Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বিমানবাহিনী (ইংরেজি: Air force) কোন দেশের সামরিক বাহিনীর অন্যতম একটি শাখা। এ বাহিনী মূলতঃ দেশের আকাশসীমা রক্ষায় প্রয়োজনীয় বিমান, অস্ত্রশস্ত্র সহযোগে আকাশ যুদ্ধে প্রতিপক্ষের সাথে অবতীর্ণ হয়। বিমানবাহিনীর প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের আকাশসীমা রক্ষাসহ আকাশযুদ্ধ কার্যক্রম সফলভাবে সমাপণ করা। আকাশের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ, সহযোগী সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীকে নির্বিঘ্নে কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তাকরণ, নির্দিষ্টস্থানে বোমা নিক্ষেপ করা এর অন্যতম দায়িত্ব। সামরিক যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান, হেলিকপ্টার, প্রশিক্ষণ বিমান প্রমূখ আধুনিক বিমানবহর নিয়ে বিমানবাহিনী গঠিত। বিমানবহর অনেক সময় নির্দিষ্ট পন্থায় আকাশে উড্ডয়ন করে।
বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্বের প্রধান সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো তাদের ক্ষমতা প্রদর্শনে, অন্যান্য দেশের আকাশসীমায় কর্তৃত্ব গ্রহণে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রসহ দূরপাল্লার আণবিক বোমা নিক্ষেপ এ বিমানবাহিনীর মাধ্যমেই পরিচালনা করে আসছে। সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী থেকেও জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিমানবহর পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু বিমানবাহিনীই সচরাচর দেশের প্রধান আকাশ শক্তিরূপে বিবেচিত। সাংগঠনিক কাঠামো, নিয়ম-শৃঙ্খলা, নেতৃত্বের স্তর এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিন্নতর হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিমানবাহিনী হিসেবে স্বীকৃত।
বেলুন কিংবা রকেটজাতীয় অন্যান্য উড়ন্ত বস্তুকে সাধারণতঃ বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত উপকরণের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয় না। বিংশ শতকের প্রথমদিকে উড়োজাহাজ আবিষ্কারের পর থেকেই সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী আকাশে ব্যবহার করতে শুরু করে।
১৯১০ সালে ফরাসী সেনাবাহিনী সর্বপ্রথম বিশ্বে এভিয়েশন মিলিটেইর নামীয় আকাশ বাহিনী গড়ে তোলে যা পরবর্তীতে এল'আর্মি ডি এল’এয়ার নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১১ সালে ইতালো-তুর্কি যুদ্ধে ইতালি উড়োজাহাজকে লিবীয় অঙ্গরাজ্যে তুর্কিদের অবস্থানের ওপর বোমা নিক্ষেপণের কাজে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করে। ১৯১১-১৯১২ সালের ইতালি-তুরস্কের এ যুদ্ধে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিমান এবং হাল্কা বিমানের ব্যবহার শুরু হয়।[1] প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং অটোম্যান সাম্রাজ্য কর্তৃক বোমারু ও যুদ্ধবিমান ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, বিশ্বযুদ্ধে এয়ার কমান্ডারদের পারঙ্গমতাও লক্ষ্য করা যায়।
একটি দেশ কিংবা জাতির সেনাবাহিনীর স্বতন্ত্র শাখাই স্বায়ত্ত্বশাসিত বিমানবাহিনী নামে পরিচিত। এ বাহিনী প্রাচীনকালের নৌ কিংবা সেনাবাহিনীর অনুরূপ পন্থায় গঠিত হয়ে থাকে।
ব্রিটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনী বা আরএএফ বিশ্বের প্রথম স্বায়ত্ত্বশাসিত বিমানবাহিনীরূপে পরিগণিত হয়ে আসছে।[2] আরএএফ ১ এপ্রিল, ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর রয়েল ফ্লাইং কোর এবং রয়েল নেভাল এয়ার সার্ভিসের সংমিশ্রণে আরএএফ গঠিত। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়েই এতে বিশ হাজারেরও অধিক বিমান মোতায়েন করা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন বিমানবাহিনীর প্রধান যিনি মেজর জেনারেল পদমর্যাদার অধিকারী ছিলেন। বিমান মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ বাহিনী পরিচালিত হতো।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি প্রথম দেশ হিসেবে প্রতিপক্ষের সমরাঙ্গনে নিয়মিতভাবে আকাশ থেকে আক্রমণ করেছিল। ব্রিটেনের বিভিন্ন নগরে জেপলিনের ন্যায় হাল্কা বিমানের সাহায্যে আক্রমণ চালিয়ে বোমা নিক্ষেপ করেছিল। ঐ সময়ে ব্রিটেনে যথেষ্টসংখ্যক বিমান থাকা স্বত্ত্বেও জেপলিনের তুলনায় কম অগ্রসরমান ছিল। এগুলো আক্রমণ কার্যে খুব কমই ব্যবহৃত হতো। এর পরিবর্তে এগুলো সাধারণতঃ জার্মান ইউ-বোটের সাবমেরিনের উপর গোয়েন্দাগিরি করতো।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে বেশ নিরাপদ, দ্রুতগামী এবং বেশি বিশ্বস্ত ছিল যুদ্ধবিমানগুলো। বোমা নিক্ষেপণের জন্যে নির্দিষ্ট মানদণ্ড ব্যবহৃত হয়েছিল। কারণ এগুলো ছিল হালকা উড়োজাহাজের তুলনায় বেশ দ্রুতগামী। ১৯৩৯ সালে সোভিয়েত রেড এয়ার ফোর্স বিশ্বের সর্ববৃহৎ সামরিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলে। তাদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হওয়া স্বত্ত্বেও চার বছরের অধিককাল জার্মানির লুফতোয়াফে বাহিনী বিরুদ্ধে সর্ববৃহৎ আকাশ যুদ্ধ পরিচালনায় অংশ নেয়।
১৯৪০ সালে ব্রিটেন ও ইংলিশ চ্যানেল দখল নিয়ে সংঘটিত ব্রিটেনের যুদ্ধের আকাশ যুদ্ধ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল। এতে ব্রিটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনী এবং জার্মানির লুফতোয়াফে বিমানবাহিনী কয়েক মাস মুখোমুখি লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল। ব্রিটেনের অবিস্মরণীয় জয়ের কারণে এডলফ হিটলার ব্রিটেন অধিগ্রহণে মনোনিবেশ করেন। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আকাশ যুদ্ধের মধ্যে ছিল ১৯৪২-১৯৪৪ সালের মধ্যে মিত্রবাহিনী কর্তৃক জার্মানিতে আক্রমণ ও রেড এয়ার ফোর্স কর্তৃক পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্টে ভূমিতে কৌশলগত আক্রমণ। প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধের আকাশ আক্রমণটি ছিল ব্রিটেনের যুদ্ধের তুলনায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তাতে মার্কিন এবং জাপানী নৌবাহিনীর ব্যবহারই হয়েছিল বেশি।
দেশে-দেশে বিমানবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো ভিন্নতর হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী ও রাজকীয় বিমানবাহিনী গ্রুপ এবং স্কোয়াড্রন নামে দুই ভাগে বিভক্ত। সোভিয়েত বিমানবাহিনী সেনাধাঁচে সাংগঠনিক স্তরে বিভক্ত ছিল। আধুনিককালের কানাডিয়ান ফোর্সেস এয়ার কমান্ড উইং এবং পুরো বিমান কমান্ডের পার্থক্য নিরসনে এয়ার ডিভিশন গড়ে তুলেছে। রাজকীয় বিমানবাহিনীর ন্যায় কানাডিয়ান উইংয়ে স্কোয়াড্রন রাখা হয়েছে। চীনের বিমানবাহিনীর সদর দফতরে কমান্ড, রাজনৈতিক, নৈতিক এবং যন্ত্রপাতি - এ চারটি বিভাগে বিভাজন ঘটানো হয়েছে যা পিপলস লিবারেশন আর্মির চারটি বিভাগের অনুরূপ। এর নিচে রয়েছে মিলিটারী রিজিয়ন এয়ার ফোর্সের নিয়ন্ত্রণাধীন ফাইটার, অ্যাটাক, বোম্বার বিভাগগুলো পুনরায় রেজিম্যান্ট এবং স্কোয়াড্রনের সাথে মিলিত হয়েছে।[3]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.