরা রাশি বলি। যেমন- দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, বল ইত্যাদি রাশি কেননা এদেরকে পরিমাপ করা যায়। ভৌত জগতে এরূপ বহু রাশি আছে। এ রাশিগুলো প্রধানত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত, যথা- মৌলিক রাশি ও যৌগিক বা লব্ধ রাশি।
যে সকল রাশি স্বাধীন বা নিরপেক্ষ, যেগুলো অন্য রাশির ওপর নির্ভর করে না বরং অন্যান্য রাশি এদের ওপর নির্ভর করে, তাদেরকে মৌলিক রাশি বলে। যেমন- সময়, তাপমাত্রা, তড়িৎ প্রবাহ, দীপন ক্ষমতা, কোন বস্তুর দৈর্ঘ্য, ভর ইত্যাদি।
যে সকল রাশি মৌলিক রাশির ওপর নির্ভর করে বা মৌলিক রাশি থেকে তৈরি তদেরকে লব্ধ রাশি বলে। যেমন- কাজ, বল, বিভব, বেগ, কোন বস্তুর আয়তন ইত্যাদি।
আমরা জানি, কোনো রাশি এক বা একাধিক মৌলিক রাশির সমন্বয়ে গঠিত। সুতরাং যে কোন ভৌত রাশিকে বিভিন্ন সূচকের এক বা একাধিক মৌলিক রাশির গুণফল হিসেবে প্রকাশ করা যায়। কোন ভৌত রাশির উপস্থিত মৌলিক রাশিগুলোর সূচককে রাশিটির মাত্রা বলে। যেমন: বলের মাত্রা MLT−2.
আবার, যে সমীকরণের সাহায্যে কোন রাশির মাত্রা প্রকাশ করা হয়, তাকে মাত্রা সমীকরণ বলে। যেমন: বলের মাত্রা সমীকরণ হল, [F]=[MLT−2]
যে আদর্শ ভৌত রাশির সাথে তুলনা করে অন্যান্য রাশির পরিমাপ করা হয় তাকে পরিমাপের একক বলে। যে কোন পরিমাপের জন্য একটি আদর্শের প্রয়োজন রয়েছে যার সাথে তুলনা করে অন্যান্য ভৌত রাশির পরিমাপ করা হয়। এ আদর্শকে বলা হয় পরিমাপের একক। যেমন- একটি লাঠির দৈর্ঘ্য ৫ মিটার। উদাহরণটিতে 'মিটার' হল দৈর্ঘ্যের একক এবং ৫ মিটার বলতে বোঝায় পাঁচটি এক মিটারের পাঁচ গুণ দৈর্ঘ্য। ক্ষেত্রফল, আয়তন, ভর, শক্তি, ত্বরণ, বল, সময় ইত্যাদি রাশিগুলোর মাপার জন্য ভিন্ন ভিন্ন একক রয়েছে। পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতিতে আবার এদের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। এককগুলো হবে সুবিধাজনক আকারের, যা সহজে ও সঠিকভাবে পুনরুৎপাদন করা যায়। এ এককগুলো আবার পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
এক কথায়, যে আদর্শ পরিমাপের সাথে তুলনা করে ভৌত রাশিকে পরিমাপ করা হয়, তাকে পরিমাপের একক বলা হয়।
রাশি যেমন মৌলিক ও লব্ধ হতে পারে তেমনি এককও মৌলিক ও লব্ধ হতে পারে।
পরিমাপের এককের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। এদের মধ্যে নিচের তিনটি অধিক আলোচিত।
দৈনন্দিন কাজকর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই পরিমাপের প্রচলন ছিল। এই পরিমাপের জন্য বিভিন্ন রাশির স্থানীয় বা এলাকা ভিত্তিক বহু একক প্রচলিত ছিল। যেমন: কিছুকাল পূর্বেও আমাদের দেশে ভরের একক হিসেবে মণ, সের ইত্যাদি প্রচলিত ছিল। আবার দূরত্ব নির্দেশের একক হিসেবে মাইল কিংবা দৈর্ঘের জন্য গজ, ফুট, ইঞ্চি ইত্যাদি এখনো প্রচলিত আছে। বৈজ্ঞানিক তথ্যের আদান-প্রদান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য সারা বিশ্বে পরিমাপের একই রকম আদর্শের প্রয়োজন পড়ে। এ থেকে ১৯৬০ সালে গোটা বিশ্বে বিভিন্ন রাশির একই রকম একক চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। এককের এ পদ্ধতিকে বলা হয় এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বা সংক্ষেপে এস.আই।
সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি চালুর পূর্বে বৈজ্ঞানিক হিসাব-নিকাসের ক্ষেত্রে এককের তিনটি পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, যথা- সি.জি.এস (CGS), এম.কে.এস (MKS), এফ.পি.এস (FPS)।
নিচের সারণিতে আন্তর্জাতিক পদ্ধতির মৌলিক এককগুলোর নাম ও প্রতীক সন্নিবেশ করা হল:
রাশির নাম | রাশির প্রতীক | আন্তর্জাতিক একক | এককের প্রতীক | |
---|---|---|---|---|
i | দৈর্ঘ্য (Length) | মিটার (Meter) | ||
ii | ভর (Mass) | কিলোগ্রাম (Kilogram) | ||
iii | সময় (Time) | সেকেন্ড (Second) | ||
iv | তাপমাত্রা (Temperature) | বা | কেলভিন (Kelvin) | |
v | তড়িৎ প্রবাহ (Current) | অ্যাম্পিয়ার (Ampere) | ||
vi | দীপনমাত্রা বা দীপন তীব্রতা (Luminous intensity) | ক্যান্ডেলা (Candela) | ||
vii | পদার্থের পরিমাণ (Amount of substance) | মোল (Mol) | ||
নিম্নে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে মৌলিক এককগুলের জন্য সর্বশেষ গৃহীত আদর্শ উপস্থাপন করা হলঃ
দৈর্ঘ্যের একক (মিটার): ভ্যাকিউয়ামে বা বায়ু শূন্য স্থানে আলো '১/২৯৯৭৯২৪৫৮' সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে ১ মিটার বলে।
ভরের একক (কিলোগ্রাম): ফ্রান্সের স্যাভ্রেতে ইন্টারন্যাশনাল ব্যুর অব ওয়েটস্ এন্ড মেজারস-এ সংরক্ষিত প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম সংকর ধাতুর তৈরি ৩.৯ সে.মি. ব্যাস এবং ৩.৯ সে.মি উচ্চতা বিশিষ্ট একটি সিলিন্ডারের ভরকে ১ কিলোগ্রাম বলে।
সময়ের একক (সেকেন্ড): একটি সিজিয়াম- ১৩৩ পরমাণুর ৯১৯২৬৩১৭৭০টি স্পন্দন সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে ১ সেকেন্ড বলে।
তাপমাত্রার একক (কেলভিন): পানির ত্রৈধ বিন্দুর তাপমাত্রার '১/২৭৩.১৬' ভাগকে ১ কেলভিন বলে।
তড়িৎ প্রবাহের একক (অ্যাম্পিয়ার): ভ্যাকিউয়ামে বা বায়ু শূন্য স্থানে এক মিটার দূরত্বে অবস্থিত অসীম দৈর্ঘ্যের এবং উপেক্ষণীয় প্রস্থচ্ছেদর দুটি সমান্তরাল সরল পরিবাহীর প্রত্যেকটিতে যে পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহ চললে পরস্পরের মধ্যে প্রতি মিটার দৈর্ঘ্যে ২×১০^-৭নিউটন বল উৎপন্ন হয়, তাকে ১ অ্যাম্পিয়ার বলে।
দীপন ক্ষমতার একক (ক্যান্ডলা): ১০[পারসেক] চাপে প্লাটিনামের হিমাঙ্কে (২০৪২ কেলভিন) কোনো কৃষ্ণবস্তুর পৃষ্ঠের '১/৬০০০০০' বর্গমিটার পরিমিত ক্ষেত্রফলের পৃষ্ঠের অভিলম্ব বরাবর দীপন ক্ষমতাকে ১ ক্যান্ডেলা বলে।
পদার্থের পরিমাণের একক (মোল): যে পরিমাণ পদার্থ ০.০১২ কিলোগ্রাম কার্বন- ১২ এ অবস্থিত পরমাণুর সমান সংখ্যক প্রাথমিক ইউনিট থাকে, তাকে ১ মোল বলে।
দৈর্ঘ্যের আদর্শ হিসেবে গোড়ার দিকে প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম সঙ্ককরের একটি দণ্ডকে আদর্শ মিটার হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দণ্ডটি প্যারিসের নিকটে ওজন ও পরিমাপ কমিটির আন্তর্জাতিক ব্যুরোতে রাখা হয়েছে। দণ্ডের দুই প্রান্তে খোদাই করা স্বর্ণ প্লাগের উপরিস্থিত সুদৃশ্য দুটি রেখার মধ্যবর্তী দূরত্বকে এক মিটার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে (দণ্ডটি 0.00°) তাপমাত্রায় রক্ষিত। ঐতিহাসিকভাবে প্যারিসের মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত ভৌগোলিক মধ্যরেখা বরাবর মেরু থেকে বিষুবীয় অঞ্চলের মধ্যবর্তী দূরত্বের একটি একটি সুবিধাজনক দূরত্বের ভগ্নাংশকে (দশ লক্ষ ভাগের এক ভাগ) এক মিটার গণ্য করা হয়। এভাবে সংজ্ঞায়িত মিটার ও আদর্শ মিটার দণ্ডের পরিমিত মানের মধ্যে সামান্য পার্থক্য (প্রায় 0.023%)
আদর্শ মিটার খুব অভিগম্য (accessible) ছিল না বলে এর যথার্থ প্রতিচ্ছবি সভ্য বিশ্বের আদর্শ পরীক্ষাগারগুলোতে পাঠানো হয়। এই আদর্শ মিটারের সাথে তুলনা করে দৈর্ঘ্য পরিমাপের নিমিত্তে রুলার (ruler) ক্রমাংক করে নেওয়া হয়েছে। অধুনা এরূপ রুলার বা স্কেলের (প্রচলিত শব্দ) সাথে যুক্ত হয়েছে ভার্নিয়ার স্কেল কিংবা মাইক্রোমিটার। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ইংরেজরা দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক হিসেবে যে গজ ব্যবহার করত তার সংজ্ঞা ছিল নিম্নরূপ:
আবার ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য ইঞ্চি ব্যবহার করা হত যা নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত:
দৈর্ঘ্যের মুখ্য আদর্শ হিসেবে প্রদত্ত মিটার দণ্ডের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপিত হয়। এটা সম্ভাব্যরূপে ধ্বংসসাধ্য, এটাকে যথার্থভাবে পুনরুৎপাদন করা যায় না; এটা খুব অভিগম্যও নয়। এসকল কারণেই ১৮৬৪ সালে হাইপোলাইট লুইস ফিজ্যো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যকে আদর্শ হিসেবে ব্যবহার ব্যবহারের উপদেশ দেন।
১৯৬১ সালে আন্তর্জাতিকভাবে দৈর্ঘ্যের জন্য পারমাণবিক আদর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। শূন্য মাধ্যমে তড়িৎ ক্ষরণ থেকে নির্গত ক্রিপটনের নির্দিষ্ট আইসোটোপ (78
Kr
) হতে নিঃসৃত কমলা বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে আদর্শ হিসেবে নির্বাচন করা হয়। বর্তমানে এই আলো 1,650,763.73 তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে এক মিটার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এ সকল আলোক তরঙ্গের মাধ্যমে সতর্কতার সাথে পরিমিত আদর্শ মিটার দণ্ডের দৈর্ঘ্য দ্বারা এই সংখ্যক তরঙ্গদৈর্ঘ্য উপনীত হওয়া যায়। এই তুলনাকার্য এমনভাবে সম্পাদন করা হয় যেন আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত নতুন আদর্শ, মিটার দণ্ডের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত পুরনো আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য পারমাণবিক আদর্শ নির্বাচনের বিষয়টি নির্ভুলতায় অধিক সুবিধাজনক। আলো উৎপাদনে সমান পরমাণু সর্বত্র পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় এবং প্রদত্ত নমুনা কোন নমুনার পরমাণুসমূহ সদৃশ এবং এরা একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক নির্গমন করে। কাজেই এরূপ পারমাণবিক আদর্শ অভিগম্য ও অপরিবর্তী। যে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে অদ্বিতীয়ভাবে নির্বাচন করা হয় তা হল ক্রিপটন-86। এই আইসোটোপকে অধিক বিশুদ্ধ অবস্থায় খুব সহজেই পাওয়া যায়।
ফ্রান্সের স্যাভ্রতে আন্তর্জাতিক ওজন ও পরিমাপ ব্যুরোতে রক্ষিত প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম সঙ্করের একটি সিলিন্ডারের ভরকে আদর্শ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সিলিন্ডার ব্যাস ও উচ্চতা 3.9 সেন্টিমিটা। ভরের এই আদর্শকে এক কিলোগ্রাম বলা হয়। এই আদর্শ সাথে তুলনা করে আন্তর্জাতিকভাবে পদার্থের ভর পরিমাপ করা হয়।
পদ্ধতিতে নিম্নোক্ত উপসর্গ বা গুণিতকগুলো ব্যবহৃত হয়:
উপসর্গ বা পদের নাম | ইংরেজি নাম | প্রতীক | বৈজ্ঞানিক সংকেত (10এর ঘাত) | ডাটা প্রবাহের ক্ষেত্রে (2এর ঘাত) |
---|---|---|---|---|
ইয়োটা | Yotta | Y | 1024 | 280 |
জেটা | Zetta | Z | 1021 | 270 |
এক্সা | Exa | E | 1018 | 260 |
পেটা | Peta | P | 1015 | 250 |
টেরা | Tera | T | 1012 | 240 |
গিগা | Giga | G | 109 | 230 |
মেগা | Mega | M | 106 | 220 |
কিলো | kilo | k | 103 | 210 |
হেক্টো | hecto | h | 102 | –– |
ডেকা | deca | D | 101 | –– |
একক | –– | –– | 100 | 20 |
ডেসি | deci | d | 10–1 | –– |
সেন্টি | centi | c | 10–2 | –– |
মিলি | milli | m | 10–3 | –– |
মাইক্রো | micro | μ | 10–6 | –– |
ন্যানো | nano | n | 10–9 | –– |
পিকো | pico | p | 10–12 | –– |
ফেমটো | femto | f | 10–15 | –– |
অটো | atto | a | 10–18 | –– |
জেপ্টো | zepto | z | 10–21 | –– |
ইয়োক্টো | yocto | y | 10–24 | –– |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.