শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
চট্টগ্রাম বন্দর
চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলি নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন।পরে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং জেটি নির্মিত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়।[২] ১৮৯৯-১৯১০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে ।[৩] ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে রেলওয়ে সংযোগ সাধিত হয়। ১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়।[৪] পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনারকে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট-এ পরিণত করা হয়, বাংলাদেশ আমলে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট-কে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটিতে পরিণত করা হয়। [৫] এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি সংস্থা।

Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ


২য় শতাব্দীতে, গ্রিকো-রোমান মানচিত্রকার ক্লডিয়াস টলেমির আঁকা টলেমির মানচিত্রে চট্টগ্রাম বন্দর দেখা যায়। মানচিত্রে বন্দরটিকে পূর্ব বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। [৬]

নবম শতাব্দী থেকে আরব ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামে আসতেন। [৬] ১১৫৪ সালে, আল-ইদ্রিসি উল্লেখ করেছেন যে বাগদাদ এবং বসরা থেকে বণিকরা নিয়মিত চট্টগ্রামে যাতায়াত করতেন। আরব ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। চীনা অভিযাত্রী হিউয়েন সাঙ এবং মা হুয়ানের ভ্রমণকাহিনীতে বন্দরটি দেখা যায়। মরোক্কান অভিযাত্রী ইবনে বতুতা এবং ভেনিসীয় পর্যটক নিকোলো ডি কন্টি ১৪ শতকে বন্দরটি পরিদর্শন করেছিলেন। ঐতিহাসিক বন্দরটি আফ্রিকা, ইউরোপ, চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে জাহাজ বাণিজ্য ছিল।
১৬ এবং ১৭ শতকে চট্টগ্রামে পর্তুগিজদের বসতি বন্দরটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। পর্তুগিজদের বিতাড়িত করার পর চট্টগ্রাম মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং এর নাম হয় ইসলামাবাদ। [৭] এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল, যা মুঘল এবং অটোমান নৌবাহিনীকে সরবরাহ করত। পলাশীর যুদ্ধ এবং বক্সারের যুদ্ধের পর বাংলায় ব্রিটিশ আধিপত্যের উত্থানের পর, বাংলার নবাব ১৭৭২ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে বন্দরটি অর্পণ করেন [৮]
আধুনিক

আধুনিক চট্টগ্রাম বন্দর ১৮৮৭ সালে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যে পোর্ট কমিশনারস অ্যাক্টের অধীনে সংগঠিত হয়েছিল। ১৮৮৮ সালে একজন কমিশনারের অধীনে বন্দরটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। ব্রিটিশ বার্মার সাথে এর ব্যস্ততম বাণিজ্য যোগাযোগ ছিল আকিয়াব এবং রেঙ্গুন বন্দর সহ; [৯] এবং কলকাতা, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সহ অন্যান্য বঙ্গীয় বন্দর। [১০] ১৮৮৯-৯০ সালে বন্দরটি মোট ১,২৫,০০০ টন রপ্তানি পরিচালনা করেছিল। [১১] বন্দরের পাশেই স্ট্র্যান্ড রোড তৈরি করা হয়েছিল। ১৯০৫ এবং ১৯১১ সালের মধ্যে, চট্টগ্রাম পূর্ব বাংলা এবং আসামের প্রধান সমুদ্রবন্দর ছিল। এটিকে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের শেষ স্টেশন তাই, বন্দরের অন্তঃপুরে সমস্ত ঔপনিবেশিক আসাম (আধুনিক উত্তর-পূর্ব ভারত ) অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০ শতকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ ভারত এবং ব্রিটিশ বার্মার মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বঙ্গোপসাগর বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত শিপিং হাব হয়ে উঠেছিল, যা আটলান্টিকের বন্দরের ট্র্যাফিককে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। [১২] ১৯২৮ সালে, ব্রিটিশ সরকার চট্টগ্রামকে ব্রিটিশ ভারতের একটি "প্রধান বন্দর" হিসাবে ঘোষণা করে। [১৩] আসাম এবং বার্মায় পেট্রোলিয়াম শিল্পের জন্য চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি পাট ও চাল ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, বার্মা অভিযানে মিত্র বাহিনী চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করেছিল।
ব্রিটিশ ভারত ভাগের পর, পাকিস্তানের অধিরাজ্যের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ চট্টগ্রাম সফর করেন এবং এর গুরুত্ব এবং ভবিষ্যত সম্ভাবনার ওপর জোর দেন। [১৪] ১৯৬০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট গঠিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বন্দরের ১০০ জন কর্মচারী নিহত [১৩] সোভিয়েত প্যাসিফিক ফ্লিটকে যুদ্ধের পর বন্দরে মাইন ক্লিয়ারিং এবং উদ্ধার অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। [১৫] স্বাধীনতার পরের বছরগুলোতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ভারী শিল্প ও রসদ বৃদ্ধির ফলে বন্দরটি উপকৃত হয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের শেষদিকে ট্রেড ইউনিয়নবাদ শক্তিশালী ছিল।
২১ শতকের প্রথম দশকে নিউ মুরিং টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে একটি বড় সম্প্রসারণ ঘটে। [১৬]
Remove ads
আইন
চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯-এর ৯ ধারা মোতাবেক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতৃর্ক একটি শুল্ক বন্দর হিসাবে ঘোষিত। এটি আমদানী ও রপ্তানীর জন্য একটি সরকারী রুট।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি সরকারী স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা যেটি চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। এর শীর্ষে রয়েছে একজন চেয়ারম্যান ও চার জন সদস্যের সমবায়ে গঠিত একটি বোর্ড।
অবস্থান
চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলী নদীর প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ে অবস্থিত। এর উত্তরে অক্ষাংশ ২২° ১৮' ৪৫" উত্তর, দ্রাঘিমাংশ ৯১° ৪৬' ৩০" পূর্ব, দক্ষিণে অক্ষাংশ ২২° ০৮' ১৩" উত্তর, দ্রাঘিমাংশ ৯১° ৫০' ০০" পূর্ব।
সমুদ্র সীমা
চট্টগ্রাম বন্দরের সমুদ্র সীমা হলো পতেঙ্গা সংকেত কেন্দ্র থেকে সমুদ্রাভিমুখে সাড়ে ৫ মাইল। আর কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে উজানে হালদা নদীর মোহনা অবধি ২৩ মাইল এলাকা চট্টগ্রাম বন্দর এর অধিকারভুক্ত এলাকা। কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে উজানে ১০ মাইল পর থেকে জেটি আরম্ভ [১৭]
জেটির বিবরণ
স্থায়ী পাকা জেটী-১৫ টি
পন্টুন জেটি - ২ টি
বেসরকারি জেটি - ৩ টি
লাইটার জেটি - ৮ টি
মুরিং বার্থ - ১১ টি
মাল্টি পারপাস বার্থ ( কন্টেইনার জেটি) - ১২ টি
পন্টুন জেটিসহ মোট ১৭ টি জেটির মধ্যে ১৩ টি জেটিতে শোরক্রেন ও রেলওয়ে লাইনের সংযোগ আছে। ১১ টি জেটিতে রয়েছে শেড। ১৬ টি ট্রানজিড শেডের মধ্যে মোট আয়তন ১২,৩০,৮৫০ বর্গফুট। ওয়্যার হাউসের মোট আয়তন ৬,৭৭,৫৪০ বর্গফুট , মাল ধারণ ক্ষমতা ২৭,৬০০ টন। [১৮][১৯]
বে-টার্মিনাল
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হালিশহর উপকূলে জোয়ার-ভাটার নির্ভরতামুক্ত এলাকায় বে-টার্মিনালটি নির্মাণের প্রকল্প তৈরি করে। এর জন্য ৯০৭ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। বে-টার্মিনালের দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ হবে প্রায় ৬০০ মিটার। সমুদ্রে জেগে ওঠা চরে বে-টার্মিনালের অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। ১৯৯০ সালের পর চরটি জেগে ওঠে। তীর থেকে প্রায় ৮০০ মিটার দূরের চরটি নতুন একটি চ্যানেলের সৃষ্টি করেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ওই চরকে ঘিরে সৃষ্ট চ্যানেলে টার্মিনালটি নির্মাণ করতে চায়। ড্রেজিং করে চ্যানেলটিতে বড় বড় মাদার ভ্যাসেল বার্থিং দেয়া যাবে বলে জানান বন্দর কর্মকর্তারা।
বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালসহ সবগুলো জেটিতে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৯ দশকি ৫০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো হয়। বে-টার্মিনাল হলে ১০-১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। বন্দরে সর্বোচ্চ ১৮শ টিইইউএস কন্টেইনার বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো যায়, বে-টার্মিনালে ৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বোঝাই জাহাজ ভেড়ানো যাবে।
Remove ads
বাতিঘর
রাত্রিকালে বঙ্গোপসাগরে চলন্ত জাহাজকে সংকেত প্রদর্শণের জন্য বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর ও সামুদ্রিক এলাকায় ৫ টি বাতিঘর আছে।
কুতুবদিয়া বাতিঘর
১৮২২ খ্রিস্টাব্দে কর্ণফুলি মোহনার ৪০ মাইল দুরে কুতুবদিয়া দ্বীপে এটি নির্মাণ করা হয়। ক্যাপ্টেন হেয়ার এর পরিচালনায় ও ইঞ্জিনিয়ার জে.এইচ.টুগুড এর নির্দেশনায় এই বাতিঘর নির্মাণ করা হয়। পাথরের ভিত্তির উপর নির্মিত এই বাতিঘরের উচ্চতা ১২১ ফুট। ১৮৪৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৪৪২৮ টাকা। পাকিস্তান আমলে লৌহ নির্মিত টাওয়ারের উপর আধুনিকে বাতিঘর নির্মাণ করে প্রাচীন বাতিঘরটি বাতিল করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিত্যক্ত বাতিঘর ভবনটি ধ্বংস হয়ে যায়।[২০]
সেন্টমার্টিন বাতিঘর
এই বাতিঘরের প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত আলো ১৭ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়।
কক্সবাজার বাতিঘর
এই বাতিঘরের প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত আলো ২১.৫ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়।
নরম্যানস পয়েন্ট বাতিঘর
এই বাতিঘরের প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত আলো ১১ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়।
পতেঙ্গা বাতিঘর
এই বাতিঘরের প্রতি ১৫ সেকেন্ডে বিচ্ছুরিত সবুজ আলো ১৫ মাইল পর্যন্ত দেখা যায়।[২১]
Remove ads
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads