Loading AI tools
বাংলা ভাষার বর্ণমালা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলা লিপি হলো একটি লিখন পদ্ধতি যেটি বাংলা, মণিপুরি, ককবরক, অসমীয়া ভাষায় ব্যবহার করা হয়। বাংলা-অসমীয়া লিপি থেকে এই লিপির উদ্ভব। বাংলা লিপির গঠন তুলনামূলকভাবে কম আয়তাকার ও বেশি সর্পিল। বাংলা লিপিটি সিদ্ধং লিপি থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। অনুরূপ হিসেবে অসমিয়াকে মনে করা হলেও অসমীয়া লিপির উৎপত্তি বাংলা লিপি উৎপত্তির অন্তত আড়াইশ বছর পর। যে ভিন্নতা (বাংলা র; অসমীয়া ৰ ও ৱ এবং স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে ক্ষ) আধুনিক বাংলা ও অসমীয়া ভাষায় দেখা যায়, সেটি ১৮ শতকের আগে ছিল না। পরবর্তীতে নিচে ফোঁটা দেওয়া র বাংলায় ব্যবহৃত হয়। বাংলা-অসমীয়া লিপি বা বাংলা লিপি বিশ্বের ৫ম সর্বাধিক ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতি।
বাংলা লিপি | |
---|---|
লিপির ধরন | |
সময়কাল | খ্রিস্টীয় একাদশ শতক থেকে বর্তমান[1] |
লেখার দিক | বাম-থেকে-ডান |
অঞ্চল | বঙ্গ |
ভাষাসমূহ | বাংলা, মৈতৈ মণিপুরি, মৈথিলী ভাষা, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, ককবরক |
সম্পর্কিত লিপি | |
উদ্ভবের পদ্ধতি | |
ভগিনী পদ্ধতি | তিব্বতি লিপি, ওড়িয়া লিপি, অসমীয়া লিপি |
আইএসও ১৫৯২৪ | |
আইএসও ১৫৯২৪ | Beng, , বাংলা |
ইউনিকোড | |
ইউনিকোড উপনাম | বাঙালি |
ইউনিকোড পরিসীমা | U+0980 থেকে U+09FF পর্যন্ত |
খ্রীঃ পূঃ দ্বিতীয়-প্রথম শতকে ব্রাহ্মী লিপির উত্তর ভারতীয় লিপিরূপ থেকে জন্ম নেয় কুষাণ লিপি, যা থেকে পরে গুপ্ত লিপির উৎপত্তি হয়। গুপ্ত লিপির ক্রমবিবর্তনের ফলে সিদ্ধমাতৃকা লিপির উৎপত্তি হয়, যার কালক্রমিক পরিণতি থেকে বাংলা লিপি বর্তমান রূপ ধারণ করে।
বাংলা লিপির ব্যবহার প্রায়ই মধ্যযুগীয় ভারতের পূর্বাঞ্চলে এবং তারপর পাল সাম্রাজ্যের মধ্যে ব্যবহার ছিল। পরে বিশেষভাবে বাংলার অঞ্চলে ব্যবহার করা অব্যাহত ছিল। পরে বাংলা লিপিটিকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বের অধীনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দ্বারা আধুনিক বাংলা লিপিতে প্রমিত করা হয়েছিল। বর্তমান দিনে বাংলা লিপিটি বাংলাদেশ ও ভারতে সরকারী লিপির পদমর্যাদা স্থানে আছে, এবং বাংলার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যুক্ত আছে।
১৭৭৮ সালে ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেডের (হালেদ) আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রকাশনার মাধ্যমে বাংলা মুদ্রণশিল্পের জন্ম হয়। বইটি ইংরেজি ভাষাতে লেখা হলেও এতে বাংলা বর্ণপরিচয় ও বাংলা লেখার নিদর্শন সবই বাংলা মুদ্রাক্ষরে ছাপা হয়। এই মুদ্রণে প্রথমবারের মত "বিচল হরফ" প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলে প্রতিটি হরফের জন্য আলাদা একটি ব্লক থাকে, যে ব্লকটিকে ইচ্ছামত নড়ানো ও বসানো যায়। জার্মানির ইয়োহানেস গুটেনবের্গ ছিলেন এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক। বাংলা মুদ্রণে হালেদের বইতে চার্লস উইলকিন্স এবং তার সহকারী পঞ্চানন কর্মকার এই প্রযুক্তি প্রথমবারের মত প্রয়োগ করেন। ধাতুর ব্লকে ঢালাই করা একই আকৃতি একই হরফের জন্য একাধিক পাতাতে ব্যবহার করা যায় বলে বাংলা ছাপা হরফে একটা স্থায়ী, বৈষম্যহীন রূপ এসেছিল। তবে এই প্রথম দিককার হরফগুলো খুব সুদৃশ্য ও পরিণত ছিল না। ইংরেজি ভাষার তুলনায় বাংলা হরফের আকার ছিল বেশ বড়। ইউরোপে এর প্রায় তিনশত বছর আগেই বিচল হরফে ছাপার প্রযুক্তি শুরু হয়ে গেলেও বাংলা ভাষাতে এটি ছিল একেবারেই নতুন একটি ঘটনা। চার্লস উইলকিন্স ও তার সহকারী পঞ্চানন কর্মকার সম্ভবত এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কারিগর ছিলেন না।
১৮০০ সালে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে উইলিয়াম কেরি ও উইলিয়াম ওয়ার্ড ছিলেন ছাপাখানা বিশেষজ্ঞ। তারা সেখানে পঞ্চানন কর্মকারের চাকরির ব্যবস্থা করেন। এদের মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলা হরফের চেহারার উন্নতি হতে থাকে। ১৯শ শতকের তৃতীয় দশকেই বাংলা ছাপার চেহারা অনেকখানি পাল্টে যায়। ১৮৩১ সালে ভিনসেন্ট ফিগিন্স সম্ভবত প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য বাংলা হরফ তৈরি করেছিলেন।
এসময়কার বাংলা হরফের বৈশিষ্ট্যগুলো এরকম:
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে জীবিকা অর্জনের জন্য একটি ছাপাখানা খোলেন। বিদ্যাসাগর বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের জন্য অনেকগুলো প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এগুলো হল এরকম:
বিদ্যাসাগর "ণ-ন" এবং "শ-ষ-স"-এর মধ্যে উচ্চারণের সমতা সম্ভবত লক্ষ্য করলেও এর কোন সংস্কার করেন নি।
বিদ্যাসাগর বাংলা হরফের স্বচ্ছতা ও সমতা বিধানের জন্যও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন:
কিন্তু বিদ্যাসাগরের সংস্কারগুলো সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। অনেকগুলো অস্বচ্ছ যুক্তব্যঞ্জনের চিহ্ন অস্বচ্ছই থেকে গিয়েছিল। যেমন - "তু" "ত"-এর নিচে উ-কার দিয়ে লেখা হলেও "ন্তু", "স্তু" যুক্তাক্ষরগুলোতে পুরনো অস্বচ্ছ রূপটিই থেকে গেল।
ইংরেজি বিচল হরফগুলো একটি ডালায় দুই খোপে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী সাজানো থাকত। কিন্তু বাংলায় এ নিয়ে তেমন কোন চিন্তা হয় নি। বিদ্যাসাগরই প্রথম বাংলা হরফের জন্য ডালার একটি নকশা এবং কোন হরফের পর কোন হরফ বসবে তার নিয়ম স্থির করে দেন। তার এই নকশাই ক্রমে সমস্ত বিচল হরফ ব্যবহারকারী বাংলা ছাপাখানাতে গৃহীত হয়। বাংলা মুদ্রণশিল্পে প্রতিষ্ঠিত হয় সমতা। বিদ্যাসাগর বাংলা মুদ্রণশিল্পকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। মূলত তার বেঁধে দেয়া নিয়মনীতি অনুসারেই পরবর্তী একশো বছর, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বাংলা হরফ মুদ্রিত হয়।
সময়ের সাথে বিদ্যাসাগরীয় হরফের সামান্য কিছু পরিমার্জনের চেষ্টাও করা হয়েছে। বিদ্যাসাগর নিজে বর্ণপরিচয়-এর ৬০তম সংস্করণ থেকে শব্দের শেষে অন্তর্নিহিত ও উচ্চারণযুক্ত ব্যঞ্জন, যেমন- "বিগত", "কত" শব্দের শেষের "ত"-টা, যেন "ৎ"-এর মত উচ্চারণ না হয়, সেজন্য এগুলোর উপর তারাচিহ্ন দেয়া প্রবর্তন করেন। বিংশ শতাব্দীতে অনেক লেখক একই কাজে ঊর্ধ্বকমা (') ব্যবহার করেছেন, যেমন- একশ', ইত্যাদি। তবে এই সংস্কারটি সর্বজনগৃহীত হয়নি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাসাগরী হরফের দুই ধরনের এ-কার (মাত্রাছাড়া ও মাত্রাসহ) দুইটি ভিন্ন কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। তিনি শব্দের শুরুর মাত্রাযুক্র এ-কার দিয়ে "অ্যা" ধ্বনি বুঝিয়ে ছাপানো শুরু করেন। তবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বেশির ভাগ প্রকাশকই এই রীতিটি গ্রহণ করেনি।
ইউরোপে ১৯শ শতকের শেষ দিকে লাইনোটাইপ মেশিনে ছাপানোর চল হয়। ১৯৩০-এর দশকে বাংলা হরফও লাইনো মেশিনে ছাপানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়। লাইনোটাইপ মেশিনে ছাপানোর অনেক সুবিধা থাকলেও এর একটি অসুবিধা ছিল এতে আড়াইশো-র মত চিহ্ন রাখার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বিদ্যাসাগরীয় পদ্ধতিতে হরফের সংখ্যা ছিল বিশাল। "করণ টাইপ" নামের এক পদ্ধতিতে এর সংখ্যা কমলেও তার পরেও সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০-র মত হরফের ব্লক প্রয়োজন হত। আনন্দবাজার প্রকাশনা সংস্থার সুরেশচন্দ্র মজুমদার রাজশেখর বসুর পরামর্শে বাংলা হরফের বিরাট আকারের সংস্কার সাধন করেন। তিনি স্বরবর্ণের কার-চিহ্নগুলো সকল ক্ষেত্রে একই আকারের রাখার ব্যবস্থা করলেন এবং এগুলো ব্যঞ্জন বা যুক্তব্যঞ্জনের নিচে বা উপরে না বসিয়ে সামান্য ডানে বা বামে সরিয়ে আলাদা অক্ষর হিসেবে ছাপার ব্যবস্থা করলেন।
এছাড়াও তিনি অনেক যুক্তব্যঞ্জনের একই উপাদান ব্যঞ্জনাক্ষরের সাধারণ আদল আলাদা করে সেটির হরফ বানালেন, ফলে যুক্তব্যঞ্জন ছাপানোতেও হরফের সংখ্যার অনেক সাশ্রয় হল। শেষ পর্যন্ত সুরেশচন্দ্র বাংলা হরফের সংখ্যাকে চাবির ডালায় ১২৪টি এবং বিবিধ আরও ৫০টিতে নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন।[2]
বাংলা লিপিতে বর্তমানে ১১টি স্বরবর্ণ অক্ষর আছে যা ৭টি প্রধান স্বর উচ্চারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সাতটিকে মৌলিক স্বরবর্ণ বলে ৷
নিম্নে আধুনিক বাংলা স্বরবর্ণের তালিকা ও উচ্চারণ প্রণালী দেখানো হল। এই ১১টি স্বরবর্ণ ছাড়াও ৠ, ঌ এবং ৡ এই তিনটি স্বরবর্ণ পূর্বে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এদের ব্যবহার করা হয় না, এবং "অ" হচ্ছে সম্পূর্ণ ভাবে স্বতন্ত্র স্বরবর্ণ এবং পুরো বাংলা লিপির পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বরবর্ণ, তাই তার বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন নেই।
স্বতন্ত্র আকার | স্বতন্ত্র আকারের নাম | বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন | বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্নের নাম | রোমানীকরণ | আ-ধ্ব-ব প্রতিলিপি |
---|---|---|---|---|---|
অ | স্বর অ | - | - | a,ô ও o(বিকৃত উচ্চারণ) | /ɔ/ ও /o/(বিকৃত উচ্চারণ) |
আ | স্বর আ | া | আ কার | aa/ ā | /ā/ |
ই | হ্রস্ব ই | ি | হ্রস্ব ই কার | i | /i/ |
ঈ | দীর্ঘ ই | ী | দীর্ঘ ই কার | i ও ee | /i/ |
উ | হ্রস্ব উ | ু | হ্রস্ব উ কার | u | /u/ |
ঊ | দীর্ঘ উ | ূ | দীর্ঘ উ কার | u ও oo | /u/ |
ঋ | হ্রস্ব ঋ | ৃ | হ্রস্ব ঋ কার | ri | /ṛi/ |
ৠ | দীর্ঘ ঋ | ৄ | দীর্ঘ ঋ কার | rii | /ṛii/ |
ঌ | হ্রস্ব ঌ | ৢ | হ্রস্ব ঌ কার | li | /ḷi/ |
ৡ | দীর্ঘ ঌ | ৣ | দীর্ঘ ঌ কার | lii | /ḷii/ |
এ | স্বর এ | ে | এ কার | e ও ê | /e/ ও /æ/ |
ঐ | স্বর ঐ | ৈ | ঐ কার | ôi ও oi | /ɔi/ ও /oi/ |
ও | স্বর ও | ো | ও কার | u ও o | /ʊ/ ও /o/ |
ঔ | স্বর ঔ | ৌ | ঔ কার | ôu ও ou | /ɔu/ ও /ou/ |
স্পর্শ | অনুনাসিক | অন্তঃস্থ | ঊষ্ম | |||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
বর্গীয় বর্ণ | ||||||||
অঘোষ | ঘোষ | অঘোষ | ঘোষ | |||||
অল্পপ্রাণ | মহাপ্রাণ | অল্পপ্রাণ | মহাপ্রাণ | অল্পপ্রাণ | মহাপ্রাণ | |||
কন্ঠ্য[টীকা 1] | ক /kɔ/ |
খ /kʰɔ/ |
গ /gɔ/ |
ঘ /ɡʱɔ/ |
ঙ /ŋɔ/ |
হ /ɦɔ~hɔ/[টীকা 2] | ||
তালব্য[টীকা 3] | চ /tʃɔ~tsɔ~sɔ/ |
ছ /tʃʰɔ~tsʰɔ~sɔ/ |
জ /dʒɔ~dzɔ~zɔ/ |
ঝ /dʒʱɔ~dzʱɔ/ |
ঞ /nɔ~ẽɔ/[টীকা 4] |
য /dʒɔ~dzɔ~zɔ/[টীকা 5] |
শ /ʃɔ~ɕɔ/[3] | |
মূর্ধন্য[টীকা 6] | ট /t̠ɔ/ |
ঠ /t̠ʰɔ/ |
ড /d̠ɔ/ |
ঢ /d̠ʱɔ/ |
ণ /nɔ/[টীকা 7] |
র /rɔ/ |
ষ /ɕɔ~ʃɔ/[টীকা 8] | |
দন্ত্য | ত /t̪ɔ/ |
থ /t̪ʰɔ/ |
দ /d̪ɔ/ |
ধ /d̪ʱɔ/ |
ন /nɔ/ |
ল /lɔ/ |
স /sɔ~ɕɔ~ʃɔ/[টীকা 8] | |
ওষ্ঠ্য | প /pɔ/ |
ফ /pʰɔ~ɸɔ~/f//[টীকা 9] |
ব /bɔ/ |
ভ /bʱɔ/ |
ম /mɔ/ |
ব[টীকা 10] /bɔ/ |
চিহ্ন | চিহ্নের নাম | কাজ |
---|---|---|
ৎ | খণ্ড ত | "ত" এর খণ্ড রূপ |
ং | অনুঃস্বর | "ঙ" এর খণ্ড রূপ |
ঃ | বিসর্গ | "হ্" এর আরেকটি রূপ, র এবং স বিলুপ্ত হয়ে বানানে বিসর্গ আসতে পারে, যেমন পুনর>পুনঃ, নমস> নমঃ |
ঁ | চন্দ্রবিন্দু | অনুনাসিক স্বর |
্ | হসন্ত | ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হলে পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বর "অ" উচ্চারিত হয় না |
ঽ | অবগ্রহ | স্বরবর্ণের শব্দ দীর্ঘ করার জন্য ব্যবহৃত উদাহরণ ১: শুনঽঽঽ (এইখানে "ন"-র পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বর "অ" দীর্ঘ করা হচ্ছে) উদাহরণ ২: কিঽঽঽ? (এইখানে "ক" এর সাথে যুক্ত স্বর "ই" দীর্ঘ করা হচ্ছে) |
্য | যফলা | "এ্যা" বা "অ্যা" উচ্চারণ বিশিষ্ট শব্দের জন্য ব্যবহৃত "মুখ্য"-এর মতন বানানে ব্যবহৃত ফরাসি ও জার্মান বর্ণ "ü"-কে "উ্য" আর "ö"-কে "ও্য" বা "এ্য" -তে প্রতিলিপি করা জন্য ব্যবহৃত। |
্র | রফলা | যুক্তাক্ষরের র-কারান্ত রূপ |
র্ | রেফ | যুক্তাক্ষরের র-কারাদি রূপ |
্ব | বফলা | শুধু সংস্কৃত থেকে গৃহীত শব্দের বানান সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত যেমন, "স্বাধীন", "বিদ্বান", "বিশ্ব" মাঝে-মধ্যে ইসলাম-সংক্রান্ত আরবি শব্দ প্রতিলিপি করা জন্য ব্যবহৃত। উল্লেখ্যঃ সব ব-কারান্ত যুক্তাক্ষরের 'ব' বফলা নয়; যেমন অম্বর, লম্বা, তিব্বত, বাল্ব এসব যুক্তাক্ষরের 'ব' বফলা নয়। |
৺ | ঈশ্বর | স্বর্গীয় অথবা মৃত ব্যক্তির নামের আগে এই চিহ্ন ব্যবহৃত |
ঀ | আঞ্জী (সিদ্ধিরস্তু) | আহাবন |
চিহ্ন | চিহ্নের নাম |
---|---|
। | দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ |
, | কমা |
: | কোলন |
; | সেমিকোলন |
:— | কোলন ড্যাশ |
- | হাইফেন চিহ্ন |
— | ড্যাশ চিহ্ন |
? | প্রশ্নবোধক চিহ্ন |
! | বিস্ময়বোধক চিহ্ন |
’ | ইলেক বা লোপ চিহ্ন |
‘ ’ | একক উদ্ধৃতি চিহ্ন |
“ ” | যুগল উদ্ধৃতি চিহ্ন |
৲ | টাকার চিহ্ন |
৳ | বাংলাদেশে মুদ্রার (টাকার) প্রতীক |
… | ঊহ্য বা বর্জন চিহ্ন |
/ | বিকল্প বা স্ল্যাশ চিহ্ন |
\ | ব্যাকস্ল্যাশ চিহ্ন |
( ) | বক্র বন্ধনী / প্রথম বন্ধনী |
{ } | গুম্ফ বন্ধনী / দ্বিতীয় বন্ধনী |
[ ] | সরল বন্ধনী / তৃতীয় বন্ধনী |
⟨ ⟩ | কৌণিক বন্ধনী |
° | তাপাঙ্ক / ডিগ্রী |
% | শতাংশ চিহ্ন |
~ | টিল্ডা চিহ্ন |
= | সমান চিহ্ন |
কোনো স্বরবর্ণ দ্বারা পৃথক না থাকলে সর্বাধিক চারটি ব্যঞ্জনবর্ণ পরস্পর যুক্ত হয়ে যুক্তাক্ষর তৈরী করতে পারে। সাধারণতঃ প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণ যুক্তাক্ষরের ওপরের দিকে বা বাম দিকে দেখা যায়। যুক্তাক্ষরে অনেক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ব্যঞ্জনবর্ণ সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে মূল ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে তার কোনো সাদৃশ্য থাকে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণ অবস্থায় ব্যঞ্জনবর্ণের যা উচ্চারণ, যুক্তাক্ষরে ব্যবহৃত হলে তার উচ্চারণের পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন "জ" এবং "ঞ" এর মিলনের ফলে তৈরী "জ্ঞ" যুক্তাক্ষরের উচ্চারণ "জ্ন" না হয়ে হয় "গ্গ"।
(ব্যবহৃত ফন্টের কারণে কিছু অক্ষর উল্লেখিত রূপে প্রতীয়মান না হয়ে অন্য রূপে হতে পারে)
কিছু উদাহরণ: স+ত +র=স্ত্র, ম+প+র=ম্প্র, জ+জ+ব=জ্জ্ব, ক্ষ+ম=ক্ষ্ম
বাংলা অক্ষরগুলোর উপর মাত্রা অর্থাৎ একটি আনুভূমিক রেখা দেয়া হয়। বাংলাতে মাত্রার প্রদর্শন পরিমাণ অনেক কম। খ, শ, ণ, প, ইত্যাদি বাংলা হরফে মাত্রার পরিমাণ খুব কম। বাংলাতে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু স্বতন্ত্র জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য এই প্রাক-মুদ্রণ যুগেই নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এগুলোর মধ্যে নিচেরগুলো উল্লেখযোগ্য
উপরের সবগুলোই বাংলা হরফকে নিজস্ব জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে এবং অন্যান্য লিপি থেকে আলাদা করেছে।
এসময়কার বাংলা হরফে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল, যেগুলো বর্তমান বাংলা হরফে অনুপস্থিত। যেমন -
এ সময় বাংলা ছাপা বইও বের হয়েছে। এগুলোতে বইয়ের একটি পাতা প্রথমে হাতে লেখা হত। তারপর সেই পুরো পাতার একটি প্রতিলিপি কাঠে বা ধাতুতে খোদাই করে নেওয়া হত। শেষে এই কাঠ বা ধাতুর ফলকে কালি লাগিয়ে একই পাতার অনেক কপি ছাপানো হত। একই লোকের হাতের লেখাতে যে বৈচিত্র্য থাকতে পারে, সেগুলো এই ছাপায় শুধরানো যেত না।
প্রতিটি মুদ্রিত বাংলা হরফ একটি অদৃশ্য চতুর্ভুজের মধ্যে বসানো থাকে। হরফের এই অদৃশ্য নকশাতে অনুভূমিক বরাবর প্রসারিত বেশ কিছু রেখা বাংলা হরফের জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছে।
মাত্রা বরাবর যে রেখাটি চলে গেছে, যা থেকে বেশিরভাগ হরফ ঝুলে থাকে বলে মনে হয়, তাকে মাত্রারেখা বলে। বেশির ভাগ হরফের নিচ যেখানে ঠেকে যায়, সেই বরাবর কল্পিত অনুভূমিক রেখাটিকে ভূমিরেখা বলে। রোমান হরফগুলোর মূল অংশ সর্বদা একটি অদৃশ্য ভূমিরেখার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে বাংলা হরফগুলো মাত্রা নামের একটি দৃশ্যমান রেখা থেকে নিচে ঝুলে থাকে। ফিওনা রস তাই বাংলা হরফের ভূমিরেখাকে "ধারণাগত ভূমিরেখা" আখ্যা দিয়েছেন। মাত্রারেখা থেকে ভূমিরেখার ব্যবধানকে "হরফের মূল উচ্চতা" বলে।
মাত্রারেখার কিছু উপরে আরেকটি অনুভূমিক রেখা কল্পনা করা যায়, যাতে ই-কার, ঈ-কার, ঐ-কার, রেফ ইত্যাদির মাথা গিয়ে ছুঁয়েছে; এটিকে শিরোরেখা বলে। একইভাবে ভূমিরেখার খানিকটা নিচে আরেকটি অনুভূমিক রেখা কল্পনা করা যায়, যেখানে উ-কার, ঊ-কার, ঋ-কার, ইত্যাদির নিচের প্রান্ত গিয়ে ঠেকেছে; একে পাদরেখা বলে। পাদরেখা থেকে শিরোরেখার ব্যবধানকে "হরফের উচ্চতা" হিসেবে ধরা যায়। মাত্রারেখার খানিকটা নিচে আরেকটি রেখা কল্পনা করা যায়, যেখানে বহু হরফের অংশবিশেষ দিক পরিবর্তন করে; একে মধ্যরেখা বলে।
প্রতিটি হরফ যে অদৃশ্য চতুর্ভুজাকৃতি স্থানে বসে, তার দুইপাশে খানিকটা খালি জায়গা থাকে, একে পার্শ্বস্থান বলে। দুপাশের পার্শ্বস্থান বাদ দিলে হরফের মূল প্রস্থ পাওয়া যায়। আর পাশাপাশি দুইটি হরফের প্রতিটির পার্শ্বস্থান যোগ করলে পাওয়া যায় ঐ দুই হরফের মধ্যে ফাঁক।
বাংলার রোমানীকরণ হল বাংলা লিপিটিকে রোমান লিপিতে উচ্চারণ মতে অনুবাদ করা। বাংলা ভাষার জন্যে অনেক রকম রোমানীকরণ পদ্ধতি প্রস্তাবিত করা আছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনোটাই সরকারি ভাবে স্বীকৃত নয় বা ব্যবহারে কোনো সমরূপতা নেই।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে ইউনিকোড স্ট্যাণ্ডার্ড এ বাংলা লিপিকে যোগ করা হয়। ইউনিকোডে বাংলা লিপির অবস্থান U+0980 থেকে U+09FF পর্যন্ত।
বাংলা[১][২] অফিসিয়াল ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম কোড চার্ট (পিডিএফ) | ||||||||||||||||
0 | 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | A | B | C | D | E | F | |
U+098x | ঀ | ঁ | ং | ঃ | অ | আ | ই | ঈ | উ | ঊ | ঋ | ঌ | এ | |||
U+099x | ঐ | ও | ঔ | ক | খ | গ | ঘ | ঙ | চ | ছ | জ | ঝ | ঞ | ট | ||
U+09Ax | ঠ | ড | ঢ | ণ | ত | থ | দ | ধ | ন | প | ফ | ব | ভ | ম | য | |
U+09Bx | র | ল | শ | ষ | স | হ | ় | ঽ | া | ি | ||||||
U+09Cx | ী | ু | ূ | ৃ | ৄ | ে | ৈ | ো | ৌ | ্ | ৎ | |||||
U+09Dx | ৗ | ড় | ঢ় | য় | ||||||||||||
U+09Ex | ৠ | ৡ | ৢ | ৣ | ০ | ১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ||
U+09Fx | ৰ | ৱ | ৲ | ৳ | ৴ | ৵ | ৶ | ৷ | ৸ | ৹ | ৺ | ৻ | ৼ | ৽ | ৾ | |
টীকা |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.