ভারতে বসবাসকারী আরব
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতীয় আরব হলেন আরব বংশোদ্ভূত মানুষ, যারা দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে এবং নিজেদের ভারতীয় হিসেবে উপস্থাপন করে। কয়েক সহস্রাব্দ ধরে ভারত ও আরব বিশ্বের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে।[1][2] ভারতের পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলগুলি বিশেষ করে মালাবার ও কোঙ্কন উপকূলগুলি সক্রিয় বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল, যেখানে আরব বণিকরা শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় যাওয়ার পথে প্রায়শ যেতেন। [3] মুসলিমদের ভারত বিজয়ের পর পর কয়েক শতাব্দীর ব্যবধানে বিভিন্ন আরব দেশ থেকে মুসলিমরা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও রাজ্যে বণিক ও দাঈ হিসেবে আগমন করেন এবং আন্তঃবিবাহের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থায়ী হয়ে যান।[1]
भारतीय अरब | |
---|---|
মোট জনসংখ্যা | |
৬০,০০০+ | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
অন্ধ্রপ্রদেশ ,পশ্চিমবঙ্গ ,বিহার ,তেলেঙ্গানা, গুজরাট , মধ্যপ্রদেশ , হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক , দিল্লি , কেরালা ও তামিলনাড়ু | |
ভাষা | |
আরবি, উর্দু, হিন্দি, তামিল, বাংলা | |
ধর্ম | |
সুন্নি ইসলাম | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
মাপ্পিলা মুসলমান, মারাক্কার, রোহিলা ও অন্যান্য ভারতীয় মুসলিম জাতিগোষ্ঠী |
প্রথম দিকের আরবেরা বণিক হিসাবে দক্ষিণ পশ্চিম ভারতের বর্তমান কেরালা রাজ্যের মালাবার উপকূলীয় অঞ্চলে এসেছিলেন।[4] ব্যবসা ছাড়াও ধর্মপ্রচারকের কয়েকটি দল ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এসেছিলেন। এই আরব বণিক ও ধর্মপ্রচারকদের অনেকেই স্থানীয় নারীদের সাথে আন্তঃবিবাহ করেন এবং ভারতে স্থায়ী হয়ে যান। মুসলমানদের ভারত বিজয়ের পরও অনেক আরব মুসলিম ভারতে থেকে যান। সেই আরবদের মিশ্র-জাতির বংশধরদের ঘনত্ব বর্তমান বিশেষ করে কেরালার কালিকট এবং মালাপ্পুরম জেলায় পাওয়া যায়। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের অর্থোডক্স গীর্জা ও মধ্যপ্রাচ্যের খ্রিস্টান আরব অর্থোডক্স চার্চের মধ্যে ঐতিহাসিক এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ভারত ও সিরিয়ার আরব অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে এবং তা তারা আজ অবধি বজায় আছে। [5]
আরবদের বংশধররা গুজরাটের ভারিয়াভ ও রান্দের গ্রামে বাস করে। হায়দ্রাবাদের চৌশরা হল হাদরামি বংশোদ্ভূত একটি আরব সম্প্রদায়, যাদের পূর্বপুরুষরা হায়দ্রাবাদের নিজামের সৈন্য হিসেবে কাজ করেন। [6] কর্ণাটকের উপকূলীয় অঞ্চলে মহীশুরের শাসক টিপু সুলতানের আমলে ইরাক থেকে আসাদি উপাধিধারী ফার্সিভাষী সুন্নি মুসলমানদের একটি দল ম্যাঙ্গালোরে আসে। তারা বনু আসাদের বংশধর বলে দাবি করে। এই জনসংখ্যার স্থানান্তর হায়দ্রাবাদের নিজাম এবং মহীশূরের টিপু সুলতান উভয়ের পক্ষেই হতে পারে। কারণ তাদের উভয়েরই এই জনসংখ্যার সাথে তাদের পূর্বপুরুষের যোগসূত্র ছিল। আসাফ জাহি রাজবংশ নিজেদের আরবের হিজাজ প্রদেশের বনু হাশিম আরব বংশের দাবি করে। এছাড়া কুরাইশি আনসারি উপজাতি ও সাহাবাদের অন্যান্য বংশধরদের মতো আদনানি বংশধরের অনেক আরবকে গুজরাট এবং কর্ণাটকে যুদ্ধের সময় দক্ষ বলে মনে করা হয়েছিল বলে দেশীয় রাজ্যে তাদের সামরিক বাহিনীতে নিযুক্ত করা হয়েছিল। কেরালায় হাদরামি বংশোদ্ভূত সৈয়দ থাঙ্গালরা ১৭ শতকের দিকে ইসলাম প্রচারের জন্য ধর্মপ্রচারক হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
দেশের উত্তরাঞ্চলে শিয়া সাইয়িদরাও শিয়া জাইদিদের মতো নিজেদের ইরাকের ওয়াসিত থেকে এসেছে বলে দাবি করে। তবে কেউ কেউ এই বংশসূত্র মিথ্যা দাবি করছে। দেশের সুন্নি সাইয়িদ সুফি ধর্মপ্রচারকরাও নিজেদের আরব বংশোদ্ভূত বলেন। বেশিরভাগ সুফি পারস্য থেকে হিজরত করেছিলেন। সুন্নি সাইয়্যেদরা ইমাম হাসান বা ইমাম হোসাইনের মাধ্যমে নিজেদের আরব বংশের দাবি করে এবং সেক্ষেত্রে তাদের নাম হাসানী, হোসাইনি, হাশমী, নকভি ও বুখারি হতে পারে। কেউ কেউ উভয়ের বংশধর দাবি করে এবং নিজেদের নাজীব আল-তারফাইন বা "উভয় পক্ষের বংশ" বলে অভিহিত করে। আব্দুল কাদের জিলানী ও মইনুদ্দিন চিশতির মত অনেক সুফিসাধক ও তাদের বংশধররা নিজেদেরকে নজীব আল-তারফাইন হিসেবে দাবি করেন। তবে অনেকে এই বংশকে মিথ্যা দাবি করেন।
সুন্নি শেখরাও নিজেদের আরব অভিবাসীদের বংশ বলেন দাবি করেন। তারা কুরাইশ গোত্রের অন্তর্গত এবং খেলাফতের রাশেদার চার মহান আমির, উমর ইবনুল খাত্তাব, আবু বকর সিদ্দিক, উসমান ইবনে আফফান ও আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি নিজেদের সম্পৃক্ত করে ফারুকী, সিদ্দিকী, উসমানী ও আলভি বলে অভিহিত করে। মূলত কুরাইশ গোত্রের সাথে তাদের বংশের পরিচয় পাওয়া যায় তাই শেখরা হলেন কুরাইশী। তবে কুরাইশ বংশের সাথে নিজেদের বংশসূত্র অস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে এমন অনেকেই নিজেদেরকে কুরাইশি বলে। আনসারী উপাধিধারী অনেকেই মদীনা মুনাওয়ারার আনসার সাহাবা ও আবু আইয়ুব আল-আনসারির মতো মহান সাহাবার সাথে নিজেদের বংশের যোগসূত্র দাবি করে। তবে বর্তমান শেখদের অনেকেই কায়স্থ ও রাজপুতের মতো হিন্দু বর্ণ থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে দাবি করা হয়।
এছাড়াও সৈয়দ জালালুদ্দিন সুরখ-পোশ বুখারী এবং তাঁর নাতি সৈয়দ জাহানিয়ান জাহাংশতের বংশধরের মাধ্যমে অনেকেই ইমাম আলী আল-হাদী (ইমাম নকী)-এর বংশধর থেকে নিজেদের বারো ইমামের বংশধর বলে দাবি করে। সুফি সাধক জালালুদ্দিন সুরখ পোশ ইসলাম প্রচারের জন্য আধুনিক পাঞ্জাবে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতীয় আরবরা আরবি ভাষা পরিত্যাগ করে উর্দুতে কথা বলা শুরু করেন। [7] আরবের প্রতিটি গোত্র সমান মর্যাদার অধিকারী; কিন্তু কুরাইশিদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হয় এই কারণে যে, তারা নবী মুহাম্মদ সাঃ এর গোত্র থেকে ছিল।[7] কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকেরা আজো কঠোরভাবে অন্তঃস্থিত রয়ে গেছে এবং গুজরাতিদের মতো স্থানীয় ভারতীয় নৃ-ভাষাবাদী সম্প্রদায়ের সাথে আন্তঃবিবাহের কার্যত কোনো ঘটনা নেই। [7]
অনুমান করা হয় যে, ভারতের বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যের আরব বংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম গোষ্ঠীগুলি ও পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অন্তত কয়েকটি আরব বংশ থেকে এসেছে। জেনেটিক বিশ্লেষণগুলি দেখায় যে, আরব ও অন্যান্য পশ্চিম এশীয় বংশ ভারতীয়দের মধ্যে বেশ সাধারণ। [8] [9]
বছর | জন. | ±% |
---|---|---|
১৯৭১ | ২৩,৩১৮ | — |
১৯৮১ | ২৮,১১৬ | +২০.৬% |
১৯৯১ | ২১,৯৭৫ | −২১.৮% |
২০০১ | ৫১,৭২৮ | +১৩৫.৪% |
২০১১ | ৫৪,৯৪৭ | +৬.২% |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.