Loading AI tools
পাখি প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বেগুনি কালেম (বৈজ্ঞানিক নাম: Porphyrio porphyrio) Rallidae (রেলিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Porphyrio (পরফিরিও) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির কালচে-বেগুনি রঙের জলচর পাখি।[2][3] বাংলায় এর অনেকগুলো নাম: কালিম, কায়িম, কায়েম, সুন্দরী পাখি (হাওর অঞ্চলে)[4], কাম পাখি ইত্যাদি। নিউজিল্যান্ডে এর নাম পুকেকো। বেগুনি কালেমের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থও বেগুনি কালেম (লাতিন: Porphyrio = বেগুনি কালেম)।[3] পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ওশেনিয়া, আফ্রিকা আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ১ কোটি ৮৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস।[5] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা স্থিতিশীল রয়েছে, আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[1] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[3]
বেগুনি কালেম মুরগির আকারের বেগুনি রঙের একটি পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪৫ সেমি, ডানা ২৬ সেমি, ঠোঁট ৪.৫ সেমি, পা ৯ সেমি, লেজ ১০ সেমি ও ওজন ৬৫০ গ্রাম।[3]
এর মাথা ফিকে, ডানা সবুজ দীপ্তিময়। লেজের অংশ কালো পালকে ঢাকা। লেজতল-ঢাকনি সাদা। এছাড়া দেহের সর্বত্র রঙ নীলচে বেগুনি। ঠোঁটের গোড়া থেকে পেছন পর্যন্ত লাল বর্ম বা মুকুট রয়েছে। সাধারণত স্ত্রী পাখির বর্ম পুরুষ পাখির বর্ম থেকে ছোট হয়। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েরই চোখ রক্ত-লাল। ঠোঁট টকটকে লাল, ঠোঁটের আগা ফিকে। পা দীর্ঘ, শক্ত ও লাল। পায়ের সন্ধি বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ অনুজ্জ্বল; গলা ফিকে। মুখ, ঘাড়ের উপরিভাগ ও বুকে ধূসর আমেজ থাকে। ঠোঁট, পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল লাল।[3]
শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যার জনক ক্যারোলাস লিনিয়াস ১৭৫৮ সালে সর্বপ্রথম বেগুনি কালেমের দ্বিপদ নামকরণ করেন Fulica Porphyrio।[6] এ প্রজাতিটিকে নিউজিল্যান্ডের তাকাহে ও বিলুপ্ত পাখি লর্ড হিউর কালেমের পূর্বপুরুষ গণ্য করা হয়।[7][8] এসব পাখির সাবেক আবাসস্থল নিউজিল্যান্ড আর নিউ ক্যালিডোনিয়ায় প্রজাতিটি খুব সহজে খাপ খাইয়ে নিয়েছে আর স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধি করছে।[9] প্রজাতিটির সর্বমোট ১৩টি উপপ্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। উপপ্রজাতিগুলো হল[6]:
অনেকসময় madagascariensis, pulverulentus ও poliocephalus উপপ্রজাতি তিনটিকে আলাদা প্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হয়। melanotus আর bellus-এরও আলাদা প্রজাতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বেগুনি কালেম হাওর, বিল, নলবন ও তৃণপূর্ণ স্রোতহীন জলাভূমিতে বিচরণ করে। যেসব জায়গায় ভাসমান বা অর্ধভাসমান পানা, গুল্ম , লতা, শাপলা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে সেসব জলাশয় এদের পছন্দের বিচরণস্থল।[10][11] এছাড়াও লোনা পানির জলাশয়, কাদাভূমি, ধানক্ষেত, বনের ধারে ও মৌসুমী জলাশয়গুলোতেও এরা বিচরণ করতে পারে।
বেগুনি কালেম আবাসিক, পরিযায়ী অথবা খাদ্য থাকা সাপেক্ষে আংশিক পরিযায়ী স্বভাবের।[10] এছাড়া বাসস্থান শুকিয়ে গেলেও এরা আংশিক পরিযান করে।[11] সাধারণত ১০-১০০টির দলে দেখা যায়।[3] তবে প্রজনন মৌসুমে জোড়ায় জোড়ায় অথবা ছোট দলে বিচরণ করে। এসব দলে বেশ কয়েকটি প্রজননক্ষম পুরুষ ও স্ত্রী সদস্য থাকে। এসব দলে অপ্রাপ্তবয়স্ক কালেমও থাকতে পারে। ভোরে ও সন্ধ্যায় এদের ডাকাডাকি ও গতিবিধি বেড়ে যায়।[10] অন্যসব জলচর পাখির (যেমন, পাতি কুট) পাখির সাথে মিলে এরা খাবার খুঁজে বেড়ায়। এরা উড়তে পছন্দ করে না, তবে উড়ে অনেকদূর পর্যন্ত যেতে সক্ষম। এরা খুব ভাল সাঁতারু। এদের পা লিপ্তপদ না হলেও এরা সেই তুলনায় চমৎকার সাঁতার কাটতে পারে।
বেগুনি কালেমের খাদ্যতালিকার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে জলজ উদ্ভিদ। এর প্রধান খাদ্য বীজ, শস্যদানা, কচি ঘাস, কচি পাতা, তৃণমূল, কচি জলজ উদ্ভিদ ও তার নরম কাণ্ড, শাপলা ইত্যাদি।[3][11] এছাড়া এরা জলজ পোকামাকড় ও পোকামাকড়ের লার্ভা, মাকড়শা, কেঁচো, জোঁক, শামুক, চিংড়ি, ব্যাঙ, ব্যাঙাচি, ছোট মাছ, মাছের ডিম ইত্যাদি খায়। জলজ সাপ, গিরগিটি, ছোট পাখি, পাখির ছানা, ডিম, মৃত দেহাবশেষ ইত্যাদি খাওয়ার কথাও জানা যায়।[1] খাবার খাওয়ার সময় এরা লেজের নিচে সাদা অংশ প্রদর্শন করে এবং ডাকে:চাক-চাক।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.