Loading AI tools
ইথিওপিয়ার আকসুম রাজ্যের শাসনকর্তা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আরমাহ (গিয়েজ: አርማህ) বা আস-হামাহ (আরবি: أصحمة)[2], যিনি আন-নাজাশি নামেও পরিচিত (আরবি: ٱلنَّجَاشِي), ৬১৪-৬৩১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আকসুম রাজ্যের বাদশা ছিলেন। এই রাজ্য পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়া কেন্দ্রিক ছিল। তাঁর শাসনামলের প্রাপ্ত মুদ্রা থেকে তাঁর প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া যায়। [3] ধারণা করা হয় যে, হয় তিনি বা তার পিতা ৬১৩-৬১৬ সালের দিকে মক্কা থেকে আবিসিনিয়ায় হিজরতকারী মুসলিমদের নিজের রাজ্যে নিরাপদে বসবাসের সুযোগ দেন৷ এই কারণে ইসলামের ইতিহাসে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থান রয়েছে।[4]
বাদশা আকসুম বা আবিসিনিয়া | |
---|---|
পূর্বসূরি | গেরসেম |
উত্তরসূরি | কোয়েসটান্টিনোস |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | আসহাম ৫৬০ খ্রিস্টাব্দ আকসুম রাজ্য (বর্তমান ইথিওপিয়া) |
মৃত্যু | ৬৩১ ৭০–৭১) আকসুম রাজ্য | (বয়স
পিতা | আবজার [1] |
ধর্ম | খ্রিষ্ট ধর্ম, পরবর্তীতে ইসলাম |
হাদীস ও আরব ঐতিহাসিকগণ কর্তৃক ইথিওপিয়া বা আবিসিনিয়াকে হাবাশা হিসেবে এবং নাজাশিকে হাবাশার বাদশা আসামাহ ইবনে আবজার নামেও উল্লেখ করা হয়েছে।[1]
৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইসলামী নবী মুহাম্মাদ (সা.) মক্কায় ইসলাম প্রচার শুরু করেন। প্রথম কয়েক বছরে অল্প সংখ্যক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। পাঁচ বছর ধরে মক্কাবাসী মুসলিমদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা একটু দরিদ্র ও দাসশ্রেণির ছিল তাদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা ছিল বড় তীব্র। অত্যাচারের তীব্রতা আরো বেড়ে গেলে এবং মুসলিমদের প্রকাশ্যে চলাফেরা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে মুহাম্মাদ (সা.) তাদেরকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার পরামর্শ দিয়ে বলেন যে, সেখানকার খ্রিষ্টান বাদশা নাজাশি অত্যন্ত সৎ ও দরদী মানুষ এবং মানুষের প্রতি তিনি কখনও জুলুম করেন না। প্রথমে ১১ জন পুরুষ ৪ জন নারী হিজরত করেন। ৬১৩-৬১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে ১০১ জন নারী ও পুরুষ আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন এবং এই মুহাজিরদের নেতৃত্ব দেন জাফর ইবনে আবি তালিব। আবিসিনিয়ায় হিজরতের পর মাত্র ৪০ জন নারী-পুরুষ সে সময়ে মক্কায় রয়ে যান। ইসলামের ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম হিজরত।
কুরাইশ নেতৃবৃন্দ দু’জন ঝানু কূটনীতিককে (আবু জেহেলের বৈপিত্রেয় ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আবী বারী’আহ ও আমর ইবনুল আস) প্রচুর উপঢৌকনসহ বাদশাহ নাজাশির দরবারে প্রেরণ করে। এই দুই কূটনীতিক প্রথমে নাজাশির সভাসদদের প্রচুর উপঢৌকনের মাধ্যমে তাদের পক্ষে নেন; তারপর উপঢৌকনসহ উপস্থিত হয় নাজাশির কাছে এবং সেখানে উপস্থিত হয়ে মুহাম্মদ (সা.) ও তার সঙ্গী-সাথীদের ধর্মত্যাগী ও ফাসাদ সৃষ্টিকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদেরকে ফেরত দানের জন্য আবেদন জানায়। সভাসদরাও তাদের সাথে একমত হয়ে ফেরত দানের জন্য বাদশাহর প্রতি অনুরোধ জানান।
তবে নাজাশি মুসলিমদের ফেরত দিতে অস্বীকার করেন এবং নিরাপদে রাজ্যে বসবাসের সুযোগ করে দেন। মদিনা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আরো পরে ৭ম হিজরি পর্যন্ত মুহাজিরগণ সেখানে ছিলেন। এই কারণে ইসলামের ইতিহাসে তাকে ব্যাপক সম্মান দেওয়া হয়েছে। যদিও তার ইসলাম ধর্মগ্রহণের তথ্যটি নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। [1][5]
নির্ভরযোগ্য মুসলিম সূত্রগুলো উল্লেখ করে যে নাজাশির মৃত্যুর পর ইসলামের নবী মুহাম্মাদ মদীনায় তার গায়েবানা জানাজা (আরবি: صَلَاة الْغَائِب, প্রতিবর্ণীকৃত: Ṣalāt al-Ġāʾib) আদায় করেন। [2] গায়েবে জানাজার নামাজ তখনই পড়া হয় যখন কোন মুসলিম এমন জায়গায় মারা যায় যেখানে তার জানাজার নামাজ পড়ার মতো কোন মুসলিম না থাকে। এটা সেইসব সূত্রের অন্যতম যার উপর ভিত্তি করে মুসলিমরা দাবি করে যে রাজা নাজাশি মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণ করেন।[6][7]
প্রাচীন ইথিওপিয়া বিশেষজ্ঞ স্টুয়ার্ট মুনরো-হে (১৯৪৭–২০০৪) উল্লেখ করেন যে হয় আরমাহ (নাজাশি) অথবা গেরসেম হলেন আকসুমের সর্বশেষ রাজা যিনি নিজ নামে মুদ্রা অঙ্কন করান। নাজাশির শাসনামলের প্রাপ্ত ব্রোঞ্জ মুদ্রাসমূহে তার সিংহাসনে আসীন অবস্থায় পূর্ণাবয়ব দেখা যায় এবং পুরো মুদ্রা জুড়ে খ্রিস্টান ক্রুশ মোটিফ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। [8]
নাজাশির শাসনামলের রৌপ্য মুদ্রাগুলোতে আবার অপ্রচলিত বৈপরীত্য রয়েছে। সেখানে তিনটি ক্রুশের একটি কাঠামো দেখা যায়, যার মাঝেরটি স্বর্ণাবৃত্ত। মুনরো-হে আরেক ঐতিহাসিক ডব্লি. আর.ও. হ্যানকে উদ্বৃত করে বলেন যে এই কাঠামো হলি সেপালচারের দিকে ইঙ্গিত করে এবং তিনটি ক্রুশ ৬১৪ খ্রিস্টাব্দে সাসানীয় সাম্রাজ্যের জেরুজালেম বিজয়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অঙ্কিত হয়। [9]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.