শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
আরব জাতি
আরব বিশ্বে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
আরব (আরবি: عَرَب, DIN 31635: ʿarab, আরবি: [ˈʕɑ.rɑb]; একবচনে: عَرَبِيٌّ, ʿarabiyyun, উচ্চারণ [ʕɑ.rɑˈbɪj.jʊn]) একটি জাতিগোষ্ঠী,[ক] যাঁদের জাতিগত, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ভিত্তিতে একটি দৃঢ় পরিচয় গড়ে উঠেছে। এই পরিচয় ইতিহাস, জাতীয়তাবাদ, ভূগোল ও ধর্মীয় প্রভাব দ্বারা গঠিত, যা আরবদের অনন্য রীতিনীতি, শিল্প, খাবার এবং সামাজিক পরিচয়কে রূপ দিয়েছে।[৮]
আরব অঞ্চল—পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকা—এ আরবরা প্রধানত বসবাস করেন। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন অংশে গুরুত্বপূর্ণ আরব প্রবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে।[৯]
আরবরা সহস্রাব্দকাল ধরে ঊর্বর উপত্যকায় বসবাস করে আসছেন। খ্রিস্টপূর্ব ৯শ শতকে আসিরীয়রা আরবদের লেভান্ট, মেসোপটেমিয়া ও আরবের অধিবাসী হিসেবে লিখিতভাবে উল্লেখ করে।[১০] খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকে আরবরা দিলমুন, গেরহা, মাগান প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা গড়ে তোলে এবং মেসোপটেমিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্যে বড় ভূমিকা পালন করে।[১১]
মিদিয়ান, আদ এবং থমূদ—এই প্রাচীন গোত্রগুলির উল্লেখ বাইবেল এবং কুরআনে রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ সালের দিকে কেদারীয়রা দক্ষিণ লেভান্ট ও নিম্ন মিশর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত।[১২] খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ থেকে ১১০ পর্যন্ত আরবের দক্ষিণাঞ্চলে সাবা, লিহিয়ান, মিনিয়ান, কাতাবান, হাদরামাউত, আওসান ও হিমিয়ার প্রভৃতি রাজ্য গড়ে ওঠে।[১৩] আব্রাহামীয় ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, আরবরা ইব্রাহিম নবীর পুত্র ইসমাইলের বংশধর।[১৪]
নবাতীয়রা খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালে পেট্রা নগরকে রাজধানী করে একটি রাজ্য স্থাপন করে। ২৭১ খ্রিস্টাব্দে পালমিরা নগর ছিল জেনোবিয়া রানীর নেতৃত্বাধীন পালমিরিন সাম্রাজ্যের রাজধানী, যা সিরিয়া, আরব পেত্রেয়া, মিশর ও আনাতোলিয়ার বড় অংশ দখলে রাখে।[১৫] হেলেনীয় ও রোমান যুগে ইতুরিয়ান, ওস্রোয়েন এবং হাত্রা ছিল আরব রাজ্য।[১৬] সাসানীয়রা আরবদের অঞ্চলকে "আরবায়িস্তান" নামে স্বীকৃতি দেয়।[১৭] এমেসা শহরে এমেসেন আরব রাজবংশের শাসন চলত।[১৮] উত্তর মেসোপটেমিয়া ও লেভান্ট অঞ্চলে তানুখি, সালিহি, লাখমিদ, কিন্দা এবং ঘাসানিদ আরব গোত্রগুলির প্রভাব ছিল, যাঁরা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন।[১৯]
মধ্যযুগে ইসলামের প্রসার আরবদের একত্রিত করে। রাশিদুন, উমাইয়া, আব্বাসীয়, এবং ফাতিমীয় খিলাফত গঠন হয় এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও সাসানীয়দের পতন ঘটে। আরব শাসিত এলাকা দক্ষিণ ফ্রান্স থেকে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, যা ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সাম্রাজ্য গঠনে সহায়ক হয়।[২০]
২০শ শতকের গোড়ার দিকে মহান আরব বিদ্রোহ ওসমানীয়দের পতনে সাহায্য করে। এরপর ১৯৪৫ সালের ২২ মার্চ আরব লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সনদ একীভূত আরব মাতৃভূমির নীতিকে সমর্থন করে।[২১]
মরক্কো থেকে ইরাক পর্যন্ত আরবরা জাতিগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক ঐক্যের মাধ্যমে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করে, যা তাঁদের মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে পৃথক করে।[২২] আরবদের নিজস্ব সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য, খাদ্য, পোশাক, স্থাপত্য, শিল্প ও ধর্মীয় ঐতিহ্য রয়েছে। তাঁরা বিজ্ঞান, দর্শন, ব্যবসা, রাজনীতি, চিকিৎসা, নাটক, চলচ্চিত্রসহ বহু ক্ষেত্রে মানব সভ্যতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।[২৩]
ইসলামের আগে, অধিকাংশ আরব বহুদেববাদে বিশ্বাস করতেন। তবে কিছু গোত্র ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে এবং কিছু ব্যক্তি, যাঁরা হানিফ নামে পরিচিত, একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।[২৪] বর্তমানে প্রায় ৯৩% আরব মুসলিম, এবং বাকিরা মূলত আরব খ্রিস্টান, দ্রুজ ও বাহাই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।[২৫]
Remove ads
শব্দমূল
সারাংশ
প্রসঙ্গ

আরব শব্দটির প্রাচীনতম প্রামাণ্য ব্যবহার পাওয়া যায় আসিরীয়দের আরামের জয়যাত্রা বিষয়ক একটি আক্কাদীয় ভাষায় লেখা লিপিতে, যা কুরখ স্তম্ভ নামে পরিচিত (খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতক)। সেখানে আরব শব্দটি আরব উপদ্বীপের বেদুইনদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে, যাঁরা রাজা গিন্দিবুর নেতৃত্বে আসিরীয়দের বিরুদ্ধে গঠিত একটি জোটের অংশ ছিলেন।[২৬]
ʾআʿরাব শব্দটি আজও বেদুইনদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যেখানে ʿআরাব শব্দটি আরবদের সাধারণ অর্থে নির্দেশ করে।[২৭] ইসলাম-পূর্ব সাবায়ান ভাষায় প্রায় ৪০ বার এই দুই শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। ʿআরাব শব্দটি হিমিয়ার রাজাদের উপাধিতেও ব্যবহৃত হয়েছে, বিশেষত 'আবু কারিব আসআদ' থেকে শুরু করে 'মাদিকারিব ইয়াঅফুর' পর্যন্ত। সাবায়ান ব্যাকরণ অনুসারে, ʾআʿরাব শব্দটি ʿআরাব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত রূপ। এই শব্দটি কুরআনেও ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে মদীনার আশেপাশে বসবাসকারী কিছু জনগোষ্ঠীকে বোঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়েছে। এটি সম্ভবত দক্ষিণ আরবীয় উৎস থেকে কুরআনের ভাষায় আগত একটি ধার শব্দ।[২৮]
আরব জাতীয় পরিচয়ের প্রাচীনতম সাক্ষ্য পাওয়া যায় ৩২৮ খ্রিস্টাব্দে নাবাতীয় লিপিতে লিখিত একটি প্রাচীন আরবি শিলালিপিতে। এখানে ইমরু' আল-কায়সকে “সমস্ত আরবের রাজা” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[২৯][৩০]
হেরোডোটাস আরবদের উল্লেখ করেছেন সিনাই, দক্ষিণ ফিলিস্তিন এবং ধূপ উৎপাদনকারী অঞ্চলে (বর্তমান দক্ষিণ আরব)। প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিক আগাথারখিদিস, ডিওডোরাস সিকুলুস এবং স্ত্রাবো আরবদের মেসোপটেমিয়া (বিশেষত ইউফ্রেটিস নদীর তীরবর্তী অঞ্চল), মিশর (সিনাই ও লোহিত সাগর উপকূল), দক্ষিণ জর্ডান (নাবাতীয়রা), সিরীয় মরুভূমি এবং পূর্ব আরব অঞ্চলে (যেমন গেরহা) বসবাসকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইয়েমেনে খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকের কিছু শিলালিপিতে ‘আরব’ শব্দটির ব্যবহার পাওয়া যায়।[৩১]
একটি জনপ্রিয় আরব ব্যাখ্যা অনুসারে, আরব শব্দটি ইয়ারুব নামক এক পৌরাণিক পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে, যিনি প্রথম আরবি ভাষায় কথা বলতেন। আবু মুহাম্মদ আল-হাসান আল-হামদানির মতে, মেসোপটেমিয়াবাসীরা আরবদের 'ঘারাব' বা 'পশ্চিমবাসী' নামে ডাকত, কারণ বেদুইনরা তখন মেসোপটেমিয়ার পশ্চিমে বাস করত। পরবর্তীতে এ শব্দটি বিকৃত হয়ে আরব হয়েছে।
আরেকটি মত অনুযায়ী, আল-মাসউদি মনে করেন আরব শব্দটি মূলত ইসমাইলীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হতো, যাঁরা আরাবা অঞ্চলে বাস করতেন। বাইবেলভিত্তিক ব্যুৎপত্তি অনুসারে, হিব্রু আরবি শব্দটি মরুভূমি বা 'অরণ্য' অর্থে ব্যবহৃত 'আরাভা' শব্দ থেকে উদ্ভূত।
ʿআরব শব্দটির মূল ʿ-r-b সেমিটিক ভাষাগুলিতে একাধিক অর্থ বহন করে, যেমন: 'পশ্চিম', 'সূর্যাস্ত', 'মরুভূমি', 'মিশ্রণ', 'বণিক', এমনকি 'কালো কাক'। এইসব অর্থের মধ্যে একাধিকটি 'আরব' শব্দটির উৎপত্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করা হয়। কিছু ভাষাবিদ এই শব্দের উৎপত্তিকে ʿ-B-R (অর্থাৎ ‘পরিভ্রমণ’ বা 'চলা-ফেরা') মূল শব্দ থেকে উদ্ভূত মেটাথেটিক রূপ বলেও মনে করেন।[৩২]
Remove ads
উৎপত্তি
সারাংশ
প্রসঙ্গ

আরবি একটি সেমিটিক ভাষা, যা আফ্রো-এশীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। অধিকাংশ ভাষাবিদ মনে করেন, আরব উপদ্বীপই সেমিটিক ভাষার মূল উৎপত্তিস্থল বা উরহেইমাট।[৩৩][৩৪][৩৫][৩৬] যদিও কিছু গবেষক লেভান্ট অঞ্চলকেও সম্ভাব্য উৎসস্থল হিসেবে বিবেচনা করেন।[৩৭]
প্রাচীন সেমিটিকভাষী জাতিগণ প্রাচীন নিকটপ্রাচ্যে—যেমন লেভান্ট, মেসোপটেমিয়া ও আরব উপদ্বীপে—খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকে প্রাচীনত্বের শেষ পর্যন্ত বসবাস করতেন। প্রোটো-সেমিটিক ভাষা সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দে আরব উপদ্বীপে পৌঁছে এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে।[৩৮] পুরাতন আরবি সেমিটিক ভাষার কেন্দ্রীয় শাখা থেকে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের শুরুতে আলাদা হতে শুরু করে।[৩৯]
কেন্দ্রীয় সেমিটিক ভাষার মধ্যে রয়েছে আরবি, আরামীয় ভাষা, কানানীয়, ফিনিশীয় ভাষা, হিব্রু ভাষা প্রভৃতি।[৪০][৪১] এই ভাষাগুলোর উৎপত্তি আরব উপদ্বীপে এবং সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে বলে একটি তত্ত্ব বলছে, যেমন আক্কাদীয়রা খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের শেষ দিকে মেসোপটেমিয়ায় প্রবেশ করে।[৩৮]
সেমিটিক জনগোষ্ঠীর উৎস বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বিস্তৃত—যেমন মেসোপটেমিয়া, লেভান্ট, আরব উপদ্বীপ ও উত্তর আফ্রিকা। কেউ কেউ মনে করেন সেমিটিক ভাষার উৎপত্তি লেভান্টে খ্রিস্টপূর্ব ৩৮০০ সালের দিকে, এবং সেখান থেকে তা আফ্রিকার শৃঙ্গ ও উত্তর আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে।[৪২]
ইসলামী ও ইহুদি ধর্মীয় বর্ণনা অনুসারে, ইব্রাহিম নবী ও হাজিরার পুত্র ইসমাইল আরবদের পূর্বপুরুষ।[৪৩] তাঁকে ইসলামের নবী মুহাম্মদ-এর বংশপুরুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। মধ্য আরবের অনেক গোত্র নিজেদেরকে "ইব্রাহিমের জাতি ও ইসমাইলের বংশধর" বলত।[৪৪] ৮ম শতাব্দীর আরব পণ্ডিত ইবন খালদুন আরবদের ইসমাইলীয় উৎস বর্ণনা করেছেন।[৪৫]
কুরআনে বলা হয়েছে, ইব্রাহিম ও ইসমাইল মক্কায় কাবা নির্মাণ করেন, যা পূর্বে আদম কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল।[৪৬] সামারীয় ধর্মগ্রন্থ আসাতীর অনুসারে, ইব্রাহিমের মৃত্যুর পর ইসমাইল ২৭ বছর রাজত্ব করেন এবং তাঁর উত্তরসূরিরা মিশর থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে শাসন করে ও মক্কা নগরী নির্মাণ করে।[৪৭]
টার্গুম অনকেলোস-এর ব্যাখ্যায় (উৎপত্তি ২৫:১৬), ইসমাইলীয়রা ভারত থেকে আরব হয়ে মিশর ও আসিরিয়ার উত্তরের দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।[৪৮] এই বিবরণ থেকে ধারণা করা যায়, ইসমাইলীয়রা প্রাচীন নিকটপ্রাচ্য জুড়ে বিস্তৃত একটি জনগোষ্ঠী ছিল।
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
রাজা আশুরবানিপালের প্রাসাদে খোদাই করা একটি দৃশ্য, যেখানে উটচালিত কেদারীয় আরব যোদ্ধাদের পেছনে তাড়া করছে আসিরীয় সৈন্যরা।
আরব উপদ্বীপের যাযাবর জনগণ খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সাল থেকেই ঊর্বর উপত্যকার প্রান্তে বিস্তৃত হয়ে পড়ে। তবে ‘আরব’ শব্দের প্রথম নির্দিষ্ট ব্যবহার পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৮৫৩ সালের কারকারের যুদ্ধে একটি আসিরীয় লেখায়, যেখানে আরবদের একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।[৪৯]
ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবদের ইতিহাস আরব, লেভান্ট, মেসোপটেমিয়া এবং মিশরীয় অঞ্চলে বিস্তৃত। আসিরীয় ও ব্যাবিলনীয় রাজশীলালিপিতে খ্রিস্টপূর্ব ৯ম থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে আরবদের উল্লেখ পাওয়া যায়।[৫০][৫১] কেদারীয়রা কখনও ‘ইসমাইলীয়’ কখনও ‘আরব রাজা’ নামে বর্ণিত হয়েছে।[৫২][৫৩] সরগনের রাজত্বকালে একটি রেকর্ডে উল্লেখ রয়েছে, আরবদের লোহা বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়, কারণ তা দিয়ে অস্ত্র তৈরি করে তারা আসিরীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল।
বাইবেলভিত্তিক উৎস থেকে জানা যায়, আরবরা ইসরায়েলীয়দের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তৎকালীন আরবরা নিজেদের সম্মিলিত জাতিসত্তা হিসেবে উপস্থাপন করত না এবং নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মালিকানার দাবি করত না।[৫৪]

মাগান, মিদিয়ান ও আদ—এই প্রাচীন আরব গোত্র বা সভ্যতাগুলোর উল্লেখ আরবি সাহিত্যে পাওয়া যায়। মাগান (আরবি: مِجَانُ, Majan) ছিল তামা ও ধাতব পদার্থের জন্য বিখ্যাত, যা প্রাচীন কালে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং কুরআনে মূসা নবীর সফরের স্থান হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে।[৫৫]
মিদিয়ান (আরবি: مَدْيَن, Madyan) ছিল আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি অঞ্চল, যেখানকার মানুষ মূর্তিপূজা করত এবং ঈশ্বরের অবাধ্যতার কারণে শাস্তি পেয়েছিল বলে কুরআনে বলা হয়েছে। মূসা সেখানে বাস করতেন, বিবাহ করেন এবং মেষপালক হিসেবে কাজ করতেন।[৫৬]
আদ (আরবি: عَادَ, ʿĀd) ছিল দক্ষিণ আরবের একটি প্রাচীন ও শক্তিশালী জনপদ, যাদের অগ্রসর প্রযুক্তি ও সম্পদের জন্য পরিচিতি ছিল, কিন্তু অবাধ্যতার কারণে প্রবল ঝড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।[৫৭]
হেরোডোটাস আরবদের বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছেন—তাঁর বর্ণনায় রয়েছে তাদের মসলা, ভূপ্রকৃতি, লোককথা, বাণিজ্য, পোশাক ও অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে তথ্য। তিনি আরবদের উত্তর আরবে একটি শক্তিশালী জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেন। স্ত্রাবো, ডিওডোরাস সিকুলুস, প্লিনিসহ অন্যান্য গ্রিক ও রোমান লেখকরাও আরবদের বিষয়ে লিখেছেন।
ইহুদি ইতিহাসবিদ জোসেফাস আরব রাজা ও মিশরের রানি ক্লিওপেট্রার মধ্যে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। আরব রাজা কর প্রদান করতে বিলম্ব করলে হেরোদ রাজা তাতে বাধা দেন।[৫৮]
গেশেম আরবী ছিলেন নেহেমিয়ার প্রতিপক্ষ, যিনি জেরুজালেমের প্রাচীর পুনর্নির্মাণে বাধা দেন। ধারণা করা হয়, তিনি "গুশামু" নামক আরব গোত্রের নেতা ছিলেন, এবং তাঁর প্রভাব উত্তর আরব থেকে ইহুদিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।[৫৯]


প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন লেখায় ‘সারাসেন’ শব্দটি ‘আরব’দের বোঝাতে ব্যবহৃত হত, যারা রোমানদের দ্বারা নির্ধারিত আরাবিয়া পেত্রেয়া (লেভান্ট) ও আরাবিয়া ডেজার্টা অঞ্চলে বাস করত।[৬০] আইবেরীয় খ্রিস্টানরা তাদেরকে ‘‘মূর’’ নামে অভিহিত করত। মদিনার আরবরা মরুভূমির যাযাবর গোত্রগুলোকে আ'রাব বলত এবং নিজেদেরকে নগরবাসী মনে করত, যদিও তারা জাতিগতভাবে আত্মীয় ছিল।
হাগারেন শব্দটি সিরিয়াক, গ্রিক এবং আর্মেনীয় লেখায় প্রাথমিক আরব বিজয়ীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে, যাদের ইব্রাহিম ও হাজিরার পুত্র ইসমাইল-এর বংশধর বলা হয়।[৬১]
৭ম শতাব্দীতে আরবদের বিজয় ছিল আকস্মিক ও নাটকীয়, যার ফলে তারা দ্রুত মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং স্পেন দখল করে। এটি ইসলামের জন্য এক যুগান্তকারী অধ্যায় ছিল, যা নিজেকে ইহুদিধর্ম ও খ্রিস্টধর্মের উত্তরসূরি হিসেবে দেখত।[৬২]
Remove ads
পরিচয়
ইসলাম-পূর্ব যুগে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতাব্দীর আরব পুরুষ ও নারীদের পোশাকের শিল্পরূপ
আরব পরিচয় ধর্মীয় পরিচয় থেকে স্বতন্ত্র এবং এটি ইসলাম বিস্তারের আগেই গঠিত হয়েছিল। ইতিহাসে প্রমাণিত আছে যে, ইসলাম-পূর্ব যুগে আরব খ্রিস্টান রাজ্য এবং ইহুদি আরব গোত্রের অস্তিত্ব ছিল। তবে বর্তমানে অধিকাংশ আরব মুসলমান, এবং একটি সংখ্যালঘু অংশ খ্রিস্টান, দ্রুজ ও বাহাই ধর্মাবলম্বী।[৬৩][৬৪]
আরব বিশ্বের সামাজিক কাঠামোতে সাধারণত পিতৃসূত্রিক বংশপরিচয়কেই জাতিগোষ্ঠী বা গোত্রের সদস্যপদ নির্ধারণের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৬৫]
আরব পরিচয় গঠিত হয়েছে একাধিক উপাদানের ভিত্তিতে—যেমন: বংশানুক্রম, ইতিহাস, ভাষা, রীতি ও ঐতিহ্য।[৬৬] এই পরিচয় বহুবর্ণিল ইতিহাসের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, ঔপনিবেশিক শাসন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আরবদের অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তাদের পরিচয় ও গৌরববোধ টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে।[৬৭]
বর্তমানে আরব পরিচয় ক্রমাগত পরিবর্তনশীল, কারণ আরব জনগোষ্ঠীগুলো জটিল রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তথাপি, এই পরিচয় আজও আরব বিশ্বের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রয়ে গেছে এবং বিশ্বজুড়ে প্রবাসী আরব সমাজে তা উদযাপন ও সংরক্ষিত হয়ে চলেছে।[৬৮]
Remove ads
উপগোষ্ঠী
সারাংশ
প্রসঙ্গ

আরব গোত্রসমূহ আরব উপদ্বীপ, মেসোপটেমিয়া, লেভান্ট, মিশর, মাগরেব, সুদান অঞ্চল ও আফ্রিকার শৃঙ্গ-এ বিস্তৃত।[৬৭][৬৯][৭০]
লেভান্ট অঞ্চলের আরবদের ঐতিহ্যগতভাবে দুটি প্রধান গোত্রে বিভক্ত করা হয়: কাইস ও ইয়ামান। এই বিভাজন ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকেই গোত্রীয় সম্পর্ক ও ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ইয়ামান গোত্রে অন্তর্ভুক্ত ছিল বনু কালব, কিন্দা, ঘাসানিদ ও লাখমিদরা। অপরদিকে কাইস গোত্রে ছিল বনু কিলাব, বনু তায়্য, বনু হানিফা, বনু তামীম ইত্যাদি। ইয়ামানের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গোত্রের মধ্যে ছিল বনু হাশিম, বনু মাখজুম, বনু উমাইয়া ও বনু জুহরা।[৭১]
মেসোপটেমিয়া (ইরাক) ও ইরানেও বহু প্রাচীন আরব গোত্রের বসবাস ছিল, যাদের অস্তিত্ব ৬৩৩ খ্রিস্টাব্দের আরব বিজয়ের বহু আগে থেকেই ছিল।[৭২] ইরানি আরবদের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী হলো আহওয়াজি আরব, যাদের মধ্যে বনু কা’ব, বানী তুরুফ ও মুশাশাইয়্যা সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া ফারসের খামসেহ যাযাবর ও খোরাসানের আরবরাও উল্লেখযোগ্য।
মাগরেবে শতাব্দীব্যাপী আরব অভিবাসনের ফলে বহু আরব গোত্র যেমন বনু হিলাল, বনু সুলাইম ও মাকিল সেখানে বসতি স্থাপন করে। বনু হিলাল প্রথমে প্রায় এক শতাব্দী মিশরের বাস করে, তারপর লিবিয়া, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া হয়ে মরক্কোতে পৌঁছায়।[৭৩]
আরব ঐতিহ্য অনুযায়ী, গোত্রসমূহকে "আরবের করোটিসমূহ" (Arab skulls) নামে বর্ণনা করা হয়, যা শক্তি, সংখ্যাগরিষ্ঠতা, বিজয় ও মর্যাদার প্রতীক। এই মূল গোত্রগুলো থেকে অসংখ্য উপগোত্রের উদ্ভব হয়েছে, যেগুলো পরে স্বতন্ত্র রূপ ধারণ করে।[৭৪][৭৫][৭৬][৭৭][৭৮]
এই প্রধান গোত্রসমূহ হলো:[৭৬]

- বনু বাকর: আরব ও ইরাকে বর্তমান বংশধর রয়েছে।[৭৯]
- কিনানা: আরব, ইরাক, মিশর, সুদান, ফিলিস্তিন, তিউনিসিয়া, মরক্কো ও সিরিয়াতে তাদের বংশধর রয়েছে।[৮০]
- হাওয়াজিন: আরব, লিবিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, সুদান ও ইরাকে বংশধর রয়েছে।[৮১]
- বনু তামীম: আরব, ইরাক, ইরান, ফিলিস্তিন, আলজেরিয়া ও মরক্কোতে তাদের বংশধর রয়েছে।[৮২]
- আজদ: আরব, ইরাক, লেভান্ট ও উত্তর আফ্রিকায় বসতি।[৮৩]
- ঘাতাফান: আরব উপদ্বীপ ও মাগরেবে বিস্তৃত।[৮৪]
- মাধহিজ: আরব ও ইরাকে বসতি।[৮৫]
- আব্দ আল-কাইস: আরবে বসতি।
- আল কাইস (القيس): আরব উপদ্বীপে বিস্তৃত।
- কুদা'আ: আরব, সিরিয়া ও উত্তর আফ্রিকায় বিস্তৃত।
Remove ads
ধর্ম
সারাংশ
প্রসঙ্গ
বেশিরভাগ আরব মুসলমান, যাদের মধ্যে সুন্নি সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং শিয়া সম্প্রদায় সংখ্যালঘু। এর ব্যতিক্রম হলো ওমানের ইবাদি মুসলমানেরা, যারা সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ।[৮৬]
আরব খ্রিস্টানরা সাধারণত গ্রিক অর্থোডক্স চার্চ ও গ্রিক ক্যাথলিক চার্চের অনুসারী হলেও, সামান্য সংখ্যক প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানও রয়েছেন।[৮৭] দ্রুজ ও বাহাই সম্প্রদায়ভুক্ত আরবরাও আছেন।[৮৮] অতীতে আরব বিশ্বে উল্লেখযোগ্য ইহুদি আরব জনগোষ্ঠীরও বসবাস ছিল।
ইসলামের আগমনের পূর্বে, বেশিরভাগ আরব বহুদেবতাবাদী ধর্ম পালন করতেন। তাদের দেবতাদের মধ্যে হুবাল, ওয়াদ্দ, আল-লাত, মানাত ও উজ্জা অন্যতম। কিছু ব্যক্তি, যাদের হানিফ বলা হতো, তারা বহুদেবতাবাদ পরিত্যাগ করে নিরপেক্ষ একেশ্বরবাদে বিশ্বাস করতেন। কিছু গোত্র খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। ইসলাম-পূর্ব সময়ে ঘাসানিদ ও লাখমিদ রাজ্য ছিল উল্লেখযোগ্য আরব খ্রিস্টান রাজ্য। ৪র্থ শতকে হিমিয়ার রাজা ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করলে, তাদের অধীনস্থ কিন্দা গোত্রও আংশিকভাবে ইহুদিতে ধর্মান্তরিত হয়। ইসলামের বিস্তারের সাথে সাথে আরবরা দ্রুত ইসলামে ধর্মান্তর হন এবং প্রাচীন বহুদেবতাবাদী রীতিনীতি বিলুপ্ত হতে থাকে।[৮৯][৯০]
বেথলেহেমে অবস্থিত চার্চ অব দ্য নেটিভিটি
বর্তমানে, সুন্নি ইসলাম লেভান্ট, উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা ও আফ্রিকার শৃঙ্গে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। বাহরাইন ও দক্ষিণ ইরাকে শিয়া মুসলমানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যদিও উত্তর ইরাকে সুন্নিরাই প্রধান। লেবানন, ইয়েমেন, কুয়েত, সৌদি আরব, উত্তর সিরিয়া ও ওমানের আল-বাতিনাহ অঞ্চলে শিয়া জনগোষ্ঠী রয়েছে।[৯১] ইবাদি ও অ-সম্প্রদায়ভুক্ত মুসলমানরাও অল্প সংখ্যায় বিদ্যমান।[৮৬] দ্রুজ সম্প্রদায় মূলত লেভান্ট অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত।[৯২]
ইসলামের আগমনের পূর্বে আরবদের মধ্যে বাহরাইনি জনগণ, নাজরানের খ্রিস্টান সম্প্রদায় এবং ইয়েমেন ও উত্তর আরবের বেশ কিছু গোত্র যেমন ঘাসানিদ, লাখমিদ, তাঘলিব, বনু আমেলা, বনু জুধাম, তানুখিদ ও তায়্য—খ্রিস্টান ধর্ম পালন করতেন। প্রাচীন খ্রিস্টীয় যুগে আরব অঞ্চলকে Arabia heretica বলা হতো, কারণ এই অঞ্চল বিভিন্ন খ্রিস্টীয় মতবাদের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল।[৯৩]
খ্রিস্টানরা পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার জনসংখ্যার প্রায় ৫.৫% গঠন করে।[৯৪] লেবাননে খ্রিস্টানদের সংখ্যা প্রায় ৪০.৫%, সিরিয়াতে ১০%, ফিলিস্তিনে ৮% ও ০.৭%, মিশরে ১০% এবং ইরাকে ০.১%।[৯৫][৯৬][৯৭][৯৮][৯৯]
ইসরায়েলে আরব খ্রিস্টানরা মোট জনসংখ্যার ২.১% এবং আরব জনসংখ্যার প্রায় ৯%।[১০০] জর্দানে এদের সংখ্যা প্রায় ৮%।[১০১] উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ আরবই খ্রিস্টান,[১০২] ঠিক যেমন অস্ট্রেলিয়ার প্রায় অর্ধেক আরব, যাদের উৎস লেবানন, সিরিয়া ও প্যালেস্টাইন থেকে। তিফলিসের পৃষ্ঠপোষক সাধু সেন্ট আবো এই সম্প্রদায়ের একজন খ্যাতিমান সদস্য।[১০৩] অনেক আরব খ্রিস্টান নাজারেথ, বেথলেহেম, জেরুজালেমের খ্রিস্টান পাড়া ও অন্যান্য পবিত্র স্থানসমৃদ্ধ গ্রামে বাস করেন।
Remove ads
সংস্কৃতি

আরব সংস্কৃতি একটি প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের প্রতিফলন, যা হাজার বছরের ইতিহাসজুড়ে গড়ে উঠেছে। এই সংস্কৃতির বিস্তার আটলান্টিক মহাসাগর থেকে শুরু করে পূর্বে আরব সাগর, উত্তরে ভূমধ্যসাগর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে আফ্রিকার শৃঙ্গ ও ভারত মহাসাগর পর্যন্ত। আরবদের ইতিহাসে তারা যে বিভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করেছে, এবং বিভিন্ন সাম্রাজ্য ও রাজ্য যে আরব সভ্যতার নেতৃত্ব দিয়েছে—সেসবই আধুনিক আরব সংস্কৃতির গঠন ও জাতিগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
আরব সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত প্রধান উপাদানসমূহ হলো ভাষা, সাহিত্য, গ্যাস্ট্রোনমি, চিত্রকলা, স্থাপত্য, সঙ্গীত, আধ্যাত্মিকতা, দর্শন ও গূঢ়তত্ত্ব। এসব উপাদান আরবদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে এবং বহুমাত্রিক রূপ দিয়েছে।[১০৪]
Remove ads
জিনতত্ত্ব
সারাংশ
প্রসঙ্গ
আরবরা জিনতাত্ত্বিকভাবে বৈচিত্র্যময় একটি জনগোষ্ঠী। ইসলামের বিস্তার পরবর্তী সময়ে তারা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আন্তঃবিবাহ ও মিশ্রণের মাধ্যমে এই বৈচিত্র্য অর্জন করে।[১০৫][১০৬] আরব উপদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জিনগত বৈশিষ্ট্য উত্তর আফ্রিকায় পশ্চিম থেকে পূর্বে বিস্তারের একটি ধারা প্রদর্শন করে। একই ধারা নাইল নদী উপত্যকায় সুদান ও দক্ষিণ সুদান পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে আরব উপদ্বীপের জনগণের সঙ্গে জিনগত সম্পর্ক দক্ষিণমুখে ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।[১০৭]
এই জিনগত প্রবণতার উৎপত্তি আরব অভিবাসন ও ইসলামিক বিস্তারকালীন সময়ে ঘটে বলে মনে করা হয়।[১০৭] গবেষণায় দেখা গেছে, প্যালেস্টিনি আরব ও ইহুদি জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ জিনগত সম্পর্ক রয়েছে, এবং তাদের পূর্বপুরুষের একটি অংশ অভিন্ন।[১০৮][১০৯][১১০]
একটি ২০১৬ সালের গবেষণায় বলা হয়েছে, আরব উপদ্বীপের স্থানীয় আরবরা আউট অব আফ্রিকা অভিবাসনএর পর ইউরেশিয়ার প্রথম জনবসতির উত্তরসূরি এবং আধুনিক ইউরেশিয়ানদের তুলনায় তারা জিনগতভাবে আলাদা, যদিও সামান্য ইউরোপীয় মিশ্রণের চিহ্নও পাওয়া যায়।[১১১]
প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নাতুফীয়দের সঙ্গে আধুনিক ও প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের জিনগত সম্পর্ক বিদ্যমান। ২০২১ সালের এক গবেষণায় জানা যায়, সৌদি ও ইয়েমেনের জনগণের পূর্বপুরুষ মূলত স্থানীয় শিকারি-সংগ্রাহক নাতুফীয়দের থেকে আগত, এবং তাদের আনাতোলিয়ান পূর্বপুরুষের অবদান লেভান্টের তুলনায় কম। নিওলিথিক ইরানীয় জিনতাত্ত্বিক উপাদানের উপস্থিতি ব্রোঞ্জ যুগের অভিবাসনের ফল।[১১২] এছাড়াও, নাতুফীয়দের ম্যাগরেব অঞ্চলের ইবেরোমাউরাসিয়ান সংস্কৃতির টাফোরাল্ট শিকারি-সংগ্রাহকদের সঙ্গেও পূর্বপুরুষগত সম্পর্ক রয়েছে।[১১৩]
Remove ads
তথ্যসূত্র
গ্রন্থপঞ্জি
আরও পড়ুন
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads