Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ২০০৩ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে দুটি টেস্ট ও তিনটি ওডিআই ম্যাচ খেলে। অল-রাউন্ডার খালেদ মাহমুদ এই সফরে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন। অস্ট্রেলিয়া দলকে দুইজন নেতৃত্ব দেন। টেস্টে স্টিভ ওয়াহ ও ওডিআই-এ রিকি পন্টিং। এই সিরিজের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ার কোন রাজ্যের রাজধানীর বাইরে টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়; ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয় কেয়ার্ন্স-এর বান্ডাবার্গ রাম স্টেডিয়াম এবং নতুন করে মানোন্নয়ন করা ডারউইনের মারারা ওভালে।
২০০৩ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অস্ট্রেলিয়া সফর | |||
---|---|---|---|
অস্ট্রেলিয়া | বাংলাদেশ | ||
তারিখ | ২৭ জুন ২০০৩ – ৬ আগস্ট ২০০৩ | ||
অধিনায়ক | স্টিভ ওয়াহ | খালেদ মাহমুদ | |
টেস্ট সিরিজ | |||
ফলাফল | ২ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২–০ ব্যবধানে জয়ী | ||
সর্বাধিক রান | ড্যারেন লেহম্যান (২৮৭) | হান্নান সরকার (১৬৬) | |
সর্বাধিক উইকেট | স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল (১৭) | মাশরাফি বিন মর্তুজা (৪) | |
সিরিজ সেরা খেলোয়াড় | স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল (অস্ট্রেলিয়া) | ||
একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজ | |||
ফলাফল | ৩ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৩–০ ব্যবধানে জয়ী | ||
সর্বাধিক রান | রিকি পন্টিং (১৩০) | অলক কাপালি (৮৩) | |
সর্বাধিক উইকেট |
ইয়ান হার্ভে (৫) ব্র্যাড হগ (৫) |
মোহাম্মদ রফিক (৩) মাশরাফি বিন মর্তুজা (৩) | |
সিরিজ সেরা খেলোয়াড় | রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া) |
অস্ট্রেলিয়া সহজেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ জয় করে। বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ওডিআই সিরিজেও ভাল ছিল না এবং তারা কোন ইনিংসেই ১৪৭ রানের বেশি করতে সক্ষম হয় নি। ফলে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে ধবলধোলাই করে।
২০০০ সালের নভেম্বরে দশম টেস্ট দল হিসেবে টেস্ট খেলার মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। ২০০৩ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে বাংলাদেশ দলের কোন টেস্ট জয় ছিল না, শুধু র্যাঙ্কিং-এর নিচের দিকের দল জিম্বাবুয়ের সাথে ১টি মাত্র টেস্ট ড্র। ১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ-এ পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক বিজয়ের পর থেকে তাদের ওডিআই ফর্মও ভাল ছিল না। যদিও পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই জয় বাংলাদেশকে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে দেয়।[1] অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে দুটি টেস্টেই বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয়। অপরদিকে অস্ট্রেলিয়া এপ্রিল থেকে টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩-১ অ্যাওয়ে জয় ও ওডিআইতে একই দলের সঙ্গে ৪-৩ জয় পেয়েছিল।[2] এর আগে একই বছর অনুষ্ঠিত ২০০৩ ওডিআই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া রিকি পন্টিং-এর নেতৃত্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন (১০ ম্যাচ) হয়। লেগ-স্পিনার শেন ওয়ার্ন না থাকা সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে ভারতীয় ক্রিকেট দলকে পরাজিত করে। বিশ্বকাপের শুরুর আগে সিরিজ চলাকালীন হওয়া ড্রাগ পরীক্ষায় রক্তে নিষিদ্ধ ডিউরেটিক পাওয়া যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক শেন ওয়ার্নকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।[2] এর ফলে ওয়ার্ন আন্তর্জাতিক প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ছিলেন।[3]
প্রথম টেস্টের আগের দিন সাবেক অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান ডেভিড হুকস বলেন যে, বাংলাদেশ টেস্ট খেলার যোগ্য নয়। তিনি আরও বলেন যে অস্ট্রেলিয়া টেস্টগুলি ১ দিনের মধ্যে জিততে পারে।[4]
এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে মারারা ওভাল বিশ্বের ৮৯তম এবং অস্ট্রেলিয়ার অষ্টম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষিক্ত হয়। ম্যাচের ১ মাস পূর্বে মেলবোর্ন থেকে আনা মন্থর ও নিচু ড্রপইন পিচে টসে জয়ী হয়ে অস্ট্রেলিয়া দল ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়।[5] মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ ৯৭ রানে অল-আউট হয়ে যায়। শুধুমাত্র মোহাম্মদ আশরাফুল (২৩) ও খালেদ মাহমুদ (২১) প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হন।[4] অস্ট্রেলীয় বোলাররা একসাথে জ্বলে ওঠেন। ব্রেট লি ও গ্লেন ম্যাকগ্রা ৩টি করে উইকেট লাভ করেন। ম্যাকগ্রা ও জেসন গিলেস্পি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল উদ্বোধনী বোলিং জুটির তালিকায় কিথ মিলার ও রে লিন্ডওয়াল জুটিকে টপকে অস্ট্রেলিয়ার সেরা উদ্বোধনী বোলিং জুটি হিসেবে এ তালিকায় স্থান পান।[5][তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শট নির্বাচনে কোচ ডেভ হোয়াটমোর সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি বলেন, "কয়েকজন খেলোয়াড় তাদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন এবং আমরা সেই জায়গায় উন্নতি করার চেষ্টা করছি।[6] পিচের কারণে শুরুতে অস্ট্রেলিয়া দলকেও সংগ্রাম করতে হয়। রিকি পন্টিং ১০ রানে আউট হলে অস্ট্রেলিয়া দলের স্কোর দাঁড়ায় ২/৪৩-এ। তবে এর পর ড্যারেন লেহম্যান তাণ্ডব শুরু করেন। তিনি নিজের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি (১১০) করেন। পরবর্তীতে স্টিভ ওয়াহ গ্যারি কার্স্টেন-এর পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে সকল টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন। সেঞ্চুরি করার পর তিনি ৭/৪০৭ রানে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ঘোষণা করেন। ২৩ ওভারে ৭৪ রান খরচে ৩ উইকেট নিয়ে শুধুমাত্র বাংলাদেশের দ্রুততম বোলার মাশরাফি বিন মর্তুজা অস্ট্রেলিয়ার জন্য হুমকির কারণ ছিলেন।[7] দিনের খেলা শেষে লেহম্যান বলে,"মাঠে খেলা কঠিন ছিল। তাঁরা তাদের অস্ত্র ভালভাবেই ব্যবহার করেছে। তাঁরা সঠিক জায়গায় এগুলো ব্যবহার করে আমাদের জন্য রান করা কঠিন করে ফেলেছিল।" টেস্ট খেলুড়ে ৯ টি দেশের বিপক্ষেই সেঞ্চুরি পাওয়া মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হওয়া প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে, ওয়াহ বলেন,
আপনি যদি লম্বা সময় ধরে খেলেন তবে অবশ্যই আপনি বিভিন্ন মাইলফলকে পৌছাতে পারবেন এবং বিভিন্ন রেকর্ড অতিক্রম করতে পারবেন এবং আমি নিশ্চিত যে আমার পরবর্তীকালে কেউ এগুলো ভাঙ্গবে। কিন্তু কোন কিছু অর্জন করা চমৎকার এবং সকল দেশের বিপক্ষে শত রান করা এমন একটি ব্যাপার যার জন্য আমি গর্ববোধ করি। আমি রেকর্ডের ব্যাপারে চিন্তিত নই। আমি শুধু মাঠে যেতে চাই এবং ভাল খেলতে চাই এবং আমি যা বলেছি, যদি আমি মনে করে আমি উন্নতি করতে পারব না তাহলে আমার সেখানে থাকা উচিত নয়।[8]
অস্ট্রেলিয়াকে আবার ব্যাটিং-এ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের ৩১০ রানের প্রয়োজন ছিল এবং তারা দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার আগে আক্রমণে যায়। ৫ রানে ম্যাকগ্রার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে জাভেদ ওমর আউট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হান্নান সরকার ও বাংলাদেশের হয়ে তৎকালীন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হাবিবুল বাশার বাংলাদেশের রান ৮৯-এ নিয়ে যান। হান্নান সরকার ৩৫ রানে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে এই জুটিতে ৩.৯৮ হারে রান উঠছিল।[7] এই উইকেটের ফলে বাংলাদেশের ইনিংসে ধ্বস নামে এবং বাংলাদেশ ১৭৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। অস্ট্রেলীয় লেগস্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল ৬৫ রানে ৫ উইকেট নেন যা তার ক্যারিয়ারের ৭ম ৫ উইকেট প্রাপ্তি ছিল এবং অস্ট্রেলিয়া এক ইনিংস ও ১৩২ রানে বিজয়ী হয়। খেলায় ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি ৩৭ টি টেস্ট জয় নিয়ে ওয়াহ ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েডকে টপকে টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক হন।[5][9]
এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে বান্ডাবার্গ রাম স্টেডিয়াম বিশ্বের ৯০তম এবং অস্ট্রেলিয়ার নবম টেস্ট ভেন্যু হিসেবে অভিষিক্ত হয়। উইজডেন এর মতে, "...বৃষ্টি এই পিচের গুনমান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। বৃষ্টির ফলে পিচ সবুজাভ ছিল এবং যা অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলারদের জন্য সুখবর ছিল।" যখন অস্ট্রেলিয়া টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায়, তখন আশঙ্কা ছিল যে বাংলাদেশকে ইনিংসে ১০০ করতে সংগ্রাম করতে হবে। ডারউইন এর চেয়ে গতিশীল উইকেটে হান্নান সরকার প্রত্যাশার চেয়ে ভাল খেলেন। তিনি ৯ বাউন্ডারিতে ৭৬ রান সংগ্রহ করেন।[10] অস্ট্রেলীয় বোলারদের আক্রমণের ঘাটতির সুযোগে তিনি এবং হাবিবুল বাশার দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১০৮ রান যোগ করেন। জাভেদ ওমর (২৬), হাবিবুল বাশার (৪৬) সানোয়ার হোসেন (৪৬) এবং খালেদ মাসুদ (৪৪) ভাল সূচনা করলেও বড় ইনিংস খেলতে না পারায় বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনের শুরুতে ২৯৫ রানে অল-আউট হয়ে যায়।[11] ম্যাকগিল আরও একবার ৫ উইকেট নেন, যদিও গিলেস্পি ব্যতীত অন্যান্য বোলাররা সীমিত সফলতা লাভ করেন। ল্যাঙ্গার (১) শুরুতেই আউট হয়ে গেলেও হেইডেন (৫০) ও পন্টিং (৫৯) অর্ধশত রান করেন এবং তারা অস্ট্রেলিয়ার রানকে ২/১০৫ এ নিয়ে যান। পরে লেহম্যান ও ওয়াহ তাদের ডারউইন-এর ফর্ম বজায় রেখে এই টেস্টেও সেঞ্চুরি তুলে নেন। লেহম্যান ১৭৭ ও ওয়াহ ১৫৬ রান করেন। ওয়াহ এই সেঞ্চুরির ফলে ৩২ সেঞ্চুরি নিয়ে শচীন তেন্ডুলকর এর উপরে এবং শুধুমাত্র সুনীল গাভাস্কার (৩৪) এর পিছনে ছিলেন। লেহম্যান এর ইনিংসের ১০৫ রান যোগ হয় দ্বিতীয় দিনের চা বিরতি থেকে দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময়ের মধ্যে। তিনি আউট হওয়ার পর মার্টিন লাভ নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম শতক তুলে নেন। ১২৮ রানে দুই উইকেট নিয়ে শুধুমাত্র সানোয়ার হোসেন ১ এর অধিক উইকেট নিতে সক্ষম হন যদিও পরে সন্দেহভাজন বোলিং অ্যাকশনের দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।"[12][13]
হান্নান সরকার দ্বিতীয় ইনিংসেও অর্ধশত রান করেন। যদিও নিজের তৃতীয় ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাকগিল এবং ৮ বলের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে গিলেস্পি বাংলাদেশ দলের ইনিংসে ধস নামান।[10] মাত্র ১৬৩ রানে অলআউট হওয়া সত্ত্বেও ওয়াহ মনে করেন যে "বাংলাদেশের ব্যাটিং, তৎকালীন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং এবং শারজায় পাকিস্তানের ব্যাটিং এর চেয়ে অনেক ভাল ছিল।" সিরিজে ২টি করে সেঞ্চুরি করা সত্ত্বেও লেহম্যান ও ওয়াহ এর বদলে ১৭ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন ম্যাকগিল।[13] কোচ ডেভ হোয়াটমোরও, ১ম টেস্টের পর হওয়া বাংলাদেশের উন্নতিতে সন্তুষ্ট ছিলেন।
আমরা ডারউইন এর চেয়ে ১ দিন বেশি এই টেস্টকে নিয়ে গিয়েছি। আমি মনে করে সেখানে অবশ্যই উন্নতি হয়েছে। রুখে দাঁড়িয়ে ১ম ইনিংসে ২৯৫ রান করা, আমার মতে চমৎকার ছিল। এই মানের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলা সহজ ছিল না। বোধহয় ভবিষ্যতে তাদের চেয়ে কম শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলা সহজ হবে এবং আমরা এগিয়ে যেতে পারব। প্রায় সব মানুষ অস্ট্রেলিয়ার পেস শক্তি সম্পর্কে বলছিল কিন্তু সিরিজের ম্যান অফ দ্যা সিরিজ এবং সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারী ছিলেন একজন স্পিনার [স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল]। আমার মতে আমরা গতিময় বোলারদের বিপক্ষে যে রকম চেষ্টা করেছি, তা ধীরগতির বোলারদের বিপক্ষে করতে পারি নি।"[14]
বাংলাদেশকে ব্যাটিং-এ পাঠানোর পর অস্ট্রেলীয়রা শুরুতেই কয়েকটি উইকেট তুলে নেয়। টেস্টের চেয়ে গতিশীল পিচে লি এবং গিলেস্পির সামনে বাংলাদেশ দিশেহারা হয়ে পরে। তারা মাত্র ১৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে এবং পরে আর এই ধাক্কা সামলাতে পারে নি। ফলে ৩৪ ওভারেই মাত্র ১০৫ রানে অলআউট হয়ে যায়। মাত্র ৩ জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরের রান করতে সক্ষম হয়। লি এবং গিলেস্পি পেসদ্বয় ইনিংসের ৭ উইকেট নেন। ২৪ রানে ২ উইকেট নিয়ে অ্যান্ডি বিকেলও উইকেট পাওয়াদের দলে নাম লিখান।
বাংলাদেশের এই দুর্বল ব্যাটিং পারফরম্যান্সের কারণে লাঞ্চের পূর্বেই শুরু হয় এবং ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট উইকেটের পিছনে মাশরাফিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ১৮ রানের একটি ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। পরে হেডেন (৪৬) ও পন্টিং মূল্যবান ব্যাটিং অনুশীলনের সুযোগে ৭৪ রানের জুটি গড়েন। পন্টিং ২৯ রানে মোহাম্মদ রফিকের বলে বোল্ড আউট হন। ২৭ ওভারের বেশি বাকি থাকতে অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটের জয় পাওয়ায়, ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ-এ আঙুল ভেঙ্গে ছিটকে যাওয়ার পর, প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা ডেমিয়েন মার্টিনের ইনিংস মাত্র ১ বল খেলেই শেষ হয়। পন্টিংয়ের উইকেটের পাশাপাশি মোহাম্মদ রফিক ৫ ওভারে মাত্র ৭ রান দেন।[17][18][19]
বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ধীরগতির সূচনা করে। তবে ১৪ ওভারে ৩৭ রান করার পর হান্নান সরকার (খালেদ মাসুদের অনুপস্থিতিতে উইকেট-রক্ষক) ১৯ রানে ইয়ান হার্ভে-এর বলে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। ৯ রানে পরে তার উদ্বোধনী সঙ্গী, জাভেদ ওমর ১১ রান করে আউট হন। সানোয়ার হোসেনও দ্রুত আউট হয়ে যান, ফলে বাংলাদেশের স্কোর দাড়ায় ৩/৫২। শুধুমাত্র হাবিবুল বাশার (৩১) প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। পরবর্তীতে মিডল অর্ডার ব্র্যাড হগের স্পিনের সামনে ভেঙ্গে পরে। তবে অলক কাপালির ৪৪ বলে ৩৪ লোয়ার অর্ডারে বিনোদনদায়ী ইনিংস ছিল। হগ ৩১ রানে ৩ উইকেট নেন। লেহম্যান ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস-এর ইতি টানেন এবং বাংলাদেশ ৪৬ ওভারে ১৪৭ রানে অল-আউট হয়।
বাংলাদেশের উদ্ভোদনী বোলার, মাশরাফির অনুপস্থিতে অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস ও মাইকেল বেভান-কে দিয়ে ইনিংস শুরু করে, যার উদ্দেশ্য ছিল মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যান দের খেলার সুযোগ করে দেয়া। সাইমন্ডস মাত্র ৭ রান করে হাসিবুল হোসেন-এর বলে আউট হয়ে যান। মার্টিং, বেভানের সঙ্গে ক্রিজে যোগ দেন, এবং আক্রমণাত্মক ব্যাটিং-এর মধ্য দিয়ে বোলারদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন। ভাঙ্গা আঙুলের কারণে ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর এই সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা মার্টিন মাত্র ২২ বলে অর্ধশত রান করেন, যা অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দ্রুততম অর্ধশত রানের রেকর্ড। তিনি গিলক্রিস্ট ও অ্যালান বর্ডার এর করা ৭৮ বলের অস্ট্রেলিয়ার দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভাঙ্গার পথেই ছিলেন। তিনি এবং বেভান মিলে ৯১ বলে ১৩১ রান যোগ করেন এবং অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেটে জয়লাভ করে। ৫১ বলে ৯২ রান করে মার্টিন ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন। বেভান করেন ৬২ বলে ৪০ রান। মার্টিন বাংলাদেশের অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ-এর উপর বেশি চড়াও ছিলেন। মাহমুদের ১ ওভারে তিনি টানা ৩ টি চার ও ১ টি ছয় মারেন। মাহমুদ ৩ ওভারে ৩৪ রান দেন এবং কোন উইকেট পাননি।[20][21][22]
অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক রিকি পন্টিং টসে জিতে ব্যাটিং এর সিদ্ধান্ত নেয়ার মাধ্যমে ডারউইনে সিরিজটি সমাপ্ত হয়। অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক নিজের ইনিংসটি খেলার পূর্বে মোহাম্মদ রফিকের ২ উইকেট লাভ এবং তার আঁটসাঁট বোলিং-এর কারণে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস দাড়ায় ৪ উইকেটে ১১৪ তে। তবে বেভান ও পন্টিং এর ১২৭ রানের জুটিতে অস্ট্রেলিয়া ঘুরে দাড়ায়। বিস্ময়করভাবে অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের ১৪তম সেঞ্চুরি করা ইনিংসে চারের মার ছিল মাত্র ২ টি। ৪ টি ছয় মারার পরেও অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৫৪ রান সংগ্রহ করে। ৩য় ওডিআইয়ে দলে ফিরে আসা মাশরাফি ইনিংসের শেষ দিকে ২ টি উইকেট নেন, কিন্তু মোহাম্মদ রফিক ও অলক কাপালি বাদে বাকি বোলারদের মধ্যে ঘাটতি দেখা যায়।
অস্ট্রেলিয়ার শক্ত বোলিং-এর কারণে বাংলাদেশের ইনিংসের রান দাড়ায় ৫/৩৬। বিকেল ও হার্ভেকে মারতে গিয়ে হাবিবুল বাশার (২) ও মোহাম্মদ আশরাফুল (২) রান করে আউট হন, যার কারণ ছিল জেসন গিলেস্পির মিতব্যয়ী বোলিং। গিলেস্পি ১০ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ১ উইকেট লাভ করেন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সানোয়ার হোসেনের সাথে অলক কাপালি জুটিতে ৬৬ রান যোগ করেন তারা যেখানে অলক কাপালি ৪৯ রানের একটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইনিংস খেলেন। বাংলাদেশ ৪৮তম ওভারে ১৪২ রান করে অল-আউট হয় এবং অস্ট্রেলিয়া ১১২ রানে জয়লাভ করে। ইয়ান হার্ভে ১৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। পন্টিং ম্যান অব দ্য ম্যাচ ও ম্যান অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হন।[23][24][25] টেস্ট ও ওডিআই সিরিজ চলাকালীন, ক্রিকেট ঐতিহাসিক গিডিওন হেইয়ের মতে, " কেয়ার্নস ও ডারউইন এর মিলিত জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ খেলা দেখে।"[4]
অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী সিরিজ ছিল ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠের সিরিজ অস্ট্রেলীয় ওপেনার ম্যাথু হেডেন ওয়াকা গ্রাউন্ড-এ ১ম টেস্টে ৩৮০ রানের তখনকার টেস্টের সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেন। সিডনির সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড-এ অনুষ্ঠিত ২য় টেস্টে সহজেই জয়লাভ করে অস্ট্রেলিয়া ২-০ তে সিরিজটি জিতে নেয়।[26] তারপর তারা ভারতের সঙ্গে ডিসেম্বর ও জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত একটি ৪ টেস্টের সিরিজে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে। সিরিজের চতুর্থ টেস্ট ছিল স্টিভ ওয়াহের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট যা তার ঘরের মাঠ এসসিজিতে খেলা হয়। পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ভিবি একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজ জিতে নেয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.