Loading AI tools
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত আন্দোলন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
২০২৪-এর কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন আবার নতুনভাবে আলোচনায় আসে।[২১] ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছিল।[২২] ঐ পরিপত্রের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল কোটা বাতিল করা হয়েছিল।[২৩]
২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন | |||
---|---|---|---|
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের অংশ | |||
তারিখ | প্রথম পর্যায়: ৬-১০ জুন ২০২৪ (৪ দিন) দ্বিতীয় পর্যায়: ৩০ জুন – ২২ জুলাই ২০২৪ (৩ সপ্তাহ ও ১ দিন) তৃতীয় পর্যায়: ২৯ জুলাই ২০২৪ – (৩৬ জুলাই) ৫ আগস্ট ২০২৪[১] (৫ দিন) | ||
অবস্থান | |||
কারণ | ২০১৮ সালের সরকারি পরিপত্রকে বেআইনি ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ হাইকোর্ট কর্তৃক সরকারি চাকরিতে পূর্বেকার কোটাব্যবস্থা পুনর্বহাল | ||
লক্ষ্য | অধিকাংশ: বাংলাদেশের সকল সরকারি চাকুরিতে কোটার সংখ্যা হ্রাস অংশবিশেষ: কোটাব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিলুপ্তি | ||
পদ্ধতি |
উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
| ||
ফলাফল |
| ||
পক্ষ | |||
| |||
নেতৃত্ব দানকারী | |||
| |||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||
৫ জন সাংবাদিক নিহত এবং ২৫ জন আহত[১৯][২০] |
শুরুতে আন্দোলন সভা-সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের পরোক্ষভাবে “রাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করেন,[২৪] প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করে “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” এবং “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার” স্লোগান দেয়।[২৫] এর পরেরদিন ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ নষ্ট করার অভিযোগ আনেন।[২৬] একই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের উপর রড, লাঠি, হকি স্টিক, রামদা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়।[২৭] একই সাথে পুলিশও লাঠি, রাবার বুলেট দিয়ে হামলা করে। প্রতিবাদে আন্দোলনকারীও তাদের দিকে ইটের টুকরা ছুড়ে ও উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এসব হামলায় ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মত পুরো দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ জুলাই পর্যন্ত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অনান্য সংগঠন, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ দিয়ে ও ইন্টারনেট বন্ধ করেও আন্দোলন থামাতে কার্যত ব্যর্থ হলে সরকার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে এবং মাঠে সেনাবাহিনী নামায়। এইসব ঘটনায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী (প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী) ও আন্দোলনকারী আহত হওয়ার পাশাপাশি ৬৭৩ জনের অধিক নিহত হন।[১৩] এবং পুলিশ ৫০০ মামলা করে ১১,০০০-এর অধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে।[১৫] ২১ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে ও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। ২২ জুলাই এই বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে।[২৮]
২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের জন্য চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনের ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটাব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে সরকার। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থা বাতিল করে বাংলাদেশ সরকার একটি পরিপত্র জারি করে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই পরিপত্রে বলা হয়:[২৯]
“ | সরকার সকল সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকুরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৭/০৩/১৯৯৭ তারিখের সম(বিধি-১) এস-৮/৯৫(অংশ-২)-৫৬(৫০০) নং স্মারকে উল্লিখিত কোটা পদ্ধতি নিম্নরূপভাবে সংশোধন করিল:-
|
” |
উক্ত পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে অহিদুল ইসলামসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।[৩০] ২০২৪ সালের ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই পরিপত্র বাতিল করে রায় দেন। রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে একত্রিত হন। আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিকালীন সময় আন্দোলন স্থগিত থাকে। ছুটি শেষে পুনরায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শুরু হলেও ক্রমে এটি ব্যাপক আকার ধারণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্দান ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে যোগ দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেন। আন্দোলন চলাকালীন সময়েই ১০ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করে। আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের সাথে আদালতের কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তারা সরকারের কাছে কোটা সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান চাইছেন।[৩১]
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবদান আছে। পরবর্তীতে তারা একটি সমন্বয় কমিটি, আহবায়ক কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করে, যাদের নির্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের সদস্যরা আরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেওয়াতে ক্যাম্পাসগুলোতে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালায়। সংগঠকের এক সমন্বয়ের মতে তাদের সংগঠনে কোন একক উচ্চতম নেতা নেই। আগের কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সদস্যগণ সমন্বয়ক কমিটিতে রয়েছে। আন্দোলনের প্রয়োজনে বিতর্ক এড়াতে যেকোনো রাজনৈতিক ছাত্র অঙ্গসংগঠনের সদস্যদের এই আন্দোলনে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে।[৩২]
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠন নিম্নের দাবিগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেছে:[৩২]
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শত শত শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত হওয়ার প্রেক্ষিতে ২৯ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা রাষ্ট্রীয় শোককে[৩৪] প্রত্যাখান করে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন। সাথে সাথে দেশকে স্থিতিশীল করতে নয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।[৩৫] পরবর্তীতে তারা এই নয় দফা দাবিতে ৩ আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও ৪ আগস্ট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়।[৩৬] নয় দফা দাবিগুলো হলো[৩৭]:
৩০ জুলাই সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কর্তৃক কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের মুক্তিসহ ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো[৩৮]:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্র-নাগরিক ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে সমবেত হন। বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তরুণ যুবকরা শহীদ মিনার জড়ো হতে থাকেন। এসময় তাদের সঙ্গে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিতে দেখা যায় বয়স্ক নাগরিকদের।[৩৯] বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্যে একদফা দাবি ঘোষণা করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম[৪০]:
অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করেন আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ[৪১]:
এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানপাট বেলা ১১ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ সালে সরকারের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। ৬ জুন আদালতের রায়ের প্রতিবাদে ও কোটা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বিক্ষোভ করে। ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে।[৪২] ১০ জুন আন্দোলনকারীরা দাবি মেনে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় ও ঈদুল আযহার কারণে আন্দোলনে বিরতি ঘোষণা করে।[৪৩] ৩০ জুন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে।[৪৪] ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে ও তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে।[৪৫] এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিনারের সামনে অবস্থান নেয়।[৪৬] ২ থেকে ৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। ৭ জুলাই শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’-এর ডাক দেয় যার আওতায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে।[৪৭] ৮, ৯ জুলাই একই রকম কর্মসূচি পালন করা হয়।
১০ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয়ে শাহবাগে গিয়ে স্থানটি অবরোধ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান করে। দুপুরে জানা যায় কোটাব্যবস্থা বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবরোধের কারণে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা স্থিমিত হয়ে আসে। দূরপাল্লার বাসগুলো আন্দোলনের কারণে বন্ধ হয়ে যায়।[৪৮]
১১ জুলাই ৩টা থেকে শাহবাগ অবরোধের কথা থাকলেও বৃষ্টির ফলে শিক্ষার্থীরা শাহবাগে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধাকে অতিক্রম করে ৪:৩০ টায় শুরু করে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধার ফলে পিছিয়ে যায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে শাহবাগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেয়। চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল নিয়ে ২নং গেইট ও টাইগারপাস এলাকায় অবস্থান নেয়।তখন অনেক শিক্ষার্থী পুলিশের হামলার শিকার হয়।[৪৯] ঐ দিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ হামলা করে।[৫০] রাত ৯টায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষ করে তাদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে ১২ জুলাইয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ঘোষণা দেয়।[৫১]
১২ জুলাই ৫টায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে শাহবাগে জড়ো হয়ে অবরোধ করে।[৫২] কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে থাকলে ছাত্রলীগের একদল কর্মী আক্রমণ করে।[৫৩] বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজারসংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী রেললাইন অবরোধে সারা দেশের সঙ্গে রাজশাহীর রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।[৫৪]
১৩ জুলাই রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।[৫৫] ঢাকায় ঢাবির শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন, তারা অভিযোগ করেন “মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধার চেষ্টা করা হচ্ছে”।[৫৬]
১৪ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।[৫৭] কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদে মধ্যরাতে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এলাকায় বিক্ষোভ করে। সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ৪–জি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়।[৫৮] সে দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড় সড়কে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা । এতে এক নারী শিক্ষার্থীসহ দুজন আহত হয়েছেন।এর আগে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট বিক্ষোভ শুরু করেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা [৫৯]
১৫ জুলাই কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল, সূর্যসেন হল ও ক্যাম্পাসের বেশ কয়েকটি জায়গায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।[৬০] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে শতাধিক ছাত্রের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।[৬১] ১৫ জুলাই বিকেলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে ক্যাম্পাসে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে রড, লাঠি, হকি স্টিকসহ বিভিন্ন অস্ত্র দেখা যায়।[৬০][৬১] বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরও শহীদুল্লাহ হলের সামনে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনের এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে।[৬১] আন্দোলনকারীরা সরে যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের রড ও লাঠি নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়।[৬১] এর আগে, দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। এই আন্দোলনকে ঘিরে শাহবাগসহ আশপাশের রাস্তায় জলকামানসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়।[৬১] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, মারধর ও সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অন্তত ২৯৭ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।[৬২] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ১৫ জুলাই সোমবার রাত ১০টার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন তল্লাশি করে মারধর করা হয়।[৬৩]
দুপুর ২:৩০ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাফিকে কে শাটল থেকে অপহরন করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আটকিয়ে রাখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।তখন আন্দোলনকরীদের একটি অংশ রাফিকে উদ্ধার করতে মিছিল নিয়ে প্রক্টর অফিসে যাওয়ার সময় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোনলকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে।এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয় [৬৪]
অপরদিকে রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় আন্দোলন করেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে রাস্তা অবরোধ করে এই আন্দোলন করেছিলেন। ফলে নতুন বাজার এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।[৬৫]
১৬ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের হামলার ভয়ে উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে আশ্রয় নেন। রাত সোয়া ২টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা সেখানে ঢুকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মারধর করে। এর আগে রাত ১২টার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়।[৬৬] রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্লকের শিক্ষার্থীরা রাত ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে থালা বাজিয়ে বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে আন্দোলন করেন। এরপর রাত ১টা ১০ মিনিট থেকে ১টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মাদার বখশ হলের প্রথম ব্লকের তৃতীয় তলায় অন্তত ছয়টি কক্ষে শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তল্লাশি চালান।[৬৭] রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ভাটারা এলাকার প্রগতি সরনী ও কুড়িল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।[৬৮][৬৯] সকাল ১১টায় টাঙ্গাইল পৌরসভার সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মিছিল শহিদ মিনারের কাছে পৌঁছালে লাঠি ও লোহার রড নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।[৭০] দুপুর ১টায় মিরপুর ১০-এ রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিসহ মিরপুরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি বিরাট দলসহ নেতা-কর্মীরা এসে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ওপর হামলা করে।[৭১] দুপুর আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সহিংসতার ঘটনা ঘটে।[৭২] হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মোঃ ইউনুস আলী জানান, "এক শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এ ছাড়া আহত অবস্থায় আরও ১৫ জন হাসপাতালে এসেছেন।"[৭৩] বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী ও আরেকজন পথচারী।[৭৪] বিকেলে রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে এক যুবক নিহত হন। পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. রিফাতুল ইসলাম বলেন, “বিকেলে ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তায় একদল লোককে এক ব্যক্তিকে পেটাতে দেখেছেন তাঁরা। পরে শুনেছেন, তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা গেছেন।”[৭৫] সংঘাত ছড়িয়ে পড়ায় এইদিন সন্ধায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহী শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।[৭৬] এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহার করতে সমস্যা হওয়ার খবর পাওয়া যায়।[৭৭]
কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।[৭৮] এদিন রাতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ঘোষণা করে যে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।[৭৯][৮০] শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আবাসিক হলগুলো খালি করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় কমিশন।[৮১][৮২]
১৭ জুলাই ইউজিসি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় এবং নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলা হয়।[৮৩] এদিন গ্রামীণফোন কোম্পানিসহ সকল মোবাইল কোম্পানীকে সরকার সকল ধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।[৮৪][৮৫]
সকাল ১০টায় শনির আখড়ার দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ যাত্রাবাড়ীর স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন।[৮৬] জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর ১২টার দিকে সিন্ডিকেটের বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের বিকেল ৪টার মধ্যে হল ছাড়ার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান। সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশাসনিক ভবনে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন শিক্ষার্থীরা। ভবনের উভয় ফটকে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা।[৮৭] বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদস্যরা কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়েন।
পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় নিহত শিক্ষার্থীদের জন্য ২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিনমিছিল’ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশের বাধায় সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে ক্যাম্পাসে কফিন নিয়ে মিছিল শুরু করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।[৮৮] এরপর পুলিশ সদস্যরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা মাস্টারদা সূর্য সেন হলের সামনে অবস্থান নেন। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা তার জবাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।[৮৯] রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের ১০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেন। আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটক তালা দিয়ে ঘেরাও করেন। এতে উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভেতরেই আটকা পড়েন। সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপাচার্যকে মুক্ত করতে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।[৯০] ঢাকায় সন্ধ্যা ৭টার দিকে আন্দোলনকারীদেরকে পুলিশ আক্রমণ করে এবং পুলিশের শটগানের গুলিতে ৬ জন আহত হন। ফলে, আন্দোলনকারীরা মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের কাজলা অংশের টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেন। সড়কের শনির আখড়া ও কাজলার মধ্যবর্তী স্থানে অন্তত ২০টি জায়গায় মধ্যরাত পর্যন্ত আগুন জ্বলে।[৮৬] রাত আটটার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘোষণা করেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের আরেক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ১৭ জুলাই রাতে আন্দোলনকারীরা ১৮ জুলাইয়ের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচির ঘোষণা করে।[৯১]
১৮ জুলাই সকালে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় যে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ সারাদেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।[৯২] সকাল ১১টার দিকে মিরপুর ১০-এ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিসহ মিরপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশ। আন্দোলনকারীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।[৯৩][৯৪] সকাল ১১টার দিকে সকাল থেকে আন্দোলনরত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় সড়ক অবরোধ করায় তাদের ছত্রভঙ্গ করেতে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে পুলিশ। একই সাথে তাদেরকে আক্রমণ করে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ কর্মীরা।[৯৫] দুপুর ১২টার দিকে সকাল থেকে আন্দোলনরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস ও স্থানীয় অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশ। আন্দোলনকারীদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।[৯৪][৯৬] দুপুর ২টার দিকে পুলিশের গুলিতে নর্দান ইউনিভার্সিটির ২ শিক্ষার্থী নিহত ও শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নেয়া হয়।[৯৭][৯৮][৯৯] দুপুর ৩টার দিকে পুলিশের ধাওয়ায় হ্রদে পড়ে মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।[১০০] এছাড়াও রামপুরায় পুলিশের সাথে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় এক গাড়ি চালক পুলিশের গুলিতে নিহত হন।[১০১] এদিন সরকারের নির্দেশে ৪জি মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়।[১০২] রাত ৯টার দিকে সরকার সারাদেশে সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন করে দেয় সরকার। (আরো দেখুন)
১৯ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন রোধ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।[১০৩] সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ঢাকার সাথে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।[১০৪] ১৮ জুলাইয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯ জুলাইতেও সারাদেশে সকল ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়। এইদিনেও সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অবরোধ চলে। বেলা পৌনে ১টার দিকে আন্দোলনকারীরা কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানা ঘেরাও করলে থানার ভেতর থেকে পুলিশ সদস্যরা ছররা গুলি ছুঁড়েন, এতে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।[১০৫] ঢাকার উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা পল্টনসহ কয়েকটি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সারাদিন দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মিরপুরে জুমার নামাজের পর বেলা তিনটার দিকে কাজীপাড়া, শ্যাওড়াপাড়া এবং মিরপুর - ১০-এর বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সাভারে বিকাল তিনটা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে হাজারো শিক্ষার্থী জড়ো হয়। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা ঢাকার রামপুরা থানা ঘেরাও করে। বিকেল পাঁচটায় বিক্ষোভকারীরা মিরপুর ১৪ নম্বরে অবস্থিত বিআরটিএ ভবনে আগুন দেয়।[১০৬] নরসিংদীতে দুই হাজারের মতো উত্তেজিত জনতা নরসিংদী কারাগার ভাংচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়।[১০৭] পরবর্তীতে ৩৩১ জন কয়েদী আত্মসমর্পণ করেন। [১০৮] সারাদেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করে সরকার।[১০৯] মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে আটক করা হয়।[১১০] এছাড়া গণঅধিকার পরিষেদের সভাপতি নুরুল হক নুরকেও আটক করা হয়।[১১১] যেসময়ে নাহিদ ইসলামকে আটক করা তার কাছাকাছি সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন প্রতিনিধির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় যেখানে তারা সরকারের কাছে 'আট দফা দাবি' জানান।[১১২] বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্র অনুযায়ী ১৯ জুলাই শুক্রবার সারাদেশে কমপক্ষে ৫৬-৬৬ জনের মৃত্যু হয়।[১১৩]
২০ জুলাই তৃতীয় দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল। সেনাবাহিনীকে দেশের বিভিন্ন অংশে কারফিউর অংশ হিসেবে টহল দিতে দেখা যায়। ১৯ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন প্রতিনিধির সাথে সরকারের তিনজন মন্ত্রীর যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সেই বৈঠক ও বৈঠকে উত্থাপিত দাবি নিয়ে নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়।[১১৪] কারফিউর মধ্যেই যাত্রাবাড়ী, রামপুরা-বনশ্রী, বাড্ডা, মিরপুর, আজিমপুর, মানিকনগরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এইসব সংঘর্ষে দুইজন পুলিশসহ অন্তত ১০ জন নিহত হন, অন্তত ৯১ জন আহত হন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলামকে মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায়।[১১৫]
২১ জুলাই চতুর্থ দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেট বিহীন ছিল ও সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল। ভোরে ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় আন্দোলের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে পাওয়া যায় ও পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৬ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের প্রেক্ষিতে সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি শুরু হয়। সব পক্ষের শুনানি শেষে দুপুর ১টার দিকে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয় ও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।[১১৬] এদিন ঢাকায় বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। যাত্রাবাড়ীতে সারাদিন ধরে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় পাঁচজন নিহত হয়। সেতু ভবন ভাঙ্গচুর, রামপুরার বিটিভির ভবনে আগুন দেয়া ও বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন মামলায় পুলিশ বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নিপুণ রায় ও গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি পক্ষ ‘৯ দফা’ দাবি জানিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
২২ জুলাই পঞ্চম দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেট বিহীন ছিল ও তৃতীয় দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল। এক নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি আরও একদিন (মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪) বাড়ানো হয়। দুপুরের দিকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কিছু ব্যবসায়ী বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও সহিংসতার জন্য বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, শিবিরকে দায়ী করেন ও ‘আরও শক্ত অ্যাকশন’ নেওয়ার কথা জানান।[১১৭] বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম চার দফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেন।
২৩ জুলাই ষষ্ঠ দিনের মতো সারা বাংলাদেশ ইন্টারনেট বিহীন ছিল। তবে রাতের দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত আকারে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়।[১১৮] এছাড়া চতুর্থ দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল।[১১৯] ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।[১২০][১২১]
২৪ জুলাই সীমিত পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকে। পঞ্চম দিনের মতো সারাদেশে কারফিউ বলবৎ ছিল, তবে তা শিথিল পর্যায়ে ছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যু হয় ও নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯৭ হয়।[১২২][১২৩] শিক্ষার্থীদের মতে নিহতের সংখ্যা আরও অনেকগুণ বেশি যা ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় জানা যায় নি। ২৪ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় পুলিশ ১,৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করে।[১২৪] বিক্ষোভের সময় সেনা মোতায়েন পর জাতিসংঘের লোগো সংবলিত যান ব্যবহৃত হলে জাতিসংঘ এই নিয়ে উদ্বেগ জানায়।[১২৫] ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ থাকার পর ২৪ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায়।[১২৬] ২৪ জুলাই রাত পর্যন্ত আরও ৪ জনসহ মোট ২০১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।[১২৭] এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকেরা।[১২৮]
২৫ জুলাই বিকেল পর্যন্ত ব্রডব্যান্ডে ধীরগতির ইন্টারনেট পাওয়া যায়। সরকার ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখে,[১২৯] এদিন আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়।[১৩০]
২৬ জুলাই নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদাপোশাকের এক দল ব্যক্তি। তাঁরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়েছেন বলে সেখানে উপস্থিত এক সমন্বয়কের স্বজন ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান।[১৩১] সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রধান ফটককে ‘শহীদ রুদ্র তোরণ’ নামকরণ করে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।[১৩২] বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলি ব্যবহারের ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে জাতিসংঘ।[১৩৩]
২৭ জুলাই তিন সমন্বয়ককে ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।[১৩৪] নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকলে তাঁদের পরিবারের কাছে না দিয়ে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলো কেন, সেই প্রশ্ন তুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল। তিন শিক্ষার্থীর খোঁজখবর নিতে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য যান এই শিক্ষকেরা। যদিও শিক্ষকদের সাথে দেখা করতে ডিবিপ্রধান অস্বীকৃতি জানান।[১৩৫] আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ, সংঘাত, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে অভিযান চালানো হয়।[১৩৬] এদিনও কারফিউ চলমান থাকে। তবে এই কারফিউ কিছু সময় শিথিল থাকে।[১৩৭] জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৮শে জুলাই থেকে ৩০শে জুলাই পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি অফিসের সময়সূচি ছয় ঘণ্টা করার সিদ্ধান্ত জানায়।[১৩৮] রাত ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনের আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয় গোয়েন্দা শাখা।[১৩৯] পরে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ২৮ তারিখের (রোববারের) মধ্যে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ, আসিফ মাহমুদসহ আটক সকল শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থী গণহত্যার সাথে জড়িত মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সকল দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আল্টিমেটাম দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একই সাথে রোববার সারা দেশের দেয়ালগুলোতে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়।[১৪০] পুলিশ হেফাজতে থাকা ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের উপর পুলিশি নির্যাতনের কথা জানান নুরের স্ত্রী।[১৪০]
২৮ জুলাই ভোরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নুসরাত ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়।[১৪১] বেলা ৩টা থেকে চালু করা হয় মোবাইল ইন্টারনেট। তবে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটকসহ বিভিন্ন সেবা বন্ধ রাখা হয়।[৮৫] বিকেল ৪টা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সমাবেশ-বিক্ষোভ করে। তারা অবিলম্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মুক্তির দাবি জানায়।[১৪২] কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনার একটি মামলায় বুধবার রাতে যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে আটক করা ঢাকা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে যাত্রাবাড়ী থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার সিএমএম আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করে তদন্ত কর্মকর্তা। পরে তাকে সাত দিনের রিমান্ড দেয় আদালত। রোববার ঢাকার সিএমএম আদালতে মি. ফাইয়াজকে শিশু হিসেবে দাবির স্বপক্ষে বয়স প্রমাণক দাখিল করে আদালত তার রিমান্ড স্থগিত করেন।[১৪৩] ডিবি হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের কয়েকজনের পরিবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে গেলেও তাদেরকে পরিবারের সাথে দেখা করতে দেয় নি।[১৪৩] রাত ১০টার দিকে পুলিশি হেফাজতে থাকা ৬ সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু পুলিশে আটক হওয়া অবস্থায় পুলিশের অফিসে বসেই বাকি সমন্বয়কারীদের সাথে যোগাযোগ না করে এমন ঘোষণা দেয়ায় এই ঘোষণাকে সরকার ও পুলিশের চাপে দেয়া হয়েছে বলে আখ্যায়িত করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বাকিরা।[১৪৪] রাত ১১টার দিকে সমন্বয়কদের জিম্মি ও নির্যাতন করে বিবৃতি দেয়ানোর প্রতিবাদে পরদিন ২৯ জুলাই আবারও রাজপথে আসার ঘোষণা দেয় দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে, দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিবৃতি দেয়, তারা ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবে জানায়।[১৪৫] ২৮ জুলাই পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল অন্তত ২১১। ঢাকায় আহতের সংখ্যা অন্তত ৭ হাজার। অধিকাংশ আহতই গুলিবিদ্ধ এবং বিশেষত মাথায় ও চোখে গুলিবিদ্ধ।[১৪৬][১৪৭] রাত পর্যন্ত ১২ দিনে দেশের ১৮ জেলায় অন্তত ২৫৩ শিক্ষার্থী গ্রেফতার করা হয় ও অনেককে রিমান্ডে নেওয়া হয়।[১৪৮][১৪৯]
২৯ জুলাই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত দাবি করে বিবৃতি দেয় বিক্ষুব্ধ ৭৪ বিশিষ্ট নাগরিক।[১৫০] প্রথম আলোর রিপোর্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিহতদের বেশিরভাগই কম বয়সী ও শিক্ষার্থী।[১৫১] বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র (বুলেট বা গুলি) ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।[১৫১] রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, বাড্ডা, ইসিবিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় আবারও বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে কিছু শিক্ষার্থী।[১৫২] ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ অনেক স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।[১৫৩] বাসা থেকে তুলে নেয়ার পরবর্তী ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে ছয় দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।[১৫৪] তবে এর আগে আরিফ সোহেলকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে তা অস্বীকার করেন ঢাকা উত্তর ডিবি কার্যালয়ের ওসি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ।[১৫৫] কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বলপূর্বক নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে আন্দোলনের সমন্বয়কদের অবৈধভাবে তুলে নিয়ে গোয়েন্দা শাখার কার্যালয়ে আটকে রেখে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা পড়তে বাধ্য করানোর ঘটনা নিরেট মিথ্যাচার, প্রতারণামূলক ও সংবিধান পরিপন্থি উল্লেখ করে এরূপ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।[১৫৬] ডিবি হেফাজতে নেয়া সমন্বয়কারীদের ছেড়ে দেয়া ও শিক্ষার্থীদের গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে সোমবার দুপুরে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন দুইজন আইনজীবী।[১৫৭] দশম দিনের মতো বাংলাদেশে কারফিউ অব্যাহত থাকে, যদিও দিনের বেলায় শিথিল থাকার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। ইন্টারনেট চালু হলেও হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, ফেসবুকের মতো অনেক সেবা বন্ধ রাখা হয়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে কোটা আন্দোলনকে ঘিরে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ৩০ জুলাই মঙ্গলবার দেশব্যাপী শোক পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[১৫৮] কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এটি প্রত্যাখান করে ৩০ জুলাই লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে ব্যাপক প্রচার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।[১৫৯]
৩০ জুলাই সরকার ঘোষিত শোক দিবসকে প্রত্যাখ্যান করে শোকের কালো রং বাদ দিয়ে আন্দোলনকারী এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গ, সাধারণ নাগরিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ এমনকি সাবেক সেনাপ্রধানও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাল প্রোফাইল ছবির মাধ্যমে কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে সমর্থন জানান।[১৬০][১৬১] সকাল সাড়ে ১১টায় ৯ দফা দাবিতে খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।[১৬২] দুপুর ১২টায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করলে সঙ্গে সঙ্গে বাধা দেয় ও ৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।[১৬৩] দুপুর ১২টায় ৬ সমন্বয়ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে আলটিমেটাম দেয় ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’।[১৬৪] দুপুর সাড়ে ১২টায় মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।[১৬৫] দুপুরে দেশব্যাপী ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুখে লাল কাপড় বেঁধে র্যালি ও সমাবেশ করেন নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকবৃন্দ।[১৬৬] বিকেল ৩টায় উদীচীসহ ৩১টি সংগঠনের পদযাত্রা ও বিক্ষোভ করে।[১৬৭] বিকেল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করতে বের হয় শিক্ষার্থীরা। তাদের উপর সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।[১৬৮]
৩১ জুলাই হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে ৩১ জুলাই বুধবার সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ (ন্যায়বিচারের জন্য পদযাত্রা) কর্মসূচি পালন করে। চট্টগ্রামে সকাল ১০টার দিক থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে এক বিক্ষোভ মিছিল করে। এরপর পুলিশের বাধা ভেঙে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আদালত চত্বরেও প্রবেশ করে।[১৬৯] বিকেল ৩টায় ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুলে দেওয়া হয়।[১৭০]
১ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে বেলা দেড়টার একটু পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়।[১৭১] বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে সরকার।[১৭২][১৭৩] এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে।[১৭৪] সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, গুম-খুন ও শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং ৯ দফা দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ (আমাদের বীরদের স্মরণ) কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।[১৭৫] দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে।[১৭৬]
২ আগস্ট গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন যে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়ককের ভিডিও বিবৃতি তারা স্বেচ্ছায় দেননি।[১৭৭] বিবৃতিদাতা মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও আবু বাকের মজুমদারের ভাষ্য অনুযায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই তাদের আটকে রাখা হয়েছিল।[১৭৮] এদিন দুপুর ১২ টার পর থেকে মোবাইল নেটওয়ার্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক আবার বন্ধ করা হয়।[১৭৯] পরবর্তীতে ৫ ঘণ্টা পর ফেসবুক-মেসেঞ্জার আবার চালু করা হয়।[১৮০] এদিন সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আবহানী মাঠ সংলগ্ন সড়কে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পীসমাজ।[১৮১] এছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়ে কোটা আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় বিচার দাবি করে প্রতিবাদী সমাবেশ করে চিকিৎসক, মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা।[১৮২] ঢাকার বায়তুল মোকাররম,[১৮৩] সাইন্স ল্যাব,[১৮৪] উত্তরা,[১৮৫] আফতাবনগরে[১৮৫] গণমিছিল ও বিক্ষোভ হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম[১৮৬], সিলেট,[১৮৭] বগুড়া[১৮৮] টাঙ্গাইল[১৮৯], কিশোরগঞ্জ[১৯০], নোয়াখালীসহ[১৯১] দেশের বিভিন্ন জায়গায় গণমিছিল হয়। সিলেটে ‘গণমিছিলে’ পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের গুলি ছুড়লে অন্তত ২০ জন আহন হন।[১৯২] ঢাকার উত্তরায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।[১৯৩] সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল এর অংশ হিসেবে জুমার নামাজের পর হবিগঞ্জে শহরের বোর্ড মসজিদের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। পূর্ব টাউন হল এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ–ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়।[১৯৪] পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের অন্তত ২৫টি জেলায় শিক্ষার্থীরা গণমিছিল করে।[১৯৫] নরসিংদীতে শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় অন্তত ১২ জন আহত হয়।[১৯৬] খুলনায় বিক্ষোভকারীদের মিছিলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং লাঠিচার্জ করে।[১৯৭] শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ডাকা দ্রোহযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষ যোগ দেন।[১৯৮] বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা ও হত্যার প্রতিবাদসহ পূর্বঘোষিত নয় দফা দাবিতে শনিবার (৩ আগস্ট) সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও রবিবার (৪ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়।[১৯৯] রাতে গণভবনে জরুরি বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দলকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।[২০০]
৩ আগস্ট ভোরে আহত একজন ব্যক্তির চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।[২০১] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের আলোচনার প্রস্তাব দেন, তবে দুপুরে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।[২০২] রাজধানীর আফতাবনগরের ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।[২০৩] রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজারখানেক শিক্ষার্থী শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিছিল বের করে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেয়। এদিন শিক্ষার্থীরা এক দফা, এক দাবি নিয়ে মাঠে নামে। তারা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে।[২০৪] কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে সংগীতশিল্পীদের প্রতিবাদী সমাবেশ হয়। বিকেল চারটার পর বিক্ষুব্ধ জনতা বিরাট মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যাত্রা শুরু করে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ একত্র হয়।[২০৫] বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম।[২০৬] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।[২০৭] বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে জামিন দেয় আদালত।[২০৮] চট্টগ্রাম নগরে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসায় হামলা হয়। এর আগে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজারে চট্টগ্রাম–১০ আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়েও হামলা হয়।[২০৯] গাজীপুরের শ্রীপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে একজন নিহত হন।[২১০] রাত সোয়া ৮টার দিকে শেখ হাসিনা পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।[২১১] রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।[২১২] সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ চলে।[২১৩] বিকেল ৫টার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে মহাখালী ও মিরপুর ডিওএইচএসের ভেতরে বিক্ষোভ হয়। ডিওএইচএসে মূলত সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যরা বসবাস করেন। কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্যরাও অংশ নেন।[২১৪]
৪ আগস্ট মহাখালী ডিওএইচএসের রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে (রাওয়া ক্লাব) সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৪৮ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। এদের মধ্যে ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান এম নুর উদ্দিন খান, মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, কায়সার ফজলুল কবির, জামিল ডি আহসান, রেজাকুল হায়দার, মুজাহিদ উদ্দিন, আবুল কালাম হুমায়ুন কবির প্রমূখ। ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, আক্রমণকারীরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিরোধের মধ্যে পিছপা হতে বাধ্য হলে, পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার করা হলো বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে। তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, কখনো সম্মুখভাগে, কখনো পেছনে ও পাশে দাঁড় করিয়ে অন্য বাহিনীগুলো এই গণ-আন্দোলনের ওপর তাদের জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এমন পরিস্থিতির দায় দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর নেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী অতীতে কখনো দেশবাসী বা সাধারণ জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি, তাদের বুকে বন্দুক তাক করেনি। শেষে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক সংকটকে সামরিকীকরণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আমরা সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এর তীব্র বিরোধিতা করছি।’[২১৫]
২০২৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। ৫ আগস্ট বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে যাত্রা করে।[২১৬]
৩১ জুলাই ২০২৪ অনুযায়ী, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অনান্য সংগঠন, বিজিবি, র্যাব, পুলিশের এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্মিলিত হামলায় সারা দেশে ২৬৬ জনের অধিক নিহত[১৩] এবং ৬ হাজারের অধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।[১২২][১২৩][২১৭][২১৮][২১৯] সরকারপক্ষের মৃতদের বাদে বাকি নিহতদের 'শহীদ' হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতায় অন্তত ৩২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।[২২০]
পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর নির্বিচারে চালানো গুলিতে আন্দোলনকারী ছাড়াও কেউ মসজিদের নামাজ থেকে বের হতে গিয়ে, বাসার নিচে নামতে গিয়ে, রাস্তায় ফেরি করে বিক্রি করতে গিয়ে, বাসার ছাদে খেলতে গিয়ে, আইসক্রিম কিনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। ফলে আন্দোলনে অংশ নেয়নি এমন ছেলে, মেয়ে, শিশু এবং বৃদ্ধও মৃত্যুবরণ করেন।[২২১][২২২][২২৩][২২৪][২২৫] নিহতদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে শিশু, কিশোর এবং বাচ্চাদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি এবং হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটানো হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১১৩ জনই হলেন শিশু, শতকরা যা ৭৫ শতাংশ।[২২৬] এছাড়াও আইনের পরিপন্থি হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ বহু শিশু ও কিশোর বয়সী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করে ও হাতকড়া পরিয়ে রিমান্ডে নেয়।[২২৭][২২৮]
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সরকার ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করে বিভিন্ন সাংবাদিক নেতারা।[২২৯] হামলা–সংঘর্ষে যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের তালিকা জাতির সামনে তুলে ধরার দাবি জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। পাশাপাশি এ ঘটনায় যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের নামও প্রকাশের আহ্বান জানান তারা।[২৩০] আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত এক শিশুসহ ২১ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। পুলিশ এসব লাশ পরিচয় শনাক্ত বা পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কোন উদ্যোগ নেয়নি। এসব লাশ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে পড়ে ছিলো, পরে হাসপাতালের মর্গ থেকে পুলিশ এই ২১ জনের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে দিয়েছে। পরে সংস্থাটি লাশগুলো দাফনের ব্যবস্থা করে।[২৩১]
ঢাকার যাত্রাবাড়ি-শনির আখড়া, উত্তরা-আবদুল্লাহপুর, রামপুরা-বাড্ডা এবং মোহাম্মদপুর-বসিলা এলাকার আশেপাশের হাসপাতালে ১৮ থেকে ২০শে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ব্যক্তি চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগই ছিলেন বুলেট বিদ্ধ। এদিকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতের লাশ দাফন করতে দেখা যায়।[১৩৩]
বিক্ষোভ দমনে র্যাবের হেলিকপ্টার ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। হেলিকপ্টার থেকে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়।[২৩২] এছাড়া হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠে, তবে এ বিষয়টি অস্বীকার করে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে হেলিকপ্টার থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে। কোনো ধরনের গুলি করা হয়নি বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।”[২৩৩] স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ২৪ জুলাই নিহতদের তথ্যের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন:[২৩৪]
“ | জনসাধারণ কতজন মারা গেছেন, তার কোনও হিসাব আমাদের কাছে নেই। কোনও থানায় এ সংক্রান্ত কোনও মামলাও দায়ের হয়নি। পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করছে, এ বিষয়ে পরে বলা যাবে। | ” |
ঢাকা মেডিক্যালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানান, সংঘাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেই ৮১ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে ৬০ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়, বাকিরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।[২৩৪] আন্দোলনকে ঘিরে কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলিতে চোখে আঘাত পেয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২৪ জন। এর মধ্যে চোখের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে ২৭৮ জনের। অস্ত্রোপচার করা বেশির ভাগ রোগীর চোখে ছররা গুলির আঘাত ছিল।[২৩৫]
পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, আন্দোলন শুরুর পর থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন জন পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং ১ হাজার ১১৭ জন আহত হন। এছাড়া পুলিশের ২৩৫টি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুলিশের ২৮১টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।[২৩৬] ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাত দিনে সারা দেশে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে ১১৩টি। এরমধ্যে ঢাকাতেই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে ৯০টি।[২৩৬]
প্রতিবেদন অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে রয়েছেন:
কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হলে ১৭ জুলাই (বুধবার) রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর ২৩ জুলাই সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হয়। অন্যদিকে টানা দশ দিন বন্ধ থাকার পর ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট সেবা চালু হয়।[২৫১] পরে জানা যায়, সরকারি নির্দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ ছিল।[৮৫]
১৭ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন। ১৮ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষেত্রে সরকার ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত খাজা টাওয়ারের ডেটা সেন্টারে আগুন দেওয়াকে দায়ী করলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন কোম্পানির প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্যে মূলত সরকারের নির্দেশকেই দায়ী করা হয়। খাজা টাওয়ারের নিরাপত্তারক্ষী বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে এক ভবন পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে। কিন্তু সবাই শুধু খাজা টাওয়ারে এসে খোঁজ নিচ্ছে। অথচ এ ভবনে কোনো কিছুই ঘটেনি। গত কয়েকদিন ধরে ভবনটি বন্ধ রাখা হয়েছে নিরাপত্তার কারণে।[৮৫][২৫২] বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “ইন্টারনেট বন্ধ নিয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা ভুল, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমরা মহাখালীতে গিয়ে দেখেছি, তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।”[৮৫]
একটি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান ১৮ জুলাই রাত ৮টা ৪৮ মিনিটে ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশনা পায় বলে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে জানায়। নির্দেশনা পেয়ে তাঁরা গ্রাহকপর্যায়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএসপিগুলোকে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বন্ধ করে দেন।[৮৫] যদিও ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বিষয়টি গোপন করেন। [২৫৩] ১৮ই জুলাই একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানায়, সরকারের নির্দেশে তারা মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখেছেন।[২৫৪] মোবাইল অপারেটরদের ই-মেইল পাঠিয়ে ইন্টারনেট বন্ধের জন্য বলা হয়েছিল। তবে ই-মেইলটি জুনাইদ আহমেদের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো হয়নি। ই-মেইলটি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন থেকে বার্তা পাঠানো হয়েছিল।[৮৫] গ্রামীণফোনের মালিক প্রতিষ্ঠান টেলিনর এশিয়া এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছিল।[৮৪]
Cloudflare Radar @CloudflareRadar ইংরেজি: Bangladesh is experiencing a near complete #Internet outage after a government-ordered shutdown of mobile networks. Traffic and announced address space dropped to near-zero around 15:00 UTC (21:00 local).
সরকারের-নির্দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধের পর বাংলাদেশে পূর্ণ #ইন্টারনেট বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। ট্র্যাফিক এবং ঘোষিত অ্যাড্রেস স্পেস ১৫:০০টা ইউটিসিতে (স্থানীয় ২১:০০টায়) প্রায় শূন্যের-কাছাকাছি নেমে আসে।
১৯ জুলাই ২০২৪[২৫৫]
ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ক্লাউডফ্লেয়ার ইন্টারনেট বন্ধের জন্য সরাসরি বাংলাদেশ সরকারকে দায়ী করে টুইট বার্তা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘ইন্টারনেট সোসাইটি’-র তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে ১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৫ দিন ১২ ঘণ্টা ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ ছিল।[২৫৬]
পাঁচ দিন ইন্টারনেট না থাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, অনলাইনে টাকা লেনদেন, মুঠোফোনে টাকা ভরা, অনলাইনে কেনাবেচা, ফ্রিল্যান্সিং, বিমানের টিকিট কেনা, অনলাইনভিত্তিক বিনোদনের মাধ্যম (ওটিটি, ইউটিউব প্রভৃতি) ও পড়াশোনা—সব সেবাই হয় বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে সমস্যায় পড়ে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ তথ্যমতে, ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় টেলিযোগাযোগ শিল্পে ৩০ শতাংশ ব্যবসা কমেছে। এতে করে ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সঙ্গে ইন্টারনেট সুবিধাভোগী আরও পাঁচ কোটি গ্রাহক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সরকারি সব ইউটিলিটি গ্রাহকদের বিশেষ করে গ্যাস, বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, এটিএম বুথে টাকা উত্তোলন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসে। সব মিলিয়ে দৈনিক গ্রাহকদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।[২৫৭]
ইন্টারনেট না থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় অনলাইন ফ্রিল্যান্সার এবং সফটওয়্যার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ।[২৫৮] বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) তথ্যমতে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে পাঁচ দিনে সফটওয়্যার খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।[২৫৯]
কোটা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৭ আগস্ট শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায়, তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অ্যাটর্নি জেনারেল এ.এম আমিন উদ্দিন কে মামলার শুনানি এগিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান।[২৬০] ১৮ জুলাই সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি মোঃ ইনায়েতুর রহিমের বিশেষ চেম্বার জজ আদালত লিভ-টু-আপিল শুনানির জন্য ২১ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করে ও আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৩ নম্বর ক্রমিকে সেটিকে রাখা হয়।[২৬১]
২১ জুলাই ১০টা ১৭ মিনিটে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টে কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি শুরু হয়। আইনজীবী আহসানুল করিম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিছু শিক্ষার্থীর পক্ষে কোটা নিয়ে ‘সাবজেক্ট ম্যাটার’ শুনানি করতে আবেদন করেন। এরপর আরও কয়েক আইনজীবী অনুমতি চান। পরে আদালত পাঁচজন আইনজীবীকে শুনানির অনুমতি দেন। সব পক্ষের শুনানি শেষে দুপুর ১টার দিকে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করা হয় ও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়।[১১৬] আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ে বলা হয়:[২৬২]
“ | বিধৃত সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য কোটাপ্রথা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। | ” |
এছাড়া আদালত অনতিবিলম্বে সরকারকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দেয়। পরে ২৩ জুলাই এই বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়:[১২০]
“ | নং-০৫.০০.০০০০.১৭০.১১.০১৪.২৪-১৪১⸺সরকার এই মর্মে আদেশ জারি করিতেছে যে, সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকুরিতে/কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে নিম্নরুপভাবে কোটা নির্ধারণ করা হইল-
|
” |
গোয়েন্দা শাখা, র্যাবসহ বাংলাদেশ পুলিশ বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে। ৩০ জুলাই পর্যন্ত সাড়ে ১০ হাজারের অধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।[২৬৩] সরকার আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করবে না বললেও দেখা গেছে ঢাকায় গ্রেপ্তার ৮৭ শতাংশের রাজনৈতিক পরিচয় নেই এবং একই চিত্র দেশের সবখানেই।[২৬৪] বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে তাদের বাসার অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোলাগুলি ও ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে।[২৬৫]
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয় মূলত ১৯শে জুলাই থেকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষত ঢাকার নির্দিষ্ট এলাকা ঘিরে মধ্যরাতে ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে চলে গ্রেফতার অভিযান। এসব অভিযানে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ছাড়াও শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, দিনমজুরসহ আটক হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে দশ হাজারেরও বেশি আটক হয়েছে।[২৬৫] এসব অভিযানে শুধু সাধারণ মানুষের হয়রানি নয়, বরং একইসঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে।[২৬৬]
২৩ জুলাই বড় ভাইকে না পেয়ে সাদা পোশাকধারী পুলিশ তার ছোট ভাইকে গ্রেফতার করে যিনি আন্দোলনে অংশ নেননি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পরে তাকে পুলিশ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।[২৬৭] ২৬ জুলাই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল থেকে আন্দোলনের তিন সমন্বয়কারী নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বকর মজুমদারকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা আটক করে। ২৭ জুলাই আন্দোলনের অন্য সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে আটক করে ডিবি। ২৮ জুলাই, সাদা পোশাকের পুলিশ নুসরাত তাবাসসুম এবং আরিফ সোহেল নামে আরও দুজন সমন্বয়কারীকে আটক করে। এইদিন পাঁচ সমন্বয়কের উপস্থিতিতে নাহিদ ইসলাম ডিবি কার্যালয় থেকে এক ভিডিও বার্তায় আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন।[২৬৮] তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য সমন্বয়কারীরা অভিযোগ করেন যে এই ব্যক্তিদের ডিবি বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছে। বাকি সমন্বয়কারীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।[২৬৯]
এই আন্দোলনে পুলিশের পোশাকে অন্য দেশের নাগরিকের উপস্থিতিতির প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার কথা জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।[২৭০]
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে কোটা নিয়ে গণভবনে বলেন:[২৪]
“ | মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা না পেলে, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? আমার প্রশ্ন দেশবাসীর কাছে। রাজাকারের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে, মুক্তিযোদ্ধারা পাবে না? অপরাধটা কী? | ” |
রাজাকার ছিল একটি আধা-সামরিক বাহিনী যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে রাজাকার শব্দটিকে নেতিবাচক হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, শিক্ষার্থীরা ব্যাঙ্গ করে “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” এবং “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার” স্লোগান ব্যবহার করা শুরু করে।[২৫] আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্য অপমানজনক। এই বক্তব্য আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করেছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত রাতে বিক্ষোভ করে আমরা সোমবার ১২টার প্রধানমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলাম। প্রত্যাহার না হওয়ায় আমরা রাস্তায় নেমেছি”। পূর্ব ঘোষণা অনুয়ায়ী ১৫ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে ঢাবির বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্য এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। রাজু ভাস্কর্যের সামনে এদিন শিক্ষার্থীরা ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’-সহ নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। আন্দোলনে অংশ নেয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মনে আঘাত দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বাইরে সবাইকে রাজাকার বলেছেন। আমরা তার বক্তব্য প্রত্যাহার ও যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কারের দাবি জানাই।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হুমকি দেয় যে, কোনো বিক্ষোভকারী এই স্লোগান ব্যবহার করলে তাকে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত শক্তি পাকিস্তানে পাঠানো হবে। সংগঠনটি বলে যে বিক্ষোভকারীরা স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের চেতনাকে আঘাত করেছে এবং ১৫ জুলাইয়ের পরে যাতে তাদের দেখা না যায়। এই স্লোগানগুলোর ব্যবহার বন্ধ না হলে তারা বিক্ষোভ করার ঘোষণা দেয়। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আন্দোলনকারীদের ‘তাদের শেষ দেখিয়ে ছাড়ব’ বলে হুংকার দেন।[২৭১] বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি বলেন:[২৭২]
“ | যারা নিজেদেরকে রাজাকার বলে পরিচয় দেয়, তাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের রক্তস্নাত লাল সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে বা সে পতাকা কপালে বেঁধে নিয়ে মিছিল করবার কোনো অধিকার থাকতে পারে না। | ” |
এই ঘটনাগুলোর কারণে প্রধানমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তাদের আচরণকে "অত্যন্ত দুঃখজনক" বলে অভিহিত করেন।[২৭৩]
২০২৪ সালের ১৩ জুলাই টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন। ১৪ জুলাই ঢাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলার পর তিনি লিখেন:[২৭৪]
“ | রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! আমার ক্যাম্পাসে রক্ত কেন? প্রতিবাদ জানাই। | ” |
— আয়মান সাদিক (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, টেন মিনিট স্কুল) |
১৬ জুলাই বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান "স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড" টেন মিনিট স্কুলে তাদের ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব বাতিল করে।[২৭৫] এটি নিয়ে নেটিজেনরা সমালোচনা করেন, অনেকে লিখেন কোটা সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এই বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।[২৭৬] ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন "কেউ যদি বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু নিয়ে বিতর্ক তোলে, এসব আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, সেখানে সরকার ব্যবস্থা নেবেই"[২৭৭] ও যেসব আলোচনা হচ্ছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।[২৭৮]
১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানে মর্মাহত হয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমার মনে হয়, আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্রছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই ‘রাজাকার’। আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন, সেই জীবনে আবার কেন নতুন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?” এই মন্তব্যকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়[২৭৯] এবং উক্ত দিনেই রকমারিসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বইয়ের দোকান তার বই বিক্রি বন্ধ করে দেয়।[২৮০] এছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।[২৮১]
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানায়। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন সরকার শিক্ষার্থীদের রাজাকার আখ্যা দিয়ে তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে।[২৮২] অপর দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন "সরকার ছাত্রসমাজের আন্দোলনের যৌক্তিক সমাধান না করে সংবিধান ও আইন আদালতের দোহাই দিয়ে পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে"।[২৮৩] ১৬ জুলাই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দেশের ১১৪ বিশিষ্ট নাগরিক আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নিন্দা জানান ও শাস্তির দাবি করেন।[২৮৪] ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে আয়োজিত এক সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের রাজনীতিবিদরাও নিন্দা জানান ও বলেন "কোটাব্যবস্থার যুক্তিসংগত সংস্কারের দাবি মানার ঘোষণার পরিবর্তে সরকার উসকানিমূলক বক্তব্যে দিচ্ছে"।[২৮৫] ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশও এই ঘটনার নিন্দা জানায়।[২৮৬]
দৈনিক প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক ১৭ জুলাইতে তার প্রকাশিত এক কলামে লিখেন "সবাই যেখানে সংস্কার চায়, সেখানে এত রক্ত কেন"।[২৮৭] এই দিন সন্ধ্যায় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস বাংলাদেশে অবস্থান করা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চলাচলের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দেয়। একই সাথে ১৮ জুলাই সাধারণ মানুষের জন্য দূতাবাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।[২৮৮]
২৩ জুলাই দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক কলামে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের লিখেন, “সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের কারণে, জেদাজেদির কারণে, জোর করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কারণে এত প্রাণ ঝরল। যে মায়ের কোল খালি হলো, যে পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল, এর দায়দায়িত্ব সরকারকে নেওয়া উচিত ছিল।”[২৮৯]
২৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগপত্র দেন জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষক জাহিদুল করিম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।[২৯০]
ছাত্রদের উপর সরকারের অনবরত প্রাণঘাতী হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্যান্ড সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত জয় বাংলা কনসার্ট বর্জন করার ঘোষণা দেয়।[২৯১]
ভারতে, ১৭ জুলাই নিখিল ভারত ছাত্র অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে ছাত্র বিক্ষোভের সাথে তাদের সংহতি প্রকাশ করে।[৩০৭] ১৮ জুলাই সর্বভারতীয় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন (এআইডিএসও) বাংলাদেশের ছাত্রদের সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় বিক্ষোভ করে।[৩০৮]
নেপালে, ২০ জুলাই অল নেপাল ন্যাশনাল ফ্রি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এবং ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ করে।[৩০৯]
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ১৭ জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। সমাবেশে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশে যোগ দেন।[৩১০]
অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে, প্রবাসী বাংলাদেশীরাও বাংলাদেশ সরকারের আন্দোলনকারীদের উপর দমন-পীড়নের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুমতি ছাড়া যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ থাকায় উক্ত বিক্ষোভ থেকে ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।[৩১১] পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্ঠা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুরোধে কারাদণ্ড হওয়া ৫৭ বাংলাদেশির সবাইকে ক্ষমা করার আদেশ দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান।[৩১২]
আন্দোলনে হতাহত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সমাবেশস্থলে বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা মামলাসহ নির্যতন বন্ধের আহ্বান জানান এবং রাস্তায় থাকা সেনাবাহিনী প্রত্যাহারেরও জোর দাবি জানান।[৩১৩] এছাড়া জার্মানির লাইপ্ৎসিশে, ডুসেলডর্ফ শহরে, স্টুটগার্টে, পাঠারবনে, হামবুর্গে, নুরেমবার্গে, ড্রেসডেনে, ম্যাগডেবার্গে, ব্রেমেনে, এসেনে, বনে, মিউনিখে, ব্রান্ডেনবুর্গে, ম্যনশেনগ্লাডবাখে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী হেগ-এ, ইতালির ভেনিসে, ফ্রান্সের প্যারিসে, উত্তর সাইপ্রাসে, যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথে, ওয়ারশতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।[৩১৪]
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ও ২১ এপ্রিল রোববার নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে এক সমাবেশে সপরিবারে যোগ দেন প্রবাসী বাংলাদেশি ও নতুন প্রজন্মসহ শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ‘পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশন’-এর অভিযোগ তুলে সময় টিভি’র যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক আজকাল-এর সহযোগী সম্পাদক হাসানুজ্জামান সাকীর উপর চড়াও হয় এবং তাকে লাঞ্ছিত করে। এ ছাড়াও জাতিসংঘ সদর দপ্তর সামনে, নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকায়, নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে, হোয়াইট হাউজের সামনে, ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে, নিউ জার্সি রাজ্যের প্যানিংটন পার্কে, জর্জিয়ায়, কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে, নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ে, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে, ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে, শিকাগোতে, পেনসিলভেনিয়ায়সহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানান সবাই।[৩১৫]
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস দমন-পীড়নে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর নিন্দা জানায় উত্তর আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশি কমিউনিকেশন স্কলারদের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশি কমিউনিকেশন স্কলারস ইন নর্থ আমেরিকা। এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি; যারা সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি সংস্কারের জন্য যথাযথভাবে প্রতিবাদ করছে এবং এখন নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু ও চলমান আইনি হয়রানির বিচারের দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্যায্য কোটা ব্যবস্থা পুনর্গঠনের দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। এছাড়া বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কার ও হত্যাকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্রমবর্ধমান দাবির প্রতিও আমরা সমর্থন জানাচ্ছি।' বিবৃতিতে মোট ৫০ জন শিক্ষক, পিএইচডি গবেষক ও শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর করেন।[৩১৬]
আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জাপানের টোকিওতে প্রবাসী বাংলাদেশি ছাত্র সমাজের উদ্যোগে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২১ জুলাই টোকিওতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে এই প্রতিবাদ সমাবেশে প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রবাসীরাও অংশ নেন এবং প্রতিবাদ জানান।[৩১৭]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.