ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম বিজয় শুরু হয় প্রধানত ১২শ থেকে ১৬শ শতাব্দীতে। তবে ৮ম শতাব্দীতে মুসলমানেরা রাজপুত সাম্রাজ্যে (বর্তমান আফগানিস্তানপাকিস্তানে) হামলা চালিয়ে পেরে উঠতে না পারলেও রাজপুতদের বিভিন্ন ছোট ছোট অঞ্চল দখল নেয়। তবে দখলকৃত অঞ্চলগুলো বেশিদিন দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। অতঃপর দিল্লী সালতানাত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলাম উপমহাদেশের বড় অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ১২০৪ সালে বখতিয়ার খিলজি বাংলা জয় করেন যা ছিল তৎকালে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে পূর্ব প্রান্ত।

১৪ শতকে খিলজি বংশের, আলাউদ্দিন খিলজি তার সাম্রাজ্যের সীমানা দক্ষিণে গুজরাত,রাজস্থানদাক্ষিণাত্য মালভূমি এবং তুঘলক রাজবংশ তাদের সীমানা তামিলনাড়ু পর্যন্ত বাড়ায়। কিন্তু দিল্লি সাল্তানাত ভেংগে গেলে ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে অনেক গুলো নতুন সাল্তানাতে আবির্ভাব ঘটে, যার মধ্যে গুজরাত সাল্তানাত, মালওয়া সাল্তানাত, তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাণিজ্য পথের অধিকারী বাংলা সাল্তানাত[1][2]

মারাঠা সাম্রাজ্যব্রিটিশ রাজত্বের পূর্বে মুসলিম মুঘল সাম্রাজ্য ভারতের অধিকাংশ রাজ্যকে জয় করতে সক্ষম হয়। তবে কিছু প্রান্তিক রাজ্য তারা জয় করতে পারেনি, যেমন - হিমালয়ের উপরাংশে হিমাচল প্রদেশ, উত্তরখণ্ড, সিক্কিম, নেপালভুটান; দক্ষিণ ভারতে ট্রাভাঙ্করতামিলনাড়ু এবং পূর্বে আসামের আহোম সাম্রাজ্য

প্রাথমিক মুসলিম গোষ্ঠী

আরব উপদ্বীপে ইসলামের উৎপত্তি ও বিস্তৃতির অল্পকালের মধ্যেই তা আরব বণিক, সুফি ও ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্র-উপকূলবর্তী অঞ্চল সিন্ধ, বাংলা, গুজরাত, কেরালা এবং সিলনে। মুসলিমরা এসব স্থানে বসতি করেন এবং স্থানীয় মেয়েদের বিয়ে করেন। ৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দে খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়ে আরব বিশ্ব প্রথম নৌপথে ভারত উপমহাদেশে আক্রমণ করে, স্থলপথে আক্রমণ করে তার অনেক পরে।

আরব নৌঅভিযান

৬৪৩ সনে বাহরাইন ও ওমানের গভর্নর উসমান ইবনে আবুল আস সাকিফী নৌবহর নিয়ে মুম্বাইয়ের নিকটে থান-এ হামলা চালান, তার ভাই হাকাম যাত্রা করেন ব্রোচে এবং আরেক ভাই মুগীরা আক্রমণ করেন দেবল। ফুতুহুল বুলদানের তথ্যমতে তিনটি অভিযানই সফল হয়,[3] তবে অন্য সূত্রমতে মুগীরা দেবলে পরাজিত ও নিহত হন।[4] এই অভিযানের কথা উমর কে জানানো হয়নি বলে তিনি উসমানকে তিরস্কার করেন।[5] উল্লেখ্য, অভিযানগুলো হয়েছিলো জলদস্যুদের বিরুদ্ধে যারা আরব সাগরে তাদের বাণিজ্যপথ নিরাপদ রাখার জন্যে, ভারত জয়ের উদ্দেশ্যে নয়।[6][7][8]

উমাইয়া অভিযান

মাকরান ও জাবুলিস্তানের লড়াই

হাজ্জাজের আমল ও সিন্ধু জয়

হিন্দুস্থানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত ইস্‌লামের সংস্পর্শে প্রথম আসে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দিকে। ৭১১–১২ খ্রীষ্টাব্দে, ওমায়িয়াদ যুগেই ইরাকের শাসনকর্তা হজ্জাদের নৌ-সেনাপতি মুহাম্মদ-বিন-কাসেম নিম্ন সিন্ধু উপত্যকা করে একটি ক্ষুদ্র আরব উপনিবেশ স্থাপন করেন।[9] করাচির প্রায় পঁয়ষট্টি কিলোমিটার পূর্বে ‘ভামবোর’ নামক স্থানে মাটি খুঁড়ে সেই আদিম আরব উপনিবেশের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। তার ভিতর একটি মস্‌জিদকেই বলা যায় বৃহত্তর ভারত উপমহাদেশের প্রাচীনতম ইস্‌লামী স্থাপত্য-কীর্তি। মূলতান অঞ্চল ৭১৩ খ্রীষ্টাব্দে ইস্‌লাম-অভিযানের শিকার হয়।[9] প্রথম যুগে কিন্তু বিজয়ী-বিজিতের সম্পর্কটা অত তিক্ত ছিল না। হিন্দু ও মুসলমান ওই মূলতান ও সিন্ধু অঞ্চলের নির্বিবাদে বসবাস করেছে, একে অপরের চিন্তাভাবনার হাতফিরি করেছে।[10]

পরবর্তী মুসলিম আক্রমণ

গজনবী সাম্রাজ্য

Thumb
১৮৪৮ সনে সুলতান মাহমুদ গজনবীর সমাধি

ছবিটা বদলে গেল সুলতান সবুক্তগীনের ভারত আক্রমণের (৯৮৬–৯৮৭) সমসময়ে, এবং আরও বেশি করে তাঁর পুত্র সুলতান মাহ্‌মুদের উপর্যুপরি ভারত-লুণ্ঠনে। দশম শতকে উত্তর-পশ্চিম ভারতের ছোট ছোট রাজ্যগুলির দুর্বলতার সুযোগে ভারতের সঞ্চিত ঐশ্বর্যের প্রলোভনে গজনীর সুলতান সবুক্তগীন পাঞ্জাবের শাহী রাজ্য আক্রমণ করেন।[11] সবুক্তগীন বিশেষ সাফল্যলাভ না-করলেও ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পর পুত্র সুলতান মামুদ ১০০০ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অন্তত সতেরো-বার ভারত আক্রমণ করেছিলেন।[11] ১০০১ খ্রীষ্টাব্দে ভারতীয় হিন্দু রাজা জয়পাল পরাজিত হলেন; ১০২৫–২৬ খ্রিস্টাব্দে মামুদ সোমনাথের মন্দির লুণ্ঠনের জন্য দুবার অভিযান করেন।[9][11] তবু উত্তর-পশ্চিম বাদে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে তখনও ইস্‌লাম ছায়াপাত করেনি।[9] আরও প্রায় দু’শ বছর পরে গজনীর সুলতান মহম্মদ বিন সাম—যাঁর সহজ পরিচয় ‘মহম্মদ ঘোরী’, এলেন উপর্যুপরি ভারত-লুন্ঠনের ধারণা নিয়ে; ১১৯২ খ্রীষ্টাব্দে তরাই-এর যুদ্ধ থেকে দিল্লী অঞ্চলে হিন্দু রাজত্বের অবসান হল বলে ধরে নেওয়া যায়।[9]

মুহাম্মদ ঘুরী

মুইজউদ্দিন মুহাম্মাদ (ফার্সি: معزالدین محمد), জন্মনাম শিহাবউদ্দিন (১১৪৯ – মার্চ ১৫, ১২০৬), (মুহাম্মাদ ঘুরি বলেও পরিচিত) ছিলেন ঘুরি সাম্রাজ্যের সুলতান। তার ভাই গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মাদের সাথে তিনি ১১৭৩ থেকে ১২০২ পর্যন্ত শাসন করেন। এরপর ১২০২ থেকে ১২০৬ পর্যন্ত তিনি সর্বো‌চ্চ শাসক হিসেবে শাসন করেন।

মহম্মদ ঘোরীর হাতে চৌহান বংশীয় পৃথ্বীরাজ—যাঁর রাজধানী ছিল দিল্লির লাটকোট অঞ্চলে—পরাজিত ও নিহত হলেন।[9]

দিল্লি সালতানাত

দাস বংশ

ভারত জয় করে মহম্মদ ঘোরী কোন উত্তরাধিকারী নির্বাচন করে যাননি। তাঁর কোন পুত্রসন্তান ছিল না।[9] ১২১০ খ্রীষ্টাব্দে তিনি যখন নিহত হলেন তখন কির্মানের শাসনকর্তা তাজউদ্‌দীন য়ীলদিজ্ উঠে বসলেন গজনীর মসনদে এবং কুৎবউদ্‌দীন আইবক পেলেন ভারত শাসনের অধিকার।[9] অচিরেই দুজনের সংঘাত বাধল এবং সে গৃহযুদ্ধে বিজয়ী হলেন কুৎবউদ্‌দীন। উঠে বসলেন গজনীর মসনদে। য়ীলদিজ্ নির্বাসিত হলেন।[9] কিন্তু হঠাৎ সুলতান কুৎব বিলাসের স্রোতে গা ভাসালেন। গজনীর আমীর মালিকেরা বিরক্ত হয়ে নির্বাসিত য়ীলদিজ্কে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করল। কুৎব পরাজিত হলেন।[9] কুৎব তৎক্ষণাৎ গজনীর মসনদ ছেড়ে রওনা দিলেন হিন্দুস্থানের দিকে।[9]

কুৎববউদ্‌দীন আইবক দিল্লীতে এসে নতুন বংশের প্রতিষ্ঠা করলেন—যার প্রচলিত নাম ‘দাস বংশ’,[9] যদিও ইদানীংকালে[কখন?] ঐতিহাসিকেরা[কে?] কথাটা পছন্দ করেন না।[9] রাজধানী স্থাপন করলেন লাটকোট-এ, অর্থাৎ পূর্বযুগের চৌহান বংশীয় পৃথ্বীরাজের দুর্গ এলাকায়। বর্তমানে জায়গাটার নাম কুৎব-চত্বর[9] সেখানে পূর্বযুগ থেকে ছিল একটি দুর্গ, প্রাসাদ, মন্দির ও নগরীর নানান জাতের সৌধ।[9] কুৎবউদ্‌দীন আইবক সর্বপ্রথমেই নির্মাণ করতে চাইলেন একটি জাম-ই-মস্‌জিদ। তার নাম: ‘কুওওতুল মস্‌জিদ’[9] ভিত্তি স্থাপন করলেন একটি বিজয় মিনারের—যা হতে চলেছে বিশ্বের বিস্ময়: কুৎব মিনার[9]

তৈমুর

তৈমুর বিন তারাগাই বারলাস (চাগাতাই ভাষায়: تیمور - তেমোর্‌, "লোহা") (১৩৩৬ - ফেব্রুয়ারি, ১৪০৫) ১৪শ শতকের একজন তুর্কী-মোঙ্গল সেনাধ্যক্ষ[12][13][14][15] তিনি পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজ দখলে এনে তৈমুরি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৩৭০ থেকে ১৪০৫ সাল পর্যন্ত নেতৃত্বে আসীন ছিল। এই অপরাজেয় সমরবিদ ইতিহাসের অন্যতম সফল সেনানায়ক হিসেবে পরিগণিত হন।[16][17][18]

মুঘল সাম্রাজ্য

বাবর

আওরঙ্গজেব

দুররানী সাম্রাজ্য

দুরারানি সাম্রাজ্য (পশতু: د درانیانو واکمني) সাদুজাই রাজ্য নামেও পরিচিত, ছিল আফগানিস্তানের সর্বশেষ সাম্রাজ্য।[19] ১৭৪৭ সালে কান্দাহারকে রাজধানী করে আহমদ শাহ দুররানি সাম্রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করেন।[20][21]

মুসলিম শাসনের পতন

১৭০৭ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরই মূলত মুসলিম শাসকদের পতন হতে থাকে। ১৭৫৮ সালের মধ্যে মারাঠা সাম্রাজ্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে তাদের সাম্রজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.