শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
অসমীয়া ভাষা
ভারতের অসমের পূর্ব ইন্দো-আর্য ভাষা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
অসমীয়া ভাষা (Assamese) প্রায় দেড় কোটি মানুষের মাতৃভাষা। এদের অধিকাংশই ভারতের আসাম রাজ্যে বাস করেন। এছাড়াও ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে অসমীয়া প্রচলিত। পূর্ব ভারতীয় মাগধী প্রাকৃত থেকে অসমীয়া ভাষার উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ১৮২৬ সালে আসাম ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে এবং ১৮৩৬ সালে বাংলা ভাষাকে আসামে সরকারি ভাষা করা হয়। এর প্রায় ৩৬ বছর পরে ১৮৭২ সালে অসমীয়া ভাষা রাজ্যটির সরকারি ভাষা হিসেবে ফিরে আসে। বর্তমানে অসমীয়া ভারতের আসাম রাজ্যের সরকারি ভাষা এবং রাজ্যের সমস্ত কর্মকাণ্ডে এটি ব্যবহৃত হয়।
Remove ads
Remove ads
লিখন পদ্ধতি
অসমীয়া ভাষা বর্তমানে পূর্ব নাগরী লিপিতে লিখা হয়। বাংলা বর্ণমালার একটি সামান্য পরিবর্তিত সংস্করণে "অসমীয়া বর্ণমালা" তৈরি করা হয়েছে। বাংলা বর্ণমালার মতই এতে ১১টি স্বরবর্ণ আছে। তবে ব্যঞ্জনবর্ণ ও অন্যান্য চিহ্ন আছে ৫৪টি। গুপ্ত লিপি থেকে বিবর্তিত হয়ে লিপিটির উৎপত্তি। অসমে প্রাচীনকাল থেকেই লেখালেখির চর্চা আছে। মধ্যযুগে এখানকার রাজাদের আদেশনামা, ভূমি প্রদানপত্র, এবং তাম্রফলকে লেখা দেখতে পাওয়া যায়। পূর্বে সাঁচি গাছের বাকলে অসমের একটি নিজস্ব লিপিতে ধর্মীয় গ্রন্থ ও কাহিনী লিখিত হত। হেমকোষ নামের অভিধানে অসমীয়া শব্দের যে সংস্কৃতভিত্তিক বানান ব্যবহৃত হয়েছিল, সেগুলোই এখন প্রমিত বানানে পরিণত হয়েছে।
Remove ads
ব্যাকরণ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
অসমীয়া ব্যাকরণের সাথে অন্যান্য ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহের ব্যাকরণের প্রচুর মিল রয়েছে। এগুলোর মত অসমীয়া ভাষাও সংশ্লেষণাত্মক ভাষা, অর্থাৎ ধাতুর সাথে অন্ত্যপ্রত্যয় জোড়া লাগিয়ে শব্দ তৈরি করা হয় এবং বিভক্তির মাধ্যমে ব্যাকরণিক সম্পর্ক নির্দেশ করা হয়।
বিশেষ্য ও বিশেষণ
অসমীয়া বিশেষ্যগুলো নিচের ব্যাকরণিক ক্যাটাগরিগুলোর জন্য চিহ্নধারণ করে:
- বচন: একবচন ও বহুবচন
- লিঙ্গ: পুংলিঙ্গ এবং স্ত্রীলিঙ্গ
- কারক: কর্তৃকারক, কর্মকারক, সম্বন্ধ কারক, সম্প্রদান কারক, করণকারক, এবং অধিকরণ কারক। সব কারকের জন্য অণুসর্গ রয়েছে। সকর্মক ক্রিয়ার কর্তার জন্য অসমীয়া কারকচিহ্ন ব্যবহার করে। অন্যান্য ইন্দো-আর্য ভাষার সাথে অসমীয়া ভাষার পার্থক্য হল এটি সকল কালের জন্য সকর্মক ও কিছু অকর্মক কর্তায় কারক চিহ্ন ব্যবহার করে।
- সম্বোধনসূচক ও তুচ্ছতা/ঘনিষ্ঠতাবাচক সর্বনামের ব্যবহার।
- করণিক লিঙ্গবাচক চিহ্ন হয় না।
ক্রিয়া
ক্রিয়াগুলো কর্তৃবাচ্যে কর্তার সাথে এবং কর্মবাচ্যে কর্মের সাথে বচন, পুরুষ ও লিঙ্গে সাযুজ্য রক্ষা করে। ক্রিয়াসমূহের নিম্নলিখিত ব্যাকরণিক বিষয়শ্রেণী বিদ্যমান:
পদক্রম
অসমীয়া ভাষার স্বাভাবিক পদক্রম হল "কর্তা-কর্ম-ক্রিয়া", অনেকটা বাংলা ব্যাকরণ এর মতো। বিশেষণ পদগুলো বিশেষ্যের আগে বসে। গৌণ কর্ম প্রত্যক্ষ কর্মের আগে বসে।
Remove ads
উপভাষা
অসমীয়ার চারটি প্রধান উপভাষা রয়েছে।[২] নিচে অসমীয়ার উপভাষাগুলোর একটি তালিকা দেয়া হলো:
- কেন্দ্রীয় অসমীয়া; বর্তমান নগাঁও জেলা ও তার আশেপাশের এলাকায় প্রচলিত।
- পূর্ব অসমীয়া; এটি শিবসাগর, চরাইদেও, গোলাঘাট, জোরহাট, ধেমাজি, লখিমপুর, ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া, মাজুলি, অবিভক্ত দরং জেলা ও তার আশেপাশের জেলাগুলোতে প্রচলিত।
- কামরূপী অসমীয়া; এটি অবিভক্ত কামরূপ, নলবাড়ি, বরপেটা, দরং, কোকরাঝার, এবং বঙাইগাঁও জেলাগুলোতে প্রচলিত।
- গোয়ালপাড়িয়া অসমীয়া; এটি গোয়ালপাড়া, ধুবুরি, কোকরাঝার, এবং বঙাইগাঁও জেলায় প্রচলিত।
এছাড়াও আসাম এবং নাগাল্যান্ড "নাগামিজ" নামের একটি অসমীয়া-ভিত্তিক একটি ক্রেওল ভাষা প্রচলিত।
অসমীয়া ভাষার মান্য বা প্রমিত রূপ পূর্ব উপভাষাটির উপর ভিত্তি করে নির্মিত। ১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটিশ আমলে শিবসাগরে প্রচলিত উপভাষাটিকে সরকারি ভাষা করা হয়। এই উপভাষাটিই এখানকার খ্রিস্টান মিশনারিরা ব্যবহার করতেন। বর্তমানে আসামের মধ্যভাগে গুয়াহাটি ও তার আশেপাশের এলাকায় প্রচলিত কেন্দ্রীয় উপভাষাটিই মান্য রূপ হিসেবে স্বীকৃত। অসমের স্কুলগুলোতে ও সংবাদপত্রে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়, তাতে অসমীয়ার বিভিন্ন উপভাষার প্রভাব রয়েছে।
অসমীয়া ভাষার ভাষাতত্ত্ব
অসমীয়া ভাষার ভাষাতত্ত্বের উপর প্রকাশনার সংখ্যা বেশি নয়। তবে আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলোর উপর বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রাথমিক প্রচেষ্টাগুলোর অনেকগুলোই অসমীয়া ভাষার উপর সম্পাদিত হয়েছিল। ১৯২০ সালে প্রকাশিত ফরাসি ভাষাবিজ্ঞানী জুল ব্লখ এর "লা ফর্মাসিওঁ দি লা লং মারাথ" ছিল কোন আধুনিক ইন্দো-আর্য ভাষার উপর সম্পাদিত প্রথম পূর্ণাঙ্গ ভাষাবৈজ্ঞানিক গ্রন্থ। এর কিছু পরেই ১৯২৬ সালে ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ করেন বাংলা ভাষার উপর তার মহাগ্রন্থ দি অরিজিন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অভ দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ। এরই ধারাবাহিকতায় ৩য় রচনা হিসেবে ১৯৩৫ সালে সুনীতিকুমারেরই নির্দেশনায় বাণীকান্ত কাকতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Assamese, Its Formation and Development নামের পিএইচডি অভিসন্দর্ভটি প্রকাশ করেন।
১৮৩৬ সালে ব্রিটিশ সরকার আসামের স্কুল ও আদালতে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা করে এবং অসমীয়া ভাষার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। অসমবাসীর আন্দোলনের পর ১৮৭২ সালে অসমীয়াকে পুনরায় অঞ্চলটির সরকারি ভাষা করা হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
প্রথম যে ভাষাবিদ অসমীয়াকে একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে গণ্য করেছিলেন, তিনি ছিলেন সম্ভবত নাথান ব্রাউন। ১৮৪৬ সালে প্রকাশিত Grammatical Notes on the Assamese Language গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি এ ব্যাপারে লেখেন।
Remove ads
অসমীয়া, চাটগাঁইয়া, সিলেটি এবং প্রমিত বাংলার সাথে তুলনা
Remove ads
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads