Loading AI tools
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (যার পূর্বনাম ছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ)[৭] বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশে ইসলামি শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন এই দলের উদ্দেশ্য।[৮][৯] দলটি ইকামতে দ্বীন (ধর্ম প্রতিষ্ঠা) নামক মতাদর্শকে মূলভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে এবং একে "রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা" অর্থে দলীয় ও রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে।[১০][১১] এটি পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী এবং মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড-এর আদর্শ ধারণ করে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন সম্পর্কিত একটি রুলের রায় দেয়। যা সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করে।[১২][১৩][১৪][১৫] ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত স্বৈরাচার বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল।[১৬] তারপর ২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াতের উপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয়।[১৭]
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী | |
---|---|
সংক্ষেপে | জামায়াতে ইসলামী |
আমীর | শফিকুর রহমান |
মহাসচিব | মিয়া গোলাম পরওয়ার |
মুখপাত্র | এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ |
প্রতিষ্ঠাতা | আবুল আ'লা মওদুদী |
প্রতিষ্ঠা | ১৯৭৫[১] |
পূর্ববর্তী | জামায়াতে ইসলামী[২] জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান[৩] |
সদর দপ্তর | ৫০৫ এলিফ্যান্ট রোড, মগবাজার, ঢাকা, বাংলাদেশ |
ছাত্র শাখা | বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (ছাত্র) |
ভাবাদর্শ | রক্ষণশীলতা (বাংলাদেশি) ইসলামবাদ[৪] ইসলামি মৌলবাদ[৫] ইসলামি গণতন্ত্র[৬] |
ধর্ম | ইসলাম |
স্লোগান | "নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার" |
দলীয় পতাকা | |
ওয়েবসাইট | |
jamaat-e-islami.org | |
বাংলাদেশের রাজনীতি রাজনৈতিক দল নির্বাচন |
বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনা ও সংবাদমাধ্যমের পরিমণ্ডলে আলোচ্য সংগঠনটিকে 'জামায়াত' বলেও উল্লেখ করা হয়। জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির (পূর্বেকার নাম: ইসলামী ছাত্র সংঘ)-এর একটিকে বোঝাতে 'জামায়াত-শিবির' শব্দদ্বয় ব্যবহৃত হয়। জামায়াতে ইসলামীর কর্মী, ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী, এই দুই সংগঠনের অঙ্গ ও সমমনা সংগঠনসমূহের কর্মী, এদের সবকয়টির সমর্থকগোষ্ঠী-এদের সবাইকে বোঝাতে 'জামায়াতি' শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ে মওলানা ভাসানী, নুরুল আমীন, আতাউর রহমান খান, গোলাম আজমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধানকে বিশেষভাবে অভিনন্দন জানান। (একাত্তরের দিনপঞ্জি,১৭)
২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সিন্ধুর জামায়াতে ইসলামীর আমির মওলানা জান মোহাম্মদ করাচিতে ক্ষমতা হস্তান্তরে জটিলতা প্রসঙ্গে বলেন, সকল জাতীয় ও রাজনৈতিক বিষয় ড্রয়িংরুমের পরিবর্তে জাতীয় পরিষদেই মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। পিপলস পার্টির জাতীয় পরিষদে যোগদান না করা মানে দেশকে দুই অংশে ভাগ করে ফেলা। পিপিপি'র চেয়ারম্যানের ক্ষমতা লাভের অন্তরায় হলো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ তথা পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান পৃথক হয়ে গেলে ভূট্টো সহজেই পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। তার এ বাস্তবধর্মী ঘোষণায় পাকিস্তানে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।(একাত্তরের দিনপঞ্জি, ২৫)।
জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতা করেছিল। প্রায়শই জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার পিছনে ভারতীয় আধিপত্যের আশঙ্কা এবং ইসলামী আন্দোলনের স্বার্থকে সামনে আনে।[১৮][১৯] দলটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যায় সহযোগিতা করেছিল।[২০][২১] দলটির অনেক নেতাকর্মী সেসময় গঠিত আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছিল[২২], যারা গণহত্যা, বিশেষ করে হিন্দুদের ধর্ষণ এবং জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে স্থানান্তরের মত যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত।[২৩][২৪][২৫][২৬] জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরা আধাসামরিক বাহিনী শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিল।[২২][২৭][২৮]
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান এবং ১৯৭৯ সালের মে মাসে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো শরিয়াহ ভিত্তিক একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যা পাকিস্তান ও সৌদি আরবের দেশসমূহে লক্ষ্য করা যায়। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৯৮০-এর দশকে জামায়াত গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য বহুদলীয় জোটে যোগদান করে। এসময় দলটি আওয়ামী লীগ ও সমসাময়িক বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তীতে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে বিএনপির সাথে মিলিত হয়ে আরো অন্য দুটি দলসহ চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট জয়লাভ করলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে জামায়াতের দুজন সদস্য মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের পর থেকে নেতৃবৃন্দ আটক পরবর্তীতে বিতর্কিত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের রায়ে দণ্ডিত হওয়ায় দলটি কিছুটা দূর্বল হয়ে যায়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি ৩০০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫টি আসন লাভ করে। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে; ২০১২ সালের মধ্যে দুজন বিএনপি নেতা ও জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান সদস্যসহ ৮ জন নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত জামায়াতের সাবেক সদস্যসহ মোট চার জনকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।[২৯][৩০][৩১][৩২] রায়গুলোর প্রতিবাদে জামায়াত দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংস প্রতিবাদ করে যাতে অনেক লোক নিহত হয় ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়।[৩৩]
সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরের ইসলামিয়া পার্কে সামাজিক-রাজনৈতিক ইসলামি আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। জামায়াত ভারতের মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল। জামায়াত ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দল মুসলিম লীগকে সমর্থন করেনি।
স্বাধীনতা ও ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর মওদুদী ভারত থেকে পাকিস্তান চলে যান। বর্তমান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মূলত পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক জাতীয় পার্টির অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল।
পাকিস্তান সৃাষ্টির পর জামায়াতে ইসলামী মূলত ভারত ও পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের শাখা থেকে সৃষ্টি হয়। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন। ঐ বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামী, জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন ঘোষণার সময় পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে এবং ১৯৬৫ সালে সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক জোট গঠিত হয়।
পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফার তারা তীব্র বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে ৪ টি আসন লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডাঃ আব্দুল মালিক কে গভর্নর করে ১৭ই সেপ্টেম্বার একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়।[৩৪] সে সরকারের মন্ত্রী সভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।[৩৫]
১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে। জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আল শামস প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলে। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষে কাজ করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে এই দলের সদস্যরা হত্যা, ধর্ষন, লুটপাট, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা, ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যকান্ডে জড়িত থাকা সহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে এবং এসব অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকর্মীকে মৃত্যুদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে।[৩৬][৩৭]
২৫ মার্চ রাতে সংঘটিত অপারেশন সার্চলাইট এর ছয় দিন পর গোলাম আযম ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে একটি ভাষণ দেন। এ ভাষণে তিনি ভারতের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, " ভারত সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে কার্যত পূর্ব পাকিস্তানিদের দেশপ্রেমকে চ্যালেঞ্জ করেছে।...আমি বিশ্বাস করি যে, এই অনুপ্রবেশকারীরা পূর্ব পাকিস্তানি মুসলমানদের নিকট হতে কোন প্রকার সাহায্য পাবে না।[৩৮]
৩০ জুন লাহোরে সাংবাদিকদের কাছে গোলাম আযম বলেন, "তাঁর দল পূর্ব পাকিস্তানে দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) তৎপরতা দমন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এবং এ কারণেই দুস্কৃতকারীদের হাতে বহু জামায়াত কর্মী নিহত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্যে গোলাম আযম পাকিস্তানের সামরিক শাসকের সাথে দেখা করে ঢাকায় শান্তি কমিটি গঠন করেন। এর সদস্য ছিলেন পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা। গোলাম আযম এই কমিটির নেতা ছিলেন।[৩৯]
১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংগ্রাম এ গোলাম আযমের পশ্চিম পাকিস্তান সফরকালের একটি সাক্ষাৎকারের পূর্ণ বিবরণ দুই কিস্তিতে ছাপা হয়। এই সাক্ষাতকারে তিনি মুক্তিবাহিনীর সাথে তার দলের সদ্স্যদের সংঘর্ষের বিভিন্ন বিবরণ ও পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থতির ওপর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন "বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জামায়াতকে মনে করতো পহেলা নম্বরের দুশমন। তারা তালিকা তৈরি করেছে এবং জামায়াতের লোকদের বেছে বেছে হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর লুট করছে জ্বালিয়ে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। এতদসত্বেও জামায়াত কর্মীরা রেজাকারে ভর্তি হয়ে দেশের প্রতিরক্ষায় বাধ্য। কেননা তারা জানে 'বাংলা দেশে' ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য কোন স্থান হতে পারে না। জামায়াত কর্মীরা শহিদ হতে পারে কিন্তু পরিবর্তিত হতে পারে না।"[৪০]
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য রাজাকার বাহিনী গঠনের পেছনে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন নেতা এ কে এম ইউসুফ, যিনি পরবর্তীতে দলটির নায়েবে আমির হন। তিনি রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং খুলনায় শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন। খুলনার খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকিস্তানপন্থী ব্যক্তিকে নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়।[৪১]
পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা দানকারী নিন্দিত আধা-সামরিক বাহিনী আল-বদরের সাথে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা-কর্মীরা সম্পৃক্ত ছিল। বাহিনীটির প্রধান ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী, যিনি স্বাধীন বাংলাদেশে পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর আমির হন।[৪১]
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কর্তৃক ইতোমধ্যেই এই সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে ফাঁসি ও অন্যান্য দন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরনের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন। এ সময় ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। এসময় এর ভারপ্রাপ্ত আমীরের পদ লাভ করেন আব্বাস আলী খান। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮ টি আসন লাভ করে।পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে গঠিত চার দলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে সরকার গঠনে ভূমিকা পালন করে। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এটি ৩০০ আসনের মধ্যে ২ টি আসন লাভ করে।
জামায়াতে ইসলামী এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্যে সমাবেশ করে। এরপর তারা শুধু জটিকা মিছিলে সীমাবদ্ধ ছিল। ১০ জুন ২০২৩ শনিবার দীর্ঘ এক দশক অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঢাকায় দলটি প্রকাশ্যে সমাবেশ করে।[৪২][৪৩]
নং | আমীর | সেক্রেটারি জেনারেল | |||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
অখন্ড ভারত (অবিভক্ত) জামায়েত ইসলামী | |||||||
০১ | সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদুদী | মিয়াঁ তুফাইল মোহাম্মদ | |||||
পূর্ব পাকিস্তান জামায়েত ইসলামী | |||||||
০১ | চৌধুরি আলী আহমদ | মাওলানা আবদুর রহিম[৪৪] | |||||
০২ | মাওলানা আবদুর রহিম | অধ্যাপক গোলাম আযম | |||||
০৩ | অধ্যাপক গোলাম আজম | ||||||
বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী | |||||||
০১ | আব্বাস আলী খান (ভারপ্রাপ্ত) | ||||||
০২ | অধ্যাপক গোলাম আজম | একেএম ইউসুফ | |||||
০৩ | মতিউর রহমান নিজামী | আলী আহসান মুজাহিদ | |||||
০৪ | মকবুল আহমদ (ভারপ্রাপ্ত) | এ. টি. এম. আজহারুল ইসলাম (ভারপ্রাপ্ত)
ডা. শফিকুর রহমান (ভারপ্রাপ্ত) | |||||
মকবুল আহমদ | ডা. শফিকুর রহমান | ||||||
০৫ | ডা. শফিকুর রহমান | অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার |
এই সংগঠনের সকল কার্যাবলীর প্রেরণা হল আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে, তাকে একমাত্র উপাস্য, কল্যাণকারী, আশ্রয়দাতা, সাহায্যকারী, রক্ষাকর্তা মেনে নেয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরআনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রে ইসলামের অনুশাসন প্রতিষ্ঠা করা তথা শরিয়াহ আইন প্রবর্তন করা।[৪৫][অকার্যকর সংযোগ]
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তাদের গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে দলটি গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল প্রদর্শিত ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে।[৪৬]
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর গঠনতন্ত্র অনুসারে, কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর আইন অনুসারে সমগ্র রাষ্ট্রে পরিপূর্ণ ইসলামি শাসনতন্ত্র কায়েম করা। ইসলামকে বিভক্তির হাত থেকে রক্ষা করে সমগ্র রাষ্ট্রে সম্পূর্ণরূপে কায়েম করিবার জন্য চেষ্টা ও সাধনা করা এবং আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্য পালনীয় কর্তব্যসমূহ যেমন নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত ইত্যাদি পালনে নাগরিকদের সচেতন করা। এসবের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বপ্রকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক হুমকি এবং বিশৃংখলা হইতে রক্ষা করিবার চেষ্টা করা। দায়িত্বশীল নাগরিক এবং চরিত্রবান ও যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে শোষনহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করে জনসাধারণের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা এবং বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সংগে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।[৪৫]
তবে ২০১২ সালের অক্টোবরে গঠনতন্ত্রে আনীত সংশোধন অনুযায়ী এই দলটি ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে।[৪৬]
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সংগঠন নিম্নলিখিত পদের সমন্বয়ে গঠিত
১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জামায়াতের কতিপয় নেতা ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ৬ জন প্রার্থী জয়ী হন। ১৯৭৯ সালে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে এ দলটি পুনরায় রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয় এবং আব্বাস আলী খানকে দলের ভারপ্রাপ্ত আমীর নির্বাচন করা হয়।
১৯৭৯ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসনে জয়লাভ করে। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কৌশল হিসেবে জামায়াতের ১০ জন সংসদ সদস্য ১৯৮৭ সালের ৩ ডিসেম্বর সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থীরা ৩৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৮টি আসনে বিজয়ী হয় এবং সরকার গঠনের জন্য সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সমর্থন দেয়। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৩০টি আসনের মধ্যে জামায়াত ২টি আসন লাভ করে।[৪৭]
১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাথে যুগপৎভাবে আন্দোলন করে স্বার্থক হয়। এবং নির্বাচন করে তিনটি সংসদীয় আসন লাভ করে। এই নির্বাচনে তারা ছিলেন চতুর্থ অবস্থানে।[৪৮]
২০০১ সালের অষ্টম জতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটে অংশগ্রহণ করে ১৭ টি সংসদীয় আসন লাভ করে। এবং মন্ত্রী পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দু'জন সদস্য মন্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে।[৪৯]
২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০০৮ এ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করে দুইটি আসন লাভ করে। এ নির্বাচনে ভোট অনুযায়ী তারা চতুর্থ এবং আসন অনুযায়ী পঞ্চম অবস্থানে ছিলো।
কয়েকটি ইসলামি সংগঠনের ২৫ জন সদস্য জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের হাই কোর্ট একটি রুল জারি করে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলে আদালতের বেঞ্চ। পরবর্তিতে ১লা আগস্ট ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রুলের রায় ঘোষণা করে এতে সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং সংগঠনটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।[৫০]
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল পুনর্বহাল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে জামায়াত।[৫১]
২০২৪ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন মতে, সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়।[৫২][৫৩]
২০২৪ সালে জুলাইয়ে বাংলাদেশে সংগঠিত বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জড়িত মর্মে অভিযোগ করে আসছিল সরকার। এমন পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ জুলাই ২০২৪ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন নেতারা। বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে ১ আগস্ট এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।[৫৪]
তবে ১৪ দলীয় জোটের সভায় জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে বেআইনি বলে দাবি করে আসছে দলটি।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন,
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। একটি রাজনৈতিক দল বা জোট অন্য একটি রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন ও সংবিধান কাউকে এ এখতিয়ার দেয়নি। কোনো দল বা জোট অন্য কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার ধারা চালু হলে এক দল অন্য দলকে নিষিদ্ধ করতে থাকবে। তখন রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না।
সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে। নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর এক বিবৃতিতে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন,
সরকার ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য দেশে দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে গণহত্যা চালায়। সরকারের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে দেশের শিক্ষকসমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিশ্বসম্প্রদায় এই গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছে। সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে।
২৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জামায়াতের উপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয়।[৫৭]
২০২৪ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে তালিকভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপন মতে, সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়।
পরবর্তী ২৬ দিনের মাথায় এই আদেশটি প্রত্যাহার করে নেয় অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে।[৫৮]
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের (২০২৩-২০২৫) কার্যকালের সদস্যগণ।[৫৯]
আমীর
নায়েবে আমীর
সেক্রেটারি জেনারেল
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল
সেক্রেটারি-কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ
নির্বাহী পরিষদ সদস্য
ঢাকা মহানগরীর আমীর
(ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ)
(ঢাকা মহানগরী উত্তর)
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-এর ভূমিকা মূল্যায়ন করে, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত অধ্যাপক খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন:
জামাআতে ইসলামী উপমহাদেশের প্রাচীনতম ইসলামি রাজনৈতিক দল। দলটি বেশ কিছু ইতিবাচক কাজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: (১) তারা প্রমাণ করেছে যে ইসলাম একটি সম্পূর্ণ জীবন বিধান, এটি একটি বাস্তব ব্যবস্থা, এবং এটি সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা; ২) তারা নিজেদেরকে যুবক-যুবতীদের এবং শিক্ষিত লোকদেরকে ইসলাম সম্পর্কে এই সত্যগুলি বোঝার জন্য সক্ষম করেছে, (৩) তারা মূলত ইসলামি অর্থনীতি, শিক্ষা ইত্যাদির জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে; (৪) তারা সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার, যেমন ব্যক্তি, পীর, কবর পূজার বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে সফল হয়েছে।
পাশাপাশি জাহাঙ্গীর এর নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে বলেন,
জামায়াত-ই-ইসলামীর রাজনীতিতে বেশ কিছু ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যায় (১) তারা রাজনীতিকে জিহাদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এটি মাওলানা মওদুদী প্রথম করেন। (২) তারা ইকামতে দ্বীনের (ধর্ম প্রতিষ্ঠা) ধারণার অর্থকে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় হ্রাস করে মারাত্মক ভুল করেছে; (৩) দলটি তার আদর্শের সাথে আপস করেছে এবং ক্ষমতার রাজনীতিতে আরও মনোনিবেশ করেছে এবং ক্ষমতার জন্য ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং জনগণের সাথে জোট করেছে এবং (৪) মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত এমন এক দলের সমর্থন করেছিল এবং তার পক্ষে অস্ত্র নিয়েছিল যাকে আগে এরা "অমুসলিম "তাগুতি" (অত্যাচারী) সরকার" বলে অভিহিত করেছিল।" এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ভুল।
জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ১৯৭১-এ শুধু জামআতে ইসলামী নয়, পাশাপাশি পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য অধিকাংশ ইসলামি
দল ও গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল, কারণ অধিকাংশ ইসলিমী দল ও গোষ্ঠী পাকিস্তানের বিভাজনকে ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেছিল।[৬০]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.