Loading AI tools
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শেখ হাসিনা ওয়াজেদ (জন্ম: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭) বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদ,[২] যিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল এবং পরবর্তীতে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।[৩][৪] তিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। বিশ বছরেরও বেশিসময় সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করার পর, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী। ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলনের ফলে ঘটিত ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পলায়ন এর মধ্যদিয়ে তার দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী ও কর্তৃত্ববাদী শাসনকালের অবসান ঘটে। ১৯৮১ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।[৫][৬][৭][৮]
শেখ হাসিনা | |
---|---|
বাংলাদেশের ১০ম প্রধানমন্ত্রী | |
কাজের মেয়াদ ৬ জানুয়ারি ২০০৯ – ৫ আগস্ট ২০২৪[ক] | |
রাষ্ট্রপতি | |
পূর্বসূরী | ফখরুদ্দীন আহমদ (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) |
উত্তরসূরী | মুহাম্মদ ইউনূস (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) |
কাজের মেয়াদ ২৩ জুন ১৯৯৬ – ১৫ জুলাই ২০০১ | |
রাষ্ট্রপতি | |
পূর্বসূরী | মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান (তত্ত্বাবধায়ক) |
উত্তরসূরী | লতিফুর রহমান (তত্ত্বাবধায়ক) |
৮ম সংসদ নেতা | |
কাজের মেয়াদ ৬ জানুয়ারি ২০০৯ – ৫ আগস্ট ২০২৪ | |
পূর্বসূরী | খালেদা জিয়া |
কাজের মেয়াদ ২৩ জুন ১৯৯৬ – ১৫ জুলাই ২০০১ | |
পূর্বসূরী | খালেদা জিয়া |
উত্তরসূরী | খালেদা জিয়া |
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৮ম সভাপতি | |
দায়িত্বাধীন | |
অধিকৃত কার্যালয় ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ | |
সাধারণ সম্পাদক | |
পূর্বসূরী | আব্দুল মালেক উকিল |
সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১২ জুন ১৯৯৬ – ৬ আগস্ট ২০২৪ | |
পূর্বসূরী | মুজিবুর রহমান হাওলাদার |
নির্বাচনী এলাকা | গোপালগঞ্জ-৩ |
কাজের মেয়াদ ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ – ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ | |
পূর্বসূরী | কাজী ফিরোজ রশীদ |
উত্তরসূরী | মুজিবুর রহমান হাওলাদার |
নির্বাচনী এলাকা | গোপালগঞ্জ-৩ |
২য় বিরোধীদলীয় নেতা | |
কাজের মেয়াদ ১০ অক্টোবর ২০০১ – ১৮ অক্টোবর ২০০৬ | |
প্রধানমন্ত্রী | খালেদা জিয়া |
পূর্বসূরী | খালেদা জিয়া |
উত্তরসূরী | খালেদা জিয়া |
কাজের মেয়াদ ২০ মার্চ ১৯৯১ – ৩০ মার্চ ১৯৯৬ | |
প্রধানমন্ত্রী | খালেদা জিয়া |
পূর্বসূরী | আবদুর রব |
উত্তরসূরী | খালেদা জিয়া |
কাজের মেয়াদ ৭ মে ১৯৮৬ – ৩ মার্চ ১৯৮৮ | |
রাষ্ট্রপতি | হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ |
পূর্বসূরী | আসাদুজ্জামান খান |
উত্তরসূরী | আবদুর রব |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | হাসিনা শেখ[১] ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ টুঙ্গিপাড়া, পূর্ববঙ্গ, পাকিস্তান অধিরাজ্য |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
অন্যান্য রাজনৈতিক দল | মহাজোট (২০০৮ থেকে) |
দাম্পত্য সঙ্গী | এম এ ওয়াজেদ মিয়া (বি. ১৯৬৮; মৃ. ২০০৯) |
সন্তান | |
মাতা | শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব |
পিতা | শেখ মুজিবুর রহমান |
আত্মীয়স্বজন | শেখ–ওয়াজেদ পরিবার |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | |
পুরস্কার | পুরস্কার ও সম্মাননা |
স্বাক্ষর |
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেত্রী হাসিনা ১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়ার কাছে পরাজিত হন, যার সাথে তিনি এরশাদের বিরুদ্ধে অন্দোলনে সহযোগিতা করেছিলেন।[৯][১০] এরপর বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে হাসিনা, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) নির্বাচনী অসততার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং সংসদ বর্জন করেন, যার ফলে দেশে সহিংস বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়।[১১] খালেদা জিয়া একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে পদত্যাগ করেন, তারপরে ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনের মাধ্যমে হাসিনা প্রথমবারের মত দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাস পেতে শুরু করলেও, হাসিনার প্রথম মেয়াদে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, যা ২০০১ সালের জুলাইয়ের নির্বাচনে খালেদার কাছে তার নির্বাচনী পরাজয়ের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। স্বাধীন দেশ হওয়ার পর এটিই ছিল বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ।
২০০৬-০৮ সালের রাজনৈতিক সংকটের সময়, হাসিনাকে চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক করা হয়েছিল। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি তৃতীয় মেয়াদের জন্য পুনর্নির্বাচিত হন যা বিএনপি বর্জন করেছিল এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল। ২০১৭ সালে, প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পরে, হাসিনা তাদের আশ্রয় ও সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী কৃতিত্ব এবং প্রশংসা পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি চতুর্থ মেয়াদে জয়লাভ করেছিলেন, যেটি সহিংসতাপূর্ণ একটি নির্বাচন ছিল এবং ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে সমালোচিত হয়েছিল। ২০২৪ সালে নির্বাচনের পর তিনি পঞ্চম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন।[১২]
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদকাল (২০০৯-২০২৪), অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং ব্যাপক দুর্নীতি দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল, যার ফলে ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণ, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, যুব বেকারত্ব এবং ব্যাংকিং অনিয়ম নজরে আসে। এই সময়ে অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক মার্কিন$১৫০ বিলিয়ন বা ১৭.৬ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।[১৩] ২০২২ সালে, হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০২৪ সালের জুনে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী নতুন ছাত্রবিক্ষোভ শুরু হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আধাসামরিক বাহিনী দ্বারা এই বিক্ষোভ নৃশংস দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিল, যার ফলে অনেক ছাত্র নিহত হয়েছিল। আগস্টের শুরুতে, এই বিক্ষোভ সরকারের বিরুদ্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়, যা শেষ পর্যন্ত হাসিনাকে পদত্যাগ এবং ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে।[১৪]
২০২০-এর দশক থেকে শুরু করে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ পরিস্থিতির বিরাজ করেছে বলে মনে করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার সরকারের অধীনে সংঘটিত ব্যাপক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নথিভুক্ত করেছে। তার মতামতকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য অনেক রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিককে নিয়মতান্ত্রিক এবং বিচারিকভাবে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।[১৫][১৬] ২০২১ সালে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস, ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রোধ করার জন্য হাসিনার গণমাধ্যম নীতির একটি নেতিবাচক মূল্যায়ন প্রকাশ করে।[১৭] অভ্যন্তরীণভাবে, প্রায়ই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের মূল্যে, হাসিনাকে ভারতের বন্ধু সরকার বলে সমালোচনা করা হয়।[১৮][১৯] তাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সমালোচকরা যা হাসিনার ক্ষমতার প্রধান উৎস হিসেবে মনে করেন।[২০]
২০১৮ সালে হাসিনা টাইম পত্রিকার বিশ্বের ১০০ সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে ছিলেন, এবং ২০১৫, ২০১৮ এবং ২০২২ সালে ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীর একজন হিসাবে তাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায় হাসিনা স্থান করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদের একজন সদস্য, যা বর্তমান ও প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।[২১] তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন মহিলা সরকারপ্রধান।[২২]
হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পূর্ববঙ্গের টুঙ্গিপাড়ার (বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া) বাঙালি মুসলিম শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[২৩][২৪] তার পিতা ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।[৮][২৫] তিনি পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়।[২৬] পিতা ও মাতা উভয় দিক থেকেই তিনি ইরাকি আরব বংশীয়, তার বংশ ছিল বাগদাদের মুসলিম ধর্ম প্রচারক শেখ আব্দুল আউয়াল দারবিশের সরাসরি বংশধর, যিনি মুঘল যুগের শেষভাগে বাংলায় এসেছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ছোটবেলায় মা ও নানীর তত্ত্বাবধানে হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় বেড়ে ওঠেন। পরে তার পরিবার ঢাকায় চলে এলে প্রথমে তারা সেগুন বাগিচায় থাকতেন।[২৭]
১৯৫৪ সাল থেকে তিনি ঢাকায় পরিবারের সাথে মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। একইবছর যখন তার বাবা বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হন, তখন তারা ৩ নম্বর মিন্টো সড়কের সরকারি বাসভবনে স্থানান্তরিত হন। ১৯৫০-এর দশকে, তার বাবা তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতেও কাজ করেছিলেন।[২৭] ১৯৬০-এর দশকে, তাদের পরিবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে তার বাবার তৈরি একটি বাড়িতে চলে আসে। অনেক সাক্ষাৎকার এবং বক্তৃতায়, হাসিনা তার বাবার পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক বন্দী থাকাকালীন সময়ে নিজের বেড়ে ওঠার কথা বলেছেন।[২৮] একটি সাক্ষাৎকারে, তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে "উদাহরণস্বরূপ, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রণালয় নির্বাচিত হওয়ার সময়, আমরা ৩ নম্বর মিন্টো সড়কে থাকতাম, একদিন, আমার মা আমাদের বলেছিলেন যে বাবাকে আগের রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তারপর আমরা তাকে কারাগারে দেখতে যেতাম এবং আমরা সবসময় উপলব্ধি করতাম যে তিনি জনগণকে ভালোবাসতেন বলে তাকে প্রায়শই কারাগারে রাখা হয়েছিল।"[২৯] হাসিনা এবং তার ভাইবোনদের রাজনীতিতে ব্যস্ততার কারণে বাবার সাথে কাটানো সময় খুব কম ছিল।[২৯]
হাসিনা টুঙ্গিপাড়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েন। তার পরিবার ঢাকায় চলে গেলে ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর তিনি গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ এবং আজিমপুর গার্লস হাইস্কুলে বিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা সমাপন করেন।[৩০] ১৯৬৫ সালে তিনি গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর তিনি ইডেন কলেজে স্নাতক ডিগ্রির জন্য ভর্তি হন। তিনি ১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে ইডেন কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।[৩১] ১৯৬৮ সালে, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় হাসিনা এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে বিয়ে করেন, যিনি ছিলেন ডারহাম থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট এবং বাঙালি পরমাণুবিজ্ঞানী।[৩২] তাদের সংসারে সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা) নামে দুই সন্তান রয়েছে। হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যে থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।[৩১][৩৩][৩৪][৩৫] বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময় হাসিনা রোকেয়া হলে থাকতেন, যেটি ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা ছাত্রাবাস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল; এবং পরে নারীবাদী বেগম রোকেয়ার নামে নামকরণ করা হয়।[৩১][৩৬] তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং রোকেয়া হলের মহিলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।[৩১]
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে হাসিনার স্বামী, সন্তান এবং তার বোন শেখ রেহানা বাদে পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়।[৩৭][৩৮] হত্যার সময় হাসিনা, ওয়াজেদ ও রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। সেখানে তারা বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের বাড়িতে আশ্রয় নেন; পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।[৩৯][৪০][৪১] পরিবারের বেঁচে থাকা সদস্যরা ছয় বছর ধরে ভারতের নয়াদিল্লিতে নির্বাসিত জীবনযাপন করেন।[৪২][৪৩] জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার হাসিনাকে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দেয়।[৪৪] ১৯৮১ সালে স্বামীর সঙ্গে নয়াদিল্লি অবস্থানকালে ১৬ ফেব্রুয়ারি, তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর, ১৭ মে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে প্রত্যাবর্তন করেন এবং হাজার-হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কাছ থেকে স্বাগতম লাভ করেন।[২৮][৪৫]
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের (সাবেক ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে) ছাত্রী থাকা অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।[২৬]
ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপনের সময় হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।[৪৬] আওয়ামী লীগকে "কেন্দ্র-বামপন্থী রাজনীতি" দল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।[৪৭][৪৮][৪৯]
১৯৮০-এর দশক জুড়ে হাসিনা সামরিক আইনের অধীনে একাধিকবার আটক ছিলেন। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং নভেম্বরে তাকে গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৮৫ সালের মার্চে, তাকে আরও তিন মাসের জন্য গৃহবন্দি করা হয়েছিল।[৫০][৫১]
রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৮৬ সালের বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করে। তিনি ১৯৮৬-১৯৮৭ সালে সংসদীয় বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৮] তিনি এরশাদের বিরোধী হিসেবে আট দলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন।[৫২] হাসিনার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত তার বিরোধীদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল, যেহেতু নির্বাচনটি সামরিক আইনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং অন্যান্য প্রধান বিরোধী দল সে সময়ে নির্বাচন বর্জন করেছিল। যদিও, তার সমর্থকরা এটা বজায় রেখেছেন যে তিনি এরশাদের শাসনকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য কার্যকরভাবে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে এরশাদ সংসদ ভেঙে দিয়েছিলেন, যখন হাসিনা এবং তার আওয়ামী লীগ একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন সাধারণ নির্বাচনের আহ্বান জানাতে পদত্যাগ করেছিল।[৫৩] ১৯৮৭ সালের নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে, ঢাকায় একটি গণ-অভ্যুত্থান ঘটে এবং আওয়ামী লীগ কর্মী এবং হাসিনার সমর্থনকারী নূর হোসেন সহ বেশকয়েকজন নিহত হন।[৫৪]
খালেদা জিয়ার অধীনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর সাথে হাসিনার দল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে পুনরুদ্ধার করার জন্য কাজ চালিয়ে যায়, যা তারা একটি সাংবিধানিক গণভোট দেশকে সংসদীয় সরকারে ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অর্জন করেছিল।[৫৫]
পরবর্তী ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে।[৫৫]
কয়েক বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পর, ব্যাপক বিক্ষোভ ও ধর্মঘট বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। সরকারি কর্মকর্তারা আদেশ মানতে অস্বীকার করে পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশ রাইফেলসের সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর পরিবর্তে তাদের অস্ত্র ফেলে দেয় এবং প্রকাশ্যে কারফিউ লঙ্ঘন করা হয়। এরশাদের বিরোধিতায় সাংগঠনিকভাবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন হাসিনা।[৯] ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে একটি বিশাল গণ-বিক্ষোভ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে যখন তিনি তার উপরাষ্ট্রপতি, বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পক্ষে পদত্যাগ করেন। আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংসদের জন্য একটি সাধারণ নির্বাচন পরিচালনা করে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং হাসিনার আওয়ামী লীগ বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়।[১০] হাসিনা যে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তার মধ্যে দুটিতে হেরেছেন এবং একটিতে জয়ী হয়েছেন। পরাজয় মেনে নিয়ে তিনি দলীয় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের প্রস্তাব দিলেও দলীয় নেতাদের অনুরোধে বহাল থাকেন।
বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৯৪ সালে একটি নিষ্পত্তিমূলক মোড় নেয়, মাগুরা-২-এর[৫৬] উপনির্বাচনের পর, যা ওই আসনের হাসিনার দলের একজন সংসদ সদস্যের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ আসনটি ফিরে পাওয়ার আশা করেছিল, কিন্তু নির্বাচন প্রত্যক্ষ করতে আসা নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মতে জালিয়াতি ও কারচুপির মাধ্যমে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেছে।[১১] হাসিনা ১৯৯৪ সাল থেকে সংসদ বর্জনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেন।[৫৭]
অন্যান্য বিরোধী দলগুলির সাথে আওয়ামী লীগ দাবি করেছিল যে আগামী সাধারণ নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচন পরিচালনার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।[৫৫] যদিও ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এসব দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।[৫৮]
বিরোধী দলগুলো এক অভূতপূর্ব প্রচারণা শুরু করেছে, সপ্তাহের শেষে হরতাল ডেকেছে। সরকার তাদের অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য অভিযুক্ত করে এবং বিরোধীরা দাবি করে যে বিএনপি তাদের দাবি মেনে নিয়ে সমস্যাটি সমাধান করতে পারে। ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে, আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য দলের সংসদ সদস্যরা গণ পদত্যাগ করেন। সংসদ তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করে এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাসীন বিএনপি ছাড়া সব বড় দলই নির্বাচন বয়কট করেছিল, যারা ফলস্বরূপ সংসদের সবকটি আসন জিতেছিল। হাসিনা এই নির্বাচনকে প্রহসন হিসেবে আখ্যায়িত করেন।[৫৯]
প্রায় পুরোটাই বিএনপির সদস্যদের নিয়ে গঠিত নতুন সংসদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান তৈরি করতে সংবিধান সংশোধন করে। ১৯৯৬ সালের জুনের সাধারণ নির্বাচন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন লাভ করে, কিন্তু সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে ব্যর্থ হয়। ১০৪টি আসনে জয়ী বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া ফলাফলের নিন্দা করেছেন এবং ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করেন। যদিও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে।[৬০]
হাসিনা ১৯৯৬ সালের জুন থেকে ২০০১ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সে সময় গঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী ভারতের সাথে ৩০ বছরের জন্য একটি জল-বন্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তার প্রশাসন ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে, যা শেখ মুজিবের খুনিদের বিচার থেকে মুক্তি দেয়। তার সরকার টেলিযোগাযোগ শিল্পকে বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করেছে, যা এর আগ পর্যন্ত সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ছিল। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে, হাসিনার প্রশাসন পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহের অবসান ঘটায় যার জন্য হাসিনা ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির সময় তার সরকার আশ্রয়ণ-১ প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করে। হাসিনার সরকার ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু মেগা প্রকল্প সম্পন্ন করে। ১৯৯৯ সালে, তার সরকার বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করা এবং প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নতুন শিল্প নীতি শুরু করে।[৩৫]
হাসিনা সরকার অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে কিছু সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে, যার ফলে দেশ গড়ে ৫.৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যদিও ভোক্তা মূল্য সূচক ৫%-এ রয়ে গেছে, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল রাজ্যের তুলনায় কম যারা ১০% মূল্যস্ফীতি অনুভব করেছে। সরকারের ৫ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৯৭-২০০২) দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির উপর জোর দিয়েছে যা বেকার যুবক ও মহিলাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে। খাদ্যশস্য উৎপাদন ১৯ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ২৬.৫ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয় এবং দারিদ্র্যের হার হ্রাস পায়। নদী ভাঙনের ফলে গৃহহীনদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য একটি আবাসন তহবিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সরকার "একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প" চালু করে যা গৃহস্থালি চাষের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র অংশের আয়কে জোরদার করে।[৩৫]
১৯৯৯ সালে হাসিনা সরকার নতুন শিল্প নীতি গ্রহণ করে যার লক্ষ্য ছিল বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করা এবং সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ লাভ করা, যার মধ্য দিয়ে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা। এই নতুন শিল্প নীতির লক্ষ্য ছিল অর্থনীতির ২৫% শিল্প ভিত্তিক করা এবং দেশের ২০% কর্মী শিল্পে নিযুক্ত করা। এটি ক্ষুদ্র, কুটির ও শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করেছে যেখানে নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন, দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশ এবং স্থানীয় কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে শিল্পের দায়িত্ব রয়েছে। নতুন শিল্প নীতির বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সরকারের কাছ থেকে পূর্বানুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশী উদ্যোগে শতভাগ ইক্যুইটির মালিক হওয়ার অনুমতি দেয় এবং অর্থনীতির চারটি খাত ছাড়া বাকি সবগুলো বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।[৩৫]
সমাজের সবচেয়ে অরক্ষিত ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য একটি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর অংশ হিসেবে হাসিনা প্রশাসন একটি ভাতা প্রকল্প চালু করেছিল যার ফলে ৪০০,০০০ বয়স্ক মানুষকে মাসিক ভাতা পেদান করা হয়। এই স্কিমটি পরে বিধবা, দুস্থ ও নির্জন মহিলাদের জন্য প্রসারিত করা হয়েছিল। সরকার কর্তৃক ৳১০০ মিলিয়নের প্রাথমিক অনুদান দিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন এবং প্রশিক্ষণের জন্য নিবেদিত একটি জাতীয় ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আশ্রয়ণ-১ প্রকল্পএর অধীনে গৃহহীনদের আশ্রয় ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।[৩৫]
হাসিনাই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি জাতীয় সংসদে "প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন-উত্তর সময়" এ নিযুক্ত ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের বিচারের অনুমতি দিয়ে জাতীয় সংসদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেছে। সরকার আইন পাস করে গ্রাম পরিষদ, জেলা পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদ সহ চার স্তরের স্থানীয় সরকারের ব্যবস্থা চালু করে।[৩৫]
হাসিনা সরকার টেলিযোগাযোগ শিল্পকে উদারীকরণ করে, প্রাথমিকভাবে সেলুলার মোবাইল টেলিফোন পরিসেবা প্রদানের জন্য চারটি বেসরকারি কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান করে। ফলে পূর্ববর্তী রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া ক্ষমতা বিলুপ্ত লাভ করে অর্থাৎ দাম কমতে শুরু করে এবং প্রবেশাধিকার আরও ব্যাপক হয়ে ওঠে। সরকার সদ্য উদারীকৃত টেলিযোগাযোগ শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন প্রতিষ্ঠা করে।[৩৫]
সরকার নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারী উন্নয়নের জন্য জাতীয় নীতি প্রতিষ্ঠা করে। এই নীতির লক্ষ্য ছিল নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি, নারীর প্রতি বৈষম্য ও নিপীড়ন দূর করা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দারিদ্র্যের অবসান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সরকার ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে সমস্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মহিলাদের জন্য তিনটি সংরক্ষিত আসন চালু করে। ১৯৯০ সালে হাসিনার মন্ত্রিসভা শিশুদের জন্য অধিকার এবং উন্নত লালন-পালন নিশ্চিত করতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন করে।[৩৫]
সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন হাসিনা, ওয়াশিংটন, ডি.সি.তে ওয়ার্ল্ড মাইক্রো ক্রেডিট সামিটে যোগ দেন; রোমে বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন; ভারতে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন সম্মেলন; পাকিস্তানে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলন; মালদ্বীপে ৯ম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন; তুরস্কে ১ম ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলন; জার্মানিতে বয়স্কদের জন্য ৫ম বিশ্ব সম্মেলন; যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ সম্মেলন এবং ইরানে ৮ম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, জাপান, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়াও সফর করেছেন।[৩৫]
বাংলাদেশ দুটি বহুপাক্ষিক সংস্থা, বিম্সটেক এবং ডি-৮-এ যোগ দেয়। তিনি স্বাধীনতার পর প্রথম বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী যিনি পুরো পাঁচ বছরের সরকার মেয়াদ পূর্ণ করেন।[৮]
২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে, ৪০% (বিএনপির ৪১% থেকে সামান্য কম) ভোটে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও, প্রথম-বিগত-পরবর্তী নির্বাচনী পদ্ধতির ফলে আওয়ামী লীগ সংসদে মাত্র ৬২টি আসন জিতেছিল। যেখানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন 'চারদলীয় জোট' ২৩৪টি আসন জিতেছে, যা তাদের ছিল সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। হাসিনা নিজে তিনটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন,[৬১] এবং রংপুরের একটি নির্বাচনী এলাকায় পরাজিত হন, যার মধ্যে তার স্বামীর বাড়ি ছিল, কিন্তু অন্য দুটি আসনে জয়ী হন। রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সহায়তায় নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে দাবি করে হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নির্বাচন নিয়ে অনেকাংশে সন্তুষ্ট ছিল এবং 'চারদলীয় জোট' সরকার গঠন করে।[৬২]
পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা সংসদে অংশগ্রহণে অনিয়মিত ছিলেন।[৬৩] ২০০৩ সালের শেষের দিকে, আওয়ামী লীগ তার প্রথম বড় সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করে, পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ঘোষণা করেন যে ২০০৪ সারের ৩০ এপ্রিলের আগে সরকারের পতন হবে। বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (নাজিউর রহমান মঞ্জু) ও ইসলামী ঐক্যজোট এর নির্বাচনী জোটের কাছে ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। শেখ হাসিনা দলের এই পরাজয়ের জন্য তারই মনোনীত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাঈদকে দায়ী করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা বেড়ে যায়। ২০০৪ সালের মে মাসে আওয়ামী লীগের সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এরপর ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়, যার ফলে দলের মহিলা সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন দলের সমর্থক নিহত হন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে, একটি বিশেষ আদালত এই ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় রায় দেয়; যে এটি একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা, যা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছিল এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান (অনুপস্থিতি) এবং সাবেক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ সকল আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আদালত বিভিন্ন শাস্তির নির্দেশ জারি দিয়েছেন।[৬৪] একইবছর, সিলেটে গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়।[৬৫][৬৬]
২০০৫ সালের জুনে, এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামে মেয়র নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এই নির্বাচনকে বিরোধী দল এবং ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে একটি শোডাউন হিসাবে দেখা হয়েছিল।[৬৭]
২০০৬ সালের অক্টোবরে, হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ লগি বৈঠা আন্দোলন শুরু করে, যেখানে আওয়ামী লীগের হাজার-হাজার কর্মী কয়েকদিন ধরে নৌকার লগি এবং বৈঠা নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন রাজপথ দখল করতে শুরু করে। ফলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে, ভাঙচুর, লুটপাটের পাশাপাশি নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়।[৬৮][৬৯][৭০][৭১][৭২]
২০০৭ সালের মে মাসে, পুলিশ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৯ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যালয় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করে। কিন্তু ২০১১ সালের জুনে শেখ হাসিনার শাসনামলে তাদের সকলকে আদালতে খালাস দেওয়া হয়।[৭৩]
পরিকল্পিত ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের মাসগুলো ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিতর্কে ভরা।[৭৪] ২০০৬ সালের অক্টোবরে খালেদা জিয়ার সরকারের অবসানের পর, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে পরবর্তী মাসে ৪০ জন নিহত হয় এবং দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও ধর্মঘট ঘটে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সব দলকে টেবিলে আনতে অসুবিধা হয়েছিল। আ.লীগ ও তাদের সহযোগীরা প্রতিবাদ করে এবং অভিযোগ করে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপির পক্ষ নিয়েছে।[৭৫]
অন্তর্বর্তী সময়কাল সহিংসতা এবং ধর্মঘট ঘটেছিল।[৭৬][৭৭] রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী, হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সাথে আলোচনা করেন এবং পরিকল্পিত ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির নির্বাচনে সব দলকে নিয়ে আসেন। পরে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এরশাদের মনোনয়ন বাতিল করেন।[৭৮][৭৯] ফলে শেষ দিনে মহাজোট সম্ভাব্য প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়। তারা ভোটার তালিকা প্রকাশের দাবি জানান।
মাসের শেষের দিকে, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য হন।[৮০] রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমর্থনে ফখরুদ্দীন আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন।[৮১][৮২][৮৩]
হাসিনা ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ, কাজী জাফরউল্লাহ ও তারেক আহমেদ সিদ্দিকির সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে যান।[৮৪] পরদিন তিনি তারেক আহমেদ সিদ্দিক ও আবদুস সোবহান গোলাপকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান।[৮৪] তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী তার ছেলে এবং মেয়েকে দেখতে গিয়েছিলেন।[৮৫] এরপর তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান।[৮৬]
২০০৭ সালের এপ্রিলে, হাসিনার বিরুদ্ধে ২০০৬-০৮ সালের রাজনৈতিক সংকটের সময় সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়। তার বিরুদ্ধে ১৯৯৮ সালে ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম ফারুককে তার কোম্পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগে ঘুষ দিতে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ফারুক বলেন, তিনি তার প্রকল্প অনুমোদনের জন্য হাসিনাকে অর্থ দিয়েছেন।[৮৭]
২০০৭ সালের ১৮ এপ্রিলে, সরকার হাসিনাকে দেশে প্রত্যাবর্তন করতে বাধা দেয়, এই বলে যে তিনি উস্কানিমূলক বিবৃতি দিয়েছিলেন এবং তার প্রত্যাবর্তন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এটি একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারও খালেদা জিয়াকে দেশ ত্যাগের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।[৮৮] হাসিনা দেশে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এবং ২০০৭ সালের ২২ এপ্রিল, তাকে হত্যার জন্য গ্রেপ্তারের একটি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।[৮৯][৯০] তার বিরুদ্ধে মামলাটিকে "সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং জাল" হিসাবে বর্ণনা করে হাসিনা বলেছিলেন যে, তিনি আদালতে অভিযোগের বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে চেয়েছিলেন। ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করা হয়[৯১] এবং ২৫ এপ্রিলে হাসিনার প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।[৯২] যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ৫১ দিন কাটানোর পর, ২০০৭ সালের ৭ মে হাসিনা ঢাকায় ফিরে আসেন, যেখানে কয়েক হাজার জনতা তাকে স্বাগত জানায়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তার প্রত্যাবর্তনে সরকারের দেরি করা উচিত হয়নি।[৯৩]
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই, হাসিনাকে তার বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং ঢাকার একটি স্থানীয় আদালতে নিয়ে যায়।[৯৪] তাকে চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং জামিন অস্বীকার করা হয়েছিল এবং তাকে জাতীয় সংসদের প্রাঙ্গনে কারাগারে রূপান্তরিত একটি ভবনে রাখা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ বলছে, গ্রেফতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।[৯৫] ২০০৭ সালের ১৭ জুলাই, দুর্নীতি দমন কমিশন হাসিনা এবং খালেদা জিয়া উভয়কে নোটিশ পাঠায়, এবং এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণ দিতে নির্দেশ দেয়।[৯৬] হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ দেশের বাইরে থাকায় তিনি বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ সংগঠিত করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের এই গ্রেপ্তারকে সামরিক-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনা ও জিয়াকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে এবং রাজনৈতিক নির্বাসনে বাধ্য করার একটি পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাপকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে।[৯৭][৯৮] যুক্তরাজ্যের এমপিরা এই গ্রেফতারের নিন্দা জানায়।[৯৯]
২০০৭ সালের ১১ এপ্রিলে, পুলিশ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করে, যে তিনি ২০০৬ সালের অক্টোবরে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের চার সমর্থককে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। আওয়ামি লীগ ও প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় চার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।[১০০] হাসিনা তখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন।[১০১]
২০০৭ সালের ৩০ জুলাইয়ে, উচ্চ আদালত হাসিনার চাঁদাবাজির বিচার স্থগিত করে এবং জামিনে মুক্তির আদেশ দেয়।[১০২] ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সালে একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য একটি চুক্তি প্রদানের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন হাসিনার বিরুদ্ধে একটি অতিরিক্ত মামলা দায়ের করে, যার জন্য তিনি ৩০ মিলিয়ন টাকা ঘুষ নিয়েছেন এবং সর্বনিম্ন দরদাতার কাছে চুক্তিটি আটকে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আরও ছয়জনের এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।[১০৩][১০৪] ওই দিনই জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়।[১০৩]
২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি, হাসিনাকে তার দুই আত্মীয়, তার বোন শেখ রেহানা এবং তার চাচাতো ভাই শেখ সেলিম সহ একটি বিশেষ আদালত চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত করে।[১০৫] ৬ ফেব্রুয়ারি, হাইকোর্ট বিচার বন্ধ করে দেয়, এই রায় দেয় যে জরুরী অবস্থা জারির আগে সংঘটিত অপরাধের জন্য তাকে জরুরী আইনের অধীনে বিচার করা যাবে না।[১০৬]
২০০৮ সালের ১১ জুন, হাসিনা চিকিৎসার কারণে প্যারোলে মুক্তি পান। পরের দিন তিনি শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা, চোখের সমস্যা এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান।[১০৭][১০৮] তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী তাকে আটকের সময় হাসিনার চিকিৎসার বিষয়ে অবহেলার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন।[১০৯]
তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেয়র নির্বাচন করেছিল যাতে আওয়ামী লীগ ১৩টির মধ্যে ১২টিতে জয়লাভ করে। সরকার হাসিনার দুই মাসের চিকিৎসা প্যারোল আরও এক মাস বৃদ্ধি করে।[১১০]
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হাসিনা ৬ নভেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশে ফিরে আসেন।[১১১] তিনি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সাথে "মহাজোটের" ব্যানারে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২০০৮ সালের ১১ ডিসেম্বরে, হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের সময় তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন এবং ২০২১ সালের মধ্যে একটি "ডিজিটাল বাংলাদেশ" গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন।[১১২]
আওয়ামী লীগের ইশতেহারের শিরোনাম ছিল পরিবর্তনের জন্য সনদ এবং এতে রূপকল্প ২০২১-এর প্রতি দলের অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হ্রাসের ব্যবস্থা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত ছিল; স্বাধীন দুদককে শক্তিশালী করে এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা বার্ষিক সম্পদের বিবরণী জমা দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা; ২০১৩ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৭,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির প্রতি দীর্ঘমেয়াদী নীতির প্রবর্তন; কৃষি খাতে প্রাণবন্ততা আনয়ন এবং দরিদ্রদের নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রসারিত করা; সুশাসন সৃষ্টি এবং সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় উগ্রবাদ দমন; ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার; একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার; মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করা এবং প্রশাসনকে অ-রাজনীতিকরণ করা।[৩৫]
হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং মহাজোট (মোট ১৪টি দল) ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৩০টি আসন পেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে।[১১৩] বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের (৪-দলীয় জোট) নেত্রী খালেদা জিয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে "সংসদ নির্বাচনের মঞ্চ-ব্যবস্থাপনার" অভিযুক্ত করে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি, হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। নির্বাচনের স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা ঘোষণা করেন যে নির্বাচন একটি উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।[১১৪]
হাসিনা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর, এরশাদকে রাষ্ট্রপতি করার জন্য জাতীয় পার্টির সাথে তার চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন।[১১৫]
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জোরপূর্বক সংস্কার সমর্থনকারী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সরিয়ে দিয়েছেন হাসিনা।[১১৬] তাকে ২০০৯ সালের বাংলাদেশ রাইফেলসের বেতন বিরোধে বিদ্রোহের আকারে একটি বড় জাতীয় সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যার ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাসহ ৫৬ জন নিহত হয়েছিল।[১১৭][১১৮] এই বিদ্রোহের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করার কারণে সেনা কর্মকর্তারা হাসিনাকে দোষারোপ করেন।[১১৯][১২০][১২১][১১৭] যাইহোক, ২০০৯ সালে, সেনা কর্মকর্তাদের সাথে হাসিনার ব্যক্তিগত বৈঠকের একটি রেকর্ডিং প্রকাশ পেয়েছিল, যারা বিদ্রোহের প্রাথমিক পর্যায়ে বিডিআর রাইফেলস কম্পাউন্ডে সশস্ত্র অভিযানের নির্দেশ দিয়ে কীভাবে তিনি আরও সিদ্ধান্তমূলকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাননি তা নিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন; তারা বিশ্বাস করেছিল যে বিদ্রোহের নেতাদের সন্তুষ্ট করার জন্য তার প্রচেষ্টা বিলম্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল যা আরও মৃত্যুর দিকে পরিচালিত করেছিল।[১১৯][১২০] ২০১১ সালে দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদকীয়তে, "পরিস্থিতিতে তার (হাসিনার) বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালনার জন্য প্রশংসিত হয়েছিল যার ফলস্বরূপ আরও রক্তপাত প্রতিরোধ করা হয়েছিল"।[১২০] ২০১১ সালে, সংসদ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় আইনটি বাতিল করে।[১২২] ২০১২ সালে, তিনি একটি কঠোর অবস্থান বজায় রেখেছিলেন এবং ২০১২ সালের রাখাইন রাজ্যের দাঙ্গার সময় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছিলেন।[১২৩]
২০১৩ সালের ২৭ জুন, হাসিনা এবং অন্যান্য ২৪ জন বাংলাদেশী মন্ত্রী এবং নিরাপত্তা কর্মীদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।[১২৪] জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কিছু অর্জনের জন্য তাকে "আন্তর্জাতিকভাবে কৃতিত্ব" দেওয়া হয়েছে।[১২৫] ২০১১ সালে মধ্যম পদমর্যাদার সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা তার বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা বন্ধ করা হয়েছিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খবর দেওয়া হয়েছিল।[১২৬] বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জড়িত সেনা কর্মকর্তাদেরকে ইসলামী চরমপন্থী বলে বর্ণনা করেছে।[১২৭]
২০১২ সালে, নোবেল বিজয়ী এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে হাসিনার বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। একটি নরওয়েজিয় প্রামাণ্যচিত্রে ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক থেকে একটি অনুমোদিত সংস্থায় অর্থ স্থানান্তরের সমালোচনা করা হয়েছিল। প্রামাণ্যচিত্রটি প্রচারিত হওয়ার পর ইউনূস টাকা ফেরত দেন কিন্তু এটি বাংলাদেশের সরকার ও মিডিয়ার দ্বারা গ্রামীণ ব্যাংকের তদন্ত বৃদ্ধি করে। আদালতের রায়ে ইউনূস তার গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তিনি হাসিনা ও অন্যান্য বাংলাদেশী রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করেন। হাসিনা বলেছিলেন যে, তিনি বুঝতে পারছেন না কেন ইউনূস তাকে দোষারোপ করেছেন যখন আদালতের রায় তাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দিয়েছে।[১২৮]
এই মেয়াদে, তার সরকার নেতৃত্বে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য সফল হয়, যার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের স্থানীয় সহযোগী রাজাকার, আল বদর এবং আল শামস কর্তৃক সংঘটিত বাংলাদেশ গণহত্যার সাথে জড়িত সন্দেহভাজনদের তদন্ত ও বিচার করা হয়।[১২৯]
হাসিনা তার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তার মহাজোট মিত্রদের সাথে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন, ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। অন্যায্য পরিস্থিতি এবং নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্দলীয় প্রশাসনের অভাবের কারণে নেতৃস্থানীয় বিরোধী দলগুলি নির্বাচন বর্জন করেছিল।[১৩০] ফলস্বরূপ, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৬৭টি আসন জিতেছিল যার মধ্যে ১৫৩টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল, যা তার ২০০৮ সালের নির্বাচনের সাফল্যকে ছাড়িয়ে গেছে - যখন এটি ২৬৩টি সংসদীয় আসন পেয়েছে।[১৩১] হাসিনার আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ পরিচালনা করেছে এবং এই নির্বাচনে ২৮৮টি আসনে জয় লাভ করে।[১৩২] নেতৃস্থানীয় বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একটি ব্যালটভর্তি বাক্স ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছে।[১৩১] বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করে।[১৩৩]
সহিংসতার প্রতিবেদন এবং নির্বাচনের দৌড়ে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কথিত ক্র্যাকডাউনের ফল স্বরূপ নির্বাচনটি বিতর্কিত হয়েছিল। নির্বাচনে মহাজোট বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩টি আসন (৩০০টি) লাভ করে, যার মধ্যে আওয়ামী লীগ ১২৭টিতে জয়লাভ করে।[১৩৪][১৩৫] হাসিনার আওয়ামী লীগ মোট ২৩৪টি আসন নিয়ে নিরাপদ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।[১৩৬][১৩৭] বয়কট এবং সহিংসতার ফলে, ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৫১%, যা আগের কয়েকটি নির্বাচনের তুলনায় কম ছিল। ফলাফলের পরের দিন, হাসিনা বলেছিলেন যে বর্জন করা উচিত "এর মানে এই নয় যে বৈধতার প্রশ্ন থাকবে।[১৩৮][১৩৯] জনগণ ভোটে অংশ নিয়েছিল এবং অন্যান্য দল অংশগ্রহণ করেছিল।" বিতর্ক সত্ত্বেও হাসিনা সরকারি বিরোধী হিসেবে এরশাদের জাতীয় পার্টির (যারা ৩৪টি আসনে জয়ী) সাথে সরকার গঠন করে।[১৪০][১৪১]
বিএনপি একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চেয়েছিল এবং সরকারকে তা করতে বাধ্য করার জন্য বিক্ষোভ করেছিল।[১৪২][১৪৩]
এই সময়কালে দেশে ইসলামিক চরমপন্থীদের দ্বারা ক্রমবর্ধমান আক্রমণও নজরে আসে, যার মধ্যে জুলাই ২০১৬ ঢাকা আক্রমণকে বিবিসি "বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ইসলামি হামলা" হিসেবে বর্ণনা করেছে।[১৪৪] বিশেষজ্ঞদের মতে, হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক ও নাগরিক স্থান সঙ্কুচিত করা "চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির বিকাশের স্থান" তৈরি করেছে এবং "ইসলামি গোষ্ঠীগুলির থেকে একটি সহিংস প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।"[১৪৫]
২০১৭ সালের মার্চে, বাংলাদেশের প্রথম দুটি সাবমেরিন চালু হয়।[১৪৬] ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে, হাসিনার সরকার প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় ও সহায়তা প্রদান করে এবং মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ করার আহ্বান জানায়।[১৪৭] রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেওয়ার সরকারের সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সমর্থন করেছেন। হাসিনা তার কাজের জন্য কৃতিত্ব ও প্রশংসা পেয়েছেন।[১৪৮]
হাসিনা সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্ট্যাচু অব জাস্টিস অপসারণের আহ্বানকে সমর্থন করেছিলেন। যারা ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে তাদের চাপের কাছে সরকার মাথা নত বলে এটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।[১৪৯]
হাসিনা এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের একজন পৃষ্ঠপোষক, যার নেতৃত্বে রয়েছেন চ্যান্সেলর চেরি ব্লেয়ার, এবং জাপানের ফার্স্ট লেডি আকি আবে এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা সহ।[১৫০]
হাসিনা তার চতুর্থবারের মতো এবং টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হন, যেখানে তার দল আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৮৮টি জিতেছিল। প্রধান বিরোধী জোটের নেতা কামাল হোসেন ভোটকে 'প্রহসনমূলক' ঘোষণা করে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। নির্বাচনের আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য অধিকার সংস্থাগুলো সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরির অভিযোগ তুলেছিল।[১৫১] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্পাদকীয় বোর্ড নির্বাচনটিকে প্রহসনমূলক বলে বর্ণনা করেছেন, সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে যে সম্ভবত হাসিনা ভোট কারচুপি ছাড়াই জয়লাভ করতেন এবং কেন তিনি তা করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।[১৫২]
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, যারা ১২ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে ছিল, তারা ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জন করেছিল, এবং অত্যন্ত খারাপ ফলাফল করেছিল। মাত্র আটটি আসনে তারা জয়লাভ করে, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে এরশাদ-পরবর্তী গণতান্ত্রিক পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর থেকে দল এবং এর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোটের সবচেয়ে দুর্বল বিরোধী দলের কাছে প্রান্তিক হয়ে পড়েছে।[১৫৩]
২০২১ সালের মে মাসে, হাসিনা ডাক ভবন নামে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের জন্য একটি নতুন সদর দপ্তরের উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন। শেখ হাসিনা তার ভাষণে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় ডাক পরিষেবার আরও উন্নয়নের আহ্বান জানান। বক্তব্যে উল্লিখিত উন্নয়নমূলক পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে পরিসেবার ডিজিটাল রূপান্তর অব্যাহত রাখা, এবং ডাক গুদামগুলিতে কুলিং ইউনিট নির্মাণ যাতে ডাকযোগে পচনশীল খাদ্য পাঠানোর পথ প্রশস্ত করা যায়।[১৫৪]
২০২২ সালের জানুয়ারিতে, সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় সংসদে একটি আইন পাস করে। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী প্রবাসী সহ সকল বাংলাদেশী নাগরিক এই প্রকল্পের অধীনে মাসিক উপবৃত্তি পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে।[১৫৫]
২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ $৯৫.৮৬ বিলিয়নে পৌঁছেছে, যা ২০১১ থেকে ২৩৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।[১৫৬] এই সময়কালটি দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টরে ব্যাপক অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে যেখানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুসারে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০০৯ সালে ৳২৩,০০০ কোটি[১৫৭] থেকে ২০১৯ সালে ৳২,৫০,০০০ কোটির বেশি হয়েছে।[১৫৮]
২০২২ সালের জুলাইয়ে, অর্থ মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার জন্য অনুরোধ জানায়। সরকার ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে নিষেধাজ্ঞার ফলস্বরূপ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের উল্লেখ করেছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে, একটি স্টাফ পর্যায়ের চুক্তিতে পৌঁছেছিল এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, আইএমএফ $৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি সহায়তা প্রোগ্রাম সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছিল, যার মধ্যে বর্ধিত ক্রেডিট সুবিধার অধীনে $৩.৩ বিলিয়ন এবং নতুন স্থিতিস্থাপকতা এবং টেকসই সুবিধার অধীনে US$১.৪ বিলিয়ন। আইএমএফ বলেছে যে সহায়তা প্যাকেজ "অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে সাহায্য করবে, দুর্বলদের রক্ষা করবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সবুজ প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করবে।"[১৫৯]
২০২২ সালের ডিসেম্বরে, ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সাথে যুক্ত, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।[১৬০]
২৮ ডিসেম্বর, হাসিনা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দেশের প্রথম গণ-দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা ঢাকা মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করেন।[১৬১]
২০২৩ জি২০ নয়াদিল্লি সম্মেলনের সময়, হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছিলেন, যাতে সংযোগ এবং বাণিজ্যিক সংযোগের মতো ক্ষেত্রগুলি সহ ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার বৈচিত্র্য আনার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।[১৬২] তার সাথে ছিলেন তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, যিনি ডব্লিউএইচও নির্বাচনে প্রার্থী।[১৬৩] এই শীর্ষ সম্মেলন হাসিনার জন্য বিশ্বের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাত করার এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার সুযোগ করে দিয়েছে।[১৬৪]
প্রধান বিরোধীদলের দ্বারা বয়কট করা একটি নির্বাচনে কম ভোটার উপস্থিতির মধ্যে তার দল, আওয়ামী লীগ ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২২৪টিতে জয়ী হলে হাসিনা তার টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হন।[১৬৫]
২০২৪ সালের জুলাই মাসে, কোটা পদ্ধতির সংস্কারের সমর্থনে বিক্ষোভ শুরু হয়।[১৬৬] জবাবে হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন,
“ | মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? তাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে? এটা আমার দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন।[১৬৭][১৬৮] | ” |
প্রতিবাদকারী তথা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এটি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে রাজাকার বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করে এবং তাদের কিছু স্লোগানে শব্দটি ব্যবহার করে।[১৬৯][১৭০] প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী হামলা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি ছুড়ে ছাত্রদের হত্যা করলে এবং আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের সদস্যরাও হামলা, সাধারণ ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়ালে[১৭১] বিক্ষোভটি পরে সহিংস রূপ নেয়, যার ফলে ৬৫০ জনেরও বেশি মৃত্যু ঘটে[১৭২] এবং ২০,০০০ জনেরও বেশি আহত হয়।[১৭৩][১৭৪][১৭৫] এরপর সরকার সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়, সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় বিক্ষোভকারীদের উপর ব্যাপক কঠোর ব্যবস্থা আরোপ করে এবং দেশে পাঁচ দিন স্থায়ী কারফিউ জারি করা হয়।[১৭৬][১৭৭] সুপ্রিম কোর্ট কোটা পদ্ধতির সংস্কারে সম্মতি জানায়,[১৭৮][১৭৯] কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তখন বিক্ষোভের সময় নিহতদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করে এবং হাসিনার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্য দায়ী কিছু মন্ত্রীদের পদত্যাগ দাবি করে।[১৮০][১৮১] ৩ আগস্ট, বিক্ষোভ সমন্বয়কারীরা এক দফা দাবি জারি করে এবং হাসিনা ও তার পুরো মন্ত্রিসভার পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।[১৮২][১৮৩]
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, বিক্ষোভকারীদের একটি বিশাল অংশ গণভবন ঘেরাও করতে শরু করলে, হাসিনা পদত্যাগ করেন।[১৪] বেলা ১২ টায় তিনি রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।[১৮৪] তিনি পদত্যাগের পর জাতীর উদ্দেশ্যে কোনো বক্তব্য দেননি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার পদত্যাগের ঘোষণা করেন, যিনি পরে একটি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলেন, "আমি এখন দায়িত্ব নিচ্ছি এবং আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব এবং দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে বলব।"[১৮৫][১৮৬][১৮৭][১৮৮] ওই দিন বেলা আড়াইটার হাসিনা প্রথমে গাড়ি, তারপর হেলিকপ্টার এবং অবশেষে বিমানযোগে ভারতে পালিয়ে যান।[১৪] তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন।[১৮৯][১৯০] পরিবহন বিমানটি ভারতের দিল্লির কাছাকাছি একটি বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে।[১৯১]
হাসিনা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০জে হারকিউলিস পরিবহন বিমানে করে ভারতের গাজিয়াবাদের হিন্ডন বিমানবন্দরের ঘাঁটিতে অবতরণ করেন, যেখানে তাকে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত কুমার ডোভাল এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা অভ্যর্থনা জানান।[খ] ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর সংসদে বলেছিলেন, "খুব অল্প সময়ের নোটিশে, তিনি এই মুহূর্তে ভারতে আসার জন্য অনুমোদনের অনুরোধ করেছিলেন।"[১৪] হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ প্রথমে বলেছিলেন যে, তিনি (হাসিনা) আর রাজনীতিতে ফিরবেন না[১৯৬][১৯৭][১৯৮] এবং তার পরবর্তী গন্তব্যের আগে "কিছু সময়ের জন্য দিল্লিতে থাকার" পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে ৭ আগস্ট বলেছিলেন যে, তিনি (হাসিনা) এবং আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সক্রিয় থাকবেন।[১৯৯] হাসিনা লন্ডনে আশ্রয় পাওয়ার আশা করেছিলেন, কিন্তু যুক্তরাজ্য রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার প্রাথমিক উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানা গেছে।[২০০][২০১] তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, বেলারুশ বা কাতারে অস্থায়ী বসবাসের কথা বিবেচনা করেছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি ফিনল্যান্ড তার একটি সম্ভাব্য গন্তব্য হিসাবে অনুমান করা হয়েছিল। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও, মার্কিন সরকার বাংলাদেশে তার শাসনের সমালোচনা করায় তিনি সেখানে আশ্রয় নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করা হয়।[১৯৯] অন্য কোথাও আশ্রয় পাওয়ার আগে তিনি ভারতে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন।[২০২] তবে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দাবি করেন যে তিনি কোথাও রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন নি।[২০৩][২০৪]
২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত, শেখ হাসিনা কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভারতের একটি গোপন স্থানে রয়েছেন।[২০৫] সজীব ওয়াজেদ কোনো দেশের নাম না করেই বলেছেন, যে বিক্ষোভের কারণে তার পদত্যাগের কারণ ছিল তাদের একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সমর্থন ছিল।[২০৬] ১১ আগস্ট ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার পদত্যাগকে প্রভাবিত করার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং এর আগে জাতীয় সংসদে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেন।[২০৭] তবে ওয়াজেদ বিবৃতিটিকে "মিথ্যা ও বানোয়াট" বলে অভিহিত করে বলেন, হাসিনা "ঢাকা ছাড়ার আগে বা পরে কোনো বিবৃতি দেননি"।[২০৮] হোয়াইট হাউসও কোনো যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।[২০৯]
বছর | নির্বাচনী এলাকা | দল | ভোট | % | ফলাফল | |
---|---|---|---|---|---|---|
১৯৯১ | ঢাকা-৭ | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | ৪৯,৩৬২ | ৩৬.৫ | পরাজিত | |
ঢাকা-১০ | ২৯,৪৫১ | ৩৭.৮ | পরাজিত | |||
গোপালগঞ্জ-৩ | ৬৭,৯৪৫ | ৭২.২ | বিজয়ী | |||
১৯৯৬ | বাগেরহাট-১ | ৭৭,৩৪২ | ৫১.৪ | বিজয়ী | ||
খুলনা-১ | ৬২,২৪৭ | ৫৩.৫ | বিজয়ী | |||
গোপালগঞ্জ-৩ | ১,০২,৬৮৯ | ৯২.২ | বিজয়ী | |||
২০০১ | রংপুর-৬ | ৭৭,৯৯১ | ৪৪.৬ | পরাজিত | ||
গোপালগঞ্জ-৩ | ১,৫৪,১৩০ | ৯৪.৭ | বিজয়ী | |||
নড়াইল-১ | ৭৮,২১৬ | ৫৪.৬ | বিজয়ী | |||
নড়াইল-২ | ৯৭,১৯৫ | ৫০.৩ | বিজয়ী | |||
২০০৮ | রংপুর-৬ | ১,৭০,৫৪২ | ৮০.০ | বিজয়ী | ||
বাগেরহাট-১ | ১,৪২,৯৭৯ | ৬৮.৩ | বিজয়ী | |||
গোপালগঞ্জ-৩ | ১৫৮,৯৫৮ | ৯৭.১ | বিজয়ী | |||
২০১৪ | গোপালগঞ্জ-৩ | ১,৮৭,১৮৫ | ৯৮.৭ | বিজয়ী | ||
২০২৪ সালের ২২ আগস্ট পর্যন্ত, হাসিনার শাসনামলে করা বিভিন্ন কাজের জন্য অন্তত ৪৫টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।[২১০] ১৩ আগস্ট ঢাকার একটি আদালতে হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-মহাসচিব ওবায়দুল কাদেরসহ ছয় সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় এক মুদি ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।[২১১][২১২] একই দিনে, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার ছেলে জয়ের মাধ্যমে প্রকাশিত বিক্ষোভের সময় হওয়া হত্যাকাণ্ডের তদন্তের আহ্বান জানিয়ে তার প্রথম নিশ্চিত বিবৃতি প্রকাশ করেন, এতে তিনি পুলিশ এবং আওয়ামী লীগও "সন্ত্রাসী আগ্রাসনের" শিকার হয়েছিল বলে জোর দিয়েছেন।[২১৩] ১৪ আগস্ট, তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা এবং আরেকটি গুমের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।[২১৪] পরে একই দিন, নিহত শিক্ষার্থীর বাবার আবেদনের পর বিক্ষোভ দমনে তাদের ভূমিকার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হাসিনাসহ নয়জন ঊর্ধ্বতন সরকারি ও আওয়ামী লীগ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে।[২১৫] ১৫ আগস্ট, বিক্ষোভ চলাকালে দুই জনের মৃত্যুর ঘটনায় হাসিনা এবং তার বেশকয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে দুটি অতিরিক্ত হত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়।[২১৬][২১৭] ১৬ আগস্ট, ১৮ জুলাই চট্টগ্রামে বিক্ষোভ চলাকালে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় হাসিনা, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়।[২১৮] ১৮ আগস্ট, ২০১৩ শাপলা চত্বর বিক্ষোভের সময় নির্বিচারে গুলি চালানোর কারণে মৃত্যুর জন্য তার বিরুদ্ধে একটি গণহত্যার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল,[২১৯] এবং ২০১৫ সালে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের উপর হামলা সংক্রান্ত একটি পৃথক অভিযোগের দায়ের করা হয়।[২২০]
২০২৪ সালের ২১ আগস্ট, ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হাসিনার সহ সমস্ত কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিলের নির্দেশ দেয়।[২২১] ৯ সেপ্টেম্বর, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে ২০০৯ সালে প্রণীত ‘‘জাতির পিতা পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯’’ বাতিল করে, যা শেখ-ওয়াজেদ পরিবার, বিশেষত শেখ হাসিনাকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করত।[২২২][২২৩] ১৭ অক্টোবর, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই গণহত্যার সময় সংঘটিত ‘‘মানবতা বিরোধী অপরাধ’’ এর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।[২২৪]
পদ্মা সেতু দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জড়িত, যারা নির্মাণ চুক্তি প্রদানের বিনিময়ে কানাডিয় নির্মাণ কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চেয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলি পরবর্তীকালে মিথ্যা এবং সত্যতা পাওয়া যায় নি এবং কানাডার আদালত পরবর্তীকালে মামলাটি খারিজ করে দেয়।[২২৫]
অভিযোগের ফলস্বরূপ, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির উদ্বেগের কারণে পদ্মা সেতুর জন্য তহবিল প্রদানের প্রকল্প প্রত্যাহার করে, পদ্মা নদীর উপর ৬ কিলোমিটার (৩.৭ মা) রেল-সড়ক সেতুর জন্য ৳১০,২৪১.৩৪৬ কোটি ঋণ বাতিল করে।[২২৬] জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলেন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন যিনি পরবর্তীতে পদত্যাগ করেন এবং পরবর্তীতে অন্যায় থেকে খালাস পান।[২২৭] ২০১২ সালের ১১ জুলাই, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উচিত বিশ্বব্যাংকের পাঠানো একটি চিঠি জনসমক্ষে প্রকাশ করা, যেখানে ব্যাংকটি হাসিনা এবং অন্য তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল।[২২৮] ২০১৬ সালে ১৭ জানুয়ারি, হাসিনা বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বব্যাংককে ঋণ বাতিল করতে প্ররোচিত করেছিলেন।[২২৯] সেতুটি শেষ পর্যন্ত সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৳৩০,১৯৩.৩৯ কোটি ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল এবং ২০২২ সালের জুনে উদ্বোধন করা হয়েছিল।[২৩০] এই ব্যয় মূল প্রস্তাবিত ৳১০,১৬১.৭৫ কোটি বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি।[২৩১]
২০১৭ সালের ২৪ জানুয়ারি, সংসদে এক বক্তৃতায়, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রত্যাহার করার জন্য মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়ী করেন।[২৩২] তার মতে, ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে বিশ্বব্যাংককে ঋণ বাতিল করতে রাজি করাতে র তদবির করেছিলেন।[২৩৩] ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, অন্টারিওর সুপিরিয়র কোর্টের একজন বিচারক কোনো প্রমাণের অভাবে ঘুষ-ষড়যন্ত্রের মামলাটি খারিজ করে দেন।[২২৫]
২০১৮ সালে, হাসিনার সরকার বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পাস করেছিল, যার অধীনে ইন্টারনেট বা অন্য কোনও মিডিয়াতে সরকারের দ্বারা অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত যে কোনও সমালোচনা বিভিন্ন মাত্রার কারাদণ্ডে দণ্ড প্রদান করা হতে পারে। জনগণের বাকস্বাধীনতাকে দমন করার পাশাপাশি বাংলাদেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য এটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল।[২৩৪][২৩৫][২৩৬][২৩৭][২৩৮]
২০২২ সালের ডিসেম্বরে, হাসিনা সরকার গোয়েন্দা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে "রাষ্ট্রবিরোধী সংবাদ" প্রকাশ করার অভিযোগে ১৯১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। ঢাকা জেলা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের তারেক রহমানের মালিকানাধীন দৈনিক দিনকাল বন্ধের নির্দেশ দেয়। দৈনিক দিনকাল বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের কাছে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের আপিল খারিজ করে দেয়, যার ফলে এটি বন্ধ হয়ে যায়।[২৩৯] সরকারের বিরোধীরা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে যারা দাবি করেছে যে এই পদক্ষেপটি সরকারের বিরোধীদের দমন করার একটি প্রচেষ্টা।[২৩৯] সরকার দাবি করেছে দৈনিক দিনকাল প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স (ডিক্লেয়ারেশন অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন) অ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর ১০, ১১, ১৬, ২১(১)(খা) ধারা লঙ্ঘন করেছে কারণ এটির অনিয়মিত প্রকাশনা ছিল এবং এর প্রকাশক একজন দোষী সাব্যস্ত অপরাধী।[২৪০]
২০২৪ সালের জুনে, হাসিনা নয়াদিল্লিতে একটি রাষ্ট্রীয় সফর করেন, যে সময় বাংলাদেশ এবং ভারত দশটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যার মধ্যে একটি ভারতকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে একটি রেল করিডোর করার অনুমতি প্রদান করে। এটি দেশের সার্বভৌমত্বের ইস্যুতে বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়, হাসিনাকে "ভারতের কাছে দেশ বিক্রি" করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে।[২৪১] [২৪২]
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় ৫০০ কোটি ডলার (৫৯ হাজার কোটি টাকা) আত্মসাত করেছে বলে অভিযোগ করে গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প।[২৪৩] তবে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা, রোসাটম, এমন অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে।[২৪৪][২৪৫]
১৯৬৮ সালে, হাসিনা বাংলাদেশী পদার্থবিদ, লেখক এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান এম এ ওয়াজেদ মিয়াকে (১৯৪২-২০০৯) বিয়ে করেন।[২৩][৮] তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ।[২৩] সায়মার শ্বশুর সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।[২৪৬] হাসিনার একমাত্র জীবিত বোন শেখ রেহানা ২০১৭ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[২৪৭] হাসিনার ভাতিজি (এবং শেখ রেহানার মেয়ে) হলেন টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি ব্রিটিশ লেবার পার্টির রাজনীতিবিদ এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং নগরমন্ত্রী।[২৪৮]
হাসিনা তার রাজনৈতিক কর্মজীবনে মোট ১৯টি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন।[২৪৯] ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার সময় আঘাতের কারণে তার শ্রবণশক্তি হানি ঘটে।[২৫০] ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিব পরিবারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের হিংসাত্মক ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে,[২৫১] এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা এবং মুজিব পরিবারের নিকটবর্তী সদস্যদের জন্য অত্যন্ত উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায়, ২০১৫ সালে, তাকে এবং তার সন্তানদের সরকার বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে আজীবন নিরাপত্তা প্রদান করতে আইন প্রণয়ন করে।[২৫২][২৫৩] এই ধরনের নিরাপত্তা সুরক্ষা প্রসারিত করার অনুশীলন তাদের জীবনের জন্য উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য বিরল নয়।[২৫৪] সরকার তার এবং তার পরিবারকে আজীবন বিনামূল্যে ইউটিলিটি সেবা প্রদানেরও ঘোষণা করে।[২৫৫] ২৯ আগস্ট ২০২৪ তারিখে এই আইনটি বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।[২৫৬][২৫৭][২৫৮] অতঃপর ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে এই আইনটি বাতিল করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়।[২৫৯][২৬০]
রাজনীতির বাইরে লেখক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান রয়েছে। এযাবৎ তার প্রায় অর্ধশতাধিক রচনা ও সম্পাদনা প্রকাশিত হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপ্লোমা প্রদান করে।[২৬১] ২০১৮ সালে তিনি টাইম পত্রিকার বিশ্বের ১০০ সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে ছিলেন।[২৬২] ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে তিনি বিশ্বের ক্ষমতাধর ১০০ নারীদের তালিকায় হাসিনা ২০১৪ সালে ৪৭তম স্থানে,[২৬৩] ২০১৫ সালে ৫৯তম স্থানে ছিলেন[২৬৪][২৬৩] পরবর্তীতে ২০১৮[২৬৫] এবং ২০২৩ সালে ফোর্বসের তালিকায় তিনি তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন।[২৬৬] ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফরেইন পলিসি নামক সাময়িকীর করা বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায় হাসিনা স্থান করে নিয়েছেন।[২৬৭]
২০১০ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে তিনি বিশ্বের সেরা দশ ক্ষমতাধর নারীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ স্থানে ছিলেন। ঐ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের ঠিক পিছনে ছিলেন এবং ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করেছিলেন।[২৬৮] ২০১০ সালের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএন ক্ষমতাধর ৮ এশীয় নারীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। উক্ত তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা।[২৬৯]
শেখ হাসিনা ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় ৭ম স্থানে ছিলেন। তার পূর্বে এবং পশ্চাতে ছিলেন যথাক্রমে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট অ্যালেন জনসন সার্লেফ এবং আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জোহানা সিগার্ডারডটির। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউ ইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর নারী নেতৃত্বের ১২জনের নাম নির্বাচিত করে।
বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করা হয়েছে; যার প্রায় সবই শেখ হাসিনা'র নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.