শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
কালোমুখ প্যারাপাখি
পাখি প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
কালোমুখ প্যারাপাখি (বৈজ্ঞানিক নাম: Heliopais personatus) বা মুখোশপরা জলার পাখি Heliornithidae (হেলিওর্নিথিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Heliopais (হেলিওপাইস) গণের এক প্রজাতির অত্যন্ত দুর্লভ লাজুক জলচর পাখি।[১][২] কালোমুখ প্যারাপাখির বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ মুখোশওয়ালা সূর্যসন্তান (গ্রিক helios = সূর্য, pais = শিশু; ল্যাটিন personatus = মুখোশপরা)।[২] সারা পৃথিবীতে কেবল মাত্র গুটিকতক স্থানে এ পাখিরা বসবাস করে। পৃথিবীর মাত্র ৩৩ হাজার ৬০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের বিস্তৃতি।[৩] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে ক্রমেই কমছে এবং এদের পূর্ববর্তী কয়েকটি বিচরণস্থলে সম্ভবত এরা বিলুপ্ত। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে বিপন্ন বলে ঘোষণা করেছে।[৪] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২] পৃথিবীতে মোট কালোমুখ প্যারাপাখির সংখ্যা আনুমানিক ৬০০ থেকে ১৭০০টি বলে বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে।[৩] আবার আরেকটি হিসাবে এ প্রজাতিটির সদস্য সংখ্যা ১০০০ এর কম বলে ধারণা করা হয়েছে।
প্রজাতিটির কোন উপপ্রজাতি নেই আর এটি Heliopais গণের অন্তর্গত একমাত্র প্রজাতি। Heliornithidae গোত্রের অন্তর্গত মাত্র তিনটি প্রজাতির মধ্যে কালোমুখ প্যারাপাখি একটি। অন্য দু'টি প্রজাতি হল আফ্রিকার প্যারাপাখি ("Podica senegalensis") এবং সূর্যডুবুরি (Heliornis fulica)।
Remove ads
বিস্তৃতি
বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, মালয় উপদ্বীপ এবং ইন্দোনেশিয়ার জাভা ও সুমাত্রার গুটিকতক অঞ্চলে এ প্রজাতিটি দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৯৬ সালে সুমাত্রায় সর্বশেষ একটি প্যারাপাখি দেখা যায়। জাভায় কেবলমাত্র একবারই পাখিটিকে দেখা গেছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে এদের নিয়মিত প্রজনন ও বিচরণ করতে দেখা গেছে।[৫] ভারতের ভরতপুর জেলায় এদের ২০০৬ সালে দেখা গেছে। আসামের উত্তরে এদের এখনও টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয় উপদ্বীপেও এদের দেখতে পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মায়ানমারের কাচিন প্রদেশের দুর্গম অঞ্চলে এদের সচরাচর দেখা যায়। একুশ শতকের প্রথম দিকে চালানো এক জরিপে এই অঞ্চলে এদের সন্তোষজনক বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে। ধারণা করা হয়, কালোমুখ প্যারাপাখির সবচেয়ে বড় দলটি এ অঞ্চলেই বসবাস করে। এছাড়া সাম্প্রতিককালে কম্বোডিয়া আর মায়ানমারে এদের প্রজননের খবর পাওয়া গেছে।[৩]
Remove ads
বিবরণ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
কালোমুখ প্যারাপাখি বাহ্যিকভাবে পানকৌড়িদের মত মনে হলেও এদের দেহ বেশ বড় ও লম্বাটে। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ৫৬ সেন্টিমিটার, ডানা ২৪ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৫ সেন্টিমিটার, পা ৪.৮ সেন্টিমিটার ও লেজ ১১ সেন্টিমিটার।[২] স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারায় কিঞ্চিৎ ভিন্নতা রয়েছে। এর পিঠের দিক জলপাই-বাদামি ও পেটের দিকের রঙ কিছুটা ফিকে। ডানার প্রাথমিক পালকগুলো গাঢ় জলপাই-বাদামি। পা লিপ্তপাদ নয়, পায়ের আঙুলে ডুবুরি পাখির মত পাতা-পর্দা থাকে। পা ও পায়ের পাতা মটর-সবুজ রঙের। কপাল ও মুখাবয়ব কালো, চূড়ায় কালো ডোরা দেখা যায়। চোখের নিচ থেকে গলা পর্যন্ত দুই পাশে দুইটি কালো ডোরা নেমে গেছে। মুখাবয়বে কালো রঙের প্রাচুর্য এক ধরনের মুখোশের সৃষ্টি করে। প্রজাতিটির ইংরেজি নামের জন্য এই মুখোশ অনেকাংশে দায়ী। চোখের পেছন থেকে সাদা ডোরা ঘাড়ের পাশ পর্যন্ত বিস্তৃত। থুতনি ও গলার কিয়দংশ সাদা। চোখের তারা লালচে-বাদামি ও চোখের বলয় মটর-সবুজ। ঠোঁট লম্বাটে ও মজবুত। উপরের ঠোঁটে বর্ম থাকে। ঠোঁটের রঙ উজ্জ্বল হলুদ, তাতে বাদামি মধ্যভাগ দেখা যায়। লেজে কোমল পালক থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ প্যারাপাখির ভিন্নতা মুখোশে। পুরুষ পাখির পুরো কপাল, গলা ও ঘাড়ের উপরিভাগ কালো; কিন্তু স্ত্রী পাখির গলার কেন্দ্রের নিচে ও ঘাড়ের উপরের অংশ সাদা। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি ধূসর। কপাল ছাড়া স্ত্রী পাখির সাথে চেহারায় কোন পার্থক্য নেই।[১][২]

Remove ads
স্বভাব
কালোমুখ প্যারাপাখি খুব লাজুক স্বভাবের ও বিরল হওয়ায় এদের সম্পর্কে খুব কম জানা গিয়েছে। গাছপালা বহুল জলাভূমি, প্লাবিত বন, প্যারাবনের খাল ও চিরসবুজ বনের হ্রদে বিচরণ করে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে এদের সবসময়ই স্বাদু পানিতে বিচরণ করতে দেখা গেছে; লোনা পানিতে কখনোই দেখা যায়নি।[৬] একা, জোড়ায় কিংবা ছোট পারিবারিক দলে ঘুরে বেড়ায়। কাদায় হেঁটে বা অগভীর জলে সাঁতার কেটে খাবার খায়। খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাডস্কিপার, ছোট মাছ, জলজ পোকা, শামুক, চিংড়ি ও অন্যান্য জলচর অমেরুদণ্ডী প্রাণী। ভয় পেলে শুধু ঠোঁট ও মাথা পানির উপরে রেখে পানিতে ডুবে থাকে। অথবা দৌড়ে পাড়ে উঠে লুকিয়ে পড়ে। পানির উপর গাছের ঝুলন্ত ডালে বসে এরা বিশ্রাম নেয়। মাঝে মধ্যে হাঁসের মত উচ্চস্বরে ক্যাঁক ক্যাঁক স্বরে ডাকে।[২] এমনিতে খুব লাজুক স্বভাবের হলেও প্রজনন মৌসুমে এরা প্রায় পোষা হাঁসের মত আচরণ করে। দৌড়ে পালায় না, বরং অনেক কাছে আসতে দেয়। সে কারণে এরা মানুষের হাতে মারা পড়ে বেশি।[৫]
প্রজনন
বর্ষাকাল অথবা বর্ষার শেষদিক কালোমুখ প্যারাপাখির প্রজননকাল। মূলত জুলাই থেকে আগস্ট মাসে এরা বাসা করে। এ সময় পানি বা ভূমি থেকে ১-৩ মিটার উঁচুতে গাছের বড় ডালে ঘন পাতার আড়ালে ডালপালা দিয়ে গোল স্তূপাকার বাসা বানায়। শুকনো জলজ উদ্ভিদাংশ বাসার মূল উপকরণ। বাসা বানানো শেষে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সবুজাভ সাদা। উপরে কালচে বড় বড় ছিট থাকে। প্রতিবারে ৩-৬টি ডিম পাড়ে। ডিমের মাপ ৫.২ × ৪.৩ সেন্টিমিটার।[২] স্ত্রী ও পুরুষ প্যারাপাখির উভয়েই ডিমে তা দেয়। ছানা ফোটার ১০-১২ দিন আগে পুরুষ পাখি অন্যত্র চলে যায় এবং পরে আবার ফেরৎ আসে।
Remove ads
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads