Loading AI tools
পাখির প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দেশি কানিবক (বৈজ্ঞানিক নাম: Ardeola grayii) (ইংরেজি: Indian Pond Heron) আর্ডেইডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Ardeola (আর্ডেওলা) গণের এক প্রজাতির সুলভ জলচর পাখি।[2] বাংলায় এদের অনেকগুলো নাম: কানাবক, কোঁচবক, ধানপাখি, কানাবগি বা শুধুই কানিবক।[3][4] দেশি কানিবকের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গ্রের ছোটবক (লাতিন ardeola- ছোট বক, grayii- জন অ্যাডওয়ার্ড গ্রে, ইংরেজ পক্ষীবিদ ও লেখক, ১৮০০-১৮৭৫)।[2] প্রায় ৩৪ লক্ষ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের বিস্তৃতি।[5] বিগত কয়েক বছরে এদের সংখ্যা কি হারে বেড়েছে বা কমেছে সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় নি, তবে বর্তমানে এরা সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[1] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[2] ভারতীয় উপমহাদেশে এরা একটি অতি পরিচিত পাখি।
দেশি কানিবক | |
---|---|
অপ্রজননকালীন অবস্থা, (নেপাল) | |
প্রজননকালীন অবস্থা, (কলকাতা, ভারত) | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Pelecaniformes |
পরিবার: | আর্ডেইডি |
গণ: | Ardeola |
প্রজাতি: | A. grayii |
দ্বিপদী নাম | |
Ardeola grayii (Sykes, 1832) | |
এশিয়ায় কানিবকের বিস্তৃতি | |
প্রতিশব্দ | |
Ardeola leucoptera |
মূলত ভারতীয় উপমহাদেশই দেশি কানিবকের প্রধান আবাস। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান ও মায়ানমারে এদের সচরাচর দেখা যায়। এছাড়া ইরান, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এদের দেখা মেলে। থাইল্যান্ড, সিশেলেস ও ইয়েমেনে এরা অনিয়মিত। ভিয়েতনামে এদের খুব কম দেখা যায়।[1] কুয়েত থেকে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।[6]
দেশি কানিবক সাদা ডানা ও বাদামি পিঠের মাঝারি আকারের জলচর পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ৪৬ সেন্টিমিটার, ডানা ২১.৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৬.৩ সেন্টিমিটার, পা ৬.২ সেন্টিমিটার ও লেজ ৭.৮ সেন্টিমিটার। ওজন গড়ে ২১৫ গ্রাম।[2] অন্যসব বকের মতই পুরুষও স্ত্রী পাখি দেখতে অভিন্ন। অপ্রজননকালীন সময়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা কালচে বাদামি রঙের হয়। ঘাড়ে ও কাঁধে হলদে-পীতাভ লম্বালম্বি দাগ থাকে। দেহের পেছন দিক, কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা ঢাকনি তুলনামূলক হালকা বাদামি।থুতনি ও গলা সাদা। সাদা বুকে লম্বালম্বি বাদামি দাগ থাকে। দেহতলের বাকি অংশ সাদা। নিচের ঠোঁট হলুদ; উপরের ঠোঁট কালচে ও ঠোঁটের আগা কালচে রঙের। ঠোঁট বেশ ধারালো। পা ও পায়ের পাতা অনুজ্জ্বল হলদে-সবুজ। চোখ সবসময়ই কালো, বৃত্ত হলুদ। প্রজননঋতুতে এর মাথা হলদে-পীতাভ রঙ ধারণ করে। পিঠ ও ঘাড় মেরুন-বাদামি এবং অসংখ্য ঝালরের মত পালক দিয়ে দেহ সজ্জিত থাকে। মাথায় দু'টি বা তিনটি ফিতার মত সাদা ঝুঁটি থাকে। সতর্ক বা উত্তেজিত হলে এই ঝুঁটি কিছুটা জেগে ওঠে। ঠোঁট সবজে-হলুদ ও ঠোঁটের গোড়া থাকে নীল। ঠোঁটের আগা কালচে রঙেরই থাকে। পা ও পায়ের পাতা সবুজ রঙ ধারণ করে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির বুকে ফিকে বাদামি রঙের তিলা দেখা যায়। কাঁধ-ঢাকনিতে কিছুটা পীতাভ লম্বালম্বি দাগ থাকে। ডানার পালক উপরি-ঢাকনিতে ধূসর আভা রয়েছে। লেজ বৈচিত্র্যপূর্ণ বাদামি রঙে রাঙানো।[2]
দেশি কানিবক হাওর, বিল, জলা, খাল, নদী, ধানক্ষেত ও প্যারাবনে বিচরণ করে। ময়লার স্তুপেও এদের দেখা যায়, তবে কম। শহরাঞ্চলে এদের কম দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে বেশি থাকে। নিম্নভূমি এদের প্রিয় এলাকা হলেও সমুদ্রসমতল থেকে ২,১৫০ মিটার উচ্চতায় এদের দেখা গেছে।[7] সচরাচর একা কিংবা ছোট বিচ্ছিন্ন দলে থাকে। অগভীর পানিতে মূর্তির মত ঠায় দাঁড়িয়ে শিকার করে। হঠাৎ করে ঠোঁট পানিতে ছুঁড়ে মেরে শিকার করে। কখনও কখনও পানির উপর হেঁটে হেঁটেও শিকার করে।[2] মাটিতে বা গাছে থাকলে পরিবেশের সাথে খুব মিশে যায়, হঠাৎ করে শনাক্ত করা যায় না। ওড়ার সময় ঘাড় কিছুটা গোটানো থাকে। লেজের তলা দিয়ে পা দু'টি টান টান হয়ে বেরিয়ে থাকে। উড়লে ডানার সাদা রঙ স্পষ্টভাবে নজরে পড়ে। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে চরলেও সন্ধ্যায় অনেকগুলো বক একই গাছে আশ্রয় নেয়। মানুষের হাতে বা অন্য কোন প্রাণীর কাছে ধরা পড়লে কিংবা বিপদে পড়লে চোখের মণিতে এরা ঠোকর মারে।[4]
এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, জলজ পোকামাকড়, চিংড়ি, ব্যাঙ, ব্যাঙাচি, ফড়িং, কচ্ছপের ছোট বাচ্চা, কেঁচো, সাপের ছানা ইত্যাদি। ঘাসের বীজ খায়। প্রয়োজন অনুসারে শাক-সবজি ও ঘাস খায়।[4] মাটিতে বেশি শিকার করলেও উড়ন্ত অবস্থায় শিকার করার নজির রয়েছে। দিনে রাতে সবসময়ই এরা শিকার করতে পারে। শীতে সাধারণত এরা নিরব থাকে। গ্রীষ্মে এদের ডাকাডাকি বেড়ে যায়। উচ্চস্বরে বার বার ডাকে: ওয়া-কু....ওয়া-কু...।[2]
জানুয়ারি থেকে আগস্ট দেশি কানিবকের প্রধান প্রজনন ঋতু। স্ত্রী ও পুরুষ বক দু'জনে মিলেই বাসা বানায়। গাছের সরু ডাল, কঞ্চি, পালক ইত্যাদি দিয়ে কোনরকমে বাসা সাজায়। বাসা দেখতে অনেকটা পাতিকাকের বাসার মত। তবে বাসার উপকরণ ও গভীরতা কম। বাসা বাঁধার জায়গা নির্ধারণ করতে ৩-৪ দিন ব্যয় করে। কখনও কখনও যেসব গাছে তারা রাতে আশ্রয় নেয় বা বসবাস করে, সেসব গাছেই বাসা বাঁধে। মিশ্র কলোনিতে বাসা করে, কলোনিতে গয়ার, পানকৌড়ি ও নিশি বক থাকতে পারে । বাসায় ৩-৫ টি ডিম পাড়ে। ডিমের বর্ণ সমুদ্রের জলের মত নীল, তাতে ফিকে-সবুজ আভা থাকে। ডিমের মাপ ৩.৮ × ২.৯ সেন্টিমিটার।[2] স্ত্রী-পুরুষউভয়েই পালা করে ডিমে তা দেয়। ২৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। সদ্যোজাত ছানারা বাদামি রঙের হয়। পিঠের উপর হলুদাভ বাদামি রঙের চওড়া চওড়া ৩-৪টি টান থাকে। ডানায় কালচে-বাদামি মোটা দাগ থাকে।[4]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.