Loading AI tools
মাছের প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইলিশ (বৈজ্ঞানিক নাম: Tenualosa ilisha) বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এটি একটি সামুদ্রিক মাছ, যা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আগমন করে। বাঙালিদের কাছে ইলিশ খুব জনপ্রিয়। এ ছাড়াও ইলিশ ভারতের বিভিন্ন এলাকা যেমন পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও আসামে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।[1]
ইলিশ মাছ Padma ilisha | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | Chordata |
শ্রেণী: | Actinopterygii |
বর্গ: | Clupeiformes |
পরিবার: | Clupeidae |
উপপরিবার: | Alosinae |
গণ: | Tenualosa |
প্রজাতি: | T. ilisha |
দ্বিপদী নাম | |
Tanualosa ilisha (F. Hamilton, 1822) | |
বাংলা ভাষা, ভারতের আসাম এর ভাষায় ‘ইলিশ’ শব্দটি পাওয়া যায় এবং তেলুগু ভাষায় ইলিশকে পোলাসা (তেলুগু: పులస Pulasa বা Polasa) আখ্যায়িত করা হয়। পাকিস্তানের সিন্ধি ভাষায় বলা হয় পাল্লু মাছি (সিন্ধি: پلو مڇي Pallu Machhi), ওড়িয়া ভাষায় ইলিশী (ওড়িয়া: ଇଲିଶି Ilishii) গুজরাটে ইলিশ মাছ মোদেন (স্ত্রী) বা পালভা (পুরুষ) নামে পরিচিত। ইলিশ অর্থনৈতিক ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মাছ। বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপাঞ্চল, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদীর মোহনার হাওর থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা হয়। এটি সামুদ্রিক মাছ কিন্তু এই মাছ বড় নদীতে ডিম দেয়। ডিম ফুটে গেলে ও বাচ্চা বড় হলে (যাকে বাংলায় বলে জাটকা) ইলিশ মাছ সাগরে ফিরে যায়। সাগরে ফিরে যাবার পথে জেলেরা এই মাছ ধরে। [2]
ইলিশের বৈজ্ঞানিক নাম Tenualosa ilisha। এটি Clupeidae পরিবার (family) এর অন্তর্গত। এটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় মাছ।
এটি নোনা জলের মাছ। সাধারণত বড় নদী এবং মোহনায় সংযুক্ত খালে বর্ষাকালে পাওয়া যায়। এ সময় ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে সমুদ্র থেকে বড় নদী এবং মোহনায় সংযুক্ত খালে আসে। ইলিশ মাছ চাষ করা যায় না। জেলেরা মাছ ধরার নৌকা নিয়ে নদীতে যায় এবং জাল ফেলে মাছ ধরে। এই মাছ উপকূলবর্তী ঘাটে আনা হয়। সেখান থেকে বরফ দিয়ে দেশের দূরবর্তী স্থানসমূহে প্রেরণ করা হয়। ভোলা জেলার তজুমুদ্দিনে মেঘনা ও বঙ্গপোসাগরের মোহনায় সর্বাধিক পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। ভোলা জেলা ইলিশের জন্য বিখ্যাত। দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইলিশ পাওয়া যায় বরগুনা জেলায়। বাংলাদেশ ইলিশ মাছ রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে।[3]
যদিও ইলিশ লবণাক্ত জলের মাছ বা সামুদ্রিক মাছ, বেশিরভাগ সময় সে সাগরে থাকে কিন্তু বংশবিস্তারের জন্য প্রায় ১২০০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করে ভারতীয় উপমহাদেশে নদীতে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশে নদীর সাধারণ দূরত্ব ৫০ কিমি থেকে ১০০ কিমি। ইলিশ প্রধানত বাংলাদেশের পদ্মা (গঙ্গার কিছু অংশ), মেঘনা (ব্রহ্মপুত্রের কিছু অংশ) এবং গোদাবরী নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এর মাঝে পদ্মার ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে ভালো বলে ধরা হয়। ভারতের রূপনারায়ণ নদী, গঙ্গা, গোদাবরী নদীর ইলিশ তাদের সুস্বাদু ডিমের জন্য বিখ্যাত। ইলিশ মাছ সাগর থেকেও ধরা হয় কিন্তু সাগরের ইলিশ নদীর মাছের মত সুস্বাদু হয় না। দক্ষিণ পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশেও এই মাছ পাওয়া যায়। সেখানে মাছটি "পাল্লা" নামে পরিচিত। এই মাছ খুব অল্প পরিমাণে থাট্টা জেলায় ও পাওয়া যায়। বর্তমানে সিন্ধু নদীর জলস্তর নেমে যাওয়ার কারণে পাল্লা বা ইলিশ আর দেখা যায় না।ইলিশ উৎপাদনে ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। ওয়ার্ল্ড ফিশের পরিসংখ্যান মতে, ৮৬ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়।[4]
ইলিশ একটি চর্বিযুক্ত মাছ আর ইলিশে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড (ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড) রয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া গেছে, এই অ্যাসিড ইদুরের কোলেস্টোরেল ও ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে।
সর্ষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, কড়া ভাজা, দোপেয়াজা এবং ঝোল খুবই জনপ্রিয়। কচুর পাতা এবং ইলিশ মাছের কাটা, মাথা ইত্যাদির ঘন্ট একটি বিশেষ রান্না। ডিম ভর্তি ইলিশ মাছ এবং সুগন্ধি চাল দিয়ে বিশেষ একরকম রান্না করা হয় যা ভাতুরী বা ইলিশ মাছের পোলাও নামে পরিচিত। এটি বর্ষাকালের একটি বিশেষ রান্না। ইলিশ মাছ টুকরো করে লবণে জারিত করে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। এভাবে সংরক্ষিত ইলিশকে নোনা ইলিশ বলে। এটা দিয়েও বিভিন্ন সুস্বাদু পদ রান্না করা হয়।[5] বাংলাদেশে এই ইলিশ ভাপে, ভেজে, সিদ্ধ করে, কচি কলা পাতায় মুড়ে পুড়িয়ে, সরিষা দিয়ে, জিরা, বেগুন, আনারস দিয়ে এবং শুঁকিয়ে শুটকি করে, আরো বিভিন্ন প্রণালীতে রান্না করা হয়। বলা হয়, ইলিশ মাছের প্রায় ৫০ রকম রন্ধনপ্রণালী রয়েছে। ইলিশের ডিম ও খুব জনপ্রিয় খাবার। এই মাছ রান্না করতে খুব অল্প তেল প্রয়োজন হয় কারণ ইলিশ মাছে প্রচুর তেল থাকে। উত্তর আমেরিকার ইলিশ সব সময় পাওয়া যায়না বলে, বাঙালি অধিবাসীরা সাদ (shad) মাছ ইলিশের বিকল্প হিসেবে নিয়েছে। সাদ মাছকে ইলিশের বিকল্প হিসেবে ধরা হয় কারণ এই মাছের রঙ ও স্বাদ প্রায় ইলিশের মত।[6]
ফিশবেইসে (ফ্রোইসি ও পোলি ২০১৭) ২৫টি ভাষায় এই ইলিশের নাম দেওয়া হয়েছে (ইংরেজি শব্দ থেকে উচ্চারণ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় উচ্চারণের সঙ্গে তা হুবহু নাও মিলতে পারে)।
ফিশবেইসে বলা হয়েছে, বৈশ্বিকভাবে ইলিশকে বলা হয় হিলসা শ্যাড এবং আলোস হিলসা। বাংলাদেশে বলা হয়, ইলিশ মাছ, ইলিশ, পদ্মা ইলিশ, জাটকা—দেশের কোনো কোনো এলাকায় ইলিশকে ইলশাও বলে।
মিয়ানমারে বার্মিজ ভাষায় বলা হয় না-থা-লোক, না-থালাংক। ভারতে বাংলা ভাষাভাষীরা বলেন ইলিশ এবং ছোট ইলিশকে বলেন খোকা ইলিশ। অসমীয়া ভাষায় বলা হয় ‘ইলিহি’। তেলুগু ভাষায় বলা হয় পালাসা, পালাসাহ, পালিয়া, পোলাসা। গুজরাটি ভাষায় বলা হয় চাকশি, চাকসি, চাসকি, পাল্লা। হিন্দিতে বলা হয় হিলসা, পালা। কানাড়া ভাষায় বলা হয় মুল্লাসু, পালাসা, পালিয়া, পোলাসা। মালয়ালম ভাষায় বলা হয় পালিয়াহ, পালুভা, ভালাভা। মারাঠি ভাষায় বলা হয় পালা, পাল্লা, পালভা। উড়ে ভাষায় বলা হয় ইলিশ, ইলিশা, জোড়ি। তামিল ভাষায় বলা হয় উল্লাম, ভেনগান্নাই, সেভা। শ্রীলঙ্কায় তামিল ভাষায় ইলিশকে বলা হয় সেভ্ভা, উল্লাম। পাকিস্তানের পাঞ্জাবি ভাষায় ইলিশকে পাল্লা এবং উর্দুতে পালো ও পুল্লা বলা হয়। ভিয়েতনামে ক্যা কে বলা হয় ইলিশকে। যুক্তরাষ্ট্রে বৈশ্বিক নাম হিলসা বলেই ডাকা হয়। যুক্তরাজ্যে বলা হয় হিলসা হেরিং। পোলান্ডে পলিশ ভাষায় বলা হয় হিলজা ইনডিজস্কা। পর্তুগালে পর্তুগিজ ভাষায় ইলিশকে বলা হয় পালা। চেক ভাষায় ইলিশের নাম প্লাককা ইলিশা, স্লেড পালাসাহ। ডেনমার্কে ইলিশের নাম হিলসা-স্টামস্লিড। স্প্যানিশ ভাষায় ইলিশের নাম সাবালো হিলসা। সুইডিশ ভাষায় বলা হয় হিনডিস্ক স্টাকসিল। এস্তোনিয়ান ভাষায় ইলিশকে বলা হয় ইন্ডিয়া সালিলুসা। রাশিয়ায় রুশ ভাষায় এই ইলিশকেই ডাকা হয় তেনুয়ালোসা নামে। ইরাকে আরবি ভাষায় ইলিশের নাম শোর। ইরানে ফারসি ভাষায় ইলিশকে কয়েকটি নামে ডাকা হয়। যেমন: বার্ক, মাহি খোর কুচিকু, সবোর, সবুর, জাবুর, জমুর। ওমানে ইলিশকে ডাকা হয় চাকোরি নামে। ম্যান্ডারিয়ান চায়নিজ ভাষায় চীনে ইলিশের নাম ইচাচা।
আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটি বাংলাদেশে হুমকির সম্মুখীন নয়।[7] তবে ইলিশের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ২০০২ সালে ইলিশ রক্ষার জন্য মা মাছ ও জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা ও প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।[8] এর ফলস্বরূপ অন্যান্য ১০টি দেশে অতিরিক্ত মাছ ধরা, দূষণে মাছ ধরার হার কমলেও; বাংলাদেশে ২০২১ পর্যন্ত তা প্রতিবছর ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলিশ মাছ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম।[9]
২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা সামান্য বেড়ে ৫ লাখ ৭১ হাজার টন হয়।[10]বাংলাদেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান ১ শতাংশ। প্রতিবছর ইলিশ মাছ রপ্তানি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। বিশ্বে আহরিত ইলিশের প্রায় ৮৬ শতাংশ আহরণ করা হয় বাংলাদেশে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। এটি দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ। এর চলতি বাজারমূল্য প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। গত ১০ বছরের ব্যবধানে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ৬৬ শতাংশ।[11] প্রায় ২৫ লাখ জনবল ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও খুচরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। উপকূলীয় দ্বীপ ও চরাঞ্চলে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যবিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে ইলিশ।[12] ২০২৩ সালে ভারতে ১৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ গিয়েছিল বাংলাদেশ থেকে।[13] ভারতে এলাকা ভেদে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৬১ দিন ও মিয়ানমারে ১৬ মে থেকে ৩১ আগস্ট ৯১ দিন সাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে। বাংলাদেশে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।[14]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.