শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
তারিক বিন জিয়াদ
উমাইয়া সেনাপতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
তারেক বিন জিয়াদ (আরবি: طارق بن زياد, জন্ম: ৬৭০, মৃত্যু: ৭২০) ৭১১ থেকে ৭১৮ সাল পর্যন্ত ভিসিগথ শাসিত হিস্পানিয়ায় মুসলিম বিজয় অভিযানের একজন সেনানায়ক। ইবেরিয়ান ইতিহাসে তাঁকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেনা কমান্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। উমাইয়া খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের আদেশে তিনি একটি বিরাট বাহিনীকে মরক্কোর উত্তর উপকূল থেকে নেতৃত্ব দেন। জিব্রাল্টারে তিনি তাঁর সৈন্য সমাবেশ করেন। জিব্রাল্টার নামটি আরবি জাবালে তারিক থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এর অর্থ "তারেকের পাহাড়"।[১] তারিক বিন জিয়াদের নামে এটির নামকরণ হয়।[২]
Remove ads
উৎস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
মধ্যযুগের অধিকাংশ ইতিহাসবিদ তারিকের বংশ সম্পর্কে খুব অল্প তথ্য দিয়েছেন। ইবনে আবদুল হাকাম, ইবনে আল আসির, আল তাবারি, ইবনে খালদুন[৩] তার সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করেননি। আধুনিককালের এনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলাম ও কেম্ব্রিজ হিস্টরি অব ইসলাম এও এ বিষয়ে তথ্য নেই। কিছু আরব ইতিহাস অনুযায়ী তাঁর ব্যাপারে তিনটি ভিন্ন তথ্য আছে। এগুলো তারিকের প্রায় ৪০০ ও ৫০০ বছর পর লেখা হয়েছে। এগুলো হলো:
- তারিক হামাদানের একজন পারস্য বংশোদ্ভূত লোক।[৪]
- তিনি কিন্দাহ গোত্রের[৫] একজন মুক্ত আরব সদস্য[৬] ।
- তিনি উত্তর আফ্রিকার বার্বার বংশোদ্ভূত লোক। তবে এগুলোতে বেশ কিছু ভিন্ন রকম তথ্য আছে। আধুনিক গবেষক যারা তার বার্বার উৎসকে গ্রহণ করেন তারাও এক তথ্য থেকে অন্য তথ্যে চলে যান।[৭] জেনাটা, অয়ালহাস, অয়ারফাজুমা ও নাফজা থেকে উতসরিত বার্বার গোত্রগুলো তারিকের সময় ত্রিপোলিতানিয়ায় বসবাস করত।[৮]
- প্রাচীন উদ্ধৃতি পাওয়া যায় ১২ শতকের ভূগোলবিদ আল-ইদ্রিসির লেখায়। তিনি তারিককে প্রথাগত কায়দায় ‘’বিন জিয়াদ’’ না বলে ‘’তারিক বিন আবদুল্ললাহ বিন ওয়ানামু আল-জানাতি’’ বলে উল্লেখ করেছেন।[৯]
- ১৪ শতকের ইতিহাসবিদ ইবনে ইজারি তারিকের বংশ দুইভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন তারিক বিন জিয়াদ বিন আবদুল্লাহ বিন ওয়ালাগু বিন ওয়ারফাজুম বিন নাবারগাসান বিন ওয়ালহাস বিন ইয়াতুফাত বিন নাফজাও (আরবি: طارق بن زياد بن عبد الله بن ولغو بن ورفجوم بن نبرغاسن بن ولهاص بن يطوفت بن نفزاو) এবং তারিক বিন জিয়াদ বিন আবদুল্লাহ বিন রাফহু বিন ওয়ারফাজুম বিন ইয়ানযগাসান বিন ওয়ালহাস বিন ইয়াতুফাত বিন নাফযাও (আরবি: طارق بن زياد بن عبد الله بن رفهو بن ورفجوم بن ينزغاسن بن ولهاص بن يطوفت بن نفزاو)। তবে এটি মুদ্রণত্রুটি হতে পারে।[১০]
অধিকাংশ আরব ও স্পেনিশ ইতিহাসবিদ এ বিষয়ে প্রায় একমত যে তিনি ইফ্রিকিয়ার আমির মুসা বিন নুসাইরের একজন দাস ছিলেন।[১১][১২][১৩][১৪][১৫]পরে তিনি তাঁকে মুক্ত করে দেন ও নিজের সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু তাঁর বংশধররা শতবর্ষ পর তারিকের দাস হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে।
৭৫৪ সালে ল্যাটিনে লিখিত মোজারাব ক্রনিকলে তাকে ভুলক্রমে তারিক আবুজারা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি স্পেন বিজয়ের একটি লিখিত দলিল।[১৬]
তারিকের নাম প্রায় উম্ম হাকিম নামে একজন তরুণ দাসীর সাথে সম্পর্কিত করা হয়। তিনিও তারিকের সাথে স্পেন আসেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যকার সম্পর্ক অস্পষ্ট রয়ে গেছে।[১৭]
Remove ads
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ

মূসা বিন নুসাইর ৭১০-৭১১ সালে তানজিয়ার জয়ের পর তারিককে এর গভর্নর নিয়োগ দেন।[১৮] কিন্তু সিউটায় একটি ভিসিগথ চৌকি জয় করা যায়নি। এটি জুলিয়ান নামক এক সম্রান্ত ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করছিলেন।
রডেরিক স্পেনের ক্ষমতায় এলে জুলিয়ান তার কন্যাকে প্রথা অনুযায়ী শিক্ষা অর্জনের জন্য গিসিগথিক রাজার দরবারে পাঠান। কথিত আছে যে রডেরিক তাকে ধর্ষণ করেন এর ফলে জুলিয়ান অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে আরবদেরকে ভিসিগথ রাজ্যে আসতে আমন্ত্রণ জানান। সে সাথে মুসলিমদেরকে জিব্রাল্টার প্রণালী গোপনে পার করে দেয়ার ব্যাপারে তিনি তারিকের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। জুলিয়ানের কাছে বেশ কিছু বাণিজ্য জাহাজ ও স্পেনিশ মূলভূমিতে নিজস্ব দুর্গ ছিল।
৭১১ সালের ২৯ এপ্রিল নতুন ধর্মান্তরিত মুসলিমদের নিয়ে গঠিত তারিকের সেনাবাহিনী জিব্রাল্টারে অবতরণ করে।[১৯] জিব্রাল্টার নামটি আরবি নাম জাবাল আত তারিক বা তারিকের পাহাড় নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে।
তারিকের সেনাবাহিনীতে মোট ৭০০০ জন লোক ছিল। বলা হয় যে মূসা ইবনে নুসাইর আরো ৫০০০ সৈনিক পাঠিয়েছিলেন।[২০] রডেরিক হামলা মোকাবেলার জন্য ১,০০,০০০ জন সৈনিক সমাবেশ করেন।[২১] ১৯ জুলাই গুয়াডালেটের যুদ্ধে রডেরিক পরাজিত ও নিহত হন।[১২][২২] ফলে ভিসিগথ রাজ্যের বিরুদ্ধে তারিক বিন জিয়াদ চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেন। এর ফলে মুসা ইবনে নুসায়ের ১৮০০০ (বেশিরভাগ আরব) সৈন্য নিয়ে দ্বিতীয় আক্রমণ চালানোর জন্য একত্রিত করে এবং কয়েক বছরের মধ্যে তারিক ও মুসা ভিসিগোথগুলি থেকে ইবেরিয়ান উপদ্বীপের দুই তৃতীয়াংশকে দখল করে ফেলে।[২৩][২৪]

জুলিয়ানের মতানুসারে তারিক বিন জিয়াদ তার সেনাদলকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে কর্ডোবা, গ্রানাডা ও অন্যান্য অঞ্চল জয় করতে পাঠান। এসময় তিনি মূল সেনাদলের সাথে অবস্থান করেন। তারা টলেডো ও গুয়াদালাজারা জয় করে। পরের বছর মুসা বিন নুসাইরের ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তারিক হিস্পানিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তারিক ও মূসা দুজনেই ৭১৪ সালে উমাইয়া খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের আদেশে দামেস্কে ফিরে আসেন। এখানে তারা তাদের বাকি জীবন অতিবাহিত করেন।[২৫]
Remove ads
তারিক ও মূসা
স্পেন বিজয় নিয়ে লেখা অনেক আরব ইতিহাসে তারিক ও মুসা বিন নুসাইরের সম্পর্কের ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে। তিনি তার মুক্ত দাসের একটি দেশ জয় নিয়ে ঈর্ষান্বিত ছিলেন এই বলে কেউ কেউ মূসার ব্যাপারে নেতিবাচক মত প্রকাশ করেন। অন্যান্যরা এ ব্যাপারে কিছুই উল্লেখ করেননি।
তার ব্যাপারে প্রথমদিককার আরব ইতিহাসে যেসব তথ্য পাওয়া যায় তার মধ্যে নবম শতকের ইবনে আল হাকামের তথ্য সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর। তিনি লিখেছেন যে মূসা তারিকের উপর এতটাই রাগান্বিত ছিলেন যে তিনি তাকে বন্দী করেন ও হত্যা করতে চাইছিলেন। তবে মুগিস আর-রুমির হস্তক্ষেপে তা সম্ভব হয়নি। তিনি খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের একজন মুক্ত করা ব্যক্তি ছিলেন। খলিফা তারিক ও মূসা দুজনকেই ডেকে পাঠান।[২৬] একাদশ শতকের ‘’আখবার মাজমুয়া’’ অনুযায়ী মূসা স্পেনে আসার পর তারিক সম্মানের চিহ্নরূপে ঘোড়া থেকে নেমে পড়েন। কিন্তু মূসা তাকে ঘোড়ার চাবুক দিয়ে আঘাত করেন।[২৭]
অন্যদিকে আরেকজন প্রাচীন ইতিহাসবিদ আল বালাজুরির মতে মূসা তারিককে কড়া ভাষায় চিঠি লেখেন ও পরবর্তীকালে দুজন একত্রীত হন।[২৮]
সোলায়মানের টেবিল
তারিক ও মূসার মধ্যকার দ্বন্দ্বের ব্যাপারে একটি গল্প প্রচলিত আছে। বহুল প্রচলিত গল্পটিতে একটি প্রকান্ড আসবাবপত্রের উল্লেখ করা হয়। এটি নবী সুলায়মান এর বলে কথিত ছিল। বলা হয় যে এটি স্বর্ণনির্মিত ও মণিমুক্তা দ্বারা আবৃত ছিল এবং ইসলামপূর্ব যুগেও এটি স্পেনিশ ভিসিগথদের দখলে ছিল বলে প্রচলিত ধারণা ছিল।[২৯]
রডেরিকের এক ভাতিজার আত্মসমর্পণের পর তারিক এটি দখলে নিয়ে নেন। অধিকাংশ কাহিনী মতে মূসার নিকট থেকে প্রতারণার আশঙ্কায় তিনি এর একটি পা খুলে ফেলেন ও এর স্থলে একটি কমমূল্যের পা স্থাপন করেন। টেবিলটি এরপর মূসার বিজিত মালামাল রূপে দামেস্কে নিয়ে যাওয়া হয়।
যখন দুজনই খলিফার সামনে আসেন, মূসা বলেন যে তিনি এই টেবিলটি দখলকারীদের একজন। তারিক এসময় কম দামি পায়াটির দিকে খলিফার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ ব্যাপারে মূসার ব্যাখ্যা ছিল যে তিনি টেবিলটি এ অবস্থায় পেয়েছিলেন। এরপর তারিক আসল পায়াটি বের করেন। ফলে মূসা তার উপর অসন্তুষ্ট হন।[৩০]
তবে আল বালাজুরির লেখায় খলিফার সামনে এধরনের টেবিল উপস্থাপন করা হয়েছিল বলে কোনো তথ্য নেই।[৩১]
নতুন পদবী | আল আন্দালুসের গভর্নর ৭১১–৭১২ |
উত্তরসূরী মুসা বিন নুসাইর |
Remove ads
বক্তব্য
ষোড়শ শতাব্দীর ঐতিহাসিক আহমেদ মোহাম্মদ আল-মক্কারি তার দ্য ব্রাথ অফ পারফিউমে গুয়াদালেতের যুদ্ধের আগে তার সেনাদের উদ্দেশে রাখা লম্বা বক্তব্য তুলে ধরেন।[৩২][৩৩][৩৪]
নামকরণ
- তারিক বিন জিয়াদ একাডেমি, ইনভার গ্রুফ হাইটস ও ব্লাইন, মিনেসোটা।
- জিব্রাল্টার
আরও দেখুন
- সামরিক কমান্ডারদের তালিকা
- হিস্পানিয়ায় উমাইয়া বিজয়
- ইবেরিয়ান উপদ্বীপে মুসলিম উপস্থিতির সময়কাল
- আন্দালুস
- মুর
- মূসা বিন নুসাইর
- তারিফ ইবনে মালিক
- জিব্রাল্টারের ইতিহাস
তথ্যসূত্র
উৎস
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads