প্রোম
মানববসতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মানববসতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রোম (বর্মী: ပြည်မြို့; মন ভাষা: ပြန် পিয়ায় ও পাইও বলা হয়) মিয়ানমারের বাগো অঞ্চলের একটি শহর। এই ইয়াঙ্গুনের উত্তর-পশ্চিমে ২৬০ কিলোমিটার (১৬০ মাইল) দূরে ইরাবতী নদীর তীরে অবস্থিত।[1] এটি ইরাবতী বদ্বীপ, মধ্য ও উচ্চ মিয়ানমার এবং রাখাইন (আরাকান) রাজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র।[2] ব্রিটিশ ইরাবতী ফ্লোটিলা সংস্থা উনিশ শতকের শেষদিকে উচ্চ এবং নিম্ন বার্মার মধ্যে মালপত্র স্থানান্তর করার জন্য ইরাবতী নদীর তীরে বর্তমান শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিল।
প্রোম ဍုၚ်ပြန် | |
---|---|
শহর | |
স্থানাঙ্ক: ১৮°৪৯′০১″ উত্তর ৯৫°১৩′০৫″ পূর্ব | |
দেশ | মিয়ানমার |
বিভাগ | বাগো অঞ্চল |
জেলা | পিয়ায় জেলা |
শহরাঞ্চল | পিয়ায় শহরাঞ্চল |
জনসংখ্যা (২০১৪) | |
• পৌর এলাকা | ১,৩৪,৮৬১ |
• মহানগর | ২,৫১,৬৪৩ |
সময় অঞ্চল | +৬:৩০ (ইউটিসি+৬:৩০) |
প্রোম বা পিয়ায় জেলা থাইয়েটম্যো, হিনথাদা এবং থারাওয়াদ্দি জেলার মধ্যে অবস্থিত ইরাবতী উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রোম জেলার পশ্চিম পাশে আরাকান পর্বতমালা এবং পূর্ব পাশে রয়েছে পেগু পাহাড়শ্রেণী। প্রোম জেলার প্রধান শহরগুলো হলো প্রোম বা পিয়ায়, শোয়ে তাং এবং পাওংদে।
বর্মী ভাষায় "পিয়ায়" নামটির অর্থ "দেশ"। এটি দ্বারা পিউ শহর-রাজ্যের প্রধান শহর, শ্রী কসেত্রা (বর্মী: သရေခေတ္တရာ, সংস্কৃত ভাষায় অর্থ- "আশীর্বাদ করা স্থান, দেশ") এর ধ্বংসাবশেষ বোঝায় যা আধুনিক প্রোম শহরের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৮ কিমি দূরে অবস্থিত (৫.০ মাইল)।
শ্রী কসেত্রার নির্মাণকে ঘিরে বেশ বিতর্ক রয়েছে। হতিন অং বলেছে যে সংস্কৃত/পিউ যুগে ৭৮ খ্রিস্টাব্দে সম্ভবত পিউ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ডি জি ই. হল এবং গর্ডন লুস অবশ্য দাবি করেছেন যে চতুর্থ শতাব্দীর আগে ইরাবতী উপত্যকায় সভ্যতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। সুতরাং শ্রী কসেত্রার প্রতিষ্ঠা ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল, যেখান থেকে বর্তমান বার্মিজ কাওজা যুগের সূচনা হয়েছিল।
শ্রী কসেত্রা বিক্রমের পিউ রাজবংশের রাজধানী ছিল। শহরটি প্রায় ৪৬ বর্গকিমি (১৮ বর্গ মাইল) প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল এবং এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম প্রাচীরযুক্ত শহর ছিল। জলপথ এবং ট্যাঙ্কের অবশেষ আবিষ্কার করায় এটি থেকে স্পষ্ট যে শহরটিতে আবাসন ও খামার উভয়ই ছিল।
চীনা তীর্থযাত্রী হিউয়েন সাঙ এবং ই-ৎসিঙ্ ৭ম শতাব্দীর মধ্যভাগে শ্রী কসেত্রার কথা উল্লেখ করেছে।[3] এটি এখনো জানা যায়নি কখন পিউ শ্রী কাসেত্রা থেকে আলাদা হয়ে উত্তরে চলে গিয়েছিল। ধারণা করা হয় যে তাদের পতন ইরাবতী নদী ব-দ্বীপের বর্ধনের কারণে হয়েছে যার ফলে উপকূলীয় বাণিজ্যের ক্ষতি হয়। মন ও পরে শান আক্রমণের ফলেও তাদের পতন ঘটে। বার্মিজ ইতিহাসে বলা হয়েছে যে আনোরাহতা যখন ১০৫৬ সালে আধুনিক মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চল আক্রমণ করেছিলেন, তখন তিনি বিদ্রোহীদের সেখানে আশ্রয় না দেওয়ার জন্য শ্রী কসেত্রার ধ্বংসাবশেষ ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বার্মিজ পিউকে পাই ডাকা শুরু করেছিল। বিস্তৃত ধ্বংসাবশেষগুলো প্রত্নতাত্ত্বিক তদন্তের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্রিটিশরা শহরটিকে প্রোম নামে ডাকে (১৭ শতাব্দীর পর্তুগিজ গ্রন্থগুলোতে প্রোম নামটি প্রকাশিত হওয়ার পরে)। শহরটি ১৮৫৩ সালে দ্বিতীয় অ্যাংলো-বার্মিজ যুদ্ধের পরে ব্রিটিশ দ্বারা দখলকৃত হয়। যুদ্ধটি চলাকালে ১৮২৫ সালে ব্রিটিশরা শহরটি দখল করেছিল। ১৮৫২ সালে আবারও তারা শহরটি দখল করে। উভয় ঘটনার ক্ষেত্রেই খুব কমই বিরোধিতা হয়েছিল। ১৮৬২ সালে, এখানে আগুন লাগায় শহরটি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। ১৮৭৪ সালে একে একটি পৌরসভা স্থাপন করা হয়েছিল এবং এর পর থেকে জল সরবরাহের পাশাপাশি অনেক উন্নতি হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শহরটিতে প্রোম যুদ্ধ স্থান ছিল। পরবর্তীকালে ১৯৪৫ সালের মাসে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী শহরটিকে পুনরায় দখল করেছিল।
দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে, শহরটি প্যাগোডাযুক্ত পাহাড় দ্বারা আবদ্ধ। যার মধ্যে রয়েছে স্বর্ণের শোয়েসানদ প্যাগোডা রয়েছে। শোয়েসানদ প্যাগোডা শহরটির মাঝখানে একটি প্যাগোডা। এটি ইয়াঙ্গুন থেকে জেলার মধ্য দিয়ে যাওয়া রেললাইনের শেষ গন্তব্য।[4]
শহরের পশ্চিমে, নাওয়াদয় সেতুর মধ্য দিয়ে ইরাবতী নদী পেরিয়ে শোয়েবন্থা মুনি প্যাগোডা অবস্থিত। বুদ্ধ মূর্তিটি মহা মিয়াত মুনি বুদ্ধ মূর্তির তিনটি প্রতিরূপের একটি। এটি সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৫৫৪ সালে রাজা সান্দার থুড়ীর রাজত্বকালে তৈরি হয়েছে।[5]
জেলার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল বন দিয়ে ঢাকা এবং এতে উপত্যকা, যা নাভেনগ নদী নামে একটি বৃহত প্রবাহে একত্রিত হয়েছে। সমভূমির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রোমের দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত এবং এর মধ্যে যে রেলপথ রয়েছে তার পুরো দৈর্ঘ্য বরাবর প্রসারিত। জঙ্গল দ্বারা আচ্ছাদিত চাষ করার আরও বড় জমি রয়েছে। প্রধান নদী হলো ইরাবতী নদী, যা জেলাকে উত্তর থেকে দক্ষিণে ছেদ করে। এর পরে রয়েছে থানি নদী এবং এর শাখা নদী। রাজধানীর নিকটবর্তী পাহাড়ের ভূমি স্তরীয় গঠনের মাধ্যমে তৈরি।
কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী শহরটির জলবায়ু ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ু। তাপমাত্রা সারা বছর ধরে গরম থাকে। বিশেষ করে, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বর্ষার আগের মাসগুলোতে গরম থাকে এবং সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৩৬° সেন্টিগ্রেড (৯৭° ফা) হয়। শীতের মাসগুলো (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) বছরের অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা মৃদু থাকে। শীতকালে শুকনো মরসুম (ডিসেম্বর-এপ্রিল) এবং গ্রীষ্মকালে ভেজা মরসুম (মে - নভেম্বর) থাকে। গ্রীষ্মে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষ করে জুলাই মাসে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এসময় ৬২৬ মিলিমিটার (২৪.৬ ইঞ্চি) বৃষ্টি হয়।
প্রোম (১৯৮১–২০১০)-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ৩২.২ (৯০.০) |
৩৫.১ (৯৫.২) |
৩৭.৬ (৯৯.৭) |
৩৮.৭ (১০১.৭) |
৩৬.০ (৯৬.৮) |
৩১.৯ (৮৯.৪) |
৩১.০ (৮৭.৮) |
৩১.০ (৮৭.৮) |
৩২.৩ (৯০.১) |
৩৩.৫ (৯২.৩) |
৩২.৭ (৯০.৯) |
৩১.৫ (৮৮.৭) |
৩৩.৬ (৯২.৫) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | ১৬.২ (৬১.২) |
১৭.৮ (৬৪.০) |
২১.২ (৭০.২) |
২৪.৭ (৭৬.৫) |
২৫.৬ (৭৮.১) |
২৪.৮ (৭৬.৬) |
২৪.৮ (৭৬.৬) |
২৪.৭ (৭৬.৫) |
২৪.৬ (৭৬.৩) |
২৪.২ (৭৫.৬) |
২১.৭ (৭১.১) |
১৮.১ (৬৪.৬) |
২২.৪ (৭২.৩) |
বৃষ্টিপাতের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ১.৫ (০.০৬) |
০.৯ (০.০৪) |
৫.১ (০.২০) |
২৭.৩ (১.০৭) |
১৪৫.১ (৫.৭১) |
২৩৪.৮ (৯.২৪) |
১৯৮.০ (৭.৮০) |
২২৭.৫ (৮.৯৬) |
২০৫.৭ (৮.১০) |
১২৪.০ (৪.৮৮) |
৫৬.০ (২.২০) |
১.৫ (০.০৬) |
১,২২৭.৪ (৪৮.৩২) |
উৎস: Norwegian Meteorological Institute[6] |
শহরের প্রধান ফসল হলো ধান। তবে অনেক তুলা এবং তামাক উৎপাদিত হয় এবং আতা বিখ্যাত। বিশেষ শ্রেণীর মানুষ দ্বারা ব্যাপকভাবে রেশমচাষ হয়। বনগুলোতে সেগুনের ফলন হয়। তুলা এবং রেশম চাষ গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। এছাড়াও সুন্দর বাক্স, মোটা বাদামি চিনির উৎপাদন রয়েছে।
শহরে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যথা- পিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় (পিইউ), পিয়ায় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পিটিইউ) এবং কম্পিউটার বিশ্ববিদ্যালয়, পিয়ায়। পিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টি পিয়ায় বা প্রোম শহরের কেন্দ্রের নিকটে অবস্থিত। পিটিইউ, যা মিয়ানমারের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়, শহরটি থেকে কয়েক মাইল দূরে হ্নাওগোন গ্রাম এবং লাতখৌকপিন গ্রামের নিকটে অবস্থিত। কম্পিউটার বিশ্ববিদ্যালয়টি শহরের কেন্দ্র থেকে বেশ দূরে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.