Loading AI tools
ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রঘুনাথ মন্দির হচ্ছে নিজস্ব শিখর সংবলিত সাতটি হিন্দু মন্দিরের সমষ্টি। এটি উত্তর ভারতের অন্যতম বড় মন্দির। এটি ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর অঙ্গরাজ্যের জম্মুতে অবস্থিত। মন্দিরটি ১৮২২-১৮৬০ সালের ভেতর জামওয়াল রাজপুত গোষ্ঠির মহারাজা গুলাব সিং এবং তার পুত্র মহারাজা রনবির সিং তৈরি করেন। মন্দিরে অনেকগুলো দেবতার মূর্তি থাকলেও প্রধান দেবতা হচ্ছে বিষ্ণুর অবতার রাম। মন্দিরের পেঁচানো এবং স্বর্ণখচিত স্তম্ভগুলোতে মুঘল স্থাপত্যের চিহ্ন দেখা যায়, তবে প্রধান মন্দিরের উপর স্তম্ভটি শিখ স্থাপত্য অনুসারে তৈরি। দেয়ালের বিভিন্ন তাকে ৩০০টি বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি দেখা যায়। প্রধান মন্দিরের ১৫ টি প্যানেলে বিভিন্ন চিত্রকর্ম রয়েছে, যেগুলো রামায়ণ, মহাভারত এবং ভগবত গীতার কাহিনী অনুসারে অঙ্কিত।
রঘুনাথ মন্দির | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | জম্মু জেলা |
অবস্থান | |
অবস্থান | জম্মু (শহর) |
রাজ্য | জম্মু ও কাশ্মীর |
দেশ | ভারত |
স্থাপত্য | |
সৃষ্টিকারী | মহারাজা গুলাব সিং ও মাহারাজা রনবির সিং |
মন্দিরটি ২০০২ সালে আলোচনায় উঠে আসে, যখন লস্কর ই তাইয়েবার আত্মঘাতী সদস্য ফিদায়িনরা দুইবার এখানে গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালায়। এতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
মন্দিরটি জম্মু ও কাশ্মিরের ১৮ কিলোমিটার (১১ মা) পশ্চিমে সুই-এ অবস্থিত। [1] এই শহরে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যাতায়াত করা যায়। ন্যাশনাল হাইওয়ে ওয়ান-এ জম্মু শহরের মাঝ দিয়ে চলে গেছে এবং সারা দেশকে সংযুক্ত করেছে। জম্মু শহরে একটি রেল স্টেশন আছে, যার নাম জম্মু তাওয়ি, যেখান থেকে ভারতের প্রধান প্রধান শহরের সাথে রেল যোগাযোগ রয়েছে। এখান থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা এবং অমৃতসর এর সাথে যোগাযোগ রেখেছে। জম্মু এয়ারপোর্ট থেকে ভারতের বিভিন্ন শহর যেমন দিল্লি, লেহ এবং শ্রীনগর এ যাওয়া যায়।[2]
১৭৬৫ সালের পর থেকে জম্মু শিবলিকদের রাজত্বের সময় জম্মু এলাকায় প্রচুর পরিমাণে মন্দির তৈরি হয়, যা চলে ১৯ শতকের শুরু পর্যন্ত। শাসকরা পেঁচানো আকৃতির মন্দির তৈরি করেন, যা ছিল ইট দিয়ে তৈরি, উপরে থাকত উজ্জ্বল রঙের কলস বা শিখর। ১৮২২ সালে (১৮৩৫ ও বলা আছে) [3]) জম্মুর শাসক মহারাজা গুলাব সিং এমনই একটি মন্দির তৈরি করতে শুরু করেন, যা উৎসর্গ করা হয় তার গুরু বাবা প্রেম দাসকে। [1] ১৮৬০ সালে তার ছেলে মহারাজা রনবীর সিং এর নির্মাণ শেষ করেন। [3] তবে মন্দিরের প্রবেশপথে ব্রাহ্মী ভাষায় উল্লেখিত একটি লেখায় গুলাব সিং এবং তার ভাই ধ্যান সিংকে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়েছে। [1]
রনবীর সিং-এর রাজত্বের সময় এই মন্দিরে অনেক ব্রাহ্মণ শিক্ষার্থী সংস্কৃত শিক্ষা লাভ করে। মন্দিরে একটি অনুবাদ কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করা হয়, যেখানে আরবি ও ফারসি ভাষায় দর্শন ও ইতিহাস এর বিভিন্ন বই মুসলিম গবেষকরা অনুবাদ করতেন। সেই সাথে পন্ডিতরাও বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তক হিন্দি ও ডগরি ভাষায় অনুবাদ করতেন। হিন্দু এবং মুসলমানদের মাঝে বন্ধুত্ব তৈরি করার জন্য মহারাজা রনবীর সিং এই উদ্যোগ নেন। এর প্রশংসা করে স্যর অরেল স্টাইন বলেছেনঃ [4]
জ্ঞান ও ধারণা বিনিময়ের জন্য মহারাজার এই উদ্যোগ ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি চেয়েছিলেন রাজ্যের হিন্দু এবং মুসলমান গবেষকদের আরও আলোকিত করে তুলতে।
মন্দিরে একটি গ্রন্থাগারও রয়েছে, যেখানে বেশ কিছু বিরল সংস্কৃত কাজ দেখা যায়। [5]
উত্তর ভারতের অন্যতম বিশাল এই মন্দিরটি সাতটি মন্দিরের সমন্বয়ে গঠিত, এবং পাঁচ ফিট (১.৫ মিটার) উঁচু একটি আটকোণা প্ল্যাটফর্মের উপর দাঁড়িয়ে আছে।[6] মন্দিরের সামনের অংশটি চল্লিশ ফিট চওড়া এবং প্রবেশপথ থেকে পঞ্চাশ ফিট দূরে। আবদ্ধ প্রাঙ্গনের মাঝে বসবাসের দালান এবং পুব ও উত্তর দিকে চারণভূমি আছে। মন্দিরের সামনের দিকে তিনটি দরজা আছে। [7] প্রধান মন্দিরটি আকারে ২০ (৬.১ মিটার) ফিট x ২০ ফিট, এবং এর চারপাশে একটি গোলাকার পথ (প্রদক্ষিণ পথ) রয়েছে যার প্রস্থ ১০ ফিট (৩ মিটার)। [1] মন্দিরের আটটি পাশের একটিতে অবস্থিত প্রবেশপথটি পুবমুখী। [8] মন্দিরের ভেতর দিকটি স্বর্ণখচিত। [6] বাইরের অংশের প্রধান দেয়ালে ১৫ টি প্যানেল আছে, যার প্রতিটি ৯ ফিট (২.৭ মিটার) উঁচু। [8] এসব প্যানেলে হিন্দু পুরাণ রামায়ণ, মহাভারত, ভগবত গীতা থেকে নেয়া বিভিন্ন ছবি আঁকা রয়েছে, যাতে গণেশ, কৃষ্ণ এবং বিষ্ণুকে দেখা যায়। একটি বড় ছবিতে দেখা যায় সীতার স্বয়ম্বর সভা। এ ছাড়াও এখানে আরও কিছু ছবি দেখা যায়, যেমন কবির নামে এক সাধু এবং ডোগরা এবং শিখ দের মাঝের সেনাসদস্যগণ। ছবিগুলোতে মন্দির তৈরির সময়কার প্রধান প্রধান অস্ত্রশস্ত্র এবং পোশাকের বিবরণও দেখা যায়। [9][8] প্রধান মন্দিরের গর্ভগৃহে (পবিত্র গৃহ) রয়েছে সে সময়ের রাজা এবং ডোগরা জনগোষ্ঠির দেবতা রামের মূর্তি। এই মন্দিরটির মাথায় শিখরের বদলে রয়েছে শিখ স্থাপত্যের আদলে নির্মিত গম্বুজ। [1] সাতটি মন্দিরেই রয়েছে সোনার কারুকাজ, এবং এগুলোতে থাকা বিভিন্ন দেবদেবীদের সবাইকে নেয়া হয়েছে রামায়ণ থেকে। [5] একটি মন্দিরে রয়েছে প্রায় ৭.৫ ফিট (২.৩ মিটার) আকারের কালো পাথর দিয়ে তৈরি একটি শিবলিঙ্গ। [10] মন্দিরে প্রচুর পরিমাণে শালগ্রাম শিলাও (প্রস্তরিভূত অ্যামোনাইট, নেপালের গণ্ডকি নদীতে পাওয়া যায়; বিষ্ণুর প্রতীক) দেখা যায়। ধারণা করা হয় যে মন্দিরের স্থাপত্য অনেকটাই মুঘল আদলে তৈরি। [5]
মন্দিরের অন্যতম প্রধাণ বৈশিষ্ঠ হচ্ছে ইট এবং আস্তর দিয়ে তৈরি অলঙ্করণ। দেয়াল, তাক এবং ছাদের বাঁকানো অংশে নানা রকম ফুল (যেমন পদ্ম) এবং জ্যামিতিক নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। [1] দেয়ালের ছবি ছাড়াও মন্দিরের ভেতরের দিকে দেয়ালের গায়ে রয়েছে বিভিন্ন দেবদেবীর ৩০০ টি মূর্তি। এগুলোকে মন্দিরের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ঠ বলে বিবেচনা করা হয়। তবে বাইরের দিকের অনেকগুলো ছবি এবং মূর্তিই এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। [7]
৩০ মার্চ ২০০২ তারিখে একটি সন্ত্রাসী দল গ্রেনেড এবং গুলি ছড়তে ছুড়তে মন্দিরে ঢুকে পড়ে। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ঘিরে ফেললেও চার নিরাপত্তা রক্ষী এবং দুই সেনা সদস্যসহ ১০জন মারা যায় এবং আরও অনেকে আহত হয়। [11] দ্বিতীয় হামলার ঘটনা ঘটে ২০০২ সালের ২৪শে নভেম্বর । তখন হিন্দুরা মন্দিরে পূজা করছিল। এই হামলার পিছনে দায়ী ছিল লস্কর-ই-তাইয়েবা। এতে ১৩জন পূজারী মারা যায় এবং আরও অনেকে আহত হয়। [12][13][14]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.