শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম তার রচিত কাব্য, উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাট্যসাহিত্য, প্রবন্ধ, চিত্রকলা ও সঙ্গীতের মধ্যে ছড়িয়ে আছে।

উপন্যাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস বাংলা ভাষায় তার অন্যতম জনপ্রিয় সাহিত্যকর্ম। ১৮৮৩ থেকে ১৯৩৪ সালের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ মোট তেরোটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: চোখের বালি, গোরা, ঘরে বাইরে, চতুরঙ্গ, শেষের কবিতা, যোগাযোগ, চার অধ্যায় ইত্যাদি। তবে করুণা উপন্যাসটি তার জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি।
ঘরে বাইরে উপন্যাসে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতীয় জনমানসে জাতীয়তাবাদের উত্থানের দিকটি আলোচিত হয়েছে। এই উপন্যাসে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের সংমিশ্রণের বিপদ ও তার প্রতি রবীন্দ্রনাথের বিতৃষ্ণা ব্যক্ত হয়েছে। অন্যদিকে গোরা উপন্যাসের বিষয়বস্তুও কতকটা একই; তবে এই উপন্যাসে ভারতীয়ত্বের স্বরূপ সন্ধানেও ব্রতী হন কবি। ঘরে বাইরে উপন্যাসে আত্ম-পরিচিতি, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ধর্মবিশ্বাসের মতো বিষয়গুলি এক পারিবারিক উপাখ্যান ও ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কের আধারে আলোচিত হয়। শেষের কবিতা একটি কাব্যিক উপন্যাস। সাহিত্যতত্ত্ববিদ সুকুমার সেন সংস্কৃত সাহিত্যের গদ্যপদ্যমিশ্রিত চম্পূ রচনাশৈলীর সঙ্গে এই উপন্যাসের তুলনা করেছেন। এই উপন্যাস রবীন্দ্রনাথের এক শ্লেষাত্মক উপন্যাস। এখানে দেখা যায়, নায়ক অমিত রায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামে এক বৃদ্ধ, সেকেলে ও অতি-নন্দিত কবির কাব্যদর্শনটিকে আক্রমণ করছেন।
রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসগুলি বাঙালি পাঠকসমাজে জনপ্রিয়তা পেলেও বহির্বঙ্গে এগুলি খুব একটা পরিচিতি পায়নি। পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায় ঘরে বাইরে চলচ্চিত্রায়ণের মাধ্যমে উপন্যাসটিকে পাশ্চাত্য বিদ্বজ্জন সমাজে তুলে ধরেন। রবীন্দ্র-উপন্যাসের আরও দুটি বহু-প্রশংসিত চলচ্চিত্রায়ণ হল ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত চোখের বালি ও সুমন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত চতুরঙ্গ। গোরা উপন্যাসটিও একাধিকবার চলচ্চিত্রায়িত হয়।
Remove ads
কবিতা
সারাংশ
প্রসঙ্গ

রবীন্দ্রনাথের কাব্য বহুবর্ণময়। তার কাব্য কখনও রক্ষণশীল ধ্রুপদি শৈলীতে, কখনও হাস্যোজ্জ্বল লঘুতায়, কখনও বা দার্শনিক গাম্ভীরে, আবার কখনও বা আনন্দের উচ্ছ্বাসে মুখরিত। এই কাব্যগুলির উৎস পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে রচিত বৈষ্ণব কবিদের পদাবলি সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের কাব্যে গভীর প্রভাব বিস্তার করেন উপনিষদ রচয়িতা ঋষিকবিগণ। এঁদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হলেন ব্যাস। এছাড়াও অতিন্দ্রীয়বাদী সুফি সন্ত কবীর ও ভক্তিবাদী কবি রামপ্রসাদের প্রভাবও তার কাব্যে লক্ষিত হয়।[১] তবে রবীন্দ্রনাথের কবিতা সৃষ্টিশীলতা ও সৌকর্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় উপনীত হয়, গ্রামীণ বাংলার লোকসঙ্গীতের সঙ্গে তার পরিচিতি লাভের পরই। এই সময় লালন শাহ সহ বাংলার বিশিষ্ট বাউল সংগীতস্রষ্টাদের সান্নিধ্যে আসেন কবি।[২][৩] বাউল সংগীতকে পুনরাবিষ্কার করে জনপ্রিয় করে তুলতে রবীন্দ্রনাথ বিশেষ ভূমিকা নেন। এই সব বাউল গান উনিশ শতকের কর্তাভজাদের গানের মতো অন্তর্নিহিত দৈবসত্ত্বার অনুসন্ধান ও ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা ছিল।[৪][৫] শিলাইদহে অবস্থানকালে তার গীতিকবিতার জন্য একটি শব্দবন্ধ তিনি গ্রহণ করেন বাউল পদাবলি থেকে - মনের মানুষ। ধ্যান করেন তার জীবন দেবতা-র। প্রকৃতি ও মানবচরিত্রের আবেগময় নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এই যোগসূত্রটি পরমসত্ত্বার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ভানুসিংহের নামাঙ্কিত কবিতাগুলিতেও কবি এই শৈলীর ব্যবহার ঘটান। রাধা ও কৃষ্ণের প্রণয়লীলাকে উপজীব্য করে লেখা এই কবিতাগুলি পরবর্তী সত্তর বছরে বারংবার সংশোধন করেছিলেন কবি।[৬][৭]
১৯৩০-এর দশকে একাধিক পরীক্ষামূলক রচনায় তিনি বাংলা সাহিত্যে সদ্য আগত আধুনিকতা ও বাস্তবতাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।[৮] রবীন্দ্রনাথের পরবর্তী জীবনে রচিত আফ্রিকা ও ক্যামেলিয়া এই রকমই দুটি পরিচিত কবিতা। প্রথম দিকে সাধু ভাষায় কবিতা রচনা করলেও, পরবর্তীকালে কবিতার ভাষা হিসেবে বেছে নেনে মান্য চলিত বাংলাকে। তার অন্যান্য প্রসিদ্ধ কাব্যগ্রন্থগুলি হল: মানসী, সোনার তরী, বলাকা[৯], ও পূরবী ইত্যাদি। সোনার তরী কবিতাটিতে কবি জীবন ও তার কীর্তির ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের কথা বলেছেন। এই কবিতার শেষ পংক্তিদুটি অবিস্মরণীয় - "শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি/ যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।" সারা বিশ্বে রবীন্দ্রনাথের সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত গ্রন্থটি হল গীতাঞ্জলি। এই কাব্যগ্রন্থটির জন্যই তিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন।[১০] নিচে গীতাঞ্জলি কাব্যের ১২৫ সংখ্যক গানটি উদ্ধৃত হল:

“ |
আমার এ গান ছেড়েছে তার সকল অলংকার |
” |
এই কবিতাটির ইংরেজি অনুবাদ করেন রবীন্দ্রনাথই (Gitanjali, verse VII):[১১]
|
|
সোনার তরী

বাংলা ভাষার উইকিসংকলনে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত মৌলিক রচনা রয়েছে: সোনার তরী
সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের প্রকাশকাল ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দ (১৩০০ বঙ্গাব্দ)। কাব্যগ্রন্থটি কবি দেবেন্দ্রনাথ সেনের প্রতি উৎসর্গিত।[১২] এই কাব্যের অনেকগুলি কবিতার সঙ্গে পদ্মাপাড়ের পল্লিপ্রকৃতির গভীর যোগ বিদ্যমান। সমগ্র গ্রন্থটি বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রোম্যান্টিক কাব্য সংকলন। রবীন্দ্রনাথের নিজের ভাষায়, "আমার বুদ্ধি এবং কল্পনা এবং ইচ্ছাকে উন্মুখ করে তুলেছিল এই সময়কার প্রবর্তনা, বিশ্বপ্রকৃতি এবং মানবলোকের মধ্যে নিত্য সচল অভিজ্ঞতার প্রবর্তনা। এই সময়কার কাব্যের ফসল ভরা হয়েছিল সোনার তরীতে।"[১৩] "সোনার তরী" (কাব্যের নামকবিতা) কবিতাটিতে কবি জীবন ও তার কীর্তির ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের কথা বলেছেন। এই কবিতার শেষ পংক্তিদুটি অবিস্মরণীয় - "শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি/ যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।"
এই কাব্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কবিতা হল "সোনার তরী", "বিম্ববতী", "সুপ্তোত্থিতা", "বর্ষাযাপন", "হিং টিং ছট", "বৈষ্ণবকবিতা", "দুই পাখি", "যেতে নাহি দিব", "বসুন্ধরা", "নিরুদ্দেশ যাত্রা" ইত্যাদি।
বলাকা

বাংলা ভাষার উইকিসংকলনে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত মৌলিক রচনা রয়েছে: বলাকা
বলাকা কাব্যগ্রন্থের প্রকাশকাল ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দ। গ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছিলেন উইলিয়াম পিয়রসনকে। ১৯১৫-১৬ সালে কবির কাব্যগ্রন্থ নামক কাব্যসংকলনেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়।[১৪] এটি রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থে দেখা যায় পূর্ববর্তী গীতাঞ্জলি-পর্বের ঈশ্বরানুভূতি ও অতীন্দ্রিয় চেতনা থেকে মুক্ত হয়ে কবি একটি স্বতন্ত্র জগৎ সৃষ্টি করেছেন। "যৌবনের জয়গান, চলমান বিশ্বের অনিঃশেষ যাত্রা, ভাষার বর্ণাঢ্য উজ্জ্বলতা ও ছন্দের অপ্রতিহত প্রবাহ বলাকার বৈশিষ্ট্য।"[১৫]
এই কাব্যগ্রন্থের উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলি হল "সবুজের অভিযান", "শঙ্খ", "ছবি", "শা-জাহান", "বলাকা" ইত্যাদি।
Remove ads
ছোটগল্প
সারাংশ
প্রসঙ্গ
রবীন্দ্রনাথের জীবনের "সাধনা" পর্বটি (১৮৯১–৯৫) ছিল সর্বাপেক্ষা সৃষ্টিশীল পর্যায়। তার গল্পগুচ্ছ গল্পসংকলনের প্রথম তিন খণ্ডের চুরাশিটির গল্পের অর্ধেকই রচিত হয় এই সময়কালের মধ্যে।[১৬] এইসব গল্পে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলির প্রতি রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে। আধুনিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেছেন তিনি। আবার কখনও মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের বৌদ্ধিক বিশ্লেষণকে করে তুলেছেন গল্পের মূল উপজীব্য। "সাধনা" পর্বে রচিত প্রথম দিককার গল্পগুলিকে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন এক স্বতঃস্ফূর্ত জীবনীশক্তির বহিঃপ্রকাশ। পতিসর, সাজাদপুর ও শিলাইদহ সহ পারিবারিক জমিদারির বিভিন্ন অংশে ঘুরে সাধারণ গ্রামবাসীদের সঙ্গে মেলামেশা করে তাদের জীবন থেকেই এই সব গল্পের উপাদান সংগ্রহ করেন রবীন্দ্রনাথ।[১৬] সমকালীন ভারতের দরিদ্র জনগণের জীবনের প্রতি এক গভীর অন্তদৃষ্টি এই সব গল্পে নিহিত হয়ে আছে। আর তাই গল্পগুলি ভারতীয় সাহিত্যে একক স্থানের অধিকারী।[১৭]
"কাবুলিওয়ালা" এক শহুরে লেখকের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা এক কাবুলি মেওয়াওয়ালার গল্প। এই গল্পের একস্থানে ফুটে উঠেছে ভারতের বদ্ধ নগরজীবন থেকে ছুটি নিয়ে সুদূর বনপর্বতে মুক্ত স্বাধীন জীবনযাপনের এক আকুল আকাঙ্ক্ষা: "এখন শুভ্র শরৎকাল। প্রাচীনকালে এই সময়ে রাজারা দিগ্বিজয়ে বাহির হইতেন। আমি কলিকাতা ছাড়িয়া কখনো কোথাও যাই নাই, কিন্তু সেই জন্যই আমার মনটা পৃথিবীময় ঘুরিয়া বেড়ায়। আমি যেন আমার ঘরের কোণে চিরপ্রবাসী, বাহিরের পৃথিবীর জন্য আমার সর্বদা মন কেমন করে। একটা বিদেশের নাম শুনিলেই অমনি আমার চিত্ত ছুটিয়া যায়, তেমনি বিদেশী লোক দেখিলেই অমনি নদী পর্বত অরণ্যের মধ্যে একটা কুটিরের দৃশ্য মনে উদয় হয়, এবং একটা উল্লাসপূর্ণ স্বাধীন জীবনযাত্রার কথা কল্পনায় জাগিয়া ওঠে।"[১৮] গল্পগুচ্ছ সংকলনের অন্য গল্পগুলির অনেকগুলিই রচিত হয়েছিল রবীন্দ্রজীবনের সবুজ পত্র পর্বে (১৯১৪–১৭; প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত পত্রিকার নামানুসারে) [১৬]।
রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ বাংলা কথাসাহিত্যের এক অন্যতম জনপ্রিয় গ্রন্থ। এই গ্রন্থের একাধিক গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ও নাটক। সত্যজিৎ রায়ের চারুলতা রবীন্দ্রনাথের বিতর্কিত ছোটোগল্প (মতান্তরে অনু-উপন্যাস) নষ্টনীড় অবলম্বনে নির্মিত। চলচ্চিত্রায়িত অপর একটি ছোটোগল্প হল অতিথি। এই গল্পে এক গ্রাম্য জমিদারের সঙ্গে নৌকায় সাক্ষাৎ হয় তারাপদ নামে এক ব্রাহ্মণ বালকের। ছেলেটি জানায় সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দয়াপরবশ হয়ে জমিদার তাকে দত্তক নেয় এবং শেষ পর্যন্ত আপন কন্যার সঙ্গে ছেলেটির বিবাহ দিতে উদ্যোগী হন। কিন্তু বিয়ের আগের রাতেই আবার পালিয়ে যায় তারাপদ। স্ত্রীর পত্র গল্পটি বাংলা সাহিত্যে নারী স্বাধীনতার স্বপক্ষে লেখা একটি প্রথম যুগের সাহসী পদক্ষেপ। একটি চিরন্তন পুরুষতান্ত্রিক মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের গৃহবধূ মৃণাল পুরী ভ্রমণের সময় একটি চিঠি লেখে। এই চিঠিতেই প্রকাশিত হয়েছে সমগ্র গল্পটি। নিজের জীবনের সব সংগ্রাম ও বঞ্চনার উল্লেখ করে শেষাবধি গৃহে না ফেরার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে সে। স্বামীকে সে জানিয়ে দেয়, আমিও বাঁচবো, এই বাঁচলুম।
হৈমন্তী গল্পে রবীন্দ্রনাথ আঘাত করেছেন হিন্দু বিবাহ সংস্কার ও ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভণ্ডামিকে। তুলে ধরেছেন বিবাহিত বাঙালি রমণীর জীবন্মৃত অবস্থাটি। দেখিয়েছেন কেমন করে হৈমন্তী নামে এক সংবেদনশীল যুবতীকে তার স্বাধীনতাস্পৃহার জন্য শেষ পর্যন্ত প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়। এই গল্পের শেষ লাইনে গল্পকার সরাসরি রামের জন্য সীতার আত্মত্যাগের হিন্দু আদর্শটিকে আক্রমণ করেন। মুসলমানীর গল্প নামক গল্পটিতে হিন্দু-মুসলমান বিরোধের মূল কারণগুলি অনুসন্ধান করেছেন রবীন্দ্রনাথ। অন্যদিকে দর্পহরণ গল্পে এক সাহিত্যিক-খ্যাতিলোভী উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবকের চিত্র এঁকে তিনি তার আত্মসচেতনারই পরিচয় দেন। স্ত্রীকে ভালবাসলেও এই যুবক স্ত্রীর নিজস্ব সাহিত্যিক সত্ত্বাটিকে রুদ্ধ করতে চায়। কারণ তার মতে সাহিত্য নারীসুলভ নয়। জানা যায়, কৈশোর ও প্রথম যৌবনে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং নারী সম্পর্কে এই রকম ধারণাই পোষণ করতেন। তবে দর্পহরণ গল্পে শেষ পর্যন্ত উক্ত যুবকটি তার স্ত্রীর প্রতিভা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। রবীন্দ্রনাথের অনেক ছোটোগল্পের শেষ লাইন বাংলা ভাষায় প্রবাদপ্রতিম। এগুলি মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য জীবিত ও মৃত গল্পটির সমাপ্তি: কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই।
- বামা
- রাজপথের কথা
- দেনা পাওনা
- পোস্টমাস্টার
- গিন্নি
- সুভা
- ব্যবধান
- তারাপ্রসন্নের কীর্তি–
- খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন
- সম্পত্তি-সমর্পণ
- দালিয়া
- কঙ্কাল
- মুক্তির উপায়
- ত্যাগ
- একরাত্রি
- একটা আষাঢ়ে গল্প
- জীবিত ও মৃত
- স্বর্নমৃগ
- রীতিমত নভেল
- জয়পরাজয়
- কাবুলিওয়ালা
- মহামায়া
- রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা
- ঠাকুরদা
- দানপ্রতিদান
- সম্পাদক
- মধ্যবর্তনী
- অসম্ভব কথা
- শাস্তি–
- একটি ক্ষুদ্র পুরাতন গল্প
- সমাপ্তি
- সমস্যাপূরণ
- খাতা
- অনধিকার প্রবেশ
- মেঘ ও রৌদ্র
- প্রায়শ্চিত
- বিচারক
- নিশীথে
- আপদ
- দিদি
- মানবঞ্জন
- প্রতিহিংসা
- অতিথি
- দুরাশা
- পুত্রযজ্ঞ
- ডিটেকটিভ
- অধ্যাপক
- রাজটিকা
- মনিহারা
- দৃষ্টিদান
- সদর ও অন্দর
- উদ্ধার
- ফেল
- শুভদৃষ্টি
- উলুখরের বিপদ
- প্রতিবেশিনী
- দর্পহরন
- মাল্যদান
- কর্মফল
- গুপ্তধন
- মাষ্টার মশায়
- রাসমনির ছেলে
- হালদার গোষ্ঠী
- হৈমন্তী
- বোষ্টমী
- স্ত্রীর পত্র
- ভাইফোটা
- শেষের রাত্রি
- অপরিচিতা
- তপস্বনী
- পাত্র ও পাত্রী
- নামঞ্জুর গল্প
- সংস্কার
- বলাই
- চিত্রকর
- চোরাই ধন
- রবিবার
- শেষ কথা
- ল্যাবরেটরী
- প্রগতিসংহার
- শেষ পুরস্কার
- পণরক্ষা
- ক্ষুধিতপাষাণ
- যজ্ঞেশ্বরের যজ্ঞ
- দুর্বুদ্ধি
- ছুটি
Remove ads
নাটক (গীতিনাট্য,কাব্যনাট্য,নৃত্যনাট্য,সাংকেতিক নাটক,সামাজিক নাটক,প্রহসন)
- প্রকৃতির প্রতিশোধ (১৮৮৪)
- বিসর্জন
- বৈকু্ন্ঠের খাতা, প্রহসন
- হাস্যকৌতুক, প্রহসন
- ব্যঙ্গকৌতুক, প্রহসন
- শারদোৎসব, সাংকেতিক নাটক
- গুরু
- বসন্ত (গীতিনাট্য-কাজী নজরুলকে উৎসর্গ করেন)
- চিরকুমার সভা, প্রহসন
- গৃহপ্রবেশ
- নটরাজ
- শেষ রক্ষা
- নবীন
- শাপমোচন
- শ্যামা (১৯৩৯), নৃত্যনাট্য
- নলিনী
- মালঞ্চ
- গোড়ায় গলদ, প্রহসন
- মালিনী
- মুকুট
- ফাল্গুনী
- অরূপরতন
- ঋণশোধ
- শোধবোধ, সামাজিক
- শেষ বর্ষণ
- পরিত্রাণ
- বাঁশরি, সামাজিক
- শ্রাবণগাথা
- মুক্তির উপায়
- কালমৃগয়া, গীতিনাট্য
- রাজা ও রাণী (১৮৮৯)
- কালের যাত্রা
- মুক্তধারা (১৯২২)
- রক্তকরবী (১৯২৬), সাংকেতিক নাটক
- নটীর পূজা (১৯২৬), (নৃত্যনাট্য)
- তপতী (রাজা ও রাণী-র পরবর্তী সংস্করণ)
- রুদ্রচন্ড (কাব্যনাট্য), (১৮৮১)
- চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২), কাব্যনাট্য
- বাল্মীকিপ্রতিভা (১৮৮১), গীতিনাট্য
- মায়ার খেলা (১৮৮৮), গীতিনাট্য
- প্রায়শ্চিত্ত (১৯০৯), সাংকেতিক
- রাজা (১৯১০), সাংকেতিক
- অচলায়তন (১৯১১), সাংকেতিক নাটক
- ডাকঘর (১৯১২), সাংকেতিক
- তাসের দেশ (১৯৩৩)
- চন্ডালিকা (১৯৩৩),
- চন্ডালিকা (১৯৩৮), নৃত্যনাট্য
Remove ads
প্রবন্ধ সমূহ
- কালান্তর
- বিবেচনা ও অবিবেচনা
- লোকহিত
- লড়াইয়ের মূল
- কর্তার ইচ্ছায় কর্ম
- ছোট ও বড়ো
- বাতায়নিকের পত্র
- শক্তিপূজা
- শিক্ষার মিলন
- সত্যের আহবান
- চরকা
- স্বরাজ সাধন
- শূদ্র ধর্ম
- রায়তের কথা
- বৃহত্তর ভারত
- হিন্দু মুসলমান
- স্বামী শ্রদ্ধানন্দ
- রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রনৈতিক মত
- হিজলী ও চট্টগ্রাম
- প্রচলিত দণ্ডবিধি
- নারী
- কন্গ্রেস
- দেশনায়ক
- মহাজাতি-সদন
- নবযুগ
- প্রলয়ের সৃষ্টি
- আরোগ্য
- সভ্যতার সংকট
- মানুষের ধর্ম
- পঞ্চভুত
ভ্রমণ কাহিনী
- য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র (১৮৮১)
- য়ুরোপ প্রবাসীর ডায়রী (১৮৯১)
- রাশিয়ার চিঠি (১৯১৯)
- পারস্যে (১৯১৯)
- জাপান যাত্রী (১৯৩১)
জীবনীমূলক
- চরিত্রপূজা (১৯০৭)
- জীবনস্মৃতি (১৯১২)
- ছেলেবেলা (১৯৪০)
- আত্নপরিচয় (১৯৪৩)
পত্র-সাহিত্য
সঙ্গীত
সারাংশ
প্রসঙ্গ

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন স্বনামধন্য সংগীতস্রষ্টা ও বিশিষ্ট চিত্রকর। তিনি প্রায় ২২৩২ টি গান রচনা করেন। [১৯] রবীন্দ্রসংগীত নামে পরিচিত এই গীতিগুচ্ছ বাংলার সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। রবীন্দ্রনাথের গান তার সাহিত্যের সঙ্গেও অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত – তার বহু কবিতা যেমন গানে রূপান্তরিত হয়েছে, তেমনই তার উপন্যাস, গল্প বা নাটকেও বিশিষ্ট ভূমিকা নিয়েছে তার গান। তার গানের মূল উৎস হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের ঠুমরি শৈলী। প্রথম জীবনে লেখা করুণ ব্রাহ্ম ধর্মসঙ্গীত থেকে ছদ্ম-কামোদ্দীপক লঘু সঙ্গীত – রবীন্দ্রনাথের গান সকল প্রকার মানবিক আবেগকেই সুরবদ্ধ করেছে।[২০] বিভিন্ন প্রকার শাস্ত্রীয় রাগের সুরগত সৌন্দর্যকে প্রতিফলিত করেছে এই গানগুলি। কখনও কখনও কোনো নির্দিষ্ট রাগের তান ও ছন্দকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে অনুসরণ করেছে। আবার কখনও রচনার সৃষ্টিসৌকর্যকে উজ্জ্বল করে ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি ব্যবহার করেছেন একাধিক রাগের উপাদান।[২১] শুধু হিন্দুস্তানি সংগীতই নয়, রবীন্দ্রনাথের গানে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে কর্ণাটিক শাস্ত্রীয় সংগীত, বাংলা লোকসঙ্গীত এমনকি ইংরেজি ব্যালাড ও স্কটিশ লোকগীতিও। ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী প্রদত্ত একটি তালিকা অনুসারে, রবীন্দ্রনাথের ভাঙা গান, অর্থাৎ, অপরের সঙ্গীত থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রচিত গানের সংখ্যা ২৩৪।[২২] স্বরচিত কবিতা ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ সুর দেন বিভিন্ন বেদগান এবং বিদ্যাপতি, গোবিন্দদাস, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয়কুমার বড়াল ও সুকুমার রায়ের গীতিকবিতাতেও। ভারতের জাতীয় স্তোত্র বন্দেমাতরম-এর সুরও রবীন্দ্রনাথই দেওয়া।
রবীন্দ্রসঙ্গীতের আবেগময়ী শক্তি ও সৌন্দর্যের আকর্ষণ বাঙালি সমাজে অমোঘ। মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় এই প্রসঙ্গে লেখা হয়, "বাংলায় এমন কোনো শিক্ষিত গৃহ নেই যেখানে রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়া বা অন্ততপক্ষে গাওয়ার চেষ্টা করা হয় না... এমনকি অশিক্ষিত গ্রামবাসীরাও তার গান গেয়ে থাকেন।" দি অবজার্ভার-এর আর্থার স্ট্রেঞ্জওয়েজ তার মিউজিক অফ হিন্দুস্তান রচনায় অবাঙালিদের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, এই গানগুলি হল "vehicle of a personality ... [that] go behind this or that system of music to that beauty of sound which all systems put out their hands to seize." [২৩] বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে রবীন্দ্রনাথেরই রচনা। তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি দুটি রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের স্রষ্টা। এছাড়াও, বিশিষ্ট সেতার বাদক বিলায়েৎ খান, সরোদিয়া বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ও আমজাদ আলি খানের বাদনশৈলীকেও বিশেষভাবে প্রভাবিত করে রবীন্দ্রসংগীত।[২৪] গীতবিতান সংকলনে সংগৃহীত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সব গান।
Remove ads
চিত্রকলা
সারাংশ
প্রসঙ্গ

ষাট বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ চিত্রাঙ্কণ শুরু করেন। চিত্রকলায় তার কোন প্রথাগত বা আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না। খেলার ছলেই তিনি আঁকতে শুরু করেছিলেন, তারপর একসময় তা’নেশায় পরিণত হয়। রবীন্দ্রনাথের ছবিগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, মুখমণ্ডল বা মুখাবয়বের ছবি ; দ্বিতীয়ত, অদ্ভুত কাল্পনিক প্রাণীর ছবি ; তৃতীয়ত, প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি। এর বাইরেও ছবি আছে ; কিন্তু অধিকাংশ ছবি উল্লিখিত তিনটির যে কোন একটি ভাগে পড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের আঁকা আত্মপ্রতিকৃতিও একাধিক। এমনকী "ফিমেইল ন্যুডও" তিনি এঁকেছেন। মুখাবয়ব বা মুখমণ্ডল আঁকার প্রতি তার বিশেষ পক্ষপাত ছিল। কোন কোন ছবিতে এমন কিছু বিষয়বস্তু আছে যা অভারতীয়,যেমন অপেরার মতো নাটকীয় দৃশ্য, খ্রিষ্টিয় নানের অবয়ব ইত্যাদি। রবীন্দ্রনাথ ছবি এঁকেছেন অদ্ভুতভাবে ; তার কাগজের মাপ ঠিক ছিল না ; ঠিক ছিল না রংয়ের। ভালো মানের সামগ্রী না-হওয়ায় বেশ কিছু ছবি অপুনরুদ্ধারণীয়ভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। কখনো কলম, কখনো পেন্সিল, কখনো তুলি এমনকী ওভারকোটের হাতায় রং মাখিয়ে পর্যন্ত এঁকেছেন। এভাবেই আড়াই হাজারেরও বেশি ছবি এঁকেছেন তিনি। আত্মপ্রত্যয়ের অভাব ছিল : ফলে, মহৎ ছবি সৃষ্টির চেয়ে অঙ্কনটি আদৌ ছবি হচ্ছে কি-না তাই নিয়ে তিনি সদা ভাবিত ছিলেন: "ছবিটা ছবি হলো কিনা" সেটাই দেখতে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
দক্ষিণ ফ্রান্সের একদল শিল্পীর উৎসাহে তিনি প্যারিসে প্রথম তার ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। এরপর সারা ইউরোপে সফলভাবে প্রদর্শিত হতে থাকে তার চিত্রাবলি।[২৫] ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিসের পিগ্যাল আর্ট গ্যালারিতে তার প্রথম শিল্প প্রদর্শনীর সময় থেকেই রবীন্দ্রনাথের ছবি আলোচনা ও সমালোচনার বিষয়বস্তু। কবিতা ও গানের আঙ্গিকে রবীন্দ্রনাথ যে কথা বলতে পারেন নি, সেই অসৌন্দর্য, কিম্ভূত আর অসুরেরই প্রকাশ তার চিত্রকলা। রবীন্দ্রনাথের চিত্রশৈলীর বৈশিষ্ট্য ছিল নান্দনিকতার অত্যাশ্চর্য প্রদর্শনী ও বর্ণময়তা। প্রিমিটিভ আর্টে যে পরিশীলনহীন প্রাকৃত শক্তি দেখা যায়, তার ছবিতে সেই শক্তির স্ফূরণ লক্ষ্য করা যায় ; দেখা যায় জ্যামিতিক আকার, কৌণিকতা, রঙের উগ্রতা। এডভার্ড মুঙ্খ বা এমিল্ নোলদের অঙ্কনরীতিরও ছায়াসম্পাত আছে রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু ছবিতে। অবশ্য কারো কারো মতে তার ছবিতে প্রোটানোপিয়া (বর্ণান্ধতা) বা বিশেষ কিছু রঙের প্রতি (রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে লাল-সবুজ) অযথার্থ প্রয়োগের উদাহরণেরও দেখা মেলে। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য একাধিক শৈলী আয়ত্ত্ব করেছিলেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য উত্তর নিউজিল্যান্ডের লোকশিল্প, কানাডার পশ্চিম উপকূলের (ব্রিটিশ কলম্বিয়া) হাইদা খোদাই চিত্রশিল্প, এবং ম্যাক্স পেচস্টেইনের কাঠখোদাই।[২৬] নিজের হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রেও রবীন্দ্রনাথ শিল্পসচেতন ছিলেন। সাধারণ রেখাঙ্কণের সৌন্দর্যায়ণ, কাটাকুটি, সাধারণ ছন্দোময় নকশার মাধ্যমে পাণ্ডুলিপিতে শব্দগুলির শৈল্পিক উপস্থাপনার মাধ্যমে তিনি বহু অপূর্ব নকশাচিত্র অঙ্কণ করেন।
Remove ads
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads