শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

আবদুল কাদের সিদ্দিকী

বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

আবদুল কাদের সিদ্দিকী
Remove ads

কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম (জন্ম: ১৪ জুন ১৯৪৭) একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাঘা সিদ্দিকী নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সমরনায়ক, যিনি ভারতীয় বাহিনীর সাহায্য ব্যতিরেকেই ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে ঢাকা আক্রমণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। তার পূর্ণ নাম আব্দুল কাদের সিদ্দিকী। তাকে বঙ্গ বীর নামেও ডাকা হয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বাহিনী কাদেরিয়া বাহিনী তার নেতৃত্বে গঠিত ও পরিচালিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। তার নামে সখিপুরে "কাদেরনগর" গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে।[]

দ্রুত তথ্য আবদুল কাদের সিদ্দিকী বঙ্গ বীর, বীর উত্তম, জন্ম ...
Remove ads

রাজনৈতিক দল

মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও ১৯৯৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামক রাজনৈতিক দল গঠন করেন। তিনি এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

জন্ম ও শিক্ষা

আবদুল কাদের সিদ্দিকীর পৈতৃক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি উপজেলার ছাতিহাটি গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল আলী সিদ্দিকী, মায়ের নাম লতিফা সিদ্দিকী এবং স্ত্রীর নাম নাসরীন সিদ্দিকী। তাদের এক ছেলে, এক মেয়ে।

আবদুল কাদের সিদ্দিকীর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের স্কুলে এবং টাঙ্গাইল পিটিআই পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক শিক্ষা শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয় ও বিবেকানন্দ হাইস্কুলে হয়। উচ্চ মাধ্যমিক সরকারি এম এম আলী কলেজ কাগমারী এবং স্নাতক পাস করেন একই কলেজ হতে। তবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় তাঁর ছাত্ররাজনীতি আবর্তিত ছিল সা'দত কলেজ করটিয়া কেন্দ্রিক।

স্কুলে পড়াকালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে সেনাবাহিনীতে কিছুদিন চাকরি করে ১৯৬৭ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার শিক্ষাজীবনে ফিরে যান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে।[]

Remove ads

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সারাংশ
প্রসঙ্গ
Thumb
যুদ্ধের পর কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদান

আবদুল কাদের সিদ্দিকী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে টাঙ্গাইলে গঠিত বিশেষ সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। এ বাহিনীর নেতৃত্বে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ছাড়াও ছিলেন আনোয়ার উল আলম শহীদ, এনায়েত করিমসহ অনেকে। প্রাথমিক পর্যায়ে টাঙ্গাইলে তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ করেন। টাঙ্গাইলের প্রতিরোধযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে পুরো বাহিনী টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত এলাকা সখীপুরে চলে যান। সেখানে শুরু হয় এ বাহিনীর পুনর্গঠন-প্রক্রিয়া এবং রিক্রুট ও প্রশিক্ষণ। পরবর্তীকালে এ বাহিনীরই নাম হয় ‘কাদেরিয়া বাহিনী’। মুক্তিযুদ্ধকালে আবদুল কাদের সিদ্দিকী দক্ষতা এবং সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি অসংখ্য যুদ্ধ ও অ্যাম্বুশ করেন। এর মধ্যে ধলাপাড়ার অ্যাম্বুশ অন্যতম। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার অন্তর্গত ধলাপাড়ায় ১৬ আগস্ট আবদুল কাদের সিদ্দিকী ধলাপাড়ার কাছাকাছি একটি স্থানে ছিলেন। তিনি খবর পান, তাদের তিনটি উপদল পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঘেরাও করেছে। তাদের সাহায্য করার জন্য তিনি সেখানে রওনা হন। আবদুল কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ১০ জন। এই ১০জন সহযোদ্ধা নিয়ে পাকিস্তানিরা যে পথ দিয়ে পিছু হটছিল, সে পথে অবস্থান নেন তিনি। পাকিস্তানি সেনারা সংখ্যায় ছিল অনেক বেশি। তবে বিচলিত না হয়ে নিজের দুর্ধর্ষ প্রকৃতির সহযোদ্ধাদের নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। ১টা বেজে ২০ মিনিটে পাকিস্তানি সেনারা তাদের অ্যাম্বুশে প্রবেশ করে এবং চল্লিশ গজের মধ্যে আসামাত্র কাদের সিদ্দিকী এলএমজি দিয়ে প্রথম গুলি শুরু করেন। একই সময় তার সহযোদ্ধাদের অস্ত্রও গর্জে ওঠে। নিমেষে সামনের কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বাকি সেনারা প্রতিরোধে না গিয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে কাদের সিদ্দিকী উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে এলএমজি দিয়ে পলায়নরত পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকেন। তার সহযোদ্ধারাও উঠে দাঁড়িয়ে গুলি শুরু করেন। এ সময় হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গুলি ছুটে আসে আবদুল কাদের সিদ্দিকীর দিকে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন তিনি। তারপরও তিনি দমে যাননি। আহত অবস্থায় যুদ্ধ চালিয়ে যান। যুদ্ধ শেষে সহযোদ্ধারা তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেদিন তাদের হাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রায় ৪০ জন হতাহত হয়।

Remove ads

১৯৭৭ থেকে ১৯৯০ ভারতে স্বেচ্ছানির্বাসন

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বপরিবারে নিহত হলে এর প্রতিবাদে কাদের সিদ্দিকী সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তিনি কাদেরিয়া বাহিনী পুণর্গঠন করে সিমান্ত এলাকায় যুদ্ধ চালিয়ে যান।তার সাথে যোগ দেন নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত ওসমান পরিবারের নাসিম ওসমান ও চটগ্রামে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন। ১৯৯০ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।[]

রাজনৈতিক জীবন

তিনি বর্তমানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নিতে ৮ নভেম্বর ২০১৮ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরীক ছিলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এ জোটের মাধ্যমে তার দল ও তিনি ধানের শীষ প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন।[]

ব্যক্তিগত জীবন

কাদের সিদ্দিকী নাসরিন সিদ্দিকীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[] তার বড় ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীও আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ ও দ্বাদশ সংসদে টাঙ্গাইল-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি দশম সংসদে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[] ২০১৫ সালে তিনি দলের পক্ষ থেকে বহিষ্কৃত হন। তার দুই ছোট ভাই মুরাদ সিদ্দিকী এবং আজাদ সিদ্দিকী।[]

লেখক কাদের সিদ্দিকী

সংবাদ পত্রের কলাম লিখে তিনি বেশ আলোচিত সমালোচিত হয়েছেন। দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক নয়া দিগন্তে তিনি নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। এছাড়া দিগন্ত টেলিভিশনে তিনি সবার উপরে দেশ নামক অনুষ্ঠানে উপস্থাপক হিসেবে দেশের চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও সমসাময়িক বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।

কাদের সিদ্দিকী'র লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ:

  1. মওলানা ভাসানীকে যেমন দেখেছি
  2. মেঘে ঢাকা তারা
  3. স্বাধীনতা’৭১
  4. বজ্রকথন
  5. তারা আমার বড় ভাই-বোন
  6. না বলা কথা
  7. পিতা-পুত্র
Remove ads

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads