শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
কুমায়ূন বিভাগ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
কুমায়ূন বিভাগ হলো উত্তর ভারতে অবস্থিত উত্তরাখণ্ড রাজ্যের পশ্চিম দিকের জেলাগুলি নিয়ে গঠিত একটি প্রশাসনিক বিভাগ। এটি আলমোড়া, বাগেশ্বর, চম্পাবত, নৈনিতাল, পিথোরাগড় এবং উধম সিং নগর এই ছয়টি জেলা নিয়ে গঠিত৷ হিমালয় পর্বতমালা অঞ্চলে অবস্থিত এই বিভাগটির উত্তরে রয়েছে চীনের তিব্বত, পূর্ব দিকে রয়েছে নেপাল রাষ্ট্র, দক্ষিণ দিকে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য এবং পশ্চিম দিকে রয়েছে ঐ রাজ্যেরই গাড়োয়াল বিভাগ৷ কুমায়ূনে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী কুমায়ূনি জাতি এবং তাদের কথিত ভাষা কুমায়ূনী ভাষা নামে পরিচিত।

ঐতিহাসিকভাবে মানসখণ্ড বা কুর্মাঞ্চল নামে পরিচিত এই কুমায়ুন অঞ্চল বহু হিন্দু রাজবংশীয়দের দ্বারা শাসিত হয়েছে। ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে গোর্খারা পূর্বতন কুমায়ূন রাজ্য দখল করে, ব্রিটিশ আগমনের পর তারা ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে গোর্খাদের কাছ থেকে এই কুমায়ূন অঞ্চল পুনরায় উদ্ধার করলে এটি ব্রিটিশ ভারতের কুমায়ূন বিভাগে পরিণত হয়। প্রাথমিকভাবে এই বিভাগে ছিল তিনটি জেলা যথা কুমায়ূন জেলা, গাড়োয়াল জেলা এবং তরাই জেলা। ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এটি ব্রিটিশ ভারতের সমর্পিত বিজিত প্রদেশগুলির সর্ব উত্তরের অবস্থানে ছিল, ওরে এটিকে উত্তর পশ্চিম প্রান্ত প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এটি আগ্রা ও অওধের যুক্তপ্রদেশ এবং ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে এটি যুক্তপ্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর কুমায়ূন ভারতীয় রাজ্য উত্তরপ্রদেশের একটি বিভাগে পরিণত হয়। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে উত্তরপ্রদেশ জেলা দ্বিখন্ডিত হয়ে নতুন উত্তরাখণ্ড (উত্তরাঞ্চল) রাজ্য গঠিত হলে কুমায়ূন উত্তরাঞ্চলের একটি বিভাগে পরিণত হয়।
এটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কুমায়ূন রেজিমেন্টের প্রধান স্থান। কুমায়ূনের গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত শহরগুলি হল; নৈনিতাল, আলমোড়া, রুদ্রপুর, কাশীপুর, হলদুয়ানি, পিথোরাগড়, চম্পাবত, বাগেশ্বর এবং রানীক্ষেত। নৈনিতাল হল কুমায়ুন বিভাগের প্রশাসনিক দপ্তর এবং উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টটিও এই শহরেই অবস্থিত।[১]
Remove ads
নামকরণ
মনে করা হয় কুমায়ূন নামটি এসেছে কূর্মাঞ্চল' থেকে, যার অর্থ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী শ্রী বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার কূর্মের আবাসস্থল।[২][৩]
১৮১৫ থেকে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ অবধি কুমায়ুনের ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা থাকাকালীন অবস্থায় ইংরেজিতে এটির বানান ছিল Kemaon (কেইএমএওএন)।[৪][৫][৬]
ভূগোল
সারাংশ
প্রসঙ্গ



কুমায়ুন অঞ্চল[৭] হিমালয় পর্বতমালার একটি বৃহত্তর পর্বতশ্রেণী পটি এবং দুটি পর্বত পাদদেশীয় অঞ্চল তথা তরাই এবং ভাবর নিয়ে গঠিত। পর্বত পাদদেশের অঞ্চল ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ অবধি ঘন জঙ্গল আবৃত এবং জংলি জীবজন্তু সঙ্কুল ছিল। ১৮৫০ এরপর ওই অঞ্চল বিভিন্ন কারণে বৃক্ষহীন এবং চারণভূমিতে পরিণত হওয়া শুরু হলে পার্বত্য জনবসতির একটি বড় অংশ পর্বত থেকে কৃষিকাজে তুলনামূলক উন্নত এই অঞ্চলগুলিতে আসা শুরু করেন। শীত এবং গ্রীষ্মের সময় তারা পর্বত পাদদেশে কৃষিকার্য করতেন আবার বর্ষার সময় তারা পুনরায় পাহাড়ে ফিরে যেতেন। বাকি কুমায়ুন জটিল পার্বত্য বিন্যাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ, তার মধ্যে কিছু কিছু সুউচ্চ এবং দুর্গম। ২২৫ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং ৬৫ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি পর্বতশৃঙ্খলে রয়েছে তিরিশটির অধিক পর্বত শৃঙ্গ যার প্রতিটি প্রায় ৫,৫০০ মিটারের থেকেও উচ্চ।[৮]
উত্তরাখণ্ডের সুউচ্চ পর্বতশ্রেনীর উত্তরে তিব্বতি মালভূমির দক্ষিণ দিকের ঢাল বরাবর উৎপত্তি হয়েছে মূলত গোরী গঙ্গা, ধৌলিগঙ্গা (মহাকালী নদীর উপনদী), মহাকালী নদীর। এই নদীগুলি উত্তর থেকে দক্ষিণে গভীর নদীখাত সৃষ্টি করে সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী বাহিত জল পরিবহন করে দক্ষিণ দিকে তরাই অতিক্রম করে। মূল ধারাগুলির মধ্যে সারদা নদী, পিণ্ডারী এবং কৈলগঙ্গা একত্রে সৃষ্টি করেছে অলকানন্দা নদী।[৮] সারদা বা মহাকালী নদী তৈরি করেছে ভারত ও নেপালের পশ্চিম দিকের আন্তর্জাতিক সীমারেখা। এই নদী বরাবর নির্মিত রাস্তাটি লিপুলেখ গিরিপথ অতিক্রম করে তিব্বতগামী হয়েছে, যা বর্তমানে কৈলাস পর্বত-মানস সরোবর পথে তীর্থযাত্রার জন্য ব্যবহৃত হয়। চুনাপাথর, বেলেপাথর, স্লেট, নাইস এবং গ্রানাইট হল এই অঞ্চলে ভূতাত্ত্বিক গঠন। লোহা, তামা, জিপসাম, সীসা এবং আসবেষ্টসের খনি থাকলেও তা কার্যকর নয়। পর্বত পাদদেশে এবং নিম্নতর উপত্যাকা অঞ্চলে আবহাওয়া মনোরম। কেন্দ্রীয় পর্বত অঞ্চল তুলনায় জলপূর্ণ মৌসুমী বায়ু হিমালয়ের দক্ষিণ পাদদেশে অঞ্চলে ধাক্কা খাওয়ার ফলে সেখানে অধিক বৃষ্টিপাত, প্রায় দ্বিগুণ হয়। দক্ষিণ থেকে উত্তরে বৃষ্টিপাতের হেরফের হয় ১,০০০ থেকে ২,০০০ মিলিমিটারের মধ্যে। উত্তর অংশে প্রতিটি শীতেই ঘন বরফের স্তর পড়ে। আবার কিছু কিছু বছরে সমগ্র পর্বত অঞ্চল জুড়ে একই রকম বরফের স্তর লক্ষ্য করা যায়। উপত্যকা অঞ্চলে পরিলক্ষিত হিম প্রায়সই বিপজ্জনক হয়।[৮]
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
আলমোড়া এবং নৈনিতাল জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রাগৈতিহাসিক যুগের বসতি এবং প্রস্তরযুগের বেশ কিছু নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে এখানে কোল জনজাতি, এবং তারপর ধীরে ধীরে কিরাত, খাস এবং সিদীয়রা বসতি স্থাপন করা শুরু করে৷ কুণিন্দরা ছিলেন এই অঞ্চলের প্রথম শাসকগোষ্ঠী৷ পরে ৭০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কত্যুরীরা এই অঞ্চল শাসন করেন৷[২]
আনুমানিক ১১০০- ১২০০ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে কত্যুরীদের রাজ্যের ভাঙন ধরলে এটি আটটি পৃৃথক জমিদারিত্বে বিভক্ত হয়ে পড়ে৷ এগুলি ছিলো: বৈজনাথ-কত্যুর, দ্বারহাট, ডোটী, বড়মণ্ডল, অস্কোট, সিরা, সোরা এবং সুই (কালী কুমায়ূন)৷ ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে রাজা রুদ্র চাঁদের রাজত্বকালে সমগ্র অঞ্চল পুনরায় একত্রিত হয়ে কুমায়ূন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয়।
কুমায়ূন রাজ্য
কত্যুরী রাজত্ব

বাসুদেব কত্যুরী প্রতিষ্ঠিত কত্যুরী রাজবংশ ছিলো কুণিন্দ বংশোদ্ভুত একটি শাখা বংশ৷ তারা তাদের নিজের রাজ্য স্থাপন করার পর এটির নাম রাখেন কূর্মাঞ্চল রাজ্য৷ তারা খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে বর্তমানে বৈজনাথের কত্যুর উপত্যকায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তারা বর্তমান বাগেশ্বর জেলার বৈজনাথ অঞ্জলি নিজেদের রাজধানী পতন ঘটান এবং তার নাম রাখেন কার্তিকেয়পুরা, এটি ছিল কত্যুর উপত্যকার মাঝামাঝি অবস্থিত একটি শহর। কত্যুরী রাজা ব্রহ্মদেব বর্তমান নেপালের পশ্চিম নেপালে অবস্থিত কাঞ্চনপুর জেলায় ব্রহ্মদেব মান্ডি নির্মাণ করেন। কূর্মাঞ্চল রাজত্বের সময়কালীন সর্বাধিক বিস্তার ছিল পশ্চিমে সিকিম থেকে পূর্বে আফগানিস্তানের কাবুল পর্যন্ত। খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে এই বৃহত্তর রাজ্যটি একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
মনে করা হয় রাজা ধাম দেব এবং বীর দেবের সময়কাল থেকে এই সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। বীর দেব তার প্রজাদের উপর ভারি করের বোঝা চাপিয়ে দেন এবং তাদেরকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী ক্রীতদাসের মত কাজ করতে বাধ্য করান। তিনি বলপূর্বক ভাবে তার নিজের মামি তিলাকে বিবাহ করেন। মনে করা হয় এই যে কুমায়ূনি লোকগীতি মামি দিলে ধারো বোলা গানটির উৎস এই ঘটনাটি থেকে। বীর দেবের মৃত্যুর পর তার সম্রাজ্য তার ৮ পুত্রের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায় এবং তারা তাদের নিজেদের আটটি ছোট ছোট রাজ্য তৈরি করে। পরে রাজা চাঁদ অধিকাংশ কত্যুরীদের জমিদারিত্ব নিজের সাম্রাজ্য অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ণ কূর্মাঞ্চল গঠন করেন পরে কুমায়ূন নামে পরিচিত হয়।[৯][পূর্ণ তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
কত্যু্রী রাজা ব্রহ্মা দেবের পৌত্র অভয়পাল দেবের কোন এক উত্তরসূরী ১২৭৯ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান পিথোরাগড়ের অস্কোটে রাজধানী স্থাপন করে রাজবর রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের সাথে সুগৌলি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া পর্যন্ত এটি ওই রাজবংশদ্বারা শাসিত একটি রাজ্য ছিল, পরবর্তীকালে এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।
চাঁদ রাজত্ব

খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতে সোম চাঁদ, সপ্তম শতাব্দী থেকে রাজত্ব করা কত্যুরী রাজাদের সিংহাসনচ্যুত করে চাঁদ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন।[১০] পূর্ব নাম অনুযায়ী তিনি তার রাজ্যের নাম পুনরায় কূর্মাঞ্চল রাখেন এবং চম্পাবতের কালী কুমায়ূনে (মহাকালী নদীর নাম অনুসারে) নিজের নতুন রাজধানী স্থাপন করেন। তার পূর্বতন রাজধানীতে নির্মিত হয় বহুসংখ্যক মন্দির-উপাসনালয়। খ্রিস্টীয় একাদশ এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে নির্মিত এই মন্দিরগুলির অধিকাংশই বর্তমান যার মধ্যে রয়েছে বালেশ্বর এবং নাগনাথ মন্দির।

চাঁদ রাজবংশের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ও ক্ষমতাশালী রাজা ছিলেন বাজ বাহাদুর। তিনি দিল্লিতে শাহজাহানের সঙ্গে সাক্ষাৎকার করেন এবং ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে তার সৈন্য দলে যোগদান করে গাড়োয়াল রাজ্য আক্রমণে তৎপর হন। ওই সময়ে গাড়োয়ালের শাসক ছিলেন রাজা পৃথ্বী শাহ। বাজ বাহাদুর পর্যায়ক্রমিক আক্রমণে দেরাদুন শহরসহ গাড়োয়ালের তরাই অঞ্চল দখল করলে তা গাড়োয়াল রাজ্য থেকে পৃথক হয়। বাজ বাহাদুর পূর্বদিকে কর্ণালী নদী অবধি নিজের রাজ্য বিস্তার করেন। পরে তিনি তিব্বত অভিযান চালান এবং হিন্দু ধর্মীয় স্থান কৈলাস পর্বত ও মানস সরোবর সহ একাধিক দুর্গ দখল করেন।[১১][১২][১৩][১৪][১৫][১৬][১৭] ভীমতালের নিকট ঘোড়াখাল অঞ্চলে তিনি গোলু দেবতা মন্দির নির্মাণ করান,[১০] গোলু ছিলেন তার সেনাধ্যক্ষ যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো প্রাণত্যাগ করেছিলেন।[১৮] এছাড়া তিনি ভীমতালে বিখ্যাত ভীমেশ্বর মহাদেব মন্দিরটিও নির্মাণ করান।[১৯]
খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকে চাঁদ রাজারা পুনরায় গাড়োয়াল রাজ্য দখলে তৎপর হয় এবং ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা উদ্যোৎ চাঁদ আলমোড়ায় একাধিক মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির, উদ্যোৎ চাঁদেশ্বর মন্দির পর্বতেশ্বর মন্দির এবং অন্যান্য। গাড়োয়াল এবং ডোটী অঞ্চলে নিজের বিজয়চিহ্ন স্বরূপ দুটি পর্বতেশ্বর মন্দির নির্মাণ করান, আরেকটি বর্তমানে নন্দাদেবী মন্দির নামে পরিচিত।[২০] পরে জগৎ চাঁদ গাড়োয়ালের রাজাকে পরাস্ত করে রাজধানী শ্রীনগর থেকে সিংহাসনচ্যুত করেন এবং অধিকৃত রাজ্য এক ব্রাহ্মণ পরিবারকে দান করেন।[২১]
নেপালি আগ্রাসন ও নিষ্পত্তি

খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে কুমায়ূনের রাজাদের ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। রাজা মহেন্দ্র চাঁদ ছিলেন প্রশাসক হিসেবে একজন ব্যর্থ রাজা। কুমায়ূনের থেকে ডোটী অঞ্চল স্খলিত হলে গোর্খারা কুমায়ূন দখল করার সিদ্ধান্ত নেয়৷ অমর সিংহ থাপার নেতৃত্বে গোর্খা সৈন্যদল কালী নদী অতিক্রম করে পিথোরাগড় ও গঙ্গোলীহাট হয়ে আলমোড়ায় এসে পৌঁছায়৷ রাজা মহেন্দ্র চাঁদ তরাই অঞ্চলে পলায়ন করলে স্বল্প ক্ষয়ে কুমায়ূন গোর্খা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়৷
গোর্খারা দীর্ঘ ২৪ বছর কুমায়ূনের ওপর রাজত্ব করেন, বিভিন্ন স্থানীয় পুস্তকে এই সময়কালকে নিষ্ঠুর এবং দুর্দশাগ্রস্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সময়কালে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কাজ যে একটি মাত্র হয়েছিল তা হল আলমোড়া হয়ে কালি নদী এবং শ্রীনগরের সরক মারফত যোগসুত্র স্থাপন। গোর্খা শাসনকালে আলমোড়া ছিল কুমায়ূনের বৃহত্তম নগর এবং আনুমানিকভাবে এখানে ১,০০০ টি পরিবার বসবাস করতো।
গোর্খারা অওধ রাজ্যর আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো শুরু করলে ব্রিটিশদের করদ অওধ রাজ্যের নবাব এই বিষয়ে মীমাংসার জন্য ব্রিটিশ সৈন্যদের সঙ্গে বোঝাপড়া শুরু করেন। ফলস্বরূপ ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে গোর্খা যুদ্ধ বা ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কলোনেল নিকোলাসের দিনে ৫০০ সৈন্য, ৬ টি পোন্ডার বন্দুক নিয়ে ব্রিটিশ সৈন্য কাশীপুর হয়ে কুমায়ূনের প্রবেশ করে এবং ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে এপ্রিল তারিখের মধ্যে আলমোড়া দখল করে। ওই একই দিনে অন্যতম গোর্খা সেনাধ্যক্ষ চন্দ্র বাহাদুর শাহ ব্রিটিশদেরকে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির চিহ্ন প্রেরণ করেন এবং ওই অঞ্চলকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা প্রশমিত করার অনুরোধ করেন। গোর্খারা সকল অধিকৃত জমি তথা ঐ দেশ ছেড়ে চলে দেওয়ার শর্তে এই যুদ্ধ সমাপ্ত হয়। ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ওগোর কাদের মধ্যে সুগৌলির চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে কুমায়ূন সরকারিভাবে একটি ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চলে পরিণত হয়।
ব্রিটিশ শাসন
১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে গাড়োয়াল রাজ্যের পূর্ব দিকের অংশের সাথে কুমায়ূনকে যুক্ত করে একটি মুখ্য কমিশনারের অধীন প্রদেশ গঠন করা হয়, যা কুমায়ূন প্রদেশ নামে পরিচিত হয়।[২২] পরবর্তী ৭০ বছর এই প্রদেশের দায়িত্বে ছিলেন তিনজন প্রশাসক যথা, মি. ট্রাইল, মি. জে.এইচ. ব্যাটেন এবং স্যার হেনরি রামসে।
ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন কুমায়ূন থেকে একাধিকবার ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ দেখা যায়। কুমায়ুনের চম্পাবত জেলা থেকে কালু সিংহ মহরা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব পদের ভূমিকা গ্রহণ করেন।[২৩] ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে বিভাগটিতে ছিল তিনটি জেলা, গাড়োয়াল জেলা, কুমায়ূন জেলা এবং তরাই জেলা। কিন্তু পরে কুমায়ূনের জেলা দুটির নাম জেলা সদরের নাম অনুসারে নৈনিতাল এবং আলমোড়া রাখা হয়।
খ্যাতনামা শিকারী ও সংরক্ষক জিম করবেট তার রচিত ম্যান-ইটার্স অব কুমায়ূন বইতে স্থানীয় মানুষখেকো বাঘেদের উল্লেখ করলে কুমায়ূন বিশ্বের দরবারে একটি পরিচিত নাম হয়ে ওঠে। ১৯২০ থেকে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের তথ্য অনুসারে চম্পাবত বাঘ ও চৌগড় বাঘ একত্রে কুমায়ূন ও নেপালের মোট ৪০০ জন মানুষ হত্যা করে।
মহাত্মা গান্ধীর আগমন কুমায়ূনে ব্রিটিশদের পরাজয়ের ধ্বনি সূচিত করে৷ স্থানীয়তা ব্রিটিশ শাসনের বিরোধীতা করা শুরু করে ও ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে থাকে৷ দীর্ঘ বারো বছর গান্ধীজী এখানে কারারুদ্ধ থাকেন এবং তার মতাদর্শে গীতার সারমর্ম অনাশক্তি যোগ লেখেন৷[২৪]
In these hills, nature's hospitality eclipses all men can do. The enchanting beauty of Himalayas, their bracing climate and the soothing green that envelopes you leaves nothing more to be desired. I wonder whether the scenery of these hills and the climate are surpassed, if equaled, by any of the beauty spots anywhere of the world. After having been nearly three weeks in Almora hills, I am more than ever amazed why our people need go to Europe in search of health.
গান্ধীজী কুমায়ূনের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভূত সম্মান পান৷ তাঁর ডাকে রাম সিং ধোনি এখানে সালাম সলীয় সত্যাগ্রহ আন্দোলন চালান, যা কুমায়ূনে ব্রিটিশ শাসতের ভিত আলগা করে দেয়৷[২৬] পুলিশি নিগ্রহের এই সত্যাগ্রহে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে৷ বারডোলিকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন হওয়ায় গান্ধীজী স্থানীয়ভাবে এটিকে বারডোলি আন্দোলন নাম দেন৷ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ডাকে বহু কুমায়ূনী আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগদান করেন৷
ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তী
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর যুক্তপ্রদেশ স্বাধীন ভারতের নবগঠিত উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে পরিণত হয়। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে দেশীয় রাজ্য The princely state of তেহরি গাড়োয়াল ভারতীয় অধিরাজ্যে যোগদান করে ও কুমায়ূন বিভাগের একটি জেলায় পরিণত হয়৷ ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে পূর্বতন আলমোড়া জেলা থেকে পিথোরাগড় জেলা, পৌড়ী গাড়োয়াল জেলা থেকে চামোলি জেলা ও তেহরি গাড়োয়াল জেলা থেকে উত্তরকাশী এই তিনটি নতুন জেলা গঠিত হয়৷ পূর্বতন কুমায়ূন বিভাগের তিনটি প্রাথমিক জেলা নিয়ে নতুন উত্তরাখণ্ড বিভাগ গঠন করা হয়৷
১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে উত্তর প্রদেশের উত্তর পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই পার্বত্য অঞ্চলে প্রশাসনিকভাবে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়৷ এ সময়ে পৌড়ী শহরকে কেন্দ্র করে কুমায়ূন বিভাগের তেহরি গাড়োয়াল ও গাড়োয়াল জেলা দুটি ও উত্তরাখণ্ড বিভাগের উত্তরকাশী ও চামোলি জেলাকে নবগঠিত গাড়োয়াল বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷ ঐ বছরই উত্তরাখণ্ড বিভাগটিও ভেঙে ফেলা হয় ও অবশিষ্ট পিথোরাগড় জেলা কুমায়ূন বিভাগে হস্তান্তরিত হয়৷ বর্তমান কুমায়ূন বিভাগ এরই ফল৷
নব্বইয়ের দশকে কুমায়ূনে আরো তিনটি নতুন জেলা গঠন করা হলে কুমায়ূনে মোট জেলা সংখ্যা হয় ছয়টি৷ ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে নৈনিতাল জেলা থেকে উধম সিং নগর জেলা ও ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে আলমোড়া থেকে বাগেশ্বর জেলা ও পিথোরাগড় থেকে চম্পাবত জেলা গঠিত হয়৷ ২০১১ খ্রিস্টাব্দে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল মহাশয় আলমোড়া থেকে রাণীক্ষেত জেলা ও পিথোরাগড় থেকে ডিডিহাট নামে দুটি নতুন জেলা গঠন করার ঘোষণা করলেও সরকারি বিজ্ঞপ্তির অভাবে জেলা দুটি এখনো অবধি গঠন করা হয় নি৷
Remove ads
ভাষা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রশাসনিক কাজে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত প্রধান ভাষাটি হল হিন্দি। ২০১১ খ্রিস্টাব্দের জনগণনা অনুসারে হিন্দি কুমায়ূনে দেড় মিলিয়নের অধিক লোকের প্রাথমিক ভাষা, হিন্দি ভাষীরা মূলত এই বিভাগের দক্ষিণ দিকে অধিক সংঘনিতভাবে বসবাস করেন। এছাড়া সর্বাধিক ব্যবহৃত স্থানীয় ভাষা হল কুমায়ূনী, যা এই বিভাগের প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষের মাতৃভাষা। দক্ষিণ দিকের জেলাগুলিতে যথেষ্ট সংখ্যক পাঞ্জাবী, উর্দুভাষী এবং বাঙালি লক্ষ্য করা যায়।[২৭] এছাড়া দক্ষিণ দিকে উধম সিং নগর জেলায় থারু ভাষার বুক্সা এবং রণথারু নামে দুটি বুলি দেখা যায়। কুমায়ূনের উত্তর দিকে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে দেখা মেলে চীনা-তিব্বতী ভাষাগোষ্ঠীর বেয়াঁসি, চৌদঁসি, দর্মিয়া, রাজি, রাওয়াত ভাষা এবং বর্তমানে অবলুপ্ত রাঁকা ভাষা৷[২৮]
২০১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে কুমায়ূন অঞ্চলে কুমায়ূনী ভাষায় "কুমায়ূনবাণী" রেডিও সম্প্রচার শুরু হয়েছে।[২৯]
Remove ads
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads