শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
আর্কিয়ান
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
আর্কিয়ান ( /ɑːrˈkiːən/) অধিযুগ বলতে একটি ভূতাত্ত্বিক অধিযুগকে বোঝায়, যা আজ থেকে আনুমানিক ৪০০ কোটি বছর আগে আরম্ভ হয়ে ২৫০ কোটি বছর আগে শেষ হয়েছিল। ভূতাত্ত্বিক সময়ের নিরিখে এটি হেডিয়ান অধিযুগের পরবর্তী এবং প্রোটেরোজোয়িক অধিযুগের পূর্ববর্তী পর্যায়। আর্কিয়ান অধিযুগেই প্রথম ভূত্বক শীতল হয়ে বিভিন্ন মহাদেশের সৃষ্টি হয়।
আর্কিয়ান অধিযুগ ৪০০ - ২৫০ কোটি বছর আগে | |
-৪৫০ — – -৪০০ — – -৩৫০ — – -৩০০ — – -২৫০ — – -২০০ — – -১৫০ — – -১০০ — – -৫০ — – ০ — স্কেল: কোটি বছর |
Remove ads
ব্যুৎপত্তি ও উপবিভাগ
আর্কিয়ান নামটির উৎস গ্রিক Αρχή ("আর্কী") যার অর্থ "আরম্ভ" বা "উৎস"। ১৮৭২ খ্রিঃ প্রথম "প্রাচীনতম ভূতাত্ত্বিক যুগ" বলে এই অধিযুগকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।[১] আর্কিয়ানের সময়সীমা নির্ধারণ করতে চিরাচরিত স্তরবিদ্যা বা স্ট্র্যাটিগ্রাফির পরিবর্তে ক্রোনোমেট্রি বা সময়মিতির সাহায্য নেওয়া হয়। এই অধিযুগের নিম্নসীমা হিসেবে আন্তর্জাতিক স্তরবিদ্যা কমিশন আজ থেকে ৪০০ কোটি বছর আগের সময়টিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।[২]
Remove ads
আর্কিয়ানের আরম্ভে পৃথিবী
সারাংশ
প্রসঙ্গ

আর্কিয়ান হল পৃথিবীর ইতিহাসের প্রধান পাঁচটি অধিযুগের মধ্যে দ্বিতীয়। আর্কিয়ানের আরম্ভে (৪০০ কোটি বছর আগে) ভূকেন্দ্রাগত তাপের পরিমাণ ছিল বর্তমানের প্রায় তিন গুণ, আর এই অধিযুগের শেষভাগে (২৫০ কোটি অছর আগে) এই তাপপ্রবাহের মাত্রা কমে বর্তমানের দ্বিগুণে এসে দাঁড়ায়। এই অতিরিক্ত তাপ ছিল অংশত পৃথিবীর বিবৃদ্ধির সময়কার অবশিষ্ট তাপ, অংশত ভূকেন্দ্রের গঠনকার্যের ফলে উৎপন্ন তাপ এবং অংশত তেজস্ক্রিয়তাজনিত তাপ।
আর্কিয়ান অধিযুগের যে সমস্ত শিলা এখন পাওয়া যায় তার সিংহভাগই হয় আগ্নেয় নয়তো রূপান্তরিত শিলা। আর্কিয়ান পৃথিবীতে অগ্ন্যুৎপাত ছিল অত্যধিক। এই সময়ে গঠিত শিলার মধ্যে বিরল কোমাটিয়াইট শিলা সমেত বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয় শিলার নিদর্শন মেলে। অবশিষ্ট আর্কিয়ান ভূত্বকের মধ্যে মূলত গ্রানাইট জাতীয় শিলার আধিক্য দেখা যায়। এছাড়া ডায়োরাইট, অ্যানর্থোসাইট ও মঞ্জোনাইট প্রভৃতি শিলার চিহ্নও আছে।
অনুমান করা হয়, আর্কিয়ান যুগে পৃথিবীর ভূগাঠনিক প্রক্রিয়া ছিল আজকের থেকে অনেক বেশি দ্রুত। এই অনুমানের ভিত্তি হল তৎকালীন ভূপৃষ্ঠের অধিক উত্তাপ ও ভূসংলগ্ন শিলার তজ্জনিত তরলায়ন। পরবর্তী বিভিন্ন অধিযুগের যাবতীয় ভূগাঠনিক প্রক্রিয়ার প্রভাবকে আর্কিয়ান শিলার তুলনামূলক বিরলতার অন্যতম কারণ বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে, আর্কিয়ান অধিযুগে আদৌ কোনও ভূগাঠনিক সক্রিয়তা ছিল কি না, সেই নিয়েও বিতর্ক জারি আছে।[৩]
পরিবেশ
আর্কিয়ান বায়ুমণ্ডলে মুক্ত অক্সিজেনের অভাব ছিল। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সূর্যের সমসাময়িক ঔজ্জ্বল্য ছিল আজকের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ। অথচ পৃথিবীর জন্মের মাত্র ৫০ কোটি বছর পর থেকেই ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বর্তমানের সঙ্গে তুলনীয় হয়ে দাঁড়ায় (দুর্বল তরুণ সূর্য কূটাভাস)। সমসাময়িক পাললিক শিলা থেকে রূপান্তরিত নীস শিলার কিছু নিদর্শন দেখে বোঝা যায়, ভূপৃষ্ঠে তরল জলের অস্তিত্ব ছিল। এহেন অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রার একটি কারণ হতে পারে বায়ুমণ্ডলে পরবর্তীকালের তুলনায় অধিক মাত্রায় গ্রিনহাউস গ্যাসের উপস্থিতি।[৪][৫] অন্য একটি মত অনুযায়ী, মেঘের অনুপস্থিতি ও স্থলভাগের অভাবের কারণে পৃথিবীর অ্যালবিডো কম থাকায় তাপমাত্রা বাড়তে পারেনি।[৬]
Remove ads
ভূতত্ত্ব
সারাংশ
প্রসঙ্গ
হেডিয়ান অধিযুগের সামান্য কিছু শিলার নমুনা বর্তমান থাকলেও ভূপৃষ্ঠে এখন যে সমস্ত প্রাচীনতম শিলাখণ্ড উন্মুক্ত অবস্থায় দেখা যায়, সাধারণত তাদের গঠনকাল আর্কিয়ান। আর্কিয়ান শিলার প্রাপ্তিস্থানের মধ্যে পড়ে গ্রিনল্যান্ড, সাইবেরিয়া, কানাডীয় শীল্ড, মন্টানা ও ওয়াইওমিং, বাল্টিক শীল্ড, স্কটল্যান্ড, ভারতের দাক্ষিণাত্য, ছোটনাগপুর মালভূমি ও রাজস্থানের আরাবল্লি অঞ্চল, ব্রাজিল, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল। আর্কিয়ান অধিযুগে প্রথম মহাদেশীয় ভূভাগ গঠনপ্রক্রিয়া শুরু হয়, কিন্তু এই সময়ে গঠিত শিলা বর্তমান ভূত্বকের শিলার মাত্র ৭ শতাংশ। অনুমান করা হয়, সামগ্রিক মহাদেশীয় ভূভাগের বর্তমান ক্ষেত্রফলের ৫ থেকে ৪০ শতাংশ আর্কিয়ানে গঠিত হয়েছিল।[৭]
প্রোটেরোজোয়িক অধিযুগে গঠিত শিলার সঙ্গে আর্কিয়ান শিলার প্রধান চরিত্রগত পার্থক্য হল এই যে, আর্কিয়ান শিলা অধিকাংশ সময়েই সমুদ্রগর্ভে গঠিত বিভিন্ন রূপান্তরিত শিলার আকারে পাওয়া যায়, যেমন গ্রেওয়্যাক, কাদাপাথর, আগ্নেয় অধঃক্ষেপ, এবং বলয়াকার লৌহ আস্তরণ। কার্বনেট শিলার অভাব থেকে অনুমান করা হয় আর্কিয়ানে সমুদ্রের জলে দ্রবীভূত বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড জলকে আম্লিক করে রেখেছিল।[৮] আর্কিয়ানে গঠিত একটি সাধারণ শিলা হল গ্রিনস্টোন বলয়, যা তৈরি হয় রূপান্তরিত মাফিক আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলার অনেকগুলো স্তর পর্যায়ক্রমে একটার উপর আরেকটা জমে জমে। এই রূপান্তরিত আগ্নেয় শিলার উৎস প্রাচীন মহাদেশীয় ভূভাগ, এবং রূপান্তরিত পাললিক শিলার উৎস প্রাচীন সমুদ্রতল। গ্রিনস্টোন বলয়সমূহে এই দু'ধরনের পাথরই দেখতে পাওয়া যায় কারণ এগুলো বিভিন্ন আদিম মহাদেশের সীমানা নির্দেশ করে।[৯]
আর্কিয়ানে প্রাণের বিকাশ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
জীবন সময়রেখা
-৪৫০ —
–
-৪০০ —
–
-৩৫০ —
–
-৩০০ —
–
-২৫০ —
–
-২০০ —
–
-১৫০ —
–
-১০০ —
–
-৫০ —
–
০ —
অক্ষের স্কেল: কোটি বছর। 
বামপ্রান্তে কমলা রঙে জানা তুষার যুগ চিহ্নিত।
আরও দেখুন: মানব সময়রেখা ও প্রকৃতি সময়রেখা

বামপ্রান্তে কমলা রঙে জানা তুষার যুগ চিহ্নিত।
আরও দেখুন: মানব সময়রেখা ও প্রকৃতি সময়রেখা
পৃথিবীর বুকে প্রাণের সৃষ্টিকারী প্রক্রিয়াসমূহের যথাযথ পরিচয় এখনও পাওয়া না গেলেও এইটুকু বোঝা গেছে যে প্রাণের প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল হেডিয়ান অধিযুগের শেষভাগে বা আর্কিয়ানের আরম্ভে। ৪১০ কোটি বছরের পুরোনো জারকন (Zircon) কেলাসে জৈব কার্বনের অস্তিত্বের অনুমান করা হয়েছে, কিন্তু এই অনুমান প্রমাণসাপেক্ষ।[১০] জীবনের আরও নিশ্চিত, যদিও অপ্রত্যক্ষ, প্রমাণ পাওয়া যায় ৩৭০ কোটি বছরের পুরোনো লৌহ আস্তরণে চিহ্নিত গ্রিনস্টোন বলয় থেকে। এহেন লৌহ আস্তরণ গঠনের জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন, এবং আর্কিয়ান অধিযুগে মুক্ত অক্সিজেনের একমাত্র জানা উৎস হল সালোকসংশ্লেষ, অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষকারী জীব। প্রাচীনতম উদ্ধারযোগ্য জীবাশ্ম হল ৩৫০ কোটি বছরের পুরোনো কিছু স্ট্রোমাটোলাইট, অগভীর জলে বসবাসকারী কিছু অণুজীবের দেহাবশেষের সমন্বয়ে যাদের সৃষ্টি হয়েছিল।[১১]
হেডিয়ান অধিযুগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে শুক্র ও মঙ্গল গ্রহের বর্তমান বায়ুমণ্ডলের সমান অনুপাতে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেনের আধিক্য ছিল। কিন্তু সেইসঙ্গে ছিল অল্প পরিমাণে NO, CO, P4O10, SO2 এবং মৌলিক সালফার। বর্তমানের তুলনায় হেডিয়ান অধিযুগে পৃথিবীর বুকে অগ্ন্যুৎপাত ১০ থেকে ১০০ গুণ বেশি হওয়ার কারণে এই সমস্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলে সঞ্চিত হয়েছিল।[১২] ফলে হেডিয়ান মহাসাগরসমূহে বিভিন্ন অজৈব যৌগের দ্রবণ বর্তমান ছিল, যা প্রথম জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহে অনুঘটকের কাজ করে এবং ক্রমশ বিভিন্ন উৎসেচক অণুর গঠন সম্ভব করে।
আর্কিয়ানে প্রাণের বিকাশের জন্য সমসাময়িক পৃথিবীর অনেকগুলি বৈশিষ্ট্য দায়ী ছিল, যেমন: শুষ্ক স্থলভাগে সৃষ্টি হওয়া জলাশয়, বিজারণধর্মী বায়ুমণ্ডল, সমুদ্রোপকূল, সমুদ্রে জমা বরফ, রাসায়নিকভাবে অতিসক্রিয় সমুদ্রপৃষ্ঠ, অজৈব পলি, সমুদ্রতল ও সমুদ্রগর্ভস্থিত উষ্ণ প্রস্রবণ বা হাইড্রোথার্মাল ভেন্ট ইত্যাদি। ১৯৫৩ খ্রিঃ বিজ্ঞানীদ্বয় মিলার ও উরে, একটি বদ্ধ কাচের জারে আদিম পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আনুমানিক অনুপাতে বিভিন্ন গ্যাসের একটি মিশ্রণ তৈরি করে (প্রধানত H2O, CH4, H2 এবং NH3) তার মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করেন। এর ফলে ঐ কৃত্রিম বায়ুমণ্ডলে স্বতঃস্ফূর্ত রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড সমেত প্রাণ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জৈব যৌগ তৈরি হয়।[১৩]
হেডিয়ান বায়ুমণ্ডলে অনুঘটক হিসেবে কিছু পদার্থের আণবিক উপস্থিতির সম্ভাবনাও ছিল। আধুনিক পৃথিবীতে স্বাভাবিক ধুলোর মূল উপাদান ভূগাঠনিক শক্তির প্রভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত ভূপৃষ্ঠের চূর্ণ। বায়ুর সঙ্গে পরিবাহিত হতে হতে অ্যামাইনো অ্যাসিডের জল বিয়োজনের (ডিহাইড্রেশন) প্রক্রিয়াকে প্রোটিনের সক্রিয়করণ ও পলিমারাইজেশনের সম্ভাব্য অনুঘটক রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। উপরন্তু, স্টিয়ারিক ও ওলেইক অ্যাসিড প্রভৃতি উভাকর্ষী জৈব যৌগসমূহ (যারা একই সঙ্গে জলাকর্ষী ও লিপিড-আকর্ষী) সামুদ্রিক এরোসলের চারদিকে পর্দার মত আবরণ সৃষ্টি করে থাকে। এই ধরনের আবরণ আদিম জৈবরসায়নে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ব্যবধায়ক পর্দার ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে।[১৪][১৫]
আধুনিক বায়ুমণ্ডলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ভূপৃষ্ঠে বসবাসকারী জীবজগৎকে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করা। হেডিয়ান অধিযুগে সূর্যের অতিবেগুনী বিকিরণের মাত্রা বর্তমানের তুলনায় বেশি ছিল, এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলেও কোনও রক্ষাকারী ওজোন স্তর ছিল না। এর ফলে তৎকালীন ভূপৃষ্ঠে অতিবেগুনী রশ্মির সরাসরি প্রভাব পড়ত, যার ফলে আদিম প্রাণের সৃষ্টিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু'রকম প্রভাবই পড়ে থাকতে পারে। বিসেষ কিছু প্রাথমিক জৈব যৌগের অণুকে এই রশ্মি সক্রিয় করতে সক্ষম ছিল।
প্রাণ সৃষ্টির বিভিন্ন কাঁচামাল, যথা শক্তি সরবরাহ, অনুঘটক, জৈব যৌগের সৃষ্টি ও তাদের একত্রীভবন এই সমস্তই অন্ত্য হেডিয়ান ও আদি আর্কিয়ান - দুই কালপর্বেই পাওয়া যেত। স্থানভেদে এদের ঘনত্ব ও সহজলভ্যতা ছিল বিভিন্ন। এই ঘটনা লক্ষ্য করে প্রাণের বহু-উৎস মতবাদের জন্ম হতে পেরেছে। অন্যদিকে বলা যায়, প্রাথমিক অণুজীবরা আকারে এতই ক্ষুদ্র ছিল যে বায়ুমণ্ডল বা জলের মাধ্যমে তাদের পক্ষে বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে দ্রুত পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়াও অসম্ভব ছিল না। এই কথা খেয়াল রাখলে প্রাণের একক উৎস তথা শেষ বৈশ্বিক সাধারণ পূর্বপুরুষ মতবাদের যুক্তি বোঝা যায়।[১৬]
Remove ads
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads