Loading AI tools
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বিপরীতকামিতা (বিষমকামিতা নামেও পরিচিত) (ইংরেজি: Heterosexuality, হেটারোসেক্সুয়ালিটি) বলতে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি "রোমান্টিক আকর্ষণ, যৌন আকর্ষণ অথবা যৌন আচরণ"কে বোঝায়। যৌন অভিমুখিতা হিসেবে বিপরীতকামিতা বলতে বোঝায় মূলত বিপরীতলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি "আবেগীয়, রোমান্টিক ও/বা যৌন আকর্ষণের একটি স্থায়ী কাঠামোবিন্যাস"। এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কোনো সম্প্রদায়কেও এই শব্দটি দ্বারা নির্দেশ করা হয়।"[1][2]
উভকামিতা ও সমকামিতার সাথে বিপরীতকামিতা বিপরীতকামী-সমকামী অনবচ্ছেদের অন্তর্গত যৌন অভিমুখিতার তিনটি প্রধান ভাগের অন্যতম বলে স্বীকৃত।[1] পরিসংখ্যান অনুযায়ী বেশীরভাগ মানুষই নিজেদেকে বিপরীতকামী বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এছাড়াও বহু সমাজবিজ্ঞানী মানব সমাজকে "বিপরীতকামিতা-স্বাভাবিক সমাজ" (heteronormative society) বলে অভিহিত করেছেন।
বিপরীতকামিতা বা বিপরীতকামী শব্দটি সাধারণত মানব প্রজাতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও বাস্তবে এটি সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যেই দেখা যায়। গঠনগত বা শব্দতত্ত্বীয়ভাবে বিপরীতকামিতা ও বিষমকামিতা শব্দদুটি বিপরীত (ভিন্ন) এবং বিষম (সমান নয় এমন) শব্দ দুটি থেকে এসেছে, যার সাথে কামিতা (যৌনতা) শব্দটি যুক্ত করে শব্দটি গঠিত হয়েছ।
বাংলা বিপরীতকামিতা ও বিষমকামিতা শব্দটির গঠন সংস্কৃত-সঞ্জাত। সংস্কৃত শব্দ বিপরীত ও বিষম-এর অন্যতম অর্থ অসমান অথবা ভিন্ন[3] এবং কাম শব্দের অন্যতম অর্থ যৌন চাহিদা, রতিক্রিয়া তথা যৌন তৃপ্তি[4]। অতঃপর এই দুই শব্দের সংযোগে উৎপন্ন বিপরীতকামিতা বা বিষমকামিতা শব্দ দ্বারা বিপরীত বা ভিন্ন বা উল্টো লিঙ্গের মানুষের (বা প্রাণীর ক্ষেত্রে অন্য প্রাণীর) প্রতি যৌন আকর্ষণকে বোঝায়।
বিপরীতকামিতার ইংরেজি শব্দ হেটারোসেক্সুয়ালিটি, যাতে হেটারো- অংশটি এসেছে গ্রিক শব্দέτερος [হেটারোস] থেকে, যার অর্থ "অন্য গোত্র"বা "অন্য",[5] জা বৈজ্ঞানিকভাবে ভিন্ন বা আলাদা অর্থে একটি উপসর্গরূপে ব্যবহৃত হয়;[6] এবং ল্যাটিন শব্দ সেক্স থেকে (যা হল, বৈশিষ্ট্যমূলক যৌনতা বা যৌন পৃথকীকরণ)। ১৯৮২ সালে জীববিজ্ঞানী গুস্তভ জেগার এবং রিচার্ড ফ্রেইহার ভন ক্রাফট ইবিঙ্গের লেখা সাইকোপ্যাথিয়া সেক্সুয়ালিস গ্রন্থে হেটারোসক্সুয়াল নামক পরিভাষাটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯২০ সালের প্রথম দিকে পরিভাষাটির ব্যবহার শুরু হয়, এবং ১৯৬০ সালের দিকে তা পরিচিত হয়ে উঠে। ১৯৩৩ সালে সংক্ষেপে হেটারো হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হয়। বিশেষ্য শব্দ হিসেবে হেটারোসেক্সুয়ালিটি শব্দটি ১৯৯০ সালে গৃহীত হয়।[7] "হেটারোসেক্সুয়াল" শব্দটি প্রথম মারিয়াম ওয়েবস্টার অভিধানে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোন ব্যক্তির অস্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ নামক মেডিক্যাল পরিভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়; তবে, ১৯৩৪ সালে তাদের দ্বিতীয় সংস্করণে এটি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কারো স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণের প্রকাশ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[8] বিপরীতকামী বোঝাতে নিম্নমার্জিতভাবে "স্ট্রেইট" শব্দটিও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
হেটারোসেক্সুয়াল বিশেষণটি নারী ও পুরুষের মাঝে আন্তরিক সম্পর্ক বা যৌন সম্পর্ককে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। i
মানবজাতির সুচনাকালীন শিল্পকর্মের সময় থেকেই বিপরীতকামিতার প্রতীকীকরণ শুরু হয়, যার মধ্যে ছিল প্রথাগত প্রজননবিষয়ক বক্ররেখার নকশা প্রাগৈতিহাসিক চিত্রকর্ম। পরবর্তীতে প্রজননবিষয়ক রীতিনীতি ও বহুঈশ্বরবাদী উপাসনার প্রতীকীকরণে তা প্রকাশ পায়, যাতে প্রায়শই মানব যৌনাঙ্গের চিত্র অন্তর্ভুক্ত থাকত, উদাহরণস্বরূপঃ শিবলিঙ্গ। বিভিন্ন সমাজের বিপরীতকামিতার আধুনিক প্রতীকগুলো ইউরোপীয় ঐতিহ্যের প্রাচীন বিশ্বাসব্যবস্থায় ব্যবহৃত বিপরীতকামিতা নির্দেশক চিহ্ন হতে এসেছে। এরকম একটি প্রতীক হল পুরুষত্ব নির্দেশক নির্দিষ্ট প্রতীক হিসেবে রোমান যুদ্ধের দেবতা মার্সের প্রতীক এবং নারীত্ব নির্দেশক নির্দিষ্ট প্রতীক রোমান ভালোবাসা ও সৌন্দর্যের দেবী ভেনাসের প্রতীকের সমন্বয়। এই সমন্বিত প্রতীকের ইউনিকোড প্রতীক হল ⚤ (U+26A4)।
ইহুদি-খ্রিষ্টীয় ঐতিহ্যে বিপরীতকামিতা সম্পর্কিত বহু ধর্মীয় বাণী রয়েছে। জেনেসিসের ২:২৪ তম বাক্যে একটি আদেশ দেয়া হয়েছে এই বলে যে "একারণে একজন পুরুষ তার পিতা এবং তার মাতা হতে প্রস্থান করবে, এবং তার পত্নীর সহিত বসবাস করবে: এবং তারা একটি দেহে পরিণত হবে।"। ১ কোরিন্থিয়ান্সে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের উপদেশ দেওয়া হয়েছে:
Now for the matters you wrote about: It is good for a man not to marry. But since there is so much immorality, each man should have his own wife, and each woman her own husband. The husband should fulfill his marital duty to his wife, and likewise the wife to her husband. The wife's body does not belong to her alone but also to her husband. In the same way, the husband's body does not belong to him alone but also to his wife. Do not deprive each other except by mutual consent and for a time, so that you may devote yourselves to prayer. Then come together again so that Satan will not tempt you because of your lack of self-control. I say this as a concession, not as a command. (NIV)[9]
প্রায় সকল ধর্মই বিশ্বাস করে যে, রক্তসম্পর্ক ব্যতীত একজন পুরুষ এবং একজন মহিলার মাঝে বৈবাহিক যৌনকর্ম বৈধ, কিন্তু অল্প কিছু ধর্ম আছে যেগুলো মনে করে যে এটি একটি পাপ, যেমন শেকার্স, হারমনি সোসাইটি, এবং এফ্রাটা ক্লোয়িস্টার. এই সকল ধর্ম সকল প্রকার যৌন কর্মকান্ডকে পাপ হিসেবে দেখে থাকে, এবং চিরকুমার হওয়াকে উৎসাহিত করে। বাদবাকি ধর্ম বিপরীতকামিতাকে চিরকুমারত্বের পর প্রথম নিম্নস্তর হিসেবে দেখে। কিছু ধর্মের নির্দিষ্ট কিছু পদের জন্য চিরকুমারত্বের প্রয়োজন হয়, যেমন ক্যাথলিক ধর্মযাজক; তবে, ক্যাথলিক চার্চসমূহও বিপরীতকামী বিবাহকে পবিত্র এবং প্রয়োজনীয় হিসেবে দেখে।[10]
বিশেষজ্ঞগণ মানব-মস্তিষ্কের পুরুষকরণের স্নায়ুবিজ্ঞানকে বেশ ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাদের মতে, এস্ট্রাডিওল ও টেস্টোস্টেরন হরমোন মস্তিষ্কের এন্ড্রোজেন হরমোন গ্রাহক(রিসেপ্টর)গুলোকে পরিবর্তনের মাধ্যমে মস্তিষ্কের পুরুষায়নে কাজ করে। এই হরমোন উৎপাদনের স্বাভাবিকতা, ঘাটতি বা আধিক্য এই প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।[12] ধারণা করা হয় যে, জন্মগত বিপরীতকামী যৌন প্রবৃত্তি এই পুরুষায়ন প্রক্রিয়ার ফল।[13] নারীদের ক্ষেত্রে সাধারণত এই পুরুষায়ন অত্যন্ত সীমিত পরিমাণে ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, "বিপরীতকামী নারীদের" ক্ষেত্রে এই পুরুষায়ন প্রক্রিয়া সমকামী নারীদের তুলনায় আরও "কম" ঘটে। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন ঘটে অনেক বেশি। এছাড়া "বিপরীতকামী পুরুষগণের" মধ্যে সমকামী পুরুষদের তুলনায় "উচ্চমাত্রার এবং নিম্নমাত্রার" পুরুষায়ন দেখা গেছে।
প্রাণীজগতের অধিকাংশ প্রজননই বিপরীতকামী যৌনতার মাধ্যমে ঘটে থাকে| এছাড়া কিছু কিছু প্রাণীর প্রজনন অযৌন প্রক্রিয়ায় ঘটে থাকে, যেমন কিছু প্রোটোজোয়া ও ব্যাকটেরিয়া।
প্রাজননিক যৌনতার জন্য আবশ্যকভাবে কোন যৌন পরিচয়ের প্রয়োজন পড়ে না, কারণ যৌন পরিচয় হল একটি দীর্ঘ সময়ব্যপী যৌন ও আবেগীয় আকর্ষণের ফলাফল যা পরবর্তীতে মোটামুটি একটি স্থায়ী সামাজিক বন্ধনের জন্ম দেয়। প্রাজননিক যৌনতার জন্য শুধুমাত্র দুটি বিপরীত লিঙ্গের জরায়ুপথে যৌনসঙ্গম করতে হয়, যা প্রায় সময়ে মাত্র একবার সঙ্ঘটনেই সফলতা পাওয়া যায়।
ব্যাপ্তির দিক থেকে অতি সীমিত হওয়ার কারণে যৌন অভিমুখিতার ভিত্তি অনুসন্ধানের গবেষণাগুলো প্রায়শই সমালোচিত হয়েছে, এর পেছনে দাবিটি ছিল যে, এটি শুধুমাত্র বিপরীতকামিতা ও সমকামিতাকে দুটি বিপরীত মেরু ধরে এর মাঝখানে কোন অভিমুখিতার সম্ভাব্যতাকে পাশ কাটিয়ে যায়। আরও দাবি করা হয় যে, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগুলো যৌন অভিমুখিতার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র জৈবিক ব্যাখ্যা অনুসন্ধানেই মাত্রাতিরিক্ত নজর দেয়, কিন্তু জৈবিক ও মনস্তাত্ত্বিক উভয়ের যৌথ প্রভাবের উপর ততটা নজর দেয় না।[14]
কাউন্সিল ফর রেস্পন্সিবল জেনেটিক্স-র একটি বিবৃতিতে বলা হয় যে[14], যৌন অভিমুখিতা এ দুটির কোন দিক থেকেই নির্দিষ্ট নয়, এবং যৌন অভিমুখিতা বিষয়ক আলোচনায় বলে: "লক্ষণীয়ভাবে এই বিতর্কে যা অনুপস্থিত তা হল কিনসলের মতবাদটি, যা হল অন্যান্য যৌগিক বৈশিষ্ট্যের ন্যায় মানব যৌন অভিমুখিতার অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশও ব্যক্তিভেদে বিভিন্নরকম হয়। ... তবুও মানবমেধার মতই, যৌনতাও একটি যৌগিক মানব বৈশিষ্ট্য যাকে আধুনিক বিজ্ঞান জেনেটিক্সের দ্বারা ব্যাখ্যা করতে চাইছে। একে পরিপূর্ণ জৈবিক প্রক্রিয়ার ফসল ভাবার চেয়েও যৌক্তিক হল, কোন বৈশিষ্ট্য মানববৃদ্ধির প্রক্রিয়া থেকেই বিবর্তিত হতে শুরু করে, যাতে জৈবিক ও সামাজিক উপাদানসমূহ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।"[14] মার্কিন মনস্তত্ত্ব সমিতির (APA) মতানুসারে, কোন ব্যক্তির যৌন অভিমুখিতার মূল কারণ নিয়ে অসংখ্য তত্ত্ব রয়েছে, কিন্তু কিছু লোক বিশ্বাস করে যে, "সম্ভবত যৌন অভিমুখিতার বেশিরভাগটাই পরিবেশগত, চেতনাগত ও জীববৈজ্ঞানিক কারণসমূহের যৌগিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফসল", এবং এই জিনগত কারণগুলোও হয়তোবা কোন ব্যক্তির যৌনতা নির্ধারণে "উল্লেখযোগ্য ভূমিকা" রাখে।[15]
বিপরীতকামী স্বাভাবিকতা এমন একটি বৈশ্বিক ধারণাকে নির্দেশ করে যেখানে বিপরীতকামিতাকে একটি স্বাভাবিক বা উপযুক্ত যৌন পরিচয় হিসেবে সাধারণ মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এটি পুরুষ ও নারীর জন্মগত শারীরিক গঠন অনুযায়ী নিজ নিজ লৈঙ্গিক ও যৌন ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয়। ১৯৯১ সালে মাইকেল ওয়ার্নার কর্তৃক ব্যবহৃত হওয়ার পর বিষয়টি জনপ্রিয়তা লাভ করে।[16]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.