কান্তনগর মন্দির
বাংলাদেশের একটি মধ্যযুগীয় মন্দির উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশের একটি মধ্যযুগীয় মন্দির উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কান্তজিউ মন্দির বা কান্তজীর মন্দির বা কান্তনগর মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত একটি মধ্যযুগীয় হিন্দু মন্দির। মহারাজা প্রাণনাথ রায় মন্দিরটি শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর স্ত্রী রুক্মিণীকে উৎসর্গ করে নির্মিত করেন। এটির নির্মাণ ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় এবং ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পুত্র রাজা রামনাথ রায়ের রাজত্বকালে শেষ হয়। মন্দিরটির নবরত্ন বা ‘নয় শিখর’ ছিল, কিন্তু ১৮৯৭ সালে সংঘটিত একটি ভূমিকম্পে সবগুলোই ধ্বংস হয়ে যায় । এ মন্দিরে বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন রয়েছে । পৌরাণিক কাহিনীসমূহ পোড়ামাটির অলঙ্করণে দেয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
কান্তজী মন্দির | |
---|---|
কান্তনগর মন্দির | |
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | দিনাজপুর |
ঈশ্বর | কান্ত (কৃষ্ণ) |
উৎসব | রাসমেলা |
অবস্থান | |
অবস্থান | সুন্দরপুর ইউনিয়ন, কাহারোল |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্থানাঙ্ক | ২৫°৪৭′২৬″ উত্তর ৮৮°৪০′০০″ পূর্ব |
স্থাপত্য | |
ধরন | নবরত্ন বাংলার মন্দির স্থাপত্য |
সৃষ্টিকারী |
|
সম্পূর্ণ হয় | ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দ |
সুদূর পারস্য থেকে নির্মান শিল্পীদের আনা হয়েছিল এই মন্দিরের নির্মাণ এবং সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য। মন্দিরের দক্ষিণ দিকে নয়াবাদ নামক গ্রামে রাজা প্রাণনাথ নির্মাণ শিল্পী এবং শ্রমিকদের বসবাসের জন্য জমি দান করেন। এই শ্রমিকদের বেশিরভাগই ছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাই ধর্মীয় প্রার্থনা পালনের জন্য তারা নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণ করেন যা একই এলাকার আরেকটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে।
প্রতি বছর শীতের শুরুতে মন্দির প্রাঙ্গণে এক মাস ব্যাপী রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায় মহারাজা রামনাথ রায়ের সময়কাল থেকেই এই রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলা চলাকালীন সময় অনেক তীর্থ যাত্রী ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মন্দিরে তীর্থ যাত্রা করেন।
মন্দিরটি দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে, দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরবর্তী গ্রাম কান্তনগরে অবস্থিত।
মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিলো ৭০ ফুট। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। বিশ শতকের শুরুর দিকে মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করলেও মন্দিরের চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি।
২০১৫ সালের ৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে ৩০০ বছর ধরে চলা রাসমেলায় মন্দির প্রাঙ্গণে যাত্রা চলাকালীন সময় তিনটি ককটেল বোমা ছোড়া হয়।[1] এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। তিনজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। আহতদের মধ্যে ছয়জনকে দ্রুত এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ এ ভর্তি করা হয়। হামলার পূর্বে মন্দিরের পুরোহিতকে কোন ধর্মীয় সমাবেশ না করার জন্য হুমকি দেয়া হয়।[2] আমেরিকার প্রথম হিন্দু কংগ্রেস সদস্য তুলসী গ্যাবার্ড এই ঘটনার নিন্দা করেন। তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটকে মন্দিরে গিয়ে মন্দিরের অবস্থা দেখতে অনুরোধ করেন।[3]এই হামলার সাথে জড়িত দুই জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। দিনাজপুরে এই হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে এলাকার লোকেরা।[4] ঢাকায় বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ এই হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।[5]
২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল ২০ হাজারের বেশি মানুষের কণ্ঠে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ অনুষ্ঠিত হয়।[6][7][8][9]
মন্দিরের বাইরের দেয়াল জুড়ে পোড়ামাটির ফলকে রামায়ণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী চিত্রায়ণ করা আছে। পুরো মন্দিরে প্রায় ১৫,০০০-এর মতো টেরাকোটা টালি রয়েছে।[10] উপরের দিকে তিন ধাপে উঠে গেছে মন্দিরটি। মন্দিরের চারদিকের সবগুলো খিলান দিয়েই ভেতরের দেবমূর্তি দেখা যায়। মন্দির প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও, পাথরের ভিত্তির উপরে দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সব প্রবেশপথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দুটো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খিলানগুলো আলাদা করা হয়েছে, স্তম্ভ দুটো খুবই সুন্দর এবং সমৃদ্ধ অলংকরণযুক্ত। মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় ২১টি এবং দ্বিতীয় তলায় ২৭টি দরজা-খিলান রয়েছে, তবে তৃতীয় তলায় রয়েছে মাত্র ৩টি করে।
২০১৭ সালের কলকাতা বইমেলায় বাংলার নিজস্ব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হিসাবে বাংলাদেশ সরকার তাদের প্যাভিলিয়নটি কান্তজিউ মন্দিরের আদলে গড়েন।[11]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.