Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সাগর, হ্রদ,বা নদীর উপকূলবর্তী তটরেখা বরাবর ভূমি ভাগকে বেলাভূমি বা তীরবর্তী এলাকা বলা হয়। উপকূলবর্তী এলাকায়, যে অঞ্চল খুব কমই প্লাবিত হয়, অর্থাৎ জোয়ারকালীন সর্বোচ্চ জলরেখা থেকে তীরবর্তী এলাকা, যা স্থায়ীভাবে নিমজ্জিত থাকে, তাকে বেলাভূমি বলা হয়। আন্তঃজোয়ার অঞ্চল সর্বদা বেলাভূমির অন্তর্গত এবং শব্দ দুটি একই অর্থে ব্যবহার হয়। যাইহোক, বেলাভূমি এলাকা আন্তঃজোয়ার অঞ্চল থেকে আরও বেশি এলাকাকে নির্দেশ করে।
এই পরিভাষাটির কোনো একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। বেলাভূমির ব্যাপ্তি কতদূর হবে, বা কীভাবে তাকে বিভিন্ন উপ-অঞ্চলে বিভক্ত করা হবে, তা প্রেক্ষিতের ওপর নির্ভর করে। (সরোবর বা নদীর বেলাভূমির নিজস্ব সংজ্ঞা আছে।) বিভিন্ন শাখার মধ্যে, বা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, এর ব্যবহার আলাদা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সমুদ্র বিজ্ঞানীদের কাছে বেলাভূমির অর্থ যা, সামরিক বাহিনীর কমান্ডারদের কাছে বেলাভূমির অর্থ আলাদা।
জল থেকে বেলাভূমির সংলগ্নতার উপর নির্ভর করে তার চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য। জলের ক্ষয়কার্য, ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ঠ্যগত কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে তৈরি হয় বালিয়াড়ি,বা খাঁড়ি। পাড় ধরে বেলাভূমির পরিবর্তন একটি প্রাকৃতিক সরণ, যাকে বেলাভূমির প্রবাহ বলা হয়। জৈবিকভাবে, জলের উপস্থিত উপলবদ্ধতার উপর নির্ভর করে সেখানকার উদ্ভিত ও প্রাণিজগত এবং বিশেষত সেখানকার জলাভূমির পরিমাণ। উপরন্তু, সেখানকার জলীয় বাষ্পীভবনের কারণে যে অতিরিক্ত আর্দ্রতার জন্য স্থানীয় বায়ুমন্ডল গড়ে ওঠে, তাতে বিভিন্ন বিশেষ ধরনের প্রাণিকূলের উপযুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
লিটোরাস ( বেলাভূমি ) শব্দটি বিশেষ্য বা বিশেষণ, দু ভাবেই ব্যবহার হয়। শব্দটি লাতিন ভাষার বিশেষ্য শব্দ লিটাস, লিটোরিস, যার অর্থ "তীরভূমি" থেকে এসেছ। (দুটি টি এর ব্যবহার মধ্যযুগের শেষ ভাগের উদ্ভাবন এবং শব্দটিকে যখন অনেক সময় একটি টি দিয়ে লিটোরাল লেখা হয়, তা বেশি ধ্রুপদী হয়। )
সমুদ্রবিদ্যা ও সসামুদ্রিক জীববিজ্ঞান চর্চাতে, বেলাভূমির ধারণা প্রায় মহীসোপানের কিনারা পর্যন্ত বিস্তৃত। তটরেখা থেকে শুরু করে জোয়ারের সর্বোচ্চ সীমার, যেখানে ঢেউয়ের ঝাপটা লাগে, সেই সীমা পর্যন্ত স্থানকে বেলাভূমি বলা হয়। আবার, সামুদ্রিক জোয়ার ভাঁটার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা থেকে মহীসোপানের কিনারা পর্যন্ত এর বিস্তার। এই তিনটি উপ-অঞ্চলকে ক্রমানুসারে, সুপারেলিটোরাল, ইউলিটোরাল, ও সাবলিটোরাল অঞ্চল বলা হয়।
সুপ্রালিটোরাল অঞ্চল (যাকে স্প্ল্যাশ, স্প্রে বা সর্ব্বোচ্চ জোয়ার অঞ্চল বলা হয়) হল, জোয়ারের সময় ঢেউয়ের উচ্ছাস যতদূর পর্যন্ত ওঠে এবং কখনই সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত থাকে না, সেই অঞ্চল। সমুদ্রের জল শুধুমাত্র ঝড় বা জোয়ারের সময়েই এই অঞ্চলে ঢুকে যায়। এই অঞ্চলের বসবাসকারী প্রাণীরা বৃষ্টি থেকে আসা মিষ্টি জল, শীত, গরম, শুষ্কতা, বা স্থলজ জন্তু জানোয়ার বা সামুদ্রিক পাখিদের শিকারের পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে অভ্যস্ত হয়। এই অঞ্চলের ওপরের অংশে, প্রায় কালো রঙের শৈবাল জাতীয় ছত্রাক পাথরের ওপর দেখা যায়। আবার, এর নীচের অংশে, ছোটো শামুক, নেরিটাইডি বা বড় শামুক, আইসোপোডা জাতীয় প্রাণীদের দেখা যায়। [1]
ইউলিটোরাল অঞ্চল (যাকে মিডলিটোরাল বা মেডিওলিটোরাল অঞ্চল ও বলা হয়) বা জোয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চল কে, অগ্রবর্তী তটও বলা হয়। এর অবস্থিতি, জোয়ারের উর্দ্ধ সীমা যা খুব কমই প্লাবিত হয়, এবং ভাঁটার নিম্ন সীমানা যা প্রায়শই জলে প্লাবিত থাকে, এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে। এই অঞ্চল পর্যায়ক্রমে দিনে এক বা দুবার জলে নিমজ্জিত হয় এবং উন্মুক্ত হয়। এই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাণীরা আলো, তাপমাত্রা, লবণাক্ততার হেরফেরের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সক্ষম। এছাড়া, বাস্তুতান্ত্রিক সৃষ্টি এখানে বেশি। ঢেউয়ের অনবরত ওঠাপড়া, জোয়ার ভাঁটার আলোড়ন, সমুদ্র পৃষ্ঠে নানারকম উঁচু গঠন, ফাঁক, গুহাকৃতির সৃষ্টি হয়, এবং সেগুলি প্রচুর পরিমাণে নানারকম প্রজাতির প্রাণীকুলের আবাসস্থল হয়ে ওঠে। পাথুরে সমুদ্রতটে ইউলিটোরাল অঞ্চলটি সঙ্কীর্ণ ও প্রায় একই রকম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়, এবং সেখানে প্রায়শই বারনাকল দেখা যায়। উন্মুক্ত অংশগুলি আরও প্রসারিত হতে পারে কিছুক্ষেত্রে, সেসব জায়গায় অঞ্চলটিকে আরও কিছু উপ-অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়। এব্যাপারে আরও জানতে, ইন্টারটাইডাল ইকোলজি দেখতে পারেন।
সাবলিটোরাল অঞ্চল ইউলিটোরাল অঞ্চলের ঠিক নীচ থেকেই শুরু হয়। এই অংশটি স্থায়ীভাবে সমুদ্রে নিমজ্জিত এবং অংশটিকে নেরিটিক জোন বা সমুদ্রের স্নায়ু অঞ্চলও বলা যায়।
ভৌত সমুদ্রবিদ্যায়, সমুদ্রতটের যে অংশে উল্লেখযোগ্য জোয়ার ভাঁটা চলে ও অ-রৈখিক ধারা, আভ্যন্তরীণ ঢেউ, নদীর ধারা এসে মেশা, মহাসাগরীয় সম্মুখভাগ ইত্যাদি নানা শক্তির প্রকাশ হয়, সেই অংশকে সাবলিটোরাল অঞ্চল বলা হয়। বস্তুত, এই অঞ্চল সমুদ্রের অন্তত ২০০ মিটার গভীরে মহীসোপানের কিনারা পর্যন্ত বিস্তৃত।
সামুদ্রিক জীববিদ্যা অনুসারে, যেখানে সমুদ্রতলে আলো পৌঁছায়, অর্থাৎ যেখানে জলের গভীরতা এমন নয় যা সূর্যালোক আওতার বাইরে, সেই অঞ্চলকেই সাবলিটোরাল অঞ্চল বলে। সূর্যালোক পৌঁছানোর ফলে এখানে সহজেই নানা জৈবিক যৌগ তৈরী হয় এবং সাবলিটোরাল অঞ্চলটি বেশিরভাগ সামুদ্রিক প্রাণীর আবাসস্থল হয়ে ওঠে। ভৌত সমুদ্রবিদ্যা অনুসারে, এই অঞ্চলটি মহীসোপানের কিনারা পর্যন্ত বিস্তৃত। সাবলিটোরাল অঞ্চলের বেন্থিক অংশ, আন্তঃ-জোয়ারভাঁটা অঞ্চলের থেকে বেশি স্থায়ী। এখানে তাপমাত্রা, জলের চাপ ও সূর্যালোকের পরিমাণ প্রায় স্থিতাবস্থায় থাকে। আন্তঃ-জোয়ারভাঁটা অঞ্চলের প্রবালের থেকে সাবলিটোরাল অঞ্চলের প্রবাল, অনেক কম নানা ভৌত পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়। প্রবাল, এই দুই অঞ্চলেই হয়, তবে সাবলিটোরাল অঞ্চলে বেশি হয়।
সাবলিটোরাল অঞ্চলে, সমুদ্র জীববিজ্ঞানীরা নিম্ন লিখিত বিষয়গুলি লক্ষ্য করেছেন:
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.