শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

ফেলুদা

বাংলা সাহিত্যের কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ফেলুদা
Remove ads

প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র।[] ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসের সন্দেশ পত্রিকায় ফেলুদা সিরিজের প্রথম গল্প ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির প্রথমভাগ প্রকাশিত হয়,[] যা পরের আরো দুইটি সংখ্যার মাধ্যমে শেষ হয়।[] ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত এই সিরিজের মোট ৩৫টি সম্পূর্ণ ও চারটি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। ফেলুদার প্রধান সহকারী তার খুড়তুতো ভাই তপেশরঞ্জন মিত্র ওরফে তোপসে ও লেখক লালমোহন গাঙ্গুলি (ছদ্মনাম জটায়ু)। ফেলুদার চরিত্র নির্মাণে সত্যজিৎ রায় তার ছোটবেলায় পড়া শার্লক হোমস এর গোয়েন্দা গল্পের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই ফেলুদার চরিত্রের সাথে অনেক জায়গায় আমরা হোমসের আর ফেলুদার ভাই ও সহকারী তোপসের সাথে হোমসের সহকারী ওয়াটসনের মিল পাই। নিজের লেখা অধিকাংশ গল্পের বইয়ের মতই ফেলুদার বইতেও সত্যজিৎ রায় নিজেই প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করতেন। সত্যজিৎ রায় ফেলুদার সোনার কেল্লাজয় বাবা ফেলুনাথ উপন্যাসদুটিকে চলচ্চিত্রায়িত করেন। এই দুই ছবিতে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। আর তাই তার অধিকাংশ বইয়ের ফেলুদার ছবির অলংকরণে সৌমিত্র চট্টপাধায়ের আদলের ছাপ স্পষ্ট। একই ভাবে জটায়ু চরিত্রের অলঙ্করণে স্পষ্ট সিনেমায় এই চরিত্রের জন্য তার নির্বাচিত অভিনেতা সন্তোষ দত্তের আদল। বর্তমানে সত্যজিতের পুত্র সন্দীপ রায় ফেলুদার গল্প ও উপন্যাস নিয়ে টেলিভিশন ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

দ্রুত তথ্য ফেলুদা, প্রথম উপস্থিতি ...
Remove ads

চরিত্রে ফেলুদা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ফেলুদার ব্যক্তিত্ব

ফেলুদার গল্পে তার চরিত্রকে আঁকা হয়েছে প্রায় ২৭ বছর বয়সী একজন যুবক হিসেবে, যার উচ্চতা ৬'২''। ফেলুদা মার্শাল আর্টে বিশেষ দক্ষ। যদিও অসম্ভব ভালো বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের ক্ষমতার ওপরেই যে কোনও রহস্যের সমাধানে সে আস্থা রাখতে ভালোবাসে। তার এই বিশেষ ক্ষমতাকে সে মজা করে বলে থাকে মগজাস্ত্র। যদিও বাড়তি সতর্কতার জন্য তার নিজস্ব পয়েন্ট থ্রি টু কোল্ট রিভলভার রয়েছে। রিভলভার থেকে গুলি চালাতে ফেলুদাকে খুব কম গল্পেই দেখা যায় । যদিও সাম্প্রতিক ফেলুদার সিনেমাগুলোর প্রায় সবকটায় ফেলুদাকে গুলি চালাতে দেখা গেছে। ফেলুদার রহস্য অনেকসময়েই কলকাতার বাইরেও বিস্তারলাভ করে, এমনকি অনেক সময়ে তা দেশের গন্ডিও ছাড়িয়ে যায়। এমনকি পাড়াগাঁয়েও ফেলুদাকে দেখা গেছে গোয়েন্দাগিরি করতে। রহস্যের বিস্তার যেখানেই ঘটুক না কেন, সেই জায়গা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশুনো করে যাওয়া ফেলুদার অভ্যাস।[]

ফেলুদার ব্যক্তিগত জীবন

মাত্র নয় বছর বয়সে মা বাবা মারা যাওয়ায় ফেলুদা তার বাবার ছোটো ভাইয়ের কাছেই মানুষ হয়েছেন।[] ফেলুদার বাবা জয়কৃষ্ণ মিত্র ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে গণিত ও সংস্কৃতের শিক্ষক ছিলেন। ফেলুদা পেশায় গোয়েন্দা হলেও, এটা নেশাও বটে। গোয়েন্দাগিরি শুরুর আগে ফেলুদাও একটি বেসরকারি অফিসে কিছুদিন চাকরি করেছেন। তার পারিশ্রমিক ছিলো অগ্রিম পাঁচশো টাকা। কাজের শেষে আরো পাঁচশো টাকা। পরে এই অর্থ বেড়ে দাঁড়ায় ২০০০ টাকা।

Remove ads

ফেলুদা সিরিজের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র

সারাংশ
প্রসঙ্গ

তপেশরঞ্জন মিত্র ফেলুদার খুড়তুতো ভাই। ফেলুদার দেওয়া তোপসে নামেই অধিক পরিচিত। এই চরিত্রটি আর্থার কোনান ডয়েলের জন ওয়াটসন চরিত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত। তোপসে ফেলুদার সর্বক্ষণের সঙ্গী। ফেলুদার প্রায় সব অভিযানের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা সে লিপিবদ্ধ করে। তোপসের বাবা সম্পর্কে ফেলুদার কাকা। ফেলুদা তার কাকার পরিবারেরর সঙ্গেই ২১,রজনী সেন রোড,কলকাতা-৭০০০২৯[] -র বাড়িতে থাকে। দক্ষিণ কলকাতায় রজনী সেন রোড থাকলেও ২১ নম্বর বাড়িটি অস্তিত্বহীন। তোপসে চরিত্রে নানা সময়ে সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সাহেব ভট্টাচার্য্য অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ ফেলুদা চলচ্চিত্রে তোপসের ভূমিকা পালন করেছেন ঋদ্ধি সেন

লালমোহন গাঙ্গুলি বা লালমোহনবাবু ফেলুদার বন্ধু। ইনি জটায়ু ছদ্মনামে রহস্য-রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখেন। লালমোহনবাবু বাংলায় রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজের একজন জনপ্রিয় লেখক এবং তার নিজের মতে সারা ভারতে তার অনুগামীরা ছড়িয়ে আছে। তার লেখা উপন্যাসগুলির প্রধান চরিত্র সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট গোয়েন্দা প্রখর রুদ্র। তার অবিশ্বাস্য গল্পগুলি বেস্টসেলার হলেও বইগুলোতে মাঝে মাঝে খুবই সাধারণ ভুল থাকে, যেগুলো ফেলুদাকে শুধরে দিতে হয়। লালমোহনবাবুর একটি "মাদ্রাজী সবুজ" এ্যাম্বাসেডর গাড়ি আছে যা ফেলুদার অনেক অভিযানের নির্ভরযোগ্য বাহন। সোনার কেল্লা গল্পে ফেলুদা ও তোপসের যোধপুর গমনকালে কানপুরে ট্রেনে প্রথম জটায়ু চরিত্রের আবির্ভাব ঘটে। সন্তোষ দত্ত সোনার কেল্লাজয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে জটায়ুর ভূমিকা পালন করেন। সত্যজিৎ রায় প্রথম ফেলুদা ছবির পর জটায়ু চরিত্রে রদবদল ঘটিয়ে তাকে অনেকটা সন্তোষ দত্তের মতই গড়ে তোলেন। রবি ঘোষবিভু ভট্টাচার্য পরবর্তীকালে এই চরিত্রে অভিনয় করেন। নয়ন রহস্য গল্পে লেখক জটায়ুকে "বিদূষক" হিসেবে উস্থাপন করেন।

সিধুজ্যাঠা ফেলুদার বাবার বন্ধু। ফেলুদাকে প্রায়ই অসাধারণ স্মৃতিশক্তি এবং সাধারণ জ্ঞানের অধিকারী সিধুজ্যাঠার কাছে বিভিন্ন জিজ্ঞাসা নিয়ে দ্বারস্থ হতে হয় ।

মগনলাল মেঘরাজ ফেলুদার অন্যতম শত্রু। ফেলুদা তিনটি কাহিনীতে তার মোকাবিলা করে। জয় বাবা ফেলুনাথ, যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে এবং গোলাপী মুক্তা রহস্য এই তিনটি কাহিনীতে মগনলালকে পাওয়া যায়। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় জয় বাবা ফেলুনাথ চলচ্চিত্রে মগনলাল মেঘরাজের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন উৎপল দত্ত

Remove ads

প্রকাশনা

অধিকাংশ ফেলুদা কাহিনী প্রথম পূজাবার্ষিকী দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। অল্প কিছু কাহিনী প্রকাশিত হয়েছিলো সন্দেশ পত্রিকায়। বইগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে। এছাড়া ফেলুদার উপরে একাধিক কমিক স্ট্রিপ-ও প্রকাশিত হয়েছে। অধিকাংশ ফেলুদা বইয়ের প্রচ্ছদ এবং অলঙ্করণ সত্যজিৎ রায়ের নিজের আঁকা। ফেলুদা সিরিজের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস ইংরেজি ভাষাতে অনুদিত হয়েছে।

টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র

সারাংশ
প্রসঙ্গ

এখন পর্যন্ত ফেলুদার এগারোটি কাহিনী চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ এবং সত্যজিতের পুত্র সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় বাক্স রহস্য (১৯৯৬), বোম্বাইয়ের বোম্বেটে (২০০৩), কৈলাসে কেলেঙ্কারী (২০০৭), টিনটোরেটোর যীশু (২০০৮), গোরস্থানে সাবধান (২০১০), রয়েল বেঙ্গল রহস্য (২০১১), বাদশাহী আংটি(২০১৪), ডবল ফেলুদা (২০১৬) । ডবল ফেলুদা চলচ্চিত্রটি ‘সমাদ্দারের চাবি’ আর ‘গোলকধাম রহস্য’ - এই দুইটি উপন্যাস নিয়ে একসাথে করা হয়েছে। সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ সিনেমায় ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, এবং বোম্বাইয়ের বোম্বেটে থেকে পরবতী সকল সিনেমায় অভিনয় করেন সব্যসাচী চক্রবর্তীসব্যসাচী চক্রবর্তী সিনেমা ছাড়াও ডাঃ মুনসীর ডায়েরী নামে টেলিফিল্মে এবং সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় ফেলুদার উপরে নির্মিত টিভি সিরিয়ালে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন । ২০১৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর বাদশাহী আংটি চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেয়েছে। যাতে জনপ্রিয় অভিনেতা আবীর চট্টোপাধ্যায় কে ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে। ফেলুদা কাহিনীর সাম্প্রতিকতম চলচ্চিত্র 'ডবল ফেলুদা' ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬ মুক্তি পেয়েছে। এতে ফেলুদার ভূমিকায়ে সব্যসাচী চক্রবর্তী আবার ফিরে এসেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের চ্যানেল আই, বায়োস্কোপ ও আড্ডা টাইমস এ, তিনটি গল্প (শেয়াল দেবতা রহস্য, ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা ও গোলকধাম রহস্য) নিয়ে ২০১৭ সালে নির্মিত সিরিজে ফেলুদা হিসেবে আবর্তিত হন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় । ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্বনামধন্য পরিচালক তৌকির আহমেদ নির্মাণ করেন "নয়ন রহস্য" । "নয়ন রহস্য" তে ফেলুদা হিসেবে প্রথমবারের মতো অভিনয় করেন বাংলাদেশের খ্যতিমান অভিনেতা আহমেদ রুবেল।

সত্যজিৎ রায় প্রেজেন্টস নামের হিন্দি ভাষার সিরিজে কিসসা কাটমান্ডু কা' (যত কাণ্ড কাটমুন্ডু তে) নামক ফেলুদা কাহিনী টিভিতে দেখানো হয়েছিলো তাতে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেন শশী কাপুর এবং লালমোহনবাবুর ভূমিকায় অভিনয় করেন মোহন আগাসে। ২০১৯ সালে ফেলুদার পঞ্চাশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায় ফেলুদা (তথ্যচিত্র) নির্মাণ করেন।[]

পরবর্তীতে সৃজিত মুখোপাধ্যায় ৫ নভেম্বর, ২০১৯ ঘোষণা করেন যে তিনি ফেলুদার উপর এক ওয়েবসিরিজের নির্মাণ করছেন। ছিন্নমস্তার অভিশাপ এবং যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে কাহিনির উপর ফেলুদা ফেরত নামের এ ওয়েবসিরিজ নির্মাণ করবেন। প্রযোজক রাজীব মেহরা আর নিসপাল সিংহ রানের সাথে আড্ডা টাইমস প্ল্যাটফর্মে আগামী বছর ওয়েবসিরিজটি মুক্তি পাবে। সন্দীপ রায়ের থেকে দুটো কাহিনির সত্ত্ব কিনে নেওয়া হয়েছে।[] পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর জানান, ফেলুদার চরিত্রে টোটা রায় চৌধুরী এবং জটায়ু চরিত্রে অনির্বাণ চক্রবর্তীকে নেওয়া হয়েছে।[১০]

Remove ads

অন্যান্য মাধ্যম

ফেলুদা কাহিনীগুলোর উপর ভিত্তি করে একাধিক কমিকস প্রকাশিত হয়েছে। কমিকসগুলির চিত্রনাট্য ও ছবি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের। গ্যাংটকে গন্ডগোল এই সিরিজের প্রথম কমিকস। কমিকসগুলির অধিকাংশই প্রথমে শারদীয়া আনন্দমেলায় ও পরে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে।

ফেলুদা সিরিজ

আরও তথ্য গল্প/উপন্যাস, প্রথম প্রকাশ ...
Remove ads

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads