নাসর ১৯৩৩ সালে তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন একজন নীতিশাস্ত্রজ্ঞ, ইরানি রাজপরিবারের চিকিৎসক এবং ইরানে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনকারীদের অন্যতম। পরবর্তীতে তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন এবং তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। তিনি ইরানের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন অসংখ্য প্রবন্ধের রচয়িতা। তাঁর কয়েকটি প্রবন্ধ সংকলন করে নাসর দানিশ ওয়া আখলাক (“জ্ঞান ও নৈতিকতা”) নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন।[21] নাসরের পিতামাতা দুজনই ছিলেন কাশান অঞ্চলের লোক। তিনি তাঁর মায়ের দিক থেকে প্রখ্যাত শিয়া মুসলিম ধর্মবেত্তা শেখ ফজলুল্লাহ নূরীর বংশধর এবং কমিউনিস্ট নেতা নূরুদ্দীন কিয়ানূরীর আত্মীয়। নাসর ইরানি দার্শনিক রামিন জাহানবেগলুর চাচাতো ভাই এবং ইরানি-মার্কিন আকাদেমিক ওয়ালী নাসরের পিতা।[22]
নাসরের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় তার পরিবারেই। পাঁচ বছর বয়সে নিকটস্থ এক স্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূত্রপাত। তেহরানের ফিরোজ বাহরাম হাইস্কুলে[23] ভর্তি হবার পূর্বে নাসর জামশিদ-ই-জাম নামক এক স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।[22] তেরো বছর বয়সে তাকে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। তিনি নিউ জার্সির হাইটসটাউনে পেডি স্কুলে ভর্তি হন এবং প্রথম স্থান অধিকার করে পাঠ শেষ করেন।[24] পরবর্তীতে তিনি পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলোজিতে ভর্তি হন এবং পদার্থবিজ্ঞানেস্নাতক সম্পন্ন করেন।[25] ১৯৫৬ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ভূতত্ত্ব ও ভূপ্রকৃতিবিদ্যা বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে নাসর সেখান থেকেই হিষ্ট্রি অব সাইন্সে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।[26] নাসরের শিক্ষাজীবন অত্যন্ত বর্ণিল। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি তিনি অনেক ধর্মীয় ও সূফী পণ্ডিতের কাছে থেকে যেমন শিক্ষাগ্রহণ করেছেন তেমনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শন সহ তুলনামুলক ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে বহু পণ্ডিতের সান্নিধ্যে শিক্ষালাভ করেছেন।
পিএইচডি চলাকালেই নাসর শিক্ষকতা শুরু করেন এবং মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে পূর্ণ অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। পিএইচডি অর্জনের পর তিনি ইরানে প্রত্যাবর্তন করেন এবং তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরিয়া মেহের (বর্তমানে শরীফ বিশ্ববিদ্যালয়) বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। নাসর ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর এবং ১৯৬৪ সালে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে 'প্রথম আগা খান অধ্যাপক' হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[27]
এছাড়া কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি এ. ডি. হোয়াইট প্রফেসর-এট-লার্জ হিসেবে সাত বছর অধ্যাপনা করেন।[22] পাহলভি শাসনামলে তার নেতৃত্বেই ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম ইমপেরিয়াল ইরানিয়ান একাডেমী অব ফিলোসফি (বর্তমানে ইরানিয়ান ইন্সটিটিউট অব ফিলোসফি) গড়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালে ইরানে বিপ্লবের পর তিনি স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন এবং প্রথমে উতাহ ও
পরে টেম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে তিনি সেখানেই শিক্ষকতা করছেন।[28]
নাসর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ফিলোসফির সম্মানিত একজন সদস্য।[29] তিনি ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফিলোসফিক্যাল সোসাইটিস এর পরিচালনা পর্ষদেরও একজন সদস্য।[30] এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর ইসলামিক ফিলোসফির তিনি একজন উপদেষ্টা এবং টেমেনোস একাডেমীর একজন ফেলো।[31] তিনি গ্রীক একাডেমী অফ ফিলোসফি এবং জর্ডান রয়্যাল একাডেমীরও একজন সদস্য ছিলেন।[32]
২০০০ সালে লাইব্রেরি অব লিভিং ফিলোসফার্স-এ একটি ভলিয়ুম তার নামে উৎসর্গ করা হয়।[33][34] লুইস ই. হান, র্যান্ডাল ই. ওক্সিয়ের এবং লুসিয়ান স্টোনের সম্পাদনায় প্রায় এক হাজারেরও বেশি পৃষ্ঠার এই ভলিয়ুমটি দ্য ফিলোসফি অফ সাইয়্যেদ হোসেইন নাসর শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এতে তিনি তার জীবন, দর্শন ও দার্শনিক ভাবনার বিকাশের উপর আলোকপাত করেছেন। ভলিয়ুমটিতে তেত্রিশ জন সমসাময়িক দার্শনিকের সমালোচনামূলক নিবন্ধ ও তার জবাব সংকলিত হয়েছে। তিনিই প্রথম মুসলিম ও নন-ওয়েস্টার্ন হিসেবে ১৯৮১ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্যাদাপূর্ণ গিফোর্ড লেকচার্স প্রদান করেন।[35] নিউ ইয়র্ক স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস থেকে প্রকাশিত নলেজ এন্ড দ্য স্যাক্রেড নামক গ্রন্থটি তার গিফোর্ড লেকচার্স থেকে সংকলিত। তিনি আমেরিকানদার্শনিকজন ডুয়ি এবং ইংরেজগণিতবিদ ও দার্শনিকআলফ্রেড নর্থ হোয়াইটহেড এর পরে তৃতীয় ব্যক্তি যিনি উল্লিখিত উভয় ধরনের সম্মাননা পেয়েছেন। এছাড়াও টেম্পল্টন ধর্ম ও বিজ্ঞান পুরস্কার,[36] ব্রান্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গিটলার পুরস্কার[37] এবং যুক্তরাষ্ট্রের লিহাই বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইডেনের উপশালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেছেন।[38]
এছাড়া একাধিকবার জাতিসংঘে বক্তৃতার[60][61] পাশাপাশি নাসর অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এবং ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকার অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তৃতা করার সুযোগ পেয়েছেন।[62]
ইংরেজি, ফার্সি, আরবি ও ফরাসি ভাষায় নাসর প্রায় পঞ্চাশটি পুস্তক ও পাঁচ শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার অধিকাংশ রচনা অবশ্য ইংরেজিতে রচিত। বিভিন্ন ভাষায় তার অধিকাংশ রচনার অনুবাদকর্ম প্রকাশিত হয়েছে।[63][64]
রচনা
এন ইন্ট্রোডাকশন টু ইসলামিক কসমোলোজিক্যাল ডকট্রিনসঃ কনসেপশনস অফ নেচার এন্ড মেথোডস ইউজড ফর ইটস স্টাডি বাই দ্য ইখওয়ান আল সাফা, আল বিরুনী এন্ড ইবনে সিনা (১৯৬৪)
Ramin Jahanbegloo, In Search of the Sacred: A Conversation with Seyyed Hossein Nasr on His Life and Thought, ABC-CLIO (2010), p. 10, 39-40, 45-46, 56, 59, 67, 81-90, 97, 106-108,114-115, 160.
Zachary Markwith (2010). "Review: Seyyed Hossein Nasr, Islam in the Modern World: Challenged by the West, Threatened by Fundamentalism, Keeping Faith with Tradition (Harper Collins, New York, 2010) Sacred Web Vol. 28 pp 103-116 [115]
Trine Stauning Willet, Krzysztof Stala, Catharina Raudvere (eds), Rethinking the Space for Religion: New Actors in Central and Southeast Europe on Religion, Authenticity and Belonging (Nordic Academic Press, Jan 1, 2012) p. 269, 272.
Asfa Widiyanto (2016). The reception of Seyyed Hossein Nasr's ideas within the Indonesian intellectual landscape, Indonesian Journal for Islamic Studies Vol. 23, no. 2, 2016 pp. 193-236
Foltz, Richard (২০১৩)। "Ecology in Islam"। Runehov, Anne L. C.; Oviedo, Lluis। Encyclopedia of Sciences and Religions। Springer। পৃষ্ঠা675। আইএসবিএন978-1402082641।
Egbert Giles Leigh (1998). "Review: Seyyed Hossein Nasr, Religion and the Order of Nature", International Journal for Philosophy of Religion, Volume 44, Number 2, p. 124-126 [124]
Beringer, Almut (2006) "Reclaiming a Sacred Cosmology: Seyyed Hossein Nasr, the Perennial Philosophy, and Sustainability Education" in Canadian Journal of Environmental Education, vol. 11 no. 1 p26-42
Nasr, Seyyed Hossein, ‘Intellectual Autobiography’, in the ‘Philosophy of Seyyed Hossein Nasr’, ed. Lewis E. Hahn, Randall E. Auxier and Lucian W Stone
Sheikh, Nadia. "Islamic scholar calls GW home"ওয়েব্যাক মেশিনেআর্কাইভকৃত ১১ জুলাই ২০১১ তারিখে, The GW Hatchet, February 20, 2007. Accessed February 5, 2011. "As a 12-year-old, Nasr came to the United States to study at the Peddie School, a New Jersey boarding school where he graduated in 1950 as valedictorian."
Karic, Enes, Nasr: The Thinker of the Sacred in the ‘Philosophy of Seyyed Hossein Nasr’, ed. Lewis E. Hahn, Randall E. Auxier and Lucian W Stone (2000) p. 783