শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

মনমোহন সিং

ভারতের ত্রয়োদশ প্রধানমন্ত্রী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

মনমোহন সিং
Remove ads

মনমোহন সিং[] (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ – ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪)[][] একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও আমলা। তিনি ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ভারতের ত্রয়োদশ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীনরেন্দ্র মোদীর পর তিনি চতুর্থ দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।[] ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য মনমোহন সিং ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী।[] এছাড়া নেহরুর পর তিনি প্রথম পাঁচবছরের মেয়াদ সম্পন্ন করার পর পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন।[][]

দ্রুত তথ্য মনমোহন সিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ...

বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গাহ জনপদে জন্ম মনমোহন সিঙের পরিবার ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর ভারতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট লাভ করার পর মনমোহন ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে কাজ করেছিলেন। পরে ললিত নারায়ণ মিশ্র তাকে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন, আর সেই সময় থেকেই তার আমলাতান্ত্রিক জীবন শুরু। ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে মনমোহন ভারত সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, যেমন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা (১৯৭২–১৯৭৬), রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর (১৯৮২–১৯৮৫) এবং পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান (১৯৮৫–১৯৮৭)।[]

১৯৯১ সালে ভারত এক চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল। তখন সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পি. ভি. নরসিংহ রাও অরাজনৈতিক মনমোহনকে অর্থমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। কয়েক বছর ধরে তীব্র বিরোধিতা মুখোমুখি হয়েও ভারতে অর্থনৈতিক উদারীকরণের জন্য তিনি বিভিন্ন সাংগঠনিক সংস্কার করেছিলেন, যার ফলে অর্থনৈতিক সংকট ব্যাহত করতে সাফল্য এনেছিল, আর এর জন্য মনমোহন বিশ্ব দরবারে এক মুখ্য সংস্কারপন্থী অর্থনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন। কিন্ত নরসিংহের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে সরকার গঠন করতে পারেনি। ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকার চলাকালীন মনমোহন সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন।

২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর কংগ্রেসের নেতৃত্বে সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) ক্ষমতায় আসার পর এর সভাপতি সোনিয়া গান্ধী অপ্রত্যাশিতভাবেই মনমোহনকে প্রধানমন্ত্রীর পদ দিয়েছিলেন। তার প্রথম মন্ত্রিসভা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রনয়ণ ও প্রকল্প নির্বাহ করেছিল, যেমন জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন (এনআরএইচএম), বিশিষ্ট পরিচয় প্রাধিকরণ (ইউআইডিএআই), গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (এমজিএনআরইজি) এবং তথ্য জানার অধিকার আইন (আরটিআই)। ২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক অসামরিক পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা এবং বামফ্রন্ট দলের অসহযোগিতার ফলে মনমোহনের সরকার প্রায় পতনের মুখে পড়েছিল।[] ২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও ভারত মিলে ব্রিক্‌স গঠিত হয়েছিল।[] মনমোহনের সময় ভারতের অর্থনীতি দ্রুতহারে বৃদ্ধিলাভ করছিল।[১০][১১]

২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে ইউপিএ পুনরায় সরকার গঠন করেছিল আর মনমোহনের প্রধানমন্ত্রিত্ব বহাল ছিল। তার দ্বিতীয় মেয়াদ সম্পন্ন হওয়ার পর ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামলেন না।[১২] মনমোহন কোনোদিনই লোকসভার সদস্য ছিলেন না কিন্তু তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি আসাম রাজ্যসভা কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তারপর ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি রাজস্থান রাজ্যসভা কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।[১৩][১৪]

Remove ads

শৈশব ও শিক্ষা

সারাংশ
প্রসঙ্গ

১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গাহ জনপদে এক পাঞ্জাবি শিখ শুষ্ক ফল বিক্রেতার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা গুরমুখ সিং কোহলি ও মাতা অমৃত কৌর।[১৫][১৬] কম বয়সেই তিনি তার মাতাকে হারান।[১৭][১৮] তার খুবই আদরের পিতামহী জমনা দেবী তাকে মানুষ করেছিলেন।[১৫][১৮]

মনমোহন প্রথমদিকে এক স্থানীয় গুরুদ্বারে পড়াশুনা করেছিলেন। সেখানে তিনি উর্দুপাঞ্জাবি শিখেছিলেন।[১৯] ১৯৩৭ সালের ১৭ এপ্রিলে তিনি এক স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন, আর সেখানে তিনি চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত, অর্থাৎ ১০ বছর বয়স অবধি উর্দু ভাষায় পড়াশুনা করেছিলেন। তারপর তিনি ও তার পরিবার পেশাওয়ারে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন।[১৫][১৯][২০] সেখানে তিনি উচ্চ-প্রাথমিক খালসা বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন।[১৯] সেখানে তিনি ১৯৪৭ সালের গ্রীশ্মকালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় বসেছিলেন।[১৫] বহু বছর পরে তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়েও মনমোহন তার আপাতভাবে হিন্দি বক্তৃতাকে উর্দু লিপি বা কখনো কখনো গুরুমুখী লিপিতে লিখতেন।[২১]

ভারত বিভাজনের পর মনমোহনের পরিবার বর্তমান উত্তরাখণ্ডের হলদোয়ানিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল।[১৭] ১৯৪৮ সালে তারা অমৃতসরে চলে এসেছিল আর সেখানে তিনি হিন্দু কলেজে পড়াশুনা করেছিলেন।[১৭][২২] এরপর তিনি চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ও পরে হোশিয়ারপুরে[২৩][২৪][২৫] অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা করেছিলেন এবং যথাক্রমে ১৯৫২ ও ১৯৫৪ সালে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। তিনি তার সমগ্র উচ্চশিক্ষা জীবনে প্রথম হতেন। ১৯৫৭ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়তে অর্থনীতিতে ট্রাইপোজ লাভ করেছিলেন। তিনি সেন্ট জনস কলেজের সদস্য ছিলেন।[২৬]

কেমব্রিজের পর তিনি ভারতের চণ্ডীগড়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।[২৭] ১৯৬০ সালে ডক্টর অব ফিলোসফি (ডিফিল) পড়াশুনার জন্য তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। ১৯৬২ সালে অর্থনীতিবিদ ইয়ান লিটলের পরিদর্শনে তিনি "India's export performance, 1951–1960, export prospects and policy implications"[] নামক একটি অভিসন্দর্ভ রচনা করেছিলেন, যার ভিত্তিতে তিনি "India's Export Trends and Prospects for Self-Sustained Growth"[] নামক একটি বই প্রকাশ করেছিলেন।[২৮]

Remove ads

প্রাথমিক কর্মজীবন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ডিফিল-এ পড়াশুনা শেষ করার পর মনমোহন ভারতে ফিরে এসেছিলেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের বরিষ্ঠ প্রভাষক ছিলেন। ১৯৫৯ থেক ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের রিডার ছিলেন আর ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।[২৯] তারপর ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনের জন্য কাজ করেছিলেন।[২৬] পরে অর্থনীতিবিদ হিসাবে মনমোহনের প্রতিভার স্বীকৃতি হিসাবে ললিত নারায়ণ মিশ্র তাকে বিদেশি বাণিজ্য মন্ত্রকের উপদেষ্টা হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন।[৩০]

১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইকোনমিক্সে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।[২৬][৩১]

১৯৭২ সালে মনমোহন অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৬ সালে তিনি ঐ মন্ত্রকের সচিব ছিলেন।[২৬] ১৯৮০–৮২ সালে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অর্থমন্ত্রিত্বে মনমোহনকে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।[২৬] ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি পরিকল্পনা কমিশনের উপসভাপতি ছিলেন।[১৬] পরিকল্পনা কমিশনের পর ১৯৮৭ থেকে নভেম্বর ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভার অর্থনৈতিক চিন্তাশালা সাউথ কমিশনের মুখ্য সচিব ছিলেন।[৩২]

১৯৯০ সালের নভেম্বরে তিনি জেনেভা থেকে ভারতে ফিরে এসেছিলেন এবং চন্দ্র শেখরের প্রধানমন্ত্রিত্বে তিনি তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন।[২৬] ১৯৯১ সালের মার্চে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভাপতি হয়েছিলেন।[২৬]

Remove ads

রাজনৈতিক কর্মজীবন

সারাংশ
প্রসঙ্গ

অর্থমন্ত্রী

১৯৯১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি. ভি. নরসিংহ রাও মনমোহনকে তার অর্থমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করেছিলেন। ২০০৫ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্ক টালির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন যে নরসিংহের মুখ্যসচিব যখন তাকে জানিয়েছিলেন যে মনমোহন অর্থমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন, তখন তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পরের দিন সকালে তাকে খুঁজে পেয়ে বিরক্তির স্বরে তাকে রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথগ্রহণের জন্য জামাকাপড় পরে আসার আদেশ দিয়েছিলেন। আর তখন থেকেই মনমোহনের রাজনৈতিক কর্মজীবনের সূচনা।[২৭]

১৯৯১ সালে ভারতের রাজস্ব ঘাটতির হার স্থূল অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮.৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল, বিনিময় ভারসাম্য ঘাটতির হার অত্যন্ত বেশি ছিল এবং বর্তমান অ্যাকাউন্ট ঘাটতির হার জিডিপি-র ৩.৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।[৩৩] ভারতের বিদেশি ভাণ্ডারের মূল্য ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারও ছিল না, যা দিয়ে কেবল ২ সপ্তাহের আমদানির জন্য পরিশোধ করা সম্ভব।[৩৪] এর তুলনায় ২০০৯ সালে ভারতের বিদেশি ভাণ্ডারের মূল্য ৬০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।[৩৫]

মনমোহন নরসিংহ ও তার দলকে ব্যাখ্যাসহ বলেছিলেন যে ভারত এক নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।[৩৪] তবে দলের র‍্যাঙ্ক ও ফাইল নিয়ন্ত্রণমুক্তির বিরোধিতা করেছিল।[৩৪] তাই পি. চিদম্বরম ও মনমোহন দলকে বুঝিয়েছিলেন যে অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত না করলে এর পতন অবশ্যম্ভাবী।[৩৪] দলকে হতাশ করে নরসিংহ মনমোহনকে ভারতের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার অনুমতি দিয়েছিলেন।[৩৪]

এরপর মনমোহন অনুমতি রাজের অবসান ঘটিয়েছিলেন,[৩৪] অর্থনীতিতে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ সংকুচিত করেছিলেন আর আমদানি শুল্ক কমিয়েছিলেন।[৩৩][৩৬] এইভাবে অর্থনীতির উদারীকরণ এবং ভারতের সমাজবাদী অর্থনীতিকে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে পরিবর্তনের জন্য নরসিংহ ও মনমোহন বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়িত করেছিলেন। এর ফলে লাইসেন্স রাজ প্রথার অবসান ঘটেছিল, যা বেসরকারি ব্যবসার সমৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছিল। তারা প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) পথে বাধাসমূহ অপসারিত করেছিলেন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলির বেসরকারীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। তবে এইসব সংস্কারের পরও অন্যান্য খাতে রাও সরকারের অদক্ষতার জন্য ১৯৯৬ সালে তার দল নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল। ভারতকে এক বাজার অর্থনীতির দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য মনমোহন সিঙের ভূমিকার প্রশংসা করে পি. চিদম্বরম একে চীনের অর্থনীতিতে তেং শিয়াওফিঙের ভূমিকার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।[৩৭]

১৯৯২-এ ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রাতিভাব্য কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য ১৯৯৩ সালে এক সংসদীয় তদন্ত প্রতিবেদন মনমোহনের মন্ত্রিসভার সমালোচনা করেছিল, যার ফলে মনমোহন অর্থমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও মনমোহনের ইস্তফা মঞ্জুর করেননি, বরং তিনি ঐ প্রতিবেদনে সরাসরি অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।[৩৮]

রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা (১৯৯৮–২০০৪)

১৯৯১ সালে আসাম রাজ্যের বিধানসভা মনমোহনকে সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় নির্বাচিত করেছিল।[৩৯] পরে ১৯৯৫, ২০০১, ২০০৭[১৬] ও ২০১৩ সালে তাকে পুনর্নির্বাচিত করা হয়েছিল।[৪০] ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় থাকাকালীন মনমোহন রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি সাধারণ নির্বাচনে দক্ষিণ দিল্লি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, কিন্তু সেই আসন তিনি জয়লাভ করতে পারেননি।[৪১]

Remove ads

ভারতের প্রধানমন্ত্রী (২০০৪–২০১৪)

সারাংশ
প্রসঙ্গ

প্রথম মেয়াদ (২০০৪–২০০৯)

Thumb
ভারতের রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আবদুল কালাম মনমোহন সিংকে সরকার গঠনের ক্ষমতা দান করছেন, ১৯ মে ২০০৪।

২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকারের অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস লোকসভা আসনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। কংগ্রেস মিত্রদলদের নিয়ে সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) গঠন করে সরকার গঠন করেছিল। এর সভাপতি সোনিয়া গান্ধী অপ্রত্যাশিতভাবে টেকনোক্র্যাট মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রিত্বের ইউপিএ প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। যদিও মনমোহন কোনো সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেননি, তা সত্ত্বেও বিবিসি-র মতে, বিশেষ করে তিনি ভারতীয় প্রশাসনের দুর্নীতির কলঙ্কমুক্ত রাজনীতিবিদ হিসাবে পরিচিত হওয়ায় তিনি বিশাল জনসমর্থন লাভ করেছিলেন।[৪২] ২০০৪ সালের ২২ মে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেছিলেন।[৪৩][৪৪]

অর্থনীতি

১৯৯১ সালে অর্থমন্ত্রী হিসাবে মনমোহন সিং লাইসেন্স রাজ প্রথার অবসান ঘটিয়েছিলেন, যা দশকের পর দশক জুড়ে শ্লথ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও দুর্নীতির উৎস। তিনি ভারতে অর্থনীতির উদারীকরণ করেছিলেন, যার ফলে দেশের উন্নয়নের গতি দ্রুতহারে বৃদ্ধিলাভ করছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মনমোহন ভারতীয় বাজারের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছিলেন, যার ফলে তিনি এইসব বিষয়ে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছিলেন। মনমোহন ও তার অর্থমন্ত্রী পি. চিদম্বরমের সময় ভারতের অর্থনীতি বৃদ্ধির হার ৮–৯%। ২০০৭ সালে ভারত তার সর্বোচ্চ জিডিপি বৃদ্ধির হারে (৯%) পৌঁছেছিল, যার ফলে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে দ্রুতহারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত প্রধান অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছিল।[৪৫][৪৬] ২০০৫ সালে মনমোহনের মন্ত্রিসভা মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন (এমজিএনআরইজিএ) পাস করেছিল।[৪৭]

মনমোহন সিং সরকার পূর্ববর্তী অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের স্বর্ণ চতুর্ভুজ ও মহাসড়ক আধুনিকীকরণ প্রকল্প বহাল রেখেছিল।[৪৮] এছাড়া মনমোহন ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির সংস্কারের কাজ করেছিলেন।[৪৯] তার অর্থ মন্ত্রক কৃষকদের ঋণ মকুবের কাজ করেছিল এবং শিল্পপন্থী নীতি গ্রহণ করেছিল।[৫০] ২০০৫ সালে মনমোহন সিং সরকার বিক্রয় করের জায়গায় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) চালু করেছিল। ২০০৭-২০০৮ আর্থিক সংকট ভারতকেও প্রভাবিত করেছিল।[৫১]

স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা

২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও তার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন (এনএইচআরএম) চালু করেছি, যা প্রায় পাঁচ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীদের সঞ্চালিত করেছিল। মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাক্‌স এই স্বাস্থ্য উদ্যোগের প্রশংসা করেছিলেন।[৫২] ২০০৬ সালে মনমোহন সিং সরকার অখিল ভারতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান সংস্থান (এইমস), ভারতীয় প্রযুক্তিক প্রতিষ্ঠান (আইআইটি), ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটস অব ম্যানেজমেন্ট (আইআইএম) ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ২৭% আসনকে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিদের (ওবিসি) সংরক্ষণের প্রস্তাবকে বাস্তবায়িত করেছিল, যার ফলে এক সংরক্ষণ বিরোধী প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছিল।[৫৩][৫৪][৫৫]

২০০৯ সালের ২ জুলাইয়ে মনমোহন সিঙের মন্ত্রিসভা শিশুদের বিনামূল্য ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার আইন পাস করেছিল, যা সংক্ষেপে "শিক্ষাধিকার আইন" (আরটিই) নামেও পরিচিত। অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, গুজরাত, পাঞ্জাব, বিহার, মধ্যপ্রদেশহিমাচল প্রদেশ জুড়ে মোট ৮টি আইআইটি চালু করা হয়েছিল।[৫৬] এছাড়া সিং সরকার বাজপেয়ী সরকারের সর্বশিক্ষা অভিযান বহাল রেখেছিল। এই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং দ্বিপ্রহরিক ভোজন বা মিড-ডে মিল ব্যবস্থা চালু ও উন্নয়ন।[৫৭]

স্বরাষ্ট্রনীতি

মনমোহন সিং সরকার বেআইনি কার্যকলাপ (নিবারণ) আইনের (ইউএপিএ) সংশোধনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে মজবুত করেছিল। ২০০৮ সালের মুম্বই জঙ্গি হামলার পর সন্ত্রাসবাদ দমনের জন্য এক কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল, যার ফলে রাষ্ট্রীয় অনুসন্ধান সংস্থা (এনআইএ) গঠিত হয়েছিল।[৫৮] এছাড়া ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় বিশিষ্ট পরিচয় প্রাধিকরণ (ইউআইডিএআই) গঠন করা হয়েছিল, যা প্রস্তাবিত বহুমুখী জাতীয় পরিচয় কার্ড (পরে আধার নামে পরিচিত) বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। জাতীয় নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শাসন সহজতর করা এর উদ্দেশ্য।[৫৯]

মনমোহন সিং সরকার কাশ্মীর অঞ্চলকে সুস্থিত করার জন্য সেখানে এক বৃহৎ পুনর্গঠনের উদ্যোগ শুরু করেছিল। কিন্তু সেখানে কিছুক্ষণের জন্য সাফল্য থাক্লেও ২০০৯ সাল থেকে বিদ্রোহ ও সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধিলাভ করেছিল।[৬০] তবে সিং সরকার উত্তর-পূর্ব ভারতে সন্ত্রাসবাদ কমাতে সফল হয়েছিল।[৬০]

২০০৫ সালে সংসদের উদ্দেশে এক বক্তৃতায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তিনি ১৯৮৪ শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় রক্তলীলার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন, যা বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।[৬১]

বিদেশনীতি

Thumb
হোয়াইট হাউসে মনমোহন ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ. বুশ
Thumb
হোয়াইট হাউসে মনমোহন ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা

মনমোহন সিং পি. ভি. নরসিংহ রাও দ্বারা গৃহীত বাস্তবধর্মী বিদেশনীতি বজায় রেখেছিলেন, যা তার পূর্বসুরী অটলবিহারী বাজপেয়ীও বজায় রেখেছিলেন। মনমোহন বাজপেয়ীর পাকিস্তান–ভারত শান্তি প্রক্রিয়া বজায় রেখেছিলেন। পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষ নেতাদের উচ্চ-পর্যায়ের সফর তার কার্যকালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

এছাড়া মনমোহনের কার্যকালে চীনের সাথে সীমান্ত বিবাদ বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ২০০৬ সালের নভেম্বরে চীনের রাষ্ট্রপতি হু জিনতাও ভারত সফরে এসেছিলেন। পরে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে মনমোহন বেইজিং সফরে গিয়েছিলেন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা নাথু লা গিরিপথ ২০০৬ সালে পুনরায় উন্মুক্ত হয়েছিল, যা চীন–ভারত সম্পর্কের অন্যতম উন্নতি।[৬২] ২০১৩ সালের ১৯–২১ মে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খেছিয়াং ভারত সফরে (দিল্লি-মুম্বই) এসেছিলেন।[৬২] দিল্লি-বেইজিং, কলকাতা-খুনমিংবেঙ্গালুরু-ছেংতু শহরের মধ্যে ভগিনী শহর অংশীদারি স্থাপিত হয়েছিল। ২০১০ সালে গণচীন ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য সঙ্গী ছিল।[৬৩]

মনমোহন সিং সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার প্রতি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসামরিক পরমাণু চুক্তি বিষয় প্রারম্ভিক আলোচনার জন্য মনমোহন ২০০৫ সালের জুলাই মাসে মার্কিন দেশ সফর করেছিলেন। এর পর ২০০৬ সালের মার্চে জর্জ ডব্লিউ বুশের ভারত সফরের সময় পারমাণবিক চুক্তির ঘোষণা করা হয়েছিল, যার ফলে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের আণবিক জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পাবে এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ভারতে অসামরিক পারমাণবিক চুল্লি পরিদর্শনের অনুমতি পাবে। দু বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা, পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদনের পর ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। স্বাক্ষরের সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।[৬৪] মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সময়ে মনমোহন হোয়াইট হাউসে প্রথম দাপ্তরিক রাষ্ট্র সফর সম্পন্ন করেছিলেন। ২০০৯ সালের নভেম্বরে এই সফর সম্পন্ন হয়েছিল এবং বাণিজ্য ও পারমাণবিক শক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল।[৬৫]

Thumb
মনমোহন সিঙের সাথে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ।

মনমোহনের সময়ে ভারতের সঙ্গে জাপান, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাষ্ট্রের (যেমন জার্মানি, ফ্রান্স) সম্পর্ক উন্নত হয়েছিল। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় ছিল এবং ইরান-পাকিস্তান-ভারত গ্যাস পাইপলাইন নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ২০০৬ সালের এপ্রিলে নয়াদিল্লিতে ভারত–আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, আর আফ্রিকার ১৫টি রাষ্ট্রের নেতাবর্গ এতে অংশগ্রহণ করেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকাব্রাজিলের মতো উন্নয়ন্শীল দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হয়েছিল। মনমোহন সিং ২০০৩ সালের "ব্রাসিলিয়া ঘোষণা"-র পর প্রতিষ্ঠিত অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছিলেন এবং আইবিএসএ ডায়ালগ ফোরাম গঠিত হয়েছিল।[৬৬]

মনমোহন সিং সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করতে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিল। ২০০৩ সাল থেকে এই দুই দেশের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মুদ্রা বিনিয়োগ হয়েছিল,[৬৭] আর রাশিয়াকে টেক্কা দিয়ে ইসরায়েল ভারতের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা সঙ্গী হয়ে উঠেছিল।[৬৮] যদিও বিশেষত ভারতে সরবরাহ করা হবে এমন রুশ যুদ্ধাস্ত্রের বিলম্বতা ও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কিছু কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল,[৬৯] তা সত্ত্বেও এই দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক যথেষ্ট দৃঢ় ছিল। প্রতিরক্ষা, পারমাণবিক শক্তি ও মহাকাশীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দুই রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল।[৭০]

কেলেঙ্কারি

সংসদে মহা হিসাব-নিয়ামক ও নিরীক্ষকের (সিএজি) ২০১২ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে যখন মনমোহন সিং কয়লামন্ত্রী ছিলেন তখন আদেশ প্রক্রিয়া ছাড়াই কয়েক চাঁই কয়লা কিছু বেসরকারি কোম্পানিকে বণ্টন করা হয়েছিল, যার ফলে রাষ্ট্রের ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১.৮৫ লাখ কোটি টাকা।[৭১][৭২]

দ্বিতীয় মেয়াদ (২০০৯–২০১৪)

২০০৯ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে ১৩ মে তারিখের মধ্যে পাঁচ দফায় পঞ্চাদশ লোকসভা নির্বাচন আয়োজিত হয়েছিল। ২০০৯ সালের ১৬ মে-তে এর ফলাফল ঘোষিত হয়েছিল।[৭৩] অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, কেরল, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্ররাজস্থানে বলিষ্ঠ ফলাফলের ফলে মনমোহন সিঙের নেতৃত্বে সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট (ইউপিএ) পুনরায় সরকার গঠন করেছিল। ১৯৬২ সালে জওহরলাল নেহরুর পর ২০০৯ সালে মনমোহন প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি একবার পাঁচবছরের মেয়াদ সম্পন্ন করার পর পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন।[][] কংগ্রেস ও তার সমর্থক দলসমূহ একত্রে লোকসভায় ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৩২২টি আসন জয় করেছিল, অর্থাৎ চিন্তামুক্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। কংগ্রেস সমর্থক দলের মধ্যে রয়েছে ইউপিএ-এর সদস্য এবং তার বাইরে বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), সমাজবাদী পার্টি (এসপি), জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) (জেডিএস), রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও অন্যান্য ক্ষুদ্র দল।[৭৪]

২০০৯ সালের ২২ মে মনমোহন সিং রাষ্ট্রপতি ভবনের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেছিলেন।[৭৫][৭৬]

বিদেশনীতি

Thumb
চীনে ২০১১ ব্রিক্‌স শীর্ষ সম্মেলনে মনমোহন সিং-সহ দিমিত্রি মেদভেদেভ, হু জিনতাও, দিলমা রুসেফজ্যাকব জুমা

২০০৯ সালে মনমোহন ব্রিক্‌স প্রতিষ্ঠার অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন এবং এই আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকে অনেকসময় উত্থানশীল অর্থনৈতিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়।[]

২০১১ সালে লিবীয় গৃহযুদ্ধ চলাকালীন ভারত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৯৭০ ও ১৯৭৩ নং প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত ছিল, যার ফলে লিবিয়াতে ন্যাটো বাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটবে।[৭৭] লোকসভায় লিবিয়াতে ন্যাটোর সামরিক ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে সর্বসম্মতভাবে এক প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল।[৭৮]

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে তার বক্তৃতায় মনমোহন লিবিয়া ও সিরিয়াতে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য পশ্চিমা শক্তিদের সমালোচনা করেছিলেন।[৭৯] মুয়াম্মর গাদ্দাফির হত্যা নিয়ে ভারত নীরব ছিল।[৮০][৮১] যদিও লিবীয় জাতীয় পরিবর্তনমূলক পরিষদকে স্বীকৃতিদানে ভারত শেষ রাষ্ট্রদের মধ্যে ছিল, সে লিবিয়া পুনর্গঠনে সহায়তার জন্য ঐ পরিষদের সঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়ে গিয়েছিল।[৮২] ২০১১ সালে ত্রিপোলিতে ভারতের কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করা হলেও ২০১২ সালের জুলাইতে ভারত পুনরায় সেখানে তার রাষ্ট্রদুত পাঠিয়েছিল।[৮৩]

কেলেঙ্কারি ও নারী নিরাপত্তা

তার দ্বিতীয় মেয়াদে মনমোহন সিং সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেমন ২জি স্পেকট্রাম মামলা২০১০ কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারি।[৮৪][৮৫][৮৬][৮৭][৮৮] ২০১৩ সালের এপ্রিলের এক জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটিতে (জেপিসি) ২জি মামলায় মনমোহনের ভূমিকা নিয়ে জেপিসির সদস্য যশবন্ত সিনহা তাকে আহ্বান করেছিলেন, কিন্তু তিনি উপস্থিত হননি।[৮৯] ২০১৭ সালে নরেন্দ্র মোদীর সময়ে ২জি মামলায় দোষীদের খালাস দেওয়া হয়েছিল।[৯০] এই রায়ের পর কংগ্রেস বলেছিল যে ভারতীয় জনতা পার্টি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে করা অসত্য প্রচারের কথা বেঁফাস হয়ে গিয়েছে এবং তারা মোদী ও অরুণ জেটলিকে জাতির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য প্ররোচিত করেছিল।[৯১]

২০১২ দিল্লি গণধর্ষণের পর মনমোহন শান্তির বার্তা দিয়েছিলেন আর বলেছিলেন যে হিংসা কোনো প্রয়োজন পূরণ করবে না।[৯২] টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তৃতায় তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ভারতে নারীর নিরাপত্তার জন্য সরকার সবরকম চেষ্টা চালাবে।[৯২] ধর্ষিতার শ্রদ্ধায় প্রধানমন্ত্রী ইংরেজি নববর্ষ উদ্‌যাপনের সমস্ত সরকারি কার্যকলাপ বাতিল করেছিলেন।[৯৩]

Remove ads

প্রধানমন্ত্রিত্বের পরবর্তী জীবন (২০১৪–২০২৪)

২০১৪ সালের ১৭ মে মধ্যাহ্নে মনমোহন সিঙের প্রধানমন্ত্রিত্ব সরকারিভাবে সমাপ্ত হয়েছিল। তিনি ২০১৪ সালের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। ২৬ মে পর্যন্ত তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং পরে নরেন্দ্র মোদী নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করেছিলেন।[৯৪][৯৫] মনমোহন সিং, কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, সাবেক রাষ্ট্রপতি এ. পি. জে. আবদুল কালামপ্রতিভা পাটিল এবং উপরাষ্ট্রপতি মহম্মদ হামিদ আনসারি মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।[৯৬]

২০১৬ সালে ঘোষণা করা হয়েছিল যে মনমোহন সিং চণ্ডীগড়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে জওহরলাল নেহরু চেয়ার পদে আসীন হবেন, তবে তিনি শেষ পর্যন্ত এটি হননি।[৯৭] ২০১৯ সালে তিনি রাজস্থান রাজ্যের জন্য রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন। তিনি এপ্রিল ২০২৪ সালে রাজ্যসভা থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং তার স্থানে সোনিয়া গান্ধী আসেন।[৯৮]

Remove ads

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৫৮ সালের মনমোহন সিং গুরুশরণ কাউরকে বিবাহ করেছিলেন। তাদের তিন কন্যাসন্তান ছিল: উপিন্দর সিং, দমন সিং ও অমৃত সিং।[৯৯] উপিন্দর সিং দিল্লির অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপিকা।[১০০] দমন সিং দিল্লির সেন্ট স্টিফেনস কলেজ ও গুজরাতের আনন্দের ইনস্টিটিউট অব রুরাল ম্যানেজমেন্টের স্নাতক। তিনি The Last Frontier: People and Forests in Mizoram গ্রন্থ ও Nine by Nine প্রবন্ধের লেখিকা।[১০১] অমৃত সিং আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের স্টাফ অ্যাটর্নি।[১০২] মনমোহনের জামাই অশোক পট্টনায়ক ভারতীয় পুলিশ সেবার (আইপিএস) ১৯৮৩ ব্যাচের আধিকারিক। ২০১৬ সালে তাকে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স গ্রিডের মুখ্য নির্বাহী আধিকারিক (সিইও) হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।[১০৩]

১৯৮৪ শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় মনমোহন সিংকে আক্রমণ করা হয়েছিল এবং তাকে সিটিজেনস রিলিফ কমিটিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল।[১০৪]

মনমোহন একজন নিরামিষাশী[১০৫]

মৃত্যু পর্যন্ত তিনি নয়াদিল্লির ৩, মতিলাল নেহরু মার্গের ভবনে বাস করতেন।[১০৬]

Remove ads

অসুস্থতা ও মৃত্যু

মনমোহন সিঙের হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে একাধিক বাইপাস সার্জারি হয়েছিল, আর ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে শেষবারের মতো এরকম বাইপাস সার্জারি হয়েছিল।[১০৭] ২০২০ সালের মে-তে মনমোহনের ঔষধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ফলে তাকে নয়াদিল্লির অখিল ভারতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান সংস্থানে (এইমস) ভর্তি করা হয়েছিল।[১০৮] ২০২১ সালের এপ্রিলে পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পরার পর মনমোহনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।[১০৯] ২০২১ সালের অক্টোবরে দুর্বলতা ও জ্বরের জন্য মনমোহনকে আবার এইমসে ভর্তি করা হয়েছিল।[১১০]

২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরে নয়াদিল্লিতে নিজগৃহে মনমোহন সিং অচেতন হয়ে গিয়েছিলেন। অচেতনা, হৃদরোগ ও বার্ধক্যজনিত সমস্যার জন্য তাকে নয়াদিল্লি এইমসের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছিল।[১১১][১১২][১১৩] হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে ৯২ বছর বয়সে তার জীবনাবসান হয়।[১১৪][১১৫][১১৬][১১৭] তার মৃত্যুতে সাতদিনের জন্য অর্থাৎ পরের বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছিল।[১১৮][১১৯][১২০] ২৮ ডিসেম্বরে দিল্লির নিগম বোধ ঘাটে মনমোহনের অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন করা হয়েছিল।[]

Remove ads

ডিগ্রি ও পদসমূহ

  • বি এ (সাম্মানিক) অর্থনীতি ১৯৫২; অর্থনীতিতে এম এ প্রথম শ্রেণি ১৯৫৮ পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, চন্ডিগঢ়, ভারত
  • অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণির ডিগ্রী অর্থনীতি, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট জনস কলেজে, কেমব্রিজ (১৯৫৭)
    • অর্থনীতির সিনিয়র লেকচারার (১৯৫৭-১৯৫৯)
    • রিডার (১৯৫৯-১৯৬৩)
    • অধ্যাপক (১৯৬৩-১৯৬৫)
    • আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধ্যাপক (১৯৬৯-১৯৭১)
  • অর্থনীতিতে ডি ফিল, ন্যুফিল্ড কলেজে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়,(১৯৮২)
  • দিল্লি স্কুল অফ ইকনমিক্স, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়
    • সাম্মানিক অধ্যাপক (১৯৯৬)
  • মুখ্য আধিকারিক, ফাইনান্সিং ফর ট্রেড সেকশন, ইউনাইটেড নেশনস সচিবালয়, নিউ ইয়র্ক
    • ১৯৯৬: অর্থনীতি বিষয়ক আধিকারিক
  • অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রক, ভারত (১৯৭১-১৯৭২)
  • মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, অর্থ মন্ত্রক, ভারত, (১৯৭২-১৯৭৬)
  • সাম্মানিক অধ্যাপক, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়, নতুন দিল্লি (১৯৭৬)
  • নির্দেশক, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (১৯৭৬-১৯৮০)
  • নির্দেশক, ভারতীয় শিল্প উন্নয়ন ব্যাঙ্ক (১৯৭৬–১৯৮০)
  • সচিব, অর্থ মন্ত্রক (অর্থনৈতিক বিষয় সমূহ বিভাগ), ভারত সরকার, (১৯৭৬-১৯৮০)
  • প্রশাসক, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (১৯৮২-১৯৮৫)
  • সহ অধ্যক্ষ, ভারতীয় যোজনা আয়োগ, (১৯৮৫-১৯৮৭)
  • অর্থনৈতিক বিষয় সমূহের উপর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা (১৯৯০-১৯৯১)
  • ভারতের অর্থমন্ত্রী (২১ জুন ১৯৯১ - ১৫ মে ১৯৯৬)
  • রাজ্য সভায় বিরোধী সংসদীয় দলনেতা (১৯৯৮ - ২০০৪)
  • ভারতের প্রধানমন্ত্রী (২২ মে ২০০৪ - ২২ মে ২০০৯)
  • ভারতের প্রধানমন্ত্রী (২৩ মে ২০০৯ - ২৬ মে ২০১৪)
Remove ads

নির্বাচনী ইতিহাস

আরও তথ্য সাল, নির্বাচন ...

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে

২০১৯ সালে মনমোহন সিঙের জীবনের উপর দি অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার (বঙ্গানুবাদ: "আকস্মিক প্রধানমন্ত্রী") নামক একটি বলিউড চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছিল। এর পরিচালক বিজয় গুট্টে, লেখক ময়াঙ্ক তিওয়ারি ও মুখ্যচরিত্রের ভূমিকায় অনুপম খের[১২১] সঞ্জয় বারু রচিত অনুরূপ নামে স্মৃতিকথা অনুসারে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছিল।[১২২][১২৩]

২০১৩ সালে হিন্দি গণমাধ্যম স্টার নিউজে (বর্তমান এবিপি নিউজ) সম্প্রচারিত টেলিভিশন ধারাবাহিক প্রধানমন্ত্রী-তে ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের বিভিন্ন নীতিমালা ও রাজনৈতিক কর্মজীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, আর সেখানে মনমোহন সিঙের কর্মজীবন নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।[১২৪]

Remove ads

আরও দেখুন

টীকা

  1. গুরুমুখী: ਮਨਮੋਹਨ ਸਿੰਘ, প্রতিবর্ণী. ম্যন্‌মোহ্যন্ সিঙ্গ্, উচ্চারণ [mənˈmoːɦən ˈsɪ́ŋɡ]
  2. বঙ্গানুবাদ: "ভারতের রপ্তানি কার্যসম্পাদন, ১৯৫১–১৯৬০, রপ্তানির ভবিষ্যৎ ও নীতির ব্যঞ্জনার্থ"
  3. বঙ্গানুবাদ: "ভারতের রপ্তানির গতিধারা এবং স্বয়ংসম্পন্ন বৃদ্ধির ভবিষ্যৎ"

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads